16/06/2025
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সর্বশেষ সামরিক ও কূটনৈতিক চিত্র ➜
👉 ইরান প্রায় ৩০০টির বেশি মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (MRBM) এবং ড্রোন নিক্ষেপ করেছে (বিশেষ করে ‘ইমাদ’, ‘সেজিল’ এবং ‘জোলফাগার’ মডেলের MRBM, যা ১০০০ থেকে ২০০০ কিমি পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম)।
👉 MRBM = Medium Range Ballistic Missile = ১,০০০–৩,৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম।
👉 অন্যদিকে, ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণে ব্যবহার করেছে ৩০০টির বেশি স্ট্যান্ড-অফ অস্ত্র এবং কামান-ড্রোন। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ এবং ‘অ্যারো-৩’-এর মাধ্যমে এই আক্রমণের ৮৮ থেকে ৯২ শতাংশ প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে (এর মধ্যে ‘অ্যারো-৩’ বিশ্বের একমাত্র অস্ত্র, যা মহাকাশে চলমান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে)। ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় তারা কেবল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ড্রোন ভূপাতিত করতে পেরেছে।
👉 পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্র মতে, ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদের প্রায় অর্ধেক ব্যবহার করে ফেলেছে। তবে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী এখনো পূর্ণ অপারেশনাল সক্ষমতায় রয়েছে।
👉 বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরানের হামলার সংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ হতে পারে হয় তাদের অস্ত্রভাণ্ডার ফুরিয়ে আসছে, অথবা তারা কৌশলগত কারণে অবশিষ্ট মজুদ সংরক্ষণ করছে। অপরদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে তারা ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছে। এতে ইরানের পারমাণবিক ও কমান্ড-গোয়েন্দা অবকাঠামো ছিল মূল টার্গেট। এখন দ্বিতীয় ধাপে তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং জ্বালানি অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছে।
👉 তেহরান ঘোষণা দিয়েছে, চলমান হামলার মধ্যে তারা কোনো আলোচনায় বসবে না। ওয়াশিংটন ওমান ও কাতারকে মধ্যস্থতার অনুরোধ করলেও দুই দেশ জানিয়েছে, এখনো আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে ‘কোনো অগ্রগতি’ নেই।
👉 যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের যুদ্ধজাহাজসমূহ এখনও তেলবাহী জাহাজগুলিকে সুরক্ষা দিচ্ছে (পঞ্চম নৌবহর বাহরাইনের মানামায় অবস্থিত এবং পারস্য উপসাগর, ওমান উপসাগর এবং লোহিত সাগরে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত)। আজ কোনো ইরানি হুমকি বা হয়রানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে সমুদ্রপথে যাতায়াতের জন্য বীমা কোম্পানিগুলো এখনো 40% war-risk premium নিচ্ছে।
👉 পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা IAEA আজ বৈঠকে বসেছে। পশ্চিমা দেশসমূহ কঠোর তিরস্কারের পক্ষে, তবে রাশিয়া ও চীন আপত্তি জানিয়েছে। পরিদর্শকরা নিশ্চিত করেছেন যে, পারমাণবিক স্থাপনায় কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েনি, তবে বহু ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রে তারা এখনো প্রবেশ করতে পারেনি।
👉 বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান ৬০% HEU মজুদে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক সক্ষম দেশ হওয়ার অবস্থানে রয়েছে।
~~~
‘ইরান কি শেষ?’ ➜
👉 বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ইরানের বর্তমান অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশটি এখনো ধসে পড়েনি। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আয়াতুল্লাহ খামেনি এবং শীর্ষ বিপ্লবী গার্ড (IRGC) নেতৃত্ব নিরাপদ রয়েছেন। যদিও কিছু গোয়েন্দা প্রধান নিহত হয়েছে, তবুও শীর্ষ নেতৃত্বের কাঠামো অক্ষুণ্ণ।
👉 পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে ইরানের নাতাঞ্জ এবং দুটি গবেষণাগার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফোর্দো স্থাপনাটি অক্ষত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের ৬০ শতাংশ উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের (HEU) মজুদ এখনো অক্ষত আছে। এই কর্মসূচি বড় ধাক্কা খেলেও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।
👉 ফোর্দো প্লান্টটি ৮০ মিটার পাহাড়ের নিচে নির্মিত এবং বাঙ্কার-ব্লাস্টার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যতীত সাধারণ অস্ত্রে ধ্বংস করা অসম্ভব।
👉 ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির দিক থেকে, ইরান শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেও তাদের কাছে এখনো ডজনখানেক, এমনকি সম্ভবত শতাধিক মজুদ রয়েছে। ফলে এই বাহিনী দুর্বল হলেও সক্রিয় রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, দক্ষিণ পার্স গ্যাস প্রকল্পে আগুন লেগে গ্যাস রফতানি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে এবং বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলেও অর্থনীতি এখনো কার্যকর আছে।
👉 বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র দক্ষিণ পার্স ইরান-কাতার যৌথ মালিকানাধীন এবং ইরানের অর্থনীতির ৪০% আয় এ ক্ষেত্র থেকেই আসে।
👉 সামগ্রিকভাবে, ইরান আক্রান্ত ও রক্তাক্ত হলেও এখনো যুদ্ধক্ষমতা ধরে রেখেছে। যতক্ষণ না ইসরায়েল একটানা গভীরে আঘাত চালিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বকে কোণঠাসা করতে পারছে, এবং ইরানের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামো ভেঙে পড়ছে, ততদিন তারা ‘খতম’ হয়ে যাচ্ছে, এমন বলা অবাস্তব।
~~~
আগামী ১২-১৪ ঘন্টার খেলার দিকে নজর রাখুন ➜
👉 পরবর্তী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। প্রথমত, IRGC যদি আবার ৫০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, তবে তা তাদের অস্ত্রভাণ্ডার ও প্রস্তুতির গভীরতা নির্দেশ করবে।
👉 দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ পার্স গ্যাস প্রকল্পের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে কিনা, এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পুরো প্ল্যান্ট ধ্বংস হলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (LNG) বাজারে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে।
👉 তৃতীয়ত, হিজবুল্লাহ যদি লেবানন সীমান্ত থেকে ব্যাপক রকেট হামলা শুরু করে, তবে তাতে ইসরায়েলের জন্য নতুন উত্তরের ফ্রন্ট খুলে যাবে। হিজবুল্লাহ’র আনুমানিক রকেট মজুদ ১ লক্ষ ২০ হাজার এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্র মতে, তাদের কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এখন ২৫০-৩০০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম।
👉 অবশেষে, IAEA-এর বোর্ড যদি ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা প্রস্তাব পাস করে, তবে ইরান ‘পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (NPT)’ থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
~~~
এই যুগের বিভ্রান্তিময় রক্তাক্ত বাস্তবতায় আমাদের দোয়া কী হওয়া উচিত? ➜
☑️ প্রথমত আমাদের আবশ্যক দোয়া হওয়া উচিতঃ “হে আল্লাহ! ঔদ্ধত্য, দখলদারিত্ব ও তোমার প্রতি কুফর ও বিদ্রোহের প্রতীকরূপে যে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত, তুমি তা পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দাও। এবং মুসলিম ভূমিকে শত্রুমুক্ত করো।“
☑️ ইরান একটি শিয়া মতবাদভিত্তিক রাষ্ট্র। তবে এই সত্যও মানতে হবে যে, ইরান জায়োনিজমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অবস্থানে রয়েছে এবং বৈশ্বিক তাগুত ব্যবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এটি একপ্রকার কৌশলগত ইতিবাচকতা। সাময়িকভাবে দুশমনের দুশমনকে দুর্বল করা মুসলিম স্বার্থের জন্য হিকমতপূর্ণ।
☑️ আমরা চাই, জায়োনিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, মুনাফিক এবং তাগুতপন্থী সকল ব্যবস্থা একে অপরকে ধ্বংস করুক।
☑️ যদি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বা যে কোনো পক্ষ ইসলামের নামে জাতীয়তাবাদ, শিয়া সম্প্রসারণবাদ কিংবা সুন্নি নির্যাতনের মত কাজ করে, তবে আল্লাহ যেন তাদের অপদস্থ করেন। আর যদি কারও অন্তরে সত্যিকারের আল্লাহভীতি, আল্লাহর সন্তুষ্টির আকাঙ্ক্ষা থেকে তাওহীদের পতাকা উড়ানোর সদিচ্ছা থাকে, তবে আল্লাহ যেন তাকে সত্যের ওপর অবিচল রাখেন এবং শহীদের মর্যাদা দান করেন। এটাই আমাদের দোয়া।
☑️ আমরা দোয়া করব এমন সকল কাজের জন্য, যা যেকোনো ইসলাম-বিরোধী পক্ষকে দুর্বল করে। তাগুতেরা একে অপরের রক্ত ঝরাক। ভুয়া মতবাদভিত্তিক রাষ্ট্র ও তাগুতপন্থী শক্তিগুলো ধসে পড়ুক। আর মুসলিম উম্মাহ যেন এই কুয়াশা থেকে জেগে উঠে আল্লাহর দ্বীনের পতাকা উড্ডীন করার প্রস্তুতি নিতে পারে।
☑️ আমরা চাইবো যেন সকল তাগুতপন্থী শাসক ধ্বংস হয়। মুসলিমদের মন থেকে অজ্ঞতা ও ভ্রান্তির পর্দা উঠে যায়। আল্লাহর শরিয়াহ ও ইনসাফ আবার ফিরুক। তবে কোনো জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের হাত ধরে নয়, বরং মানুষের অন্তর, পরিবার ও সমাজে ইসলামের পূর্ণ জাগরণের মাধ্যমে।
~~~
হে আল্লাহ! এই সংঘাতকে সকল তাগুতের পতনের সূচনা এবং উম্মাহর কুরআন-সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের শুরু বানিয়ে দাও। আমিন।
আসসালামু আলাইকুম।