11/06/2025
হিংসা এক মারাত্মক নৈতিক ব্যাধি, যা মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তি অন্যের সুখ, সাফল্য বা উন্নতি দেখে অসন্তুষ্ট হয় এবং তার ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণ করে। সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে হিংসার প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর।
হিংসা কি? -------দেখতে কেমন? -----------
হিংসার কোন ভৌতিক রুপ নেই। এটি মূলত ব্যক্তির মানসিক অবস্থার একটি বিকৃত বা অসুস্থ রুপ যা ব্যাক্তির আচরণে প্রকাশ পায়।
ধরুন, কারো ভালো কিছু দেখে অসহ্যবোধ করা বা তার অকল্যাণ কামনা করা কিংবা ওই ব্যক্তির ভালো বিষয়টির ধ্বংস চাওয়াকে হিংসা-বিদ্বেষ বা ঈর্ষা বলে।
প্রথমত, হিংসা মানুষের মানসিক শান্তি নষ্ট করে। যে ব্যক্তি হিংসা পোষণ করে, সে কখনোই সুখী থাকতে পারে না। সে সব সময় অন্যের ক্ষতি কামনা করে এবং নিজের উন্নতির চিন্তা ভুলে যায়। ফলে তার জীবন হয়ে ওঠে অস্থির ও দুঃখময়।
দ্বিতীয়ত, হিংসা ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। হিংসুক ব্যক্তি পরিবার, বন্ধুবান্ধব এমনকি সহকর্মীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। এতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যায়। সমাজে বিরাজ করে অবিশ্বাস, হানাহানি ও বিদ্বেষ।
তৃতীয়ত, হিংসা মানুষের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করে দেয়। হিংসাপরায়ণ ব্যক্তি মিথ্যা, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদির আশ্রয় নেয়, যা তাকে একদিন সমাজের চোখে ছোট করে তোলে।
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় হিংসাকে ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইসলামে হিংসা একটি গুনাহ হিসেবে বিবেচিত, হিন্দু ধর্মে হিংসা ত্যাগ করাকে পুণ্য বলা হয়েছে, এবং বৌদ্ধ ধর্মে হিংসা ত্যাগের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
ইসলাম সত্য ও সুন্দর ধর্ম। এ ধর্মে আছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মানবতা। সবাইকে ভালোবাসাতেই ইসলামের সৌন্দর্য। কাউকে হেয় করা, তুচ্ছ করা, হিংসা করাকে ইসলাম সমর্থন করে না।একজন মুমিন কখনই আরেক ভাইয়ের ভালো ও কল্যাণের বিষয় দেখে অসহ্যবোধ কিংবা হিংসাতুর হতে পারে না। এতে করে যে নিজের ক্ষতিই সাধিত হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেকিকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে অর্থাৎ জ্বালিয়ে দেয়’- (আবু দাউদ : ৪৯০৩)।
প্রতি হিংসার কত বড় গুনাহ তা বোঝাতে গিয়ে ইমাম গাজ্জালী (রহ.) লেখেন, ‘পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পাপ হলো হিংসা। বাবা আদম (আ.)-এর মর্যাদা দেখে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় আল্লাহর অতি প্রিয় "আজাজিল ফেরেশতা"। ঈর্ষা ও হিংসা থেকেই তার মনে জন্ম নেয় অহংকার। আর অহংকারের কারণেই সে আদম (আ.)-কে সিজদা করতে অস্বীকার করে। এতে মহান রব প্রচন্ড অসন্তুষ্ট হন, ফলে সে চিরদিনের জন্য ঘৃণিত ও অভিশপ্ত ইবলিস শয়তানে পরিণত হয়ে যায়।’
এর পর ইমাম গাজ্জালী আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি লেখেন, ‘একবার মুসা (আ.) দেখলেন এক ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ায় বসে আছেন। তিনি ভাবলেন, এ ব্যক্তি নিশ্চয় খুব বুজুর্গ লোক হবে। তাই তার এত মর্যাদা। মহান আল্লাহকে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এ ব্যক্তির নাম-ঠিকানা কী? আল্লাহতায়ালা তার পরিচয় না বলে বললেন, মুসা! এ লোক কোন আমলের দ্বারা এত মর্যাদা পেয়েছে জানো? সে কখনো কারো প্রতি ঈর্ষা ও বিদ্বেষভাব পোষণ করেনি। তাই আমার কাছে সে এত বড় মর্যাদা পেয়েছে- (কিমিয়ায়ে সাদাত : চতুর্থ খন্ড, ৯২-৯৩ পৃ.)।
অন্যের ভালো দেখে অন্তর্জ্বালায় ভোগা মুনাফিকের চরিত্র। আর এমন পরিবেশে মুমিনের কর্তব্য হলো ধৈর্য অবলম্বন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ভালো কিছু হলে তারা কষ্ট পায় আর তোমাদের কোনো বিপদ দেখলে তারা আনন্দিত হয়। (এমন পরিস্থিতিতে) তোমরা অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে এবং তাকওয়ার সঙ্গে কাজ করবে। তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সুরা আলে ইমরান : ১২০)।
পাশাপাশি আরেকটি কাজ করতে হবে। যা প্রিয়নবী (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের শিখিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, (হে নবী আপনি বলুন!) আমি হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় চাই, যখন সে হিংসা করে-’ (সুরা ফালাক : ৫)। সব সময় আল্লাহর কাছে এভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
কারো ভালো কিছু দেখে তা নিজের জন্য কামনা করা ক্ষতির নয়, যদি এতে অন্যের জন্য অমঙ্গল কামনা করা না হয়। বরং ইবাদত ও আমলের ক্ষেত্রে এমন মনোভাব খুবই প্রশংসনীয়। তাছাড়া অন্যের ভালো সহ্য করতে পারাটা পারিবারিক সুশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত 👌
হিংসা কখনো কারো উপকারে আসে না, বরং তা নিজের ও সমাজের সর্বনাশ ডেকে আনে। তাই আমাদের উচিত হিংসার বদলে সহানুভূতি, উদারতা ও ভালোবাসা চর্চা করা। তবেই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারবো,ইনশাআল্লাহ 🤲