16/05/2025
শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। এমনই হওয়া উচিত আমাদের।........
গত বছর এই সময়ে এক আত্মীয়ের সাথে গিয়েছিলাম হজ্জ ক্যাম্পে। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়ার টাকা এগিয়ে দিতেই রিক্সাওয়ালা মামা বললেন লাগবো না।
ভাবলাম ভাড়া কী কম হয়ে গেলো নাকি! তাড়া ছিলো তাই ভাড়া ঠিক না করেই উঠে পড়েছিলাম। যদিও এখানকার ভাড়া মোটামুটি ফিক্সড, তবে একটা ভালো কাজে এসেছি - মূলামুলি না করে, পকেট হাতড়ে আরো কিছু টাকা মিলিয়ে বাড়িয়ে দিলাম মামার দিকে।
কিন্তু মামা এবারেও সলজ্জ বদনে টাকাটা ফিরিয়ে দিলেন।
বললাম কী সমস্যা মামা, এই ভাড়ায় পোষাচ্ছে না?
রিক্সাওয়ালা মামা লজ্জায় জিভ কেটে বললেন
- ছি ছি মামা, আপনে তো ম্যালা টাকা দিসেন। কিন্তু আমি ভাড়াটা নিতাম না ।
- কেনো নিবেন না?
- আসলে মামা, কোনো হজ্জ যাত্রীর ভাড়া আমি নেই না।
আমি খুব অবাক হয়ে হয়ে বলি
- সে কী কথা! রিক্সা চালানো তো আপনার পেশা। ভাড়া না নিলে আপনার চলবে কীভাবে? আপনার বাড়ি কোই?
- গাইবান্ধা।
- উত্তর বঙ্গের লোক বোকাসোকা ভালো মানুষ হয় জানতাম, কিন্তু এই ভালোমানুষি ধোয়া পানি খেলে তো আর পেট ভরবে না। সংসার চলে কীভাবে?
- আসলে মামা, আমি দিনমজুর। দিন আনি দিন খাই। ঢাকায় আসছি এই কয়দিন হইলো। দ্যাশের বাড়িতে ভ্যান চালাইয়া সংসার চালাই। টানাটানির সংসারে টাকা জমানো খুবই কঠিন। তবু চেষ্টা থাকে কিছু জমানের। বাকিটা আল্লাহয় সহজ কইরা দ্যান।
প্রতি বছর হজ্জের মৌসুমে আমি যখন ঢাকায় আসি তখন পরিবারের হাতে জমানো টাকাডি দিয়া আসি। তাই বিশেষ সমস্যা হয় না।
- আর ঢাকায় আপনার থাকা খাওয়া?
- হজ্জ যাত্রী ছাড়া বাকি সবার থিকা তো ভাড়া নেই। তাইতে আল্লাহয় একটা ব্যবস্থা কইরা দ্যান। ট্যাকায় বরকত আইসা পড়ে।
- সে নাহয় বুঝলাম। কিন্তু আপনার এরকম বিনা পয়সায় যাত্রী সার্ভিস দেয়ার ইচ্ছা কেনো হলো, কারনটা কি জানতে পারি?
- কী বলবো মামা, শুনলে লোকে হাসে। টিটকারি মারে।
- আপনি নির্দিধায় বলেন মামা, আমি শুনবো।
- আসলে মামা হইসে কী... আমার ম্যালা বছরের শখ... বলতে পারেন অন্তরের খায়েস - জীবনে একবার হইলেও আমি মোহাম্মদের (সঃ) দ্যাশে যাবো... যেইখানে আল্লাহর ঘর আছে, সেই ঘর তওয়াফ করবো । জান্নাতি কালা পাথরে চুমা খাবো। সাফা মারওয়া সাই করবো..... আহা কতো নবী রাসূলের পাও মোবারক পড়সে সেই জমিনে....
আবেগে মামার চোখে জল জমা হয়। কাঁধে ঝোলানো গামছাটা দিয়ে চোখ জোড়া কচলে মুছে