15/11/2024
" এক সময়ের প্রাণচঞ্চল মানুষটাও এক সময় হতাশ হয়ে উঠে। আলোতে যে খিলখিল করে হাসত, সে একসময় অন্ধকারে হারাতে চায়। পজিটিভ মানুষটা ক্রমশঃ নেগেটিভ হতে শুরু করে, হারানোর বা হারিয়ে যাওয়ার ভয় পায় না বরং নিজে হারিয়ে দেয়, কাউকে আপন ভাবতে, মিশতে, কথা বলতে ইতস্তত বোধ করে। সব কিছু থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চায়। খোলা আকাশের নীচে শ্বাস নিতে চায় না, শুকনো পাতায় দোল খায় না, রাত জেগে নিশ্চুপভাবে শুধু ভেবে যায়, শব্দ খুঁজে পায় না বলার মত,চায় একটা দমবন্ধ ঘর হোক, যেখানে তার শ্বাস বায়ু থেমে যাবে। মিশে যেতে চায় পৃথিবীর গহীন অতলে।"
কথাগুলো খুব নেগেটিভ লাগছে তাই না!
কিন্তু মানুষগুলো কেন এমন হয় ?
হঠাৎ করেই কি এমন হয় যায় !
খুঁজেছেন কখনো সেই রহস্য!
তাহলে শুনুন ---না ,হয় না।
পৃথিবীর কোনো পরিবর্তন একদিনে আসে না, তা সে হোক বিপ্লবে, কিংবা মানুষের মনে। যেভাবে জলের চাপে পাথর ক্ষয়ে গিয়ে গর্ত তৈরি করে, ঠিক সেভাবে মানুষটাও ক্ষয়ে যেতে থাকে হৃদপিণ্ডের চার ইঞ্চি গভীরে থাকা মন নামক বস্তুটি, যার আধিপত্য মস্তিষ্কের সুষুম্নাকান্ড অবধি। পিট্যুইট্যারির বোকা খেলায় তাদের কাছে মায়া মোহ, ভালোবাসা, আবেগ ঘুণ ধরা বাঁশের খুঁটির মত হয়ে উঠে। ঠিক তখনই পজিটিভ সেন্সের মানুষটা ধীরে ধীরে ভাবতে শুরু করে তার চারপাশে সব কিছু যেন ব্যর্থতার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে। আর এভাবেই পাল্টায় মানুষ। তখন তার মস্তিষ্ক হয়ে উঠে যান্ত্রিক আবহবিকারের শল্কমোচনের মত, যার মনের পরতে পরতে পড়ে থাকে নিষ্প্রাণ কিছু কাঁচের গুঁড়ো, যে আয়নায় সে মুখ দেখত , তা কখনো ভেঙে গিয়েছে টের অবধি পায় না।
এই ধরনের মানুষগুলোকে নিয়ে অনেকে উপহাস করে, কেউ সান্ত্বনার নামে গর্তের গভীরতা বাড়িয়ে দেয়। যেন সে সমাজের খাদ্য।
তবে কী জানেন! মানুষগুলো প্রথম থেকে এমন থাকে না। কখনো খোঁজ নিয়ে দেখবেন, মানুষগুলো একসময় সহজ, সরল, প্রাণ খোলা ছিল। জীবনে বাঁচার নেশায় আসক্ত ছিল। দোতলার বারান্দার বসে কবিতা লিখত, প্রেমে পড়ে উপন্যাস লিখতে চাইত। ভাগ করে নিতে চাইত সর্বসুখ।সময়ের নিরিখে ক্লান্ত হয়ে আজ আর আঁকিবুকি কাটতে চায় না।
কিন্তু সেই জীবনে বাঁচার নেশায় আসক্ত মানুষটাকে জীবন কখনো এতো জোরে ধাক্কা দেয়, যে মানুষটা কেমন যেন নুইয়ে যায়! কথা বলতে চেয়েও বোবা হয়ে যায়, আর তখনই কিছু মানুষ তাকে হাসির খোরাক বানিয়ে দেয়, ক্ষতের গভীরতা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে, অসহায়তা, একাকীত্ব তাকে চেপে ধরে। আর তখনই মানুষটা নিস্তেজ হয়ে যায়। সমাজ তাকে ভালোবেসে ডাকে মানসিক রোগী।
তবে জানেন তো আমাদের একাদশেন্দ্রিয়ের মধ্যে একটা অন্তরীন্দ্রিয় রয়েছে, আর সেটি মন। যার উপর সহজে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না , যারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তারা মহাপুরুষ - মহীয়সী হয়ে উঠে। কিন্তু সবাই রবি ঠাকুর নয়,যে মৃত্যুঞ্জয় রচনা করবে। তাই মানুষগুলো চোখের জলে ডুবে যায়, যেমন করে ভারী পাথর জলের নীচে নিজেকে ক্রমশঃ ডুবিয়ে দেয়।
তাই একান্ত অনুরোধ এইসব মানুষদের মানসিক রোগী বলা বন্ধ করুন, তাকে সান্ত্বনা দিয়ে গর্তের গভীরতা নাই বা বাড়ালেন। বরং চেষ্টা করুন তার মধ্যে আলোর সঞ্চার করতে যেন সেই মানুষগুলো সুনীলের নীরা হয়ে উঠতে পারে। পাহাড়ি ঝর্নার মত আছড়ে নামতে পারে জীবনানন্দের বুকে!😌❤