কালো পরীর বর

কালো পরীর বর ভালোবাসার মানুষটার বদলে যাওয়া টা খুবই কষ্টের....

তুমি ভাবছো..!😥আমি বদলে গিয়েছি! আমি বদলাইনি, আগের মতোই আছি! শুধু একটু একটু করে তোমার কাছে নিজেকে প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়ে...
26/07/2025

তুমি ভাবছো..!😥
আমি বদলে গিয়েছি! আমি বদলাইনি, আগের মতোই আছি! শুধু একটু একটু করে তোমার কাছে নিজেকে প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছি! আর তোমাকে নিয়ে গড়ে উঠা ছোট্ট ছোট্ট অনুভূতির পাতাগুলো ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিয়েছি নিজের ভিতরে.!😔

সব কিছু থেকে কেমন যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি! এখন আর কোনো কিছুই প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে নাহ্.!😓

যে না বলা কথাগুলো তোমাকে বলবো বলে জমিয়ে ছিলাম হৃদয়ের কোণে, সেগুলো এখন কেবল পুরনো ডায়েরির পাতায় বেঁচে থাকে! ভেবোনা অভিমান করেছি শুধু বোঝার জায়গাটুকু এখন আর খুঁজে পাই নাহ্.!😥

আমি এখনো বিরহে কাতর! ভালোবাসায় নরম অনুভবে ভরা সেই আগের মানুষটাই! শুধু তোমার কাছে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে খোলার সাহসটা.!😔💔🥀

মনটা ভালো নেই। বেশ কিছুদিন ধরেই শান্তি খুজে পাচ্ছিনা। হঠাৎ আশিকের সাথে দেখা, আশিক আমারই প্রতিচ্ছবি। আশিক ছেলেটা মন্দ নয়।...
22/07/2025

মনটা ভালো নেই। বেশ কিছুদিন ধরেই শান্তি খুজে পাচ্ছিনা। হঠাৎ আশিকের সাথে দেখা, আশিক আমারই প্রতিচ্ছবি। আশিক ছেলেটা মন্দ নয়। সাদাসিধে, কম কথার মানুষ, নিজেকে অগোছালো রাখতেই পছন্দ তার। আমার সব চেয়ে কাছের মানুষটা হলো আশিক, দিন রাতের ২৪ঘণ্টার এক সেকেন্ডও সে আমার থেকে আলাদা থাকেনা। আশিক সেদিন তার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে বাহিরে একটু হাওয়া বদল করতে বেরোলো। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে, আকাশে খুব চমৎকার একটা মেঘ। দিনটা খুবই সুন্দর। প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে আশিক হাটা ধরলো অচেনা কিছু রাস্তার দিকে। হাটতে হাটতে কেমন যেনো, খুদা পেয়ে গেলো দুজনেরই। আশে পাশে তেমন ভালো খাবার হোটেল চোখে পড়েনা। দুজনে স্টেশনের দিকে মুখ করে সামনে এগোতে এগোতে একটা খাবার হোটেল চোখে পড়লে অনেক খুশি হয়ে যায়। যাইহোক ওয়েটার খাবার পরিবেশন করার পর- আশিকের দিকে মুখ ফিরে খুব বাজে ভাবে বললো “আপনাদের রুম লাগলে বলেন।” আশিকের তখন মাথা গরম হয়ে গেলো। খুব কড়া করে প্রতিবাদ করতেও গিয়েও সাহসের ভয়ে পারলো না। কথাটা শোনার পরই আমার মাথা কেমন যেনো হ্যাং হয়ে গেলো। খুব করে বুঝলাম ‘শান্তি নেই মনে’ একটা সচেতন গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে কাওকে বলা মানেই এটা নির্যাতন করা। আশিকের তখন তার প্রিয় মানুষটার কাছে খুবই অসহায় লাগছিলো। লজ্জায়, ভয়ে, প্রতিবাদ করতে না পারায়… আমি যদি দেশের রাজা হতাম, তাহলে সর্বপ্রথম ওইসব লোকদের ধরে ধরে জেল-হাজতে ভরতাম।

কি করে শান্তি ফিরে পাব বলেন? বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেলাম বাংলাদেশের এক জাতীয় উদ্যানে। তিন বন্ধু বনের মদ্যে হাটছি আর আমি ভিডিও করছি। আচামকায় কয়েকটা বানর দৌড়ে এলো আমাদের দিকে। নিরুপায় হাতে থাকা বাদাম গুলো দিয়ে সেই যাত্রায় তাদের শান্ত করা গেলেও, শান্ত করা যায়নি ছিন্তাইকারীদের। নানার মৃত্যুর পরের দিনই ঢাকার উদ্দ্যেশে রওনা করতে হলো। ভোগরা বাইপাস গাজীপুর নামক এক এলাকায় এসে খুব জ্যামে পরে গেলাম। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১০ টার মত বাজে। আমি চুপচাপ বসে মোবাইলে চ্যাটিং করছিলাম। আমার পাশেই আমার খালাতো ভাই শহিদ। হটাৎ একটা চিল্লানোর আওয়াজ শুনে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি কয়েকটা ছেলে হাতে চাকু নিয়ে দৌড়াচ্ছে। পরে বুঝলাম তারা আমাদের বাসেরই এক যাত্রীর হাত থেকে জানালা দিয়ে মোবাইল নিয়ে চম্পট দিচ্ছিলো। খুব করে শান্তি হারিয়ে ফেললাম। বার বার মনে হয় ‘শান্তি নেই মনে’

শান্তি হারিয়ে ফেলছিলাম একটা মেয়ের ঘটনা শুনে, মেয়েটার বাড়ি ছিলো নোয়াখালী। পায়ে কিছু একটা হয়েছে তাই খুড়ে খুড়ে হাটছে। দেখতেও অনেক সুন্দর, যে কেও দেখলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বুঝবে কোনো ভদ্র মেয়ে। মেয়েটারে দেখে কেমন যেনো মনে হলো ভিক্ষা করছে। আমি সেদিন উত্তরা থেকে বুফে খেয়ে ফিরছিলাম। পুরো শরীর ক্লান্ত আর ঘামে একাকার। কৌতুহল নিয়ে কিছুক্ষন দারালাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম আসলে মেয়েটা কি করতে চাচ্ছে। বুঝলাম, আসলেই মেয়েটা ভিক্ষা করছে। আমার কাছে আসার আগে নিজেই গিয়ে একটু ব্যস্ত রাস্তা থেকে এক পাশে এনে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি ভিক্ষা কেনো করছেন? আর আপনার পায়ে কি সমস্যা? মেয়েটা খুব কষ্ট নিয়ে বললো, তার স্বামী। হ্যাঁ তার স্বামী তাকে এই অবস্থা রেখে পালিয়ে গেছে, তাই ভিক্ষা করতে হচ্ছে। আসলে মেয়েটা প্রেম করে বিয়ে করেছিলো, স্বামীর বাড়ি কুড়িগ্রাম। কোনো দিন জাননি সেখানে। মেয়েটার একটা কঠিন অসুখ ধরাপরে পা কেটে বাদ দিতে হবে, এবং অনেক টাকার দরকার। প্রিয় মানুষ অর্থাৎ তার পাষাণ স্বামী মেয়েটাকে একা রেখেই পালিয়ে যায়। অন্যদিকে মেয়েটার বাবা মা ছোট বেলাতেই মারা গেছেন, বড় হয়েছেন মামা-মামির কাছে। তারাও এই দুঃখের সময়ে মেয়েটাকে অস্বীকার করে। খুব করে শান্তি হারিয়ে ফেললাম মেয়েটার মুখ থেকে ঘটনাটা শুনে। পকেট হাতরে সাত পাচ না ভেবেই একটা নোট বের করে মেয়েটার হাতে দিয়ে দিলাম। মেয়েটা আমার কর্ম অবস্থা শুনে নিতে চাননি। আমি জোড় করে দিয়ে কিছুটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলাম।

একদিন আবারো শান্তি হারিয়ে ফেললাম, এক মার্মান্তিক মৃত্যু দেখে। অসুস্থ্য জরুরী রুগীকে নিয়ে সাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির হলো রুগীর স্বামী। দেখে বুঝাই যায় গরীব মানুষ। আমি অনেকটা দূরে দারিয়ে সব কিছু দেখছিলাম। রুগীর প্রচন্ড পেট ব্যথা হচ্ছিলো বোধহয়। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা ৫হাজার টাকা দাবি করে বসেন, নয়তো তারা চিকিৎসা শুরু করবেন না। নিরুপায় স্বামী ডাক্তারদের কাছে হাত পা ধরেও রাজি করাতে না পেরে রুগীকে নিয়ে বারান্দাতেই বসে কান্নাকাটি করে। তারপরের ঘটনা আর বলতে পারব না। খুব করে বুঝলাম ‘শান্তি নেই মনে’ বুঝতে পারলাম, একটা মানুষের জীবনের মূল্য মাত্র ৫হাজার টাকা। আমি নিরুপায় তাকে শ্বান্তনা দেবার মত ভাষা ছিলো না। চুপচাপ সবটা দেখেও জেনো কিছুই দেখিনি সরে এলাম সেখান থেকে। মাঝে মধ্যেই ভাবতে থাকি, আচ্ছা আমার শান্তি কি ফিরবে না কখনোই?
Bipul Sheikh
-বিপুল শেখ
২২ই জুলাই ২০২৫
(শান্তি নেই মনে - পর্ব ৭)

আকাশে প্রচুর মেঘ করেছে, কখন জানি বৃষ্টি আসে আসে অবস্থা। কি যেনো মনে করে ছাতাটা নিয়ে বের হলাম না। এখন খুবই খারাপ লাগছে যদ...
21/07/2025

আকাশে প্রচুর মেঘ করেছে, কখন জানি বৃষ্টি আসে আসে অবস্থা। কি যেনো মনে করে ছাতাটা নিয়ে বের হলাম না। এখন খুবই খারাপ লাগছে যদি ছাতাটা নিয়ে আসতাম, তাহলে হয়তো দুপুরে ভিজতে হতো না। আবার ভাবলাম, বৃষ্টি তো নাও আসতে পারে। এই সব ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি শুরু হলো মুষলধারে। দুপুরে খাবারের বিরতি ১ঘণ্টা। এর মধ্যেই বাসায় যেতে হয় এবং খেয়ে আবার অফিসে আসতে হয়। নিরুপায় কিছু না ভেবে ভিজতে ভিজতেই হাটা দিলাম বাসার দিকে। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। আসলে গার্মেন্টস যখন ছুটি হয় তখন রাস্তায় লোকজনের ভীড়ের কারণে মশা মাছিও দারাতে পারেনা। ৫মিনিটের রাস্তা যেতে লাগলো ১৫মিনিট। বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে যাতা অবস্থা। মাথায় সদ্যপরা টাক, টাকের উপর বৃষ্টির পানি পড়ছে, আর সেই পানি গুলো পিছলিয়ে গাল আর কপাল বেয়ে নিচে নামছে। সেই সবের দিকে আমার একটুও মনোযোগ নেই। আমার মনে তখন অন্যচিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো।

আমার চিন্তা হলো মানুষকে নিয়ে। এইজে এতো এতো মানুষ মারা যাচ্ছে, কত কত আপন জনেরা মারা যাচ্ছে। তাদের সাথে আমাদের আর কোনোদিন দেখা হবেনা, চিরবিদায় নিয়ে তারা চলে যাচ্ছে। ভাবতে থাকি- আচ্ছা যেই মানুষটারে আমি এত এত ভালোবাসতাম, আমার প্রিয় তমা কহিনুরের কথা বলছি (আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম দান করুন, আমিন) তার সাথে কি আমার আর দেখা হবে না! ভাবতেই বুকের ভিতর টা কেমন হাহাকার করে উঠে। নাহ- দেখা হবে। আমার বিশ্বাস দেখা হবে, কারণ কহিনুর তো জান্নাতি মানুষ। আর আল্লাহ জান্নাতিদের কথা কখনোই ফেলবেন না। তাছারা কহিনুর আমায় নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো। ওহ আজ বেঁচে থাকলে পৃথিবীটা স্বপ্নের মত সুন্দর হত আমার কাছে। কহিনুর পারভীন ছিলো আমার সবচেয়ে আপনজন, ভালোবাসার মানুষ, বিশ্বস্ত সঙ্গী, আমার কলিজা… তার চলে যাওয়া ৩বছরের বেশি হয়ে গেছে। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। তাকে খুব করে মনে পড়লে কিছুক্ষন নীরবে চোখের পানি ঝরে। কাওকে সেটা দেখাতে চাইনা, বুঝতেও দেইনা।
মনটা ভিষন খারাপ লাগছে। বৃষ্টির পানিতে চোখে ঝাপসা দেখছি। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো, আচ্ছা আমিও তো একদিন এভাবেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে উপারে চলে যাব। সেদিন পদ্মফুলের কি হবে? সে কি জানতে পারবে আমার মৃত্যু বার্তা? সে তখন কি করবে? ঈশ, তার ইচ্ছা থাকা সত্তেও সে আমায় শেষ বারের মত দেখতে পাবেনা। খুব মায়া হয় পদ্মের জন্য। হয়তো জানবেও না, যে আমি এই দুনিয়ার মায়া ছেরে দিছি। আচ্ছা অনেকদিন পরে যখন সে খোজ নিয়ে জানতে পারবে, আমার কবরে বিশাল বড় একটা গাছ জন্মেছে। তখন তার অনুভুতি কেমন হবে? ভাবতে থাকি পদ্মের সাথে কত কত স্মৃতি কত স্বপ্ন সব কি বিলিন হয়ে যাবে? বৃষ্টির পানিতে আর চোখের পানিতে সত্যিই কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। মনে মনে ভাবলাম, পদ্ম’তো আমায় জীবনের থেকেও ভালোবাসে। তাহলে আমার শেষ দিনটাতেও কি পদ্ম পাশে থাকবে। নাহ থাকবেনা বোধহয়। পদ্মফুলটা অনেক অভিমানী। কবে যে অভিমান করে দূরে সরে দেয় জানিনা। তবে মনে মনে ঠিক করেছি, আমিও অভিমানী হব। খুব বড় অভিমানী। অভিমান করে পদ্মকে বুঝিয়ে দিব, অভিমান কেমন যন্ত্রণা দেয়। তখন হয়তো পদ্মের ইচ্ছে থাকলেও আমার অভিমান ভাঙাতে পারবেনা।
বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি, মনটা খুবই খারাপ লাগছে। কেনো যে অভিমান হয় জানিনা………
-বিপুল শেখ
২১ই জুলাই ২০২৫

জেনে নিও....
19/07/2025

জেনে নিও....

কেনো জানি, কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা।‘শান্তি নেই মনে’ গাজিপুরের ব্যস্ত রাস্তা। সময় দুপুর দেড়'টা। লম্বা সিগনাল পড়েছে। চারদি...
13/07/2025

কেনো জানি, কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা।
‘শান্তি নেই মনে’ গাজিপুরের ব্যস্ত রাস্তা। সময় দুপুর দেড়'টা। লম্বা সিগনাল পড়েছে। চারদিকে গরম আর হর্নের কান ফাটানো শব্দ। সেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক, আশিক রহমান।
মাথায় সাদা গামছা, হাতে বাঁধা চারটা দেশি মুরগী। মুখে ক্লান্তি আর চোখে একরাশ আশা। গাইবান্ধার একটা গ্রাম থেকে এসেছে শহরে। মুরগীগুলো বিক্রি করবে। কিন্তু কেউ কিনছে না।
কেউ কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছে, আবার কেউ দাম শুনেই পেছনে চলে যাচ্ছে। আশিক রহমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কারো কাছে কিচ্ছু চায় না, মুখটা শুকানো, ঘেমে ঘুমে একাকার। আশিক রহমানের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন জেনো শান্তি হারিয়ে ফেললাম।

সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে। এক ট্রাফিক পুলিশ এগিয়ে এসে বলে, “ভাইরে, আমার কাছে টাকা থাকলে চারটা মুরগীই কিনে ফেলতাম। দেশি মুরগীর স্বাদই আলাদা। কতদিন যে খাই না! মনেই পরেনা।”
আবার সিগনাল পড়েগেলো।
এবার একটি সাদা প্রাইভেট কার আশিক রহমানের দিকে এগিয়ে এলো।
ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে দিলো এক ভদ্রলোক, খুবই ভদ্রলোক প্যান্ট শার্ট টাই পড়া। ভদ্রলোকটা আশিক রহমানকে বললো- এই ছেলে... মুরগীগুলা পিছনের ব্যাকডালায় রেখে দে। আশিক রহমান খুব খুশি হইয়ে দৌড়ে গিয়ে মুরগীগুলো ব্যাকডালায় রেখে দেয়।
কিন্তু টাকা দেয়ার আগেই গাড়ি স্টার্ট নেয়। গাড়ি সামনের দিকে চলে যায় দ্রুত।
আশিক রহমান দৌড়ায় পেছনে পেছনে।
গাড়ি থামেনি। মানুষ গাড়ির সাথে দৌড়ে কখনোই পারে না।
রাস্তার মাঝখানে পড়ে যায় আশিক রহমান। মাথা ফেটে রক্ত গড়াতে থাকে।
ফুটপাতের পাশে এক চায়ের দোকানে এসে বসে পড়ে।
চায়ের দোকানদার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “নতুন শহরে আসছো?”
আশিক রহমান কিছু বলে না।
চোখের পানি আর কপাল দিয়ে রক্ত মিলে যায় একসাথে। ঘটনাটা দেখতে দেখতেই অনেকটা উপলোব্ধি করতে পারলাম। আমার ‘শান্তি নেই মনে’। আচ্ছা, আমার শান্তি কি আদৌ কখনো ফিরবে?

বহুদিন আগেও শান্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম, অন্য এক আশিক রহমানের জীবনী দেখে। স্কুলের দারোয়ান আশিক রহমান। বয়স ২৫। বিয়ে করেছেন খুব কম বয়সেই। বড় মেয়ের বয়স পাঁচ, ছোট মেয়ের তিন বছর। আশিক রহমান ঘন্টা বাজায় স্কুলে। তারপর বাজারে যায় হেড স্যারের কথা মত। বাজারে গীয়ে বাজার করে সেটা আবার হেডস্যারের বাড়িতে পৌছাতে হয়। এটা তার দৈন্দিন রুটিন। আজ তার কপাল খারাপ। রাস্তা পার হতে গিয়ে একটি অটো তাকে ধাক্কা দেয়। খুব বেশি স্পিড থাকায় অটো থামতে পারেনি। আশিক রহমান পড়ে যায়।
মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা মানুষটাকে আর কেউ আশিক রহমান বলে ডাকে না। সে মাড়া গেছে। অটো ধাক্কা দিয়ে তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

এলাকার লোকজন অটোচালককে ধরে ফেললো। কেউ কেউ বলে পুলিশে দাও, কেউ কেও বলে মারো।
সে সময় এক মসজিদের ইমাম এসে বলেন, “কেনো শাস্তি দিবেন অটোচালককে? মৃত্যু তো আল্লাহর হুকুমে হয়েছে। আশিক রহমানের কপালে এমন মৃত্যু ছিলো বলেই হয়েছে।”
আশিক রহমানের লাশ, রাস্তা, রক্ত... সব চাপা পড়ে যায় ধর্মের নামে গড়া বাণীতে। আমি নিরুপায় সবটা ভালো ভাবে দেখছিলাম, আর বুঝলাম তখনো কারো কারো ‘শান্তি নেই মনে’

কয়েকদিন পরের কথা। আশিক রহমানের ঘরে এখন অভাব। বাচ্চাদের খাবার নেই, টাকাও নেই। তার স্ত্রী হেড স্যারের কাছে গিয়ে মিনতি করে বললো- “স্যার, আমার স্বামী স্কুলের দারোয়ান ছিলেন। আমাদের সংসার আর চলছে না। বাচ্চাদের নিয়ে আমিও কদিন আধপেটে খেয়ে থাকছি। আমার স্বামীর চাকরীটা আমাকে দিন।”
হেড স্যার আশিক রহমানের স্ত্রীর কথা শুনে খুবই রেগে গেলেন। তার চেয়েও বেশি রেগে গেলেন ধর্ম শিক্ষক। আশিক রহমানের স্ত্রী কান্না করতে করতে বাড়ি ফিরে আসে। কেনো জানি শান্তি কিছুতেই খুজে পাচ্ছিলাম না।

দিন যায়, খাবার ফুরিয়ে আসে। সে এক বাসায় কাজ চাইতে যায়। বাড়ির মেমসাহেব বললো- “নতুন বুয়া রাখবো না। তোমাদের মত মেয়েরা কাজ করতে আসে না, চুরি করতে আসে।”
আশিক রহমানের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে “আমি চোর নই মেমসাহেব। আমি কাজ করতে চাই। আমার স্বামী দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ঘরে খাবার নেই। বাচ্চারা না খেয়ে কাঁদে।” মেমসাহেব মুখ ঘুরিয়ে বলেন “ভালো মানুষি কোরো না। আমি মানুষ চিনি।”
এইসবটা দূর থেকে খেয়াল করে বুঝলাম, আমার কিছুতেই ‘শান্তি নেই মনে’।

-বিপুল শেখ
১৩ই জুলাই ২০২৫
(শান্তি নেই মনে-পর্ব ৩)

আমার আজও ‘শান্তি নেই মনে’। বাংলাদেশের বিভিন্য জাগায় জাগায় দুর্নিতী, অনিয়ম আর হয়রানীর দৃশ্য দেখে দেখেও শান্তি হাড়িয়ে ফেলে...
12/07/2025

আমার আজও ‘শান্তি নেই মনে’।
বাংলাদেশের বিভিন্য জাগায় জাগায় দুর্নিতী, অনিয়ম আর হয়রানীর দৃশ্য দেখে দেখেও শান্তি হাড়িয়ে ফেলেছি। বলছিলাম, আমাদের সোনার বাংলাদেশের কথা। সোনার দেশের মানুষদের কিছু কর্মকান্ডের কথা।

আসসালামু আলাইকুম, আমি বিপুল শেখ। অতিব নগণ্য একজন মানুষ। বাংলাদেশের একজন জনগন, একজন নাগরিক, একজন সচেতন ব্যক্তিত্য। জীবিকার তাগিদে গাজিপুরে থাকি। বাড়ি গাইবান্ধা জেলায় হওয়ায় উত্তর বঙ্গের মোটামুটি সব ধরনের গাড়ীর নামই প্রায় মুখস্ত।
প্রায় সব গাড়িতেই উঠেছি। একটা সময় খেয়াল করলাম, সাধারণত অন্য মাসের থেকে ঈদের মৌসুমে গাড়ি ভাড়া দ্বিগুন থেকে তিন গুন, চার গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাংলাদেশের নাম করা কিছু গাড়ির ভাড়া কিছুটা সামান্য পরিমাণে বাড়ানো হয়। পাঁচশত টাকা অন্যমাসে হলে, ঈদের ছুটির আগে পরে আটশত কিংবা সাতশত এর আশে পাশে টিকিট বিক্রি হয়। কিন্ত সিট পাবেন না একটাতেও।

খুব করে যদি টিকিট কাউন্টারে ধরেন, তাহলে দেখবেন সিট ঠিকই মিলবে চোদ্দ কিংবা পনেরশত টাকায়। আচ্ছা বলতে পারেন, পাঁচশত টাকার গাড়ির টিকিটে সাতশত টাকা মানা গেলেও কি চোদ্দশত টাকা মানা যায়? এই কারণেই শান্তি বার বার হারিয়ে ফেলি। আবার দেখবেন, কিছু লোকাল গাড়ি যেগুলা রিজার্ভ জিলা ভিত্তিক চলে সেগুলোও অনেকে রিজার্ভ নিয়ে যায়। হাজার টাকার উপরে টিকিট বিক্রি করে। আমার মনে কিছুতেই শান্তি আসেনা। চেয়ার কোচ গাড়ি গুলো যেখানে সাতশত টাকায় টিকিট বিক্রি করে আসছে, সেখানে নরমাল ভাঙ্গাচুরা গাড়ীর টিকিট হাজার বারোশত।

কিছুই করার নেই, কারো দেখারো নেই, বলারও নেই। শান্তি নেই মনে আমার। এই সময়টাতে চলে রমরমা ব্যবসা, সব জিনিসের দ্বিগুন মূল্য। সিরাজগঞ্জ কিংবা বগুড়া শেরপুর-এ হোটেল বিরতি দেয়া হয়। হোটেল নয়, এটা যেনো কশাই খানা। একশত টাকার তরকারী তিনশত টাকা। বিশ টাকার পানি ত্রিশ টাকা। এইসবে পরে কতশত বার যে শান্তি হারিয়ে ফেলেছি বলার অপেক্ষা নেই। এইতো কুরবানীর ঈদের পর। ফিরছিলাম ঢাকার দিকে। সাথে করে পানির বোতন নেয়া হয়নি। সারে চার ঘন্টা কিংবা পাঁচ ঘন্টার রাস্তা এসেছি সতেরো ঘন্টায়। ধুলো বালু মুখের মধ্যে গিয়ে কেমন যেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। একটু পানি হলে হয়তো নিশ্বাস টা সচল হতো।

রাজিয়াও বার বার বলছিলো পানির জন্য গলা নাকি তার শুকিয়ে একেবারে কাঠ। কিছু ছেলেপেলে কে দেখা গেলো, মাথায় করে পানির বোতল ফেরি করে বেচতে। একজন কে ইশারা করতেই দৌরে এলো। একটা বোতল এগিয়ে দিলো। বোতলের গায়ে মূল্য দেয়া পনের টাকা। বিশ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলাম। নাছোড়বান্দা সে বিশটাকা নিবেনা। তাকে নাকি ত্রিশ টাকা দিতে হবে। অগত্যা যেহেতু পানির খুব দরকার ছিলো তাই না নিয়ে উপায় নেই। পনের টাকার পানির বোতলের জন্য ত্রিশ টাকা দিতে হলো। শান্তি হারিয়ে গেলো তখনো। জানো আমার, শান্তি নেই মনে।

রিক্সা ভাড়া বরাবরই অটোর থেকে একটু বেশী। পা রিক্সা হলে তো আর কথায় নেই। দশ টাকার রিক্সা ভাড়া ত্রিশ টাকা দিতে হয়েছে বেশ কয়েক জাগায়। দুঃখ নেই তবুও। শান্তি হারিয়ে ফেললাম তখনি যখন, বিশ টাকার অটো ভাড়া দেড়শত টকা দিতে বাধ্য হলাম। আচ্ছা আমার মনে কি কখনোই শান্তি ফিরবেনা….?

বাড়িতে যাবার পর, তাসফিয়া জান্নাতের জন্য কিছু ফলমূল কিনতে গিয়েছিলাম। দোকানদার স্বাভাবিক দামের থেকেও কেজি প্রতি ৫০ টাকা বেশি চাইলে, জিজ্ঞেস করলাম- ভাই এতো বেশি দাম চাচ্ছেন কেনো। সে সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো, দুদিন আগেও দাম কমই ছিলো আজ ঈদের জন্য দাম বেড়ে গেছে।
বাসস্টপ থেকে আমার বাড়ি পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগে বিশ টাকা। এক অটোতে উঠলাম ভাড়া ঠিক না করেই, বাড়ি পৌছে পঞ্চাশ টাকা ধরিয়ে দিলাম। অর্থাৎ দশ টাকা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। অটো ওলার উত্তর শুনে ইতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। তাকে নাকি একশত টাকা দিতে হবে। ঈদের বাজার বলে কথা। কেমন যানি অনুভব করলাম ‘শান্তি নেই মনে’।

আচ্ছা, আমার শান্তি কি ফিরবে কখনো?
ইতিমধ্যে কিছু লোকের কর্মকান্ড দেখে খুব করে দুঃখ পাই, হাসিও আসে আবার রাগও হয়। বলছিলাম মসজিদের নামে টাকা তোলার কথা। নাম বললে সমস্যায় পড়তে হয় বাস্তবিক জিবনে, তাই নাম না বলেই ঘটনা তুলে ধরছি। আমি চাকুরির সুবাধে গাজিপুরের কোনো এক এলাকায় দীর্ঘ চার বছর ধরে আছি। এখানে নিয়ম করে সকাল, দুপুর, আর সন্ধ্যায় মসজিদের নামে টাকা তোলা হয়। খুবই ইমোশনাল কথায় আপনাকে আটকিয়ে দিবে। আপনি টাকা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেলে নিজের বিবেক বাধা দিবে। আচ্ছা এতে আমার সমস্যা নেই, তবে মনের মধ্যে খুব করে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়- যেই লোকেরা এই টাকাগুলো তোলার জন্য ৩৬৫ দিন সময় দেয় নিয়ম করে তিন বেলা। তাদের নিজের সংসার কিভাবে চলে। ভেবেও কেনো জানি কুলকিনারা পাইনা। কেনো জানি এইসব ভাবতে ভাবতেই শান্তি হারিয়ে ফেলি।

শান্তি আবারো হারিয়ে ফেলেছিলাম একদিন। খুব প্রিয় একজন মানুষের সাথে রেইল স্টেশনে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। বিভিন্ন্য গল্পে বিভোর। হঠাত করেই একটা ছেলে এসে টাকা চেয়ে বসলো। রেইল স্টেশনের পাশে পথ শিশুরা থাকে। আমার কাছে খুচরো না থাকায় আমার সাথের মানুষটা কিছু টাকা দিয়ে বসলো। ছেলেটা টাকা নিয়ে যাবার পরেই, দ্বিতীয় জন এসে হাত পাতছে। তাকেও দেবার পর, তৃতীয়জন এসে হাজির। এভাবেই পর্যায় ক্রমে…. লজ্জায় সেদিনও অনেকটা শান্তি হারিয়ে ফেললাম। আচ্ছা বলতে পারেন, আমার শান্তি কবে ফিরবে? “আমার না সত্যিই, শান্তি নেই মনে”।

-বিপুল শেখ
১২ই জুলাই ২০২৫

11/07/2025
শান্তি নেই মনে। (একটা জান্নাতি মানুষ)নাহ, কোথাও শান্তি নেই। কারো মনেই শান্তি নেই। চলুন, আজকে আমার কেনো শান্তি নেই লিখে ফ...
10/07/2025

শান্তি নেই মনে। (একটা জান্নাতি মানুষ)
নাহ, কোথাও শান্তি নেই। কারো মনেই শান্তি নেই।
চলুন, আজকে আমার কেনো শান্তি নেই লিখে ফেলি। আমি রক্তে মাংসে গরা মানুষ। মাঝে মধ্যেই ভুল করে ফেলি, আর এই ভুলের কারণেই অনুতপ্ত হয়ে শান্তি হারিয়ে ফেলি। এইতো সব ভালই চলছিলো, হঠাত করেই কিযে হলো-
কে জানে? জড়িয়ে পরলাম বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে। ঘটা করে দিনকাল পার হচ্ছিলো। মনে প্রাণে ভরপুর শান্তি।
বিয়ে করেছিলাম একটা জান্নাতি মানুষকে।

আসলে জান্নাতি মানুষেরা সব সময় ন্যায়পরায়ন হয়। তারা সবার সাথে সব পরিবেশেই মিশতে পারে। খুব যত্ন করতে পারে স্বামীর এবং স্বামীর সাথে জড়িত মানুষদেরও। খুব ভাল মনের মানুষ হয় জান্নাতিরা। স্বামীর মনে কষ্ট আসতে পারে এমন কাজ থেকে সব সময়ই দূরে থেকে। স্বামীর বিপদে আপদে, ভালো মন্দ সবটা জুরেই তারা পাশে থাকে। বলছিলাম, কহিনুর পারভীন অর্থাৎ জান্নাতের আম্মুর কথা। আমার প্রথম স্ত্রী। আমার প্রথম প্রেম, আমার জান, প্রাণ, কলিজা।
আমার বাবা-মা কেও অনেক ভালোবাসতেন, যেনো তার নিজের বাবা মা।

কেনো জানিনা বার বার মনে হত- মানুষের জীবনে সুখ বেশি দিন টিকে থাকেনা। কহিনুর সব সময়ই আমার প্রিয় একজন বন্ধু ছিলো। যাকে চোখ বন্ধ করেও বিশ্বাস করা যায়। খুব বিশ্বাস। কি নেই সেই বিশ্বাসের গল্পের মধ্যে। তবুও কেনো জানি মেয়েটা কখনোই রাগ, অভিমান, ঘৃণা কিছুই দেখাতো না। আমি মেয়েটারে খুবই ভালোবাসতাম। নাম ধরেই ডাকতাম “কহিনুর” তার খুব মিষ্টি উত্তর আসতো “হ্যাঁ, যাই”। ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে নিলেই কেমন এক প্রশান্তি। থাকুকগে সেই সব কথা।

মেয়েটার মনটা খুবই নরম আর দয়ালু। কখনো মানুষকে দান করতে পিছুপা হাটেনা, কাওকে ফিরাতেও পারেনা, খুবই নিরুপায় হলেও পরে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতো। রাত যত গভীর হোক না কেনো, আমার তার হাতের সিঙারা, সমুচা, নুডুলস, কেক ইত্যাদি মাঝে মধ্যেই খেতে মন চাইতো। সেও রাতের তোয়াক্কা না করে- আমার আবদার পূরণ করতে মরিয়া হয়ে উঠতো। যেনো তার জন্মই হয়েছে আমার আবদার গুলো মেটানোর জন্যে।
বাচ্চা খুবই পছন্দ তার। যে কারো ছোট বাচ্চা দেখলেই, কোলে নিয়ে গাল দুটো টেনে দিতো। বিয়ের আগেই সে মাতৃতের স্বাধ পেয়েছে।

তার ভাইয়ের ছোট মেয়েটা- ঊর্মি। সে যেনো তার নিজের পেটে ধারণ করা মেয়ের মতই। ছোট বেলা থেকেই ঊর্মি কে সে আদর যত্ন করতো সব সময়। ঊর্মির খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে, যাবতীয় দিক গুলো কহিনুর নিজে হাতেই যত্ন নিত। উর্মির মা, সেতো নাম মাত্র ছিলো। কহিনুরের সাথে আমার বিয়ের দিনই জানতে পারলাম, উর্মি সম্পর্কে। সেও কহিনুর কে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। ভাইয়ের ছেলেকে আদর যত্ন করে সে নিজের পেটে ধারণ করা জান্নাতের স্বাধ নিয়েছে। তার এই বাচ্চা প্রেমি মন দেখেই উপর ওয়ালার ইচ্ছায় হয়তো – তাসফিয়া জান্নাত দুনিয়ায় আসার জন্য প্রস্তিতি নিচ্ছিলো।

খুবই সুন্দর ছিলো সেই দিন গুলো। প্রথম যখন জানা গেলো তার প্রেগন্যান্সির কথা, খুশির অন্ত ছিলোনা আমার এবং কহিনুরের মনে। আমার কেনো জানি মেয়ে বাচ্চা খুব ই পছন্দের ছিলো। আমি সব সময়ই বলতাম মেয়ে হবার জন্য। সেও আমার ইচ্ছে দেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করতো, মেয়ে বাচ্চাই যেনো হয়। আমি মেয়ে বাচ্চা নিয়ে ফেসবুকে প্রচুর পরিমাণে লেখা লেখি করতাম। বাচ্চার কি নাম রাখা হবে, আব্বু নাকি বাবা, আম্মু নাকি মা, স্কুল নাকি মাদ্রাসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে খুবই প্লান ছিলো। দিন যেতো রাত হতো ধীরে ধীরে তার কষ্ট বাড়তে থাকে। প্রেগন্যান্সির দিন গুলোতে যে কী রকম কষ্ট হতে পারে, তা খুবই কাছে থেকে দেখেছি। তবুও এই বাজে রকমের কষ্টের পরেও তার মুখে ছিলো একটা জান্নাতি হাসি। যেনো কোনো কষ্টই হচ্ছেনা, কিংবা শত কষ্টের পরেও পেটে থাকা বাচ্চাটা দুনিয়ায় এলেই তার শান্তি।

দেখতে দেখতে প্রায় আটটা মাস পার হলো, তার এই আটমাসেও নানা ধরনের কর্মকান্ড ছিলো। যা কিনা তার জান্নাতে যাবার তিন বছর পর এসে লিখছি। এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায়ও খুব ভোরে উঠে রান্না বসাতো। ভাড়া বাড়িতে থাকি, এখানে রান্নার প্রতিযোগিতা চলে। যে আগে রান্না বসাবে সেই রান্না করতে পারবে, দেড়িতে ঘুম থেকে উঠলে চুলা পাওয়া যায় না। গোসলের বেলাতেও তাই। সে খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গরম পানি বসাতো। তখন ছিলো শিতকাল, তারপর গরম পানি হয়ে গেলে ভাত চাপিয়ে দিত। আর আমি তখনো ঘুমেই থাকতাম, এবং সে গোসলখানা’তে আমার জন্য বালতি, লুঙ্গি, গামছা রেখে এসে ডেকে দেয়। তার জন্য অনেক কষ্টের ছিলো দিন গুলো, আমি কিছুই বুঝতে চাইতাম না। অফিসে যাবার আগে- ভাত বেরে দিতো খাবার জন্য। খাবার খেয়ে আমি অফিসে চলে যেতাম, এবং ফিরে এসে দেখতাম সে রান্নাবান্না সব শেষ করে ফেলেছে এবং সেই সাথে ঘরের পুরো পরিবেশ গুছিয়ে পরিপাটি। প্রতিবেশিরা হিংসে করতো বলতো- বিপুল ভাজ্ঞ্য করে কহিনুরের মত একটা লক্ষি বউ পেয়েছে। আসলে তারা তো জানতো না, যে সে আসলে জান্নাতি মানুষ। আর জান্নাতিরা পরিপাটি, সুন্দর আর গোছালো মনেরই হয়।

আমার প্রতি ছিলো না তার কোন অভিযোগ, রাগ, অভিমান কিছুই না। হ্যাঁ মাঝে মধ্যে আমিই অভিমান করতাম, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে খুব করে অভিমান করতাম। আর সে বাচ্চাদের মত নিষ্পাপ হয়ে যেতো, খুবই চেষ্টা করতো আমার অভিমান ভাঙানোর। দিন গুলো এখন খুবই মিস করি, কষ্ট দেয় অনেকটা। মাঝে মধ্যে মনে হয়, সে যদি আমার সাথে রাগ অভিমান করতো, ঝগরা করতো তাহলে হয়তো সেগুলোর কথা মনে এনেও ভুলে থাকা যেতো।

আটমাস পরে চলে এলো সেই দিনটা, আমার আব্বু এলো কহিনুর কে বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য। লিখতে গিয়েও বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠছে। রান্না করতে জানিনা, বলে একজন মহিলাকে দায়িত্ব দিয়েছে। সে আমারে দিনে দুইবার রান্না করে দিবে। বুদ্ধি করে বাজার কি কি করা উচিত সবটা করে রেখে দিলো। ঘরদোর গুছিয়ে সব কিছু থেকে পরিপাটি করে শেষ বারের মত, আমার কপালে একটা চুমু একে বিদায় নিয়ে চলে গেলো এই এলাকা ছেরে বাড়ির উদ্দ্যেশে। দিন গুলো যে কি পরিমাণে মিস করতাম, তা লিখে বুঝানো যাবেনা।
প্রত্যেকদিন কথা হত নিয়ম করে করে। তার সমস্থ না বলা কথা গুলো জমিয়ে রাখতো, ফোন দিলেই জিজ্ঞেস করতো ‘কেমন আছো? খেয়েছো? শরীর কেমন এখন?” অথচ এগুলো আমার জিজ্ঞেস করার কথা ছিলো। আমাকে দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করতো সব সময়ই। খুব করে কান্না করতো, দিনের কোলাহল থেমে পাখিরাও যখন ঘুমিয়ে পরে। ঠিক তখন ফোন কানে নিয়ে ফিসফিস করে বলতো, প্লিজ একটা দিন চলে এসো… তোমায় না দেখে থাকতে পারছিনা। আমি খুবই মিস করি তোমায় সব সময়। আমি চাকরির ভয়ে বলতাম, ‘প্লিজ সোনা বোঝার চেষ্টা করো। গার্মেন্টস এর চাকুরি, হারাবার ভয় অনেক। ছুটি চাইলেও ছুটি মিলেনা।’ সে সবটা বুঝতো, খুবই বুদ্ধিমতি ছিলো।

যাইহোক খুব কষ্টের পর একদিন সরকারী ছুটি পেলাম সাথে সুক্রবার। তাকে না জানিয়ে গাড়িতে চেপে বাড়ির উদ্যেশে রওনা দিলাম। মাঝ রাস্তায় আমার শশুর ফোন দিয়ে বললো- বাবা, তুমি নাকি বাড়িতে আসতেছো? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি করে জানলেন? সে উত্তর দিলো- কহিনুর বলেছে। সেদিন বুঝলাম মনের টান কাকে বলে। যাইহোক, সেদিন শেষ বারের মত তার সাথে সাক্ষাত হলো। আমাকে পেয়ে সে কতটা খুশি হয়েছিলো, সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

আমার বিদায় বেলাতেও যতদুর সম্ভব এগিয়ে দিয়ে গেলো। স্মৃতির কোনে থাকবে দিনটা। যতদিন এই দেহে প্রাণ থাকবে, আর আমার ব্রেইন ঠিক থাকবে ততদিন সেই দৃশ্যটা ভুলতে পারব না। রোজ আগের মতই নিয়ম করে চলতো কথা বলা, তার আমার প্রতি যত্নশীলতা। তারপরে চলে এলো সেই বীভৎস দিনটা, যেই দিনটার কথা মনে পড়লে আজও বুকের ভেতর টা দুমড়ে মুচরে ভেঙ্গে যায়। সকাল সকাল তার সাথে আমার কথা হলো, দিনটা ছিলো ২৭ মার্চ ২০২২ – রবিবার।

জানতে পারলাম তার পেটের ব্যথাটা ক্রমেই বেরে যাচ্ছে। এবং ডাক্তারের দেয়া তারিখের সাথে কিছুটা মিল পাওয়া যায়। আমি তখন গার্মেন্টসে কাজ করি। দুপুরের দিকে জানতে পারলাম কহিনুর পারভীন কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাস্থ্যকর্মীর বাড়িতে। বুকের ভিতর তখন খুব ব্যথা হচ্ছিলো। খুব ইচ্ছে করছিলো তার সাথে কথা বলতে, কিন্ত সুযোগ মিলেনি। আমার শশুরের কাছে ফোন দিলাম কয়েকবার সে ইচ্ছে থাকা সত্যেও কথা বলিয়ে দিতে পারেনি। একপর্যায় শশুরের সাথে কিছুটা রাগারাগী করলাম। হয়তো বেয়াদবী করেছি, জানিনা ওনি আমায় কতটা মাফ করে দিয়েছেন। খুব কষ্ট হচ্ছিলো, আমার আপা তহামিনা ছিলো তখন কহিনুরের সাথে। আপার সাথে যোগাযোগ করেও, আমার কলিজার টুকরা কহিনুরের সাথে কথা বলতে পারিনি। সে তখন প্রসবের বেদনায় অচেতন। কাজে কিছুতেই মন দিতে পারছিলাম না। অবশেষে গার্মেন্টস ছুটির পর ফোন দিলাম। জানতে পারলাম, তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘মা ক্লিনিকে’।

আল্লাহ যেনো এই ক্লিনিকের সাথে জড়িত সকল মানুষদের দুনিয়ার উপর এবং নিচে উভয় জায়গাতেই কঠোর থেকে কঠোর তব বিচার করেন। আমিন। (তাদের কিছুটা অবহেলা ছিলো)

রাত তখন ১২ টার কিছুটা পরে, আমার কাছে ফোন আসলো ‘কহিনুরের নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না হওয়ায় সীজার করতে হয়েছে’ এবং আমার মেয়ে জান্নাত ভালো আছে। ফোন দিয়ে সংবাদ টা জানালো আমার জ্যাঠাতো সমন্দি সামিউল ভাই। আমি পাগলের মত জিজ্ঞেস করতে থাকলাম ‘ভাইয়া, কহিনুর কই। আমি পাগলিটারে একটু দেখতে চাই’ ভাইয়া বললো মোবাইলে এমবি নেই, কার্ড ভরাতে হবে। আমি পাগলের মত বার বার ফোন দিতেই থাকলাম। এবং প্রায় আধা ঘণ্টা পরে, আমাকে কহিনুরের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হলো। কিন্ত তার কোনো উত্তর ছিলো না। শুধু চোখ বন্ধ, আমি বার বার ‘এই কহিনুর এই পাগলি বলে বলে ডাকতেছিলাম।’ প্লিজ চোখটা খোলো বার বার বলায়, সে চোখটা মিললো। তবে শেষ বারের মত, দুচোখ দিয়ে আমার দিকে একটি বার তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করলো। কথা গুলো লিখতে গিয়ে অঝোরে চোখের পানি ঝরে যাচ্ছে।
আমাকে আর কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো না। তার নাকি নিশ্বাঃস নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাই অক্সিজেন দেয়ার জন্যে নিয়ে যাওয়া হলো। এবং আমাকে জানানো হলো, আমি যেনো চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়ি। বোকার মত আমিও কোনো চিন্তা না করেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

খুব ভোরে আমার সমন্দি আবার ফোন দিলো-
- বিপুল ভাল আছো?
- ভাইয়া, আলহামদুলিল্লাহ। কহিনুর কেমন আছে, আমার মেয়ে কেমন আছে?
- ভালই আছে, তবে কহিনুরের একটু সমস্যা ওরে রংপুর নিয়ে গেছে। আমি বাড়িতে এলাম।

খানিক বাদেই আমার আব্বু কল দিলো, মনটা কেমন যেনো নারা দিলো। আব্বু ফোন দিয়ে খুব শান্ত ভাবে, কষ্ট চাপা রেখে বললো ‘বাবা, বাড়িতে আসো। কহিনুরের অবস্থা ভালো না। ওরে রংপুর নিয়ে যাচ্ছি। আমি বললাম, আব্বু আমার কাছে টাকা নেই। আসলে সেদিন বুঝেছিলাম, টাকার মূল্য কতটা। খুব কষ্ট করে, ১ হাজার টাকা ম্যানেজ করে গাড়িতে উঠলাম। কান্নায় ভেংগে পড়ছিলাম বার। মৃত্যু নয়, অসুস্থতার জন্য। আমি বার বার কহিনুরের সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম, আব্বু বার বার সেটা স্কিপ করে যাচ্ছিলো।

তারগাছ গাজিপুর এলাকায় থাকি। অটোতে করে, বাইপাস পর্যন্ত যেতে হবে কাউন্টারে। রস্তায় প্রচুর জ্যাম। আমার ছোট সমুন্দি ইলিয়াস ভাইয়ারে কল দিলাম, ভাইয়া টঙ্গিতে থাকে। ভাইয়া ফোন ধরেই কান্না করতে করতে বললো, সে গাড়ীর টিকিট কেটে আবদুল্লাহপুর দিয়ে যাচ্ছে। আমি তখনো জানিনা আসল ঘটনা। কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কেটেও বাসে উঠে বসে থাকতে হয়েছে প্রায় ৪০ মিনিট মত। টিকিটের দাম যা ছিলো তার থেকে ১০০ টাকা আমার থেকে বেশি নেওয়া হয়েছে, গাড়ির ভিতর ফেরত দিবে বলে। আমি খুবই কান্না করতেছিলাম, বুকের ভিতর এক শুন্যতা অনুভব হচ্ছিলো। আর তার সাথে জড়িত সকল স্মৃতি গুলো চোখের সামনে কেনো জানি ভেসে উঠছিলো বারবার। আমি বার বার ফোন দিচ্ছিলাম আমার আব্বুর কাছে। আব্বু ফোন বন্ধ করে রেখে দিয়েছে আমার জন্য। সামিউল ভাইকেও কল দিলাম বার বার, আমার দুলাভাই আতিয়ার কেও অনেক ফোন দিলাম কেও ফোন ধরেনা। আমার শশুরের কাছে ফোন দিয়েও ফোন রিসিভ হলোনা।

আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো, মাথার মধ্যে নানা ধরনের চিন্তা ভাবনা ঢুকে গেলো তখন। অবশেষে সামিউল ভাই ফোন ধরে জানালো, কহিনুর ভালো আছে। আমার মন বলছিলো কিছু একটা হয়েছে। সামিউল ভাইকে বললাম ভাই, আপনার পা ধরি আমায় সত্যিটা বলেন। আমার ফোন কেও ধরছে না কেনো। কহিনুরের কি হয়েছে। সামিউল ভাই বললো, কিছুই হয়নি। আমাদের তো বোন, কিছু হলে কি আমরা জানাতাম না। আমার স্পষ্ট মনে আছে, পিছনে কান্নার আওয়াজ শুনছিলাম। গলাটা কার চিনতে পারিনি। আব্বু ফোন দিয়ে বললো, বাবা তুমি সাবধানে আসো। আমি বললাম আব্বু তোমরা কোথায় এখন, আব্বু জানালো রংপুর যাচ্ছি। কহিনুরের অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করায় বললো- অবস্থা ভাল না, কি হয় বলা যাচ্ছে না। আব্বুর উত্তর আমার পছন্দ হলো না। আতিয়ার দুলাভাই ফোন ধরলো জিজ্ঞেস করলাম- ভাই কহিনুরের কি অবস্থা, ও কেমন আছে এখন? দুলাভাই কেমন যেনো অন্যরকম উত্তর দিলো। দুলাভাইয়ের উত্তর টাও পছন্দ হলো না। তবে দুলাভাই বললো- সে নাকি কহিনুরের কাছে অর্থাৎ রংপুর যাচ্ছে।

আমি সকলের কাছেই ফোন দিলাম, পরিচিত যত নাম্বার ছিলো কেওই সত্যিটা জানালো না। আমি বাসের মধ্যে খুবই কান্না করছিলাম। একা ছিলাম, আমার দিক থেকে। এভাবে প্রায় ১ ঘণ্টা পরে দুলাভাইকে ফোন দিলাম, দুলাভাই কেমন যেনো আমাকে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে বারবার। মনে হলো আমার কলে সে বিরক্ত। জিজ্ঞেস করলাম ভাই, কহিনুরের কাছে কি গেছেন। বললো না, এখনো যাইনি। একটা কাজে অন্য জায়গায় আসছি। আল্লাহর কশম তখন আমার বুকের মধ্যে দুলাভাইয়ের প্রতি কেমন যেনো বিরক্ত রাগ আর অভিমান হতে লাগলো।

আমার কান্না আটকাতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে আমার একশত টাকা বসের কন্টাকটরের থেকে ফেরত চাইলে সে আমার সাথে তালবাহানা শুরু করে। আমার মনের অবস্থা বুঝাতে পারব না। আব্বুর কাছে ফোন দিলাম, আব্বুকে জানালাম আমি রংপুর যাব নাকি পলাশবাড়ি অর্থাৎ আমাদের বাড়িতে নামব। আব্বু বাড়িতে নামতে বললো, বলছে- আমরাই ফিরে আসছি। রংপুর আসার দরকার নেই। আমি তখনো বুঝিনাই কি হয়েছে। আমার মামা ফেরদৌস রহমান কে ফোন দিলাম। মামাও কেনো যেনো খুবই শান্ত গলায় আমার সাথে কথা বললো। আমার থেকে কিছুটাকা ফ্লেক্সিলোড চেয়ে নিলাম। মামা ইচ্ছে করেই কথা বাড়ালো না, শুধু জিজ্ঞেস করলো কতদুর আসছি। এরই মধ্যে আমার পরিচিত বন্ধুরা অনেকেই ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে থকলো আমি এখন কতদুর। আমি সবটা কেমন যেনো মিলাতে পারছিলাম না, আমার মনের মধ্যে সকলের কথা গুলো এলোমেলো হয়ে আসছে। কহিনুরের স্মৃতি গুলো বার বার ফিরে ফিরে আসছে। আর আমি কান্না করছি, কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা।

দুলাভাই কল দিয়েছে কথা বলার মত স্থির থাকতে পারছিনা, শুধু কান্না আসছে। কথা বলতে গিয়েও পারিনি, শুধু এতটুকু বুঝলাম দুলাভাই আমায় বললো পাশের কাওকে মোবাইল টা দেয়া জন্য। নয়ন নামের একটা ছেলে ছিলো, বাসে উঠার পরে পরিচয় হয়েছিলাম। আমাদের পাশের এলাকায় তার বাড়ি। তাকে ফোন টা এগিয়ে দিলাম, দুলাভাই তার সাথে কি কথা বলেছে জানিনা। তবে নয়নের উত্তর গুলো ছিলো এমন-
“ঠিক আছে ভাই। আমি পাশের এলাকারই। আচ্ছা, আমি ওনার সাথে আছি। না, বলব না। ঠিক আছে, মোবাইল আমার কাছেই রাখছি”
এইসব কথা। নয়ন ভাই আমার মোবাইলের লক টা জেনে নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, বললো কিছুই না। আপনার ওয়াইফ অসুস্থ তাকে রংপুর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সে এখন ভাল আছে। আমার মন তখনো নানা বিষয় নিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। কেনো জানি মনে হচ্ছে কহিনুর বোধ হয় আর নেই। এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা পর, মোহাসিন নামের এক বড় ভাই। আমাদের পাশের এলাকায় বাড়ি। সে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করছে, আমি কতদুর। বললাম ভাই যমুনা সেতুর কাছাকাছি। সে আমায় বলতে থাকলো- বিপুল, মানুষ আসলে বেশিদিন থাকেনা। সবটাই আল্লাহর ইচ্ছে।
আল্লাহর জিনিস আল্লাহই নিলে কারো হাত নেই। আমি ওনার কথার আগা গোরা না বুঝে বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকলাম, ভাই কি হয়েছে আমারে সত্তিটা বলেন। আল্লাহর দোহাই লাগে, আপনার পায়ে ধরি। সে বললো কেনো- কেনো তুই জানিস না? আমি বললাম ভাই আমার সাথে কেওই ভাল ভাবে কথা বলছে না। অনেকেই ফোন ধরছেও না। আমারে বলেন প্লিজ।

সে বললো তোর বউ মারা গেছে।
আল্লাহর কসম করে বলছি, আমার পায়ের নিচে মাটি মনে হয় ছিলো না। একেবারে হঠাত করেই কান্না থেমে গেলো আমার। কি বললো বুঝতে পারলাম না, ভাবলাম হয়তো ভুল শুনলাম। সে আবার বললো, মরন কারো হাতে থাকেনা। তোর বউ বাচ্চা ডেলিভারির পর মারা গেছে। তাকে এখন রংপুর থেকে বাড়িতে নিয়ে আসতেছে। আমি আর কোনো কথাই বলতে পারিনি। কান্নার ধরন আমার পরিবর্তন হয়ে গেলো। আর তেমন কিছুই মনে নেই। তবে একটা জিনিস খুব করে মনে আছে। মনষত্ব। মানুষের নিক্রৃষ্ট মনমানসিকতা। আমার কান্না শুনে, গাড়ির কিছু যাত্রী আমায় ধমক দেইয়া শুরু করলো। বললো বউ মরলে মানুষ কাদে নাকি। বউ মারা গেলে নাকি মানুষ খুশি হয়, এটা নাকি খুশির সংবাদ। আমায় খুব বাজে বাজে কথা বলতে লাগলো, আমি নাকি কাপুরুষ ইত্যদি। হয়তো এই সব লোকের জন্যেই রংপুর কে মানুষ মফিজ বলে। আমার তাদের কথার উত্তর দেয়ার মত ধৈর্য্য সাহস শক্তি কিছুই ছিলো না। তাই জবাব দিতে পারিনি।

সেদিন বুঝেছিলাম, মানুষ আসলে কতটা মনষত্বহীন হতে পারে। বাসের কণ্টাকর এই ঘটনা জানার পরেও আমার ১০০ টাকা ফেরত দিতে চায়নি। আর আমার সহযাত্রীরা আমার প্রতি অনেকেই বিরক্ত ছিলো, কান্নার জন্য। বউ মরে গেলে কেনো কান্না করছি এজন্য। অথচ সেইসব লোকদের অন্য লোকেরা নিষেধও করেনি। তারপরের দৃশ্য গুলো সম্পর্কে আর কিছুই বলার নেই। শান্তি নেই মনে। হ্যাঁ, তার মৃত্যুর পর থেকেই হারিয়ে ফেলেছি শান্তি।
আল্লাহ যেনো আমার পাগলি কহিনুর পারভীন কে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম দান করেন, আমিন।

-বিপুল শেখ
১০ই জুলাই ২০২৫

বাহিরে হাসি থাকলেও ভেতরে বিষাদের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন.!😓💔🥀
10/07/2025

বাহিরে হাসি থাকলেও ভেতরে বিষাদের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন.!😓💔🥀

অভিমানী জ্বর কি শুধু আমায় পোড়ায়? তোমায় পোড়ায় নাহ্? কথা বলার তৃষ্ণায় শুধু কী আমার গলা শুকায়? তোমার শুকায় নাহ্.?😥💔🥀
09/07/2025

অভিমানী জ্বর কি শুধু আমায় পোড়ায়? তোমায় পোড়ায় নাহ্? কথা বলার তৃষ্ণায় শুধু কী আমার গলা শুকায়? তোমার শুকায় নাহ্.?😥💔🥀

অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে নিতেই মালাকুল মউত এসে হাজির হয়ে যাবে.!☺️💔
09/07/2025

অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে নিতেই মালাকুল মউত এসে হাজির হয়ে যাবে.!☺️💔

Address

Palashbari, Gaibandha
Rangpur
5730

Telephone

+8801738609482

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when কালো পরীর বর posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to কালো পরীর বর:

Share

Category