মেহেদী হাসান

মেহেদী হাসান ✍️ মাটির দেহ একদিন মাটিতেই শেষ
হয়ে যাবে💔

25/09/2025
25/09/2025

✍️আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন 🥰

✍️সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন,,
23/09/2025

✍️সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন,,

🎉 I earned the emerging talent badge this week, recognising me for creating engaging content that sparks an interest amo...
15/09/2025

🎉 I earned the emerging talent badge this week, recognising me for creating engaging content that sparks an interest among my fans!

15/09/2025

বৃষ্টি বিলাস ঢাকা শহর

14/09/2025

✍️আসসালামু আলাইকুম
সবাই কেমন আছেন
শুভ বিকাল🥰

Thanks for being a top engager and making it on to my weekly engagement list! 🎉 Puja Ghosh, মিষ্টি আম্মুর দুষ্টু মেয়ে, ...
10/09/2025

Thanks for being a top engager and making it on to my weekly engagement list! 🎉 Puja Ghosh, মিষ্টি আম্মুর দুষ্টু মেয়ে, মায়া বতী, Shopner Soya, তামিম ইকবাল, Hasan Mahmud, Anu Malakar, Rome Islam, Ruksona Begam, নীল আকাশ নীল প্রজাপতি, Raika Jahan, মোঃ জসিম আহমেদ বাবু, Bijoy Sharma, অচেনা মানুষ, ঘুম পাগলী, Bonna Islam

✍️সবাই কেমন আছেন,অনেক দিন পর আসলাম
06/09/2025

✍️সবাই কেমন আছেন,অনেক দিন পর আসলাম

🎉 Facebook recognised me as a top rising creator this week!
06/09/2025

🎉 Facebook recognised me as a top rising creator this week!

✍️তোমাকে_চাই #পর্ব  ।১২।নাওফিল কিছু না বলে উঠে আলমারির কাছে চলে যায়। প্রিয়তার উত্তেজনা নিমিষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ভেবেছিল...
26/08/2025

✍️তোমাকে_চাই
#পর্ব ।১২।

নাওফিল কিছু না বলে উঠে আলমারির কাছে চলে যায়। প্রিয়তার উত্তেজনা নিমিষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ভেবেছিল নাওফিল খুশি হবে, কিন্তু নাওফিলের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না সে খুশি হয়েছে।
নাওফিল ফিরে এসে, খাটে বসে র'ক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা ভয়ে ঢোক গিলল। নাওফিল রুক্ষকন্ঠে বলল,
- এখানে আসো।

প্রিয়তা এলো। নাওফিল প্রিয়তার হাত টেনে হাতে মলম লাগিয়ে দিয়ে বলল,
- গতকাল এতকিছু ঘটল তোমার সাথে। ঠিকভাবে হাটতে পারছ না, বামহাতের রাঙা ব্যান্ডেজ নিয়ে রান্না করেছ। আমি এসবের অযুহাত দিয়ে তোমার ইচ্ছার বিরোধিতা করবো না প্রিয়। তোমার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে নিজের মর্জিমাফিক চলার, কাজ করার। আমার কেবল একটাই অনুরোধ, অন্যদের কথা ভাবতে গিয়ে নিজেকে ভুলবে না। বাকি রইল স্বামীর কর্তব্য! নিজের প্রতি যত্নশীল এবং কাজে সাবধানতা অবলম্বন করতে না পারলে তোমার রান্নাঘরে ঢোকা নিষেধ। আমি এক কথা একাধিক বার বলা পছন্দ করিনা,দ্বিতীয়বার যেন স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখবে। ওকে?

প্রিয়তা প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
- কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
- ঠান্ডা হোক, নষ্ট হোক, বিষ হয়ে যাক। ওদিকে গুরুত্ব না দিয়ে হাতের দিকে তাঁকাও। লাল হয়ে গেছে চামড়া। কি ফেলেছ হাতে?
- চা ঢালতে গিয়ে পড়ে গেছে।
- তুমি লেফট হ্যান্ডেড?
- না। কেন?
- তাহলে ডানহাতে পড়ল কি করে? কে ফেলেছে চা? সাবা আপু? না। সুহা নাকি?
- আশ্চর্য ওরা কেন আমার হাতে চা ফেলবে?

নাওফিল চোখ রাঙাল। প্রিয়তা চুপসে যায়। নাওফিল হাতে ফু দিতে দিতে বলল,
- আমি নির্বোধ না।বউয়ের নালিশ শুনে বোনের সাথেও তর্ক করবো না। ওসব তোমাদের ভাবি-ননদের ব্যাপার। আমি শুধু সত্য জানতে চেয়েছি। আশা করছি নেক্সট টাইম থেকে সত্য বলবে।
- সব সত্য বলতে নেই নওফিল।
- তুমি খারাপ মেয়ে নও, খারাপ বউও নও। বরের কান ভাঙানো তোমার স্বভাব না জানি আমি কিন্তু আমারও জানা উচিত আমার পরিবারে কার কার মনে তোমার জন্য বি'দ্বে'ষ ভাব আছে। আমি পরামর্শ দিতে পারবো তাদের অভিমান ভাঙানোর। সুহা খেতে পছন্দ করে, ওর পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াও।ও ডাবচিংড়ি..
- বিরিয়ানি, বিফকারি পছন্দ ওর।
নাওফিল ভ্রুঁ কুঁচকে তাঁকাতেই প্রিয়তা বলল,
- তুষার ভাই বলেছে।
নাওফিল প্রাউডভাব নিয়ে বলল,
- একদিনে ঘেটে ফেলেছ, এক্সিলেন্ট। তাহলে আর কি? আমাকে তো কোনো কাজেই লাগছে না। তুমি একাই যথেষ্ট সবটা সামলানোর জন্য। তাহলে দুদিনের জন্য বাড়ি ছাড়তে পারি আমি। কি বলো?
- কোথায় যাবেন?
- কাঁদের চাচা আর মৌসুমি চাচির খোজে। তুহিন ফোন করেছিল, বলছিল খোজ পেতে একদিন লাগবে।
- আচ্ছা।
- জিজ্ঞেস করবে না, একদিন লাগলে দুদিনের জন্য কেন যাবো? স্বামীর খোজখবর রাখা শেখো। নয়তো কোনদিন দেখবে সতীন এনে হাজির করেছে। তোমার যা অবস্থা, মনে হচ্ছে দ্রুত আরেকটা বউ আনতে হবে।

প্রিয়তা বিরক্তি নিয়ে তাঁকায়,কফিমগ এগিয়ে দিয়ে বলে,
- আম্মু বলেছে, আপনি জীবনে প্রথমবার যে মেয়ের কথা তাকে বলেছেন সেটা..

নাওফিল প্রিয়তাকে দ্রুত থামিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল,
- আম্মু দেখছি আমাকে বরবাদ করে ছাড়বে। বউয়েরা জাত সব এক। স্বামীর দুর্বলতার প্রতি এদের আকর্ষন বেশি। আমার আব্বু ভুগছেন, তাকে ভুগিয়ে শান্তি নেই, এবার আমাকে ভোগানোর প্লান করছে, তাও তোমার মত বউমার সাথে যৌথ পরিকল্পনা করে।

- আপনার মনে হয়না আপনি বেশি কথা বলেন?

নাওফিল চুঁমু খাওয়ার ভঙ্গিতে দু-হাত বাড়িয়ে প্রিয়তাকে কাছে ডেকে বলল,
- আসো আমার বেশি কথা বলা বন্ধ করো। কাম ফাস্ট প্রিয়।
প্রিয়তা নিমিষে দূরে সরে দাঁড়াল। পায়ে টান লাগল, মৃদু স্বরে আর্তনাদ করল ব্যাথায়। হাত ও পা আগে থেকেই অবশ হয়ে আসছিল, এবার পুরোদমে অসাড়তা বৃদ্ধি পেল। নিরুপায় হয়ে খাটের এককোণায় গাল ফুলিয়ে বসল প্রিয়তা। এরপর আর'ক্ত চেহারায় বলল,
- আপনি একজন চূড়ান্ত মাপের নির্লজ্জ পুরুষ।
নাওফিল সকালের নাশতা করেই চলে যায়। এটা নিয়ে সাবা আপুরা অয়ন ভাইদের সঙ্গে হাসিতামাশাও করে। বিয়ের পরেরদিনই বরের চলে যাওয়া ভালো ইঙ্গিত দেয় না। যদিও ওরা যা ভাবছে তা সত্য নয় তবু মনটা খারাপ হলো প্রিয়তার। কেমন বিষন্নতা ঝেঁকে বসলো। দুপুরের খাবার নিলেও প্রিয়তা খেতে পারেনি।বিকেলে নাওফিল ফোন করলে টুকটাক কথা বলে কল কেটে দেয়। সন্ধ্যার পুরোটা সময় ঘুমিয়ে কাটায়। রাতে নিচে নামল না, সাবা আপুরা আজ চলে যাবে। যাওয়ার আগে প্রিয়তাকে দেখতে চায়না সাবা। নাজনিন বেগম সব শুনে সাবাকে বকাবকি করলেন। ধমকে নানা কথা শুনিয়েও দিলেন।মা-মেয়ের মধ্যে অভিমানের সূচনা ঘটল, অথচ সেসব কিছুই জানতে পারলো না প্রিয়তা। একরাশ বিষন্নতা নিয়ে বালিশে মুখ গুজে পড়ে রইল। রাত আটটা,নাজনিন বেগম ভাতের থালা নিয়ে হাজির। প্রিয়তা চোখের ওপর হাত রেখে শুয়েছিল। তাকে দেখে দ্রুত গায়ে ওরনা জড়িয়ে উঠে বসে। চেহারা মলিন হয়ে আছে প্রিয়তার। সেটা দেখে নাজনিন বললেন,

- সাবা-রা চলে গেছে। যাওয়ার আগে স্বীকার করেছে নিজের ভুলগুলো।
- ওসব কোনো ব্যাপার না আম্মু। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে এমন বলেছে। ওনার জায়গায়, অন্যকেউ থাকলে সেও এসবই বলত।
- ওর এসব বলা উচিত হয়নি।সাবা অন্যকেউ নয়, যার ব্যাপারে ও কথা বলেছে সে ওরই ছোট ভাইয়ের বউ। এটা ওর মাথায় রাখা উচিত ছিল।

প্রিয়তা খেয়াল করে নাজনিন বেগমের কথার ধাঁচের সঙ্গে নাওফিলের কথার ধরণ হুবহু এক। মা-ছেলে দুজনেরই হঠাৎ নরম হঠাৎ গরম হওয়া স্বভাব। প্রিয়তা ভাতের থালা দেখে বলল,
- আপনি কষ্ট করে এসব আনতে গেলে কেন? আমি তো একটু পর নিজেই গিয়ে খেয়ে আসতাম।
- দুপুরে বিশ্বাস করেছিলাম, খেয়েছ?
- খেতে বসেছিলাম।
- কিন্তু গলা দিয়ে ভাত নামেনি। এখনও রেখে যাবো, রাতে খাওয়া হবে না। আর আমার ছেলে ওখান থেকে ফোনের পর ফোন দিয়ে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দেবে। দেখো মেয়ে, আমার রাতের ঘুম ভীষণ মূল্যবান। নিজের স্বামীর জন্য সেটা নষ্ট করিনা সেখানে তোমার পাগল স্বামীর জন্য নষ্ট করবো? দ্রুত খেয়ে নাও। আমি তোমাকে খাইয়ে তোমার বরকে খবর পাঠিয়ে, তারপর যাবো।

প্রিয়তা শব্দ করে হেসে ফেলল। নাজনিন অবাক হয়ে বললেন,
- হাসছ কেন?
- আপনারা দুজন একই রকম।
- একদম না, তোমার বর আমাকে কপি করে।

প্রিয়তা হেসেই চলেছে। নাজনিন বেগম তাকে খাইয়ে দিচ্ছেন আর নাওফিলের নানা গল্প বলে শোনাচ্ছেন। কথার মাঝে, খাওয়া শেষ। এরপর নাজনিন প্রিয়তাকে বললেন নাওফিলকে কল করতে। প্রিয়তা নাম্বার ডায়াল করে নাজনিনকে ফোন দিল।

নাজনিন ফোন কানে নিয়ে প্রিয়তার হাসিমুখ দেখছে। এই হাসি দেখে শুধু তার ছেলে কেন উনি নিজেও মুগ্ধ হয়েছেন। মনে মনে ভাবলেন তার ছেলের পছন্দ একদম তার মত। কল রিসিভ করেই নাওফিল গদগদকণ্ঠে বলল,

- হ্যাঁ বউ বলো। খাওয়া শেষ? কোনো সমস্যা হয়নি তো? সব ঠিক আছে? একা থাকতে পারছ? কাজের চাপ না থাকলে আমি এক্ষুনি চলে আসতাম। কি করবো বলো.. বুঝোই তো, গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নাহলে বিয়ের পরেরদিন কোন আহম্মক বউ রেখে চলে আসে। কথা বলছ না কেন? প্রিয়, শুনছ? ও বউ।

- আহাম্মক! বউ নয় আপনার মা বলছি।

ওপাশ থেকে ভীষম খেল নাওফিল, স্পষ্ট টের পেলেন নাজনিন। ছেলের কথার সুর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার ওই বদমেজাজি ছেলে বউয়ের মন ভোলানো শিখতে শুরু করেছে? যাক বাপের মত হয়নি ভেবে খুশি হলেন তিনি। কিন্তু কথোপকথন দীর্ঘায়ত করতে পারবেন বলে মনে হয়না। তাই ফোন প্রিয়তার কাছে দিয়ে প্লেট নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন। প্রিয়তা ফোন কানে দিয়ে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,

- কি হলো? আম্মু চলে গেল কেন?আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল তো। কি বলেছেন আপনি?
- বলদ তুমি? ফোন আম্মুর হাতে দিয়েছ কেন? আগে নিজে কথা বলে দিতে পারোনি?
- নিজে বললেও বা কি? আম্মু চাইল কথা বলতে তাই আগে আম্মুকেই দিলাম। আর একমিনিট, ফোন আগে দেওয়ার সাথে বলদ শব্দের সংযোগ কি? প্রথমদিন থেকে দেখছি ব-বর্গীয় অপমান করে চলেছেন। নিজেকে খুব শেয়ানা মনে করেন?
- খুব শেয়ানা না হলেও তোমার থেকে বেশি বুদ্ধিমান। এরপর থেকে ফোন করে আগে নিজে কথা বলবে তার পর বাকিদের ফোন দেবে। কথার যেন নড়চড় না হয়।
- আম্মুকে কি বলেছেন বলুন তো।
- যা তাকে বলার কথা নয়। যখন শোনাতে চেয়েছিলাম তখন তো শুনলে না এখন শুনে কি লাভ? ফোন রাখো।
- আচ্ছা।
- এই মেয়ে.. ফোন রেখে দেখো। আজ রাতে এসেই তোমাকে সিধে করে ফেলবো।সারাদিন পর শান্তিতে বসে একটু কথা বলছি, আর উনি ফোন কেটে দিচ্ছে।
- আপনিই তো বললেন, ফোন রাখো।
- রাখতে বললেই রেখে দেবে? বাকি যেসব বলি সেসব শুনে চলো? শুধু আমার থেকে দূরে যাওয়ার পথগুলো অনুসরণ করো। সত্যি করে বলো তো। আমার ওপর আগ্রহ নেই কেন? আমার থেকে ভালো কেউ নজরে পড়েছে?
- পড়লে?
- কিছু না, আমি আবার বউকে সন্দেহ করিনা। খুবই ভালো বর কিনা.. তবে.. আসলেই কি পড়েছে?

প্রিয়তা ঠোঁট চেপে হাসছে। নাওফিল সিয়ামের সাথে কথা বলছে। তাদের কথা বলা শেষে নাওফিল পুনরায় বলল,
- পাওয়া গেছে। আমাকে যেতে হবে। রাত জাগবে না। ঘুমিয়ে পড়।
- নিজের খেয়াল রাখবেন।
- তুমিও।
।১৩।

সুহার জন্য ডাবচিংড়ি করেছে প্রিয়তা, মৃদুলের জন্য হাঁসের ঝোল। বাকিদের জন্য নরমালি যে খাবার হয় রেগুলার তাই।সুহা আজ কিছু না বলে চুপচাপ খেয়েছে। প্রিয়তা বুঝল, একদিনে বন্ধুত্ব করা সম্ভব নয়। সম্পর্কে সময় দিতে হবে। দুপুরে খেয়ে ছাদে এসেছিল সে। ছাদের দরজা খুলতেই মাথার ওপর পানির ঝাপটা এসে পড়ে। সঙ্গে হাসির শব্দ। প্রিয়তা সামনে তাঁকিয়ে দেখল, মিরাজ, বৃষ্টি ও সফি দাঁড়িয়ে হাসছে। সফি হাসি থামিয়ে ভালো মেয়ের মত বলল,

- সরি, আমরা ভেবেছি সুহা। তুমি তো ভিজে গেলে পুরো। কাকভেজা হয়ে গেছ। জলদি গিয়ে চেঞ্জ করে নাও নয়তো অসুস্থ হয়ে যাবে। তখন আবার ভাইয়াকে সব কাজ ফেলে চলে আসতে হবে বউয়ের সেবা করতে।

প্রিয়তা নাক টেনে বলল,
- হুম। তোমার ভাইয়া তোমাদের জন্য গিফট কিনেছিল সফি, এসো সেগুলো নিয়ে যাবে।আমি বের করে রেখেছি সব।
- ভাইয়া কিনেছে? বৃষ্টি চল তো গিয়ে দেখি।
- হ্যাঁ, দ্রুত চল।

প্রিয়তাকে একপ্রকার উপেক্ষা করে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল সবাই। যাওয়ার আগে বৃষ্টি প্রিয়তার বাহুতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে গেল। ধাক্কায় জোর ছিল, পেছনের দরজার সাথে পিঠ ঠেকে গেল প্রিয়তার। হালকা ব্যাথা পেল পিঠে। শিরদাঁড়ার সোজা লেগেছে। কেমন অবশ হয়ে উঠল ক্ষণিকের জন্য। কয়েকমুহূর্ত পর ঠিক হতেই সে নেমে এলো নিচে। ঘরে, বিছানার ওপর বসে ওরা র‍্যাপিং পেপার খুলে গিফট দেখছে। পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাগজের টুকরো, পলিথিন। ওয়াশরুমের সামনে মাটির ফুলদানিটাও ভেঙে পড়ে আছে। মিরাজ বলল,

- সফি আপু ভুল করে ভেঙে ফেলেছে। কিছু মনে করোনি তো ভাবি..
- না। তোমরা বসো, আমি চেঞ্জ করে আসি।

কাপড় নিয়ে প্রিয়তা ওয়াশরুমে ঢুকতেই ভেঙাল সফি,
- তোমরা বসো.. যেন উনি বলবে তারপর আমরা বসবো। আমাদের ভাইয়ের ঘর, আমরা বসবো, শুবো, নাচবো, যা ইচ্ছে তাই করবো।
বৃষ্টি বলল,
- কাঁচের গ্লাসটা ফেলা উচিত ছিল, হাতেপায়ে ফুটলে ভালো লাগত।
মিরাজ উৎসুক গলায় বলল,
- আমি ফেলবো আপু?
সফি বলল,
- জিজ্ঞেস করার কি আছে? যেভাবে ইচ্ছে জ্বা'লাবি ওকে।
- আম্মু কিছু বলবে না তো?
- আমি আছি না? কিছু বললে আমি দেখবো।

প্রিয়তা থ্রিপিচ পড়ে বাইরে আসতেই বেখেয়ালে কাঁচের টুকরোর ওপর পা ফেলল। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে নিচে তাঁকাতেই দেখল ঘরের ঠিক মাঝখানে পানির গ্লাস টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে। বৃষ্টি মেকি চিন্তা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল,
- ভাবি কি হলো? ঠিক আছ?

প্রিয়তা মাথা নেড়ে জানায় সে ঠিক আছে। আসলে যে কেমন আছে তা কিভাবে প্রকাশ করবে? পা কেটে র'ক্ত বের হচ্ছে। মেঝেতে র'ক্তের ছোঁপগুলোর শুকিয়ে যাচ্ছে দেখে প্রিয়তা দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেল। পা ধুয়ে, ফুটে থাকা ছোট কাঁচের টুকরোটা বের করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা ওরনা ছিড়ে ফেলল, সেটা পায়ে বেঁধে চটজলদি বেড়িয়ে এলো। একটু পরেই নাওফিল ফিরবে। দ্রুত ঘর গোছাতে হবে। এভাবে দেখলে ওর খারাপ লাগবে। ব্যাথা পা নিয়ে ঘর ঝাড়ু দিল প্রিয়তা। কাঁচের টুকরো তুলে ঘরের কোণে থাকা ঝুড়িতে রাখলো। এরপর ঘর মুছে শান্ত হয়ে বিছানায় বসে। সফি জিজ্ঞেস করে,
- তোমাকে কি দিয়েছে ভাইয়া?

প্রিয়তা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তিনটি বক্স বের করে দিল। একটাতে ব্রান্ডেড পার্ফিউম, ঘড়ি ও ব্রেসলেট। বৃষ্টি বলল,
- এসব দেখাচ্ছ কেন? দামি কিছু দেয়নি নাকি?
- ব্যস্ততায় দিতে ভুলে গেছে। এগুলো বিয়ের শপিংয়ের দিন দিয়েছিল। বিয়ের পর কিছু দেয়নি।

সফি প্রিয়তার হাতের দিকে তাঁকিয়ে বলল, "আংটিটা তো সুন্দর। দেখি তো.."
প্রিয়তা খুলে দেয়। সফি নিজের আঙ্গুলে আংটি পড়ে বলল,
- আমার হাতে মানিয়েছে না বৃষ্টি?
বৃষ্টি সায় দিল। প্রিয়তা বলল,
- তাহলে ওটা তুমি রাখো। আমার কাছে আরও কয়েকটা আছে, দেখবে?
বৃষ্টি বলল,
- দেখালে দেখে না কে? যদি চাও দেখাতে পারো। পরে যেন বলো না আমরা দেখতে চেয়েছি।

প্রিয়তা হেসে নিজের গহনার বাক্স বের করে দিল। সফি ও বৃষ্টি নিজেদের ইচ্ছেমত পছন্দ করে নিল। সুহাও এসে একটা নেকলেস নিয়ে যায়। সবাই চলে গেলে বিছানা ঝেরে সবকিছু ঠিকঠাক করে শুয়ে পড়ে প্রিয়তা। ওদের বুঝতে দেবে না বলে স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাথা পায়ে আবার ব্যাথা পেয়ে জ্বরজ্বর ভাব এসেছে। চোখ জ্বলছে, তাই আলো নিভিয়ে দিল।

প্রিয়তার ঘুম ভাঙে নাওফিলের ডাকে। নাওফিল এসে প্রিয়তাকে জাগিয়ে শাওয়ার নিতে ঢুকেছে ওয়াশরুমে। রাত এগারোটা, নাওফিলের এত দেরি হলো কেন আসতে? সন্ধ্যার মধ্যেই তো ফেরার কথা ছিল। পরে ভাবলো হয় তো কোনো কাজ ছিল।সবাই শুয়ে পড়েছে, কেবলমাত্র নাজনিন জেগে ছিলেন। প্রিয়তাকে রান্নাঘরে আসতে দেখে প্রশ্ন করলেন,
- শরীর খারাপ নাকি? তোমাকে ডাকতে গিয়েছিলাম। ঘুমিয়ে ছিলে বলে ডাকিনি।
- একটু আম্মু, জ্বর জ্বর লাগছে।

নাজনিন কাজ ফেলে এগিয়ে এসে প্রিয়তার মাথায় হাত রেখে বললেন,
- জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বেয়াদবটা তোমাকে নিচে নামিয়ে দিল? কোনো বোধ বুদ্ধি নেই। বাপের মত হয়েছে।
- উনি জানেন না। এত রাতে এসেছে তাই খাবার গরম করতে আসলাম।আপনি এখনও জেগে আছেন কেন?
- অভ্যাস। ছেলেটা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত কি চোখে ঘুম আসে? তুমি উপরে যাও, আমি ট্রে নিয়ে আসছি। গিয়ে শুয়ে থাকো। নড়াচড়া করো না।
- আচ্ছা।

প্রিয়তা উঠে দাঁড়াতেই নাজনিন পুনরায় প্রশ্ন করলেন,
- তুষার ফুসকা এনেছিল, তোমার জন্য রেখেছিলাম কয়েকটা, ভাতের সঙ্গে নিয়ে আসবো? খাবে এখন?
প্রিয়তার চটপটে উত্তর, "হ্যাঁ, খাবো।" নাজনিন হেসে কাজে মনোযোগ দিলেন। ঘরে এসে প্রিয়তা ব্লাংকেটের নিচে ঢুকে পড়ে। নাওফিল ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলল,
- শরীর খারাপ নাকি ম্যাডামের?
- আম্মু বলল জ্বর।
নাওফিল সেটা শুনে দ্রত ছুটে এসে প্রিয়তার কপালে হাত রাখে,
- এত জ্বর! আমাকে আগে বলোনি কেন? ঘরে জ্বরের ঔষধ আছে? নাহ, তোমকে নিয়ে পারা গেল না। দাড়াও দেখছি মেডিসিন আছে কিনা।

নাওফিল মেডিসিনের বক্স খুজে মেডিসিন পেল না।
- আম্মুর কাছে থাকতে পারে।
নাজনিন ঘরে ঢুকে বললেন,
- আমি মেডিসিন সঙ্গে নিয়ে এসেছি। দুজন বসে আগে খেয়ে নে।
নাওফিল ভাত মেখে প্রিয়তার দিকে তাঁকাল। নাজনিন প্রিয়তাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। অথচ নাওফিল ভেবেছিল কাজটা সে করবে।

খাওয়া শেষে নাজনিন চলে গেলেন। প্রিয়তাও শুয়ে পড়ে। নাওফিল বিছানার ওপর বসে বলল,
- বাড়ির কি অবস্থা?ফোনে চাচির কাছে শুনলাম, সফি বৃষ্টিরা পুরো বিকেল তোমার সাথে ছিল। পরিবর্তন আসছে?
- ওরা এখন কথা বলছে, আগে বলতো না। আস্তে আস্তে মিশে যাবে হয়তো।
- বেশ ভালো। তো জ্বর এলো কেন? পুরোনো ব্যাথায়? নাকি নতুন কান্ড বাঁধিয়েছ?
- আপনার কি আমাকে সমস্যার প্রতীক মনে হয়?
- তাছাড়া কি? এবার দ্রত বলো, কি ঘটেছে।
- আমি কি জানি?জ্বরের আসতে মন চেয়েছে,এসেছে। এখানে আমি কি করতে পারি? আমি কি তাকে ডেকে এনেছি?

নাওফিল প্রিয়তার ব্লাংকেটের মধ্যে ঢুকে গেল। প্রিয়তা খানিকটা সরে যায়। নাওফিল ভ্রু কুঁচকে বলল,
- ফ্লোরে শুতে চাও? তাহলে আস্তে নেমে যাও। সরতে সরতে পড়ে গেলে ব্যাথা পাবে। শুধু শুধু শরীরকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ বলো?
- আপনি একটু সরে গেলেই তো হয়।
- ঘর আমার, বিছানা আমার, বউ আমার। আমি কেন সরবো? আমার তো প্রবলেম হচ্ছে না কাছে আসলে। প্রবলেম তো তোমার হচ্ছে, তুমি সরো।
- অসুস্থ মানুষকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিতে লজ্জা করছে না?
- আশ্চর্য! আমি কোথায় নামাচ্ছি? আমি তো থাকতে বলছি। শুধু চাচ্ছি, দূরে দূরে না থেকে একটু কাছে এসে শোও। কিন্তু সরাসরি বললে তুমি বলতে আমি অসভ্য। কি বলতে না?

প্রিয়তা উত্তর দিল না। নাওফিল প্রিয়তাকে কাছে টেনে নিল। প্রিয়তা নড়তেই ওর পায়ের ওপর পা উঠিয়ে দিল। অকস্মাৎ ব্যাথা পা-য়ে নাওফিলের পা পড়ামাত্র প্রিয়তা 'আহ' করে উঠল। নাওফিলকে বলল,
- ব্যাথা পাচ্ছি নাওফিল।

নাওফিল ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
- আমি ওতটাও জোর দিয়ে ধরিনি প্রিয়। মিথ্যা বলোনা।
- পায়ের ওপর থেকে পা নামান, পায়ের পুরোনো ব্যাথা এখনও আছে।
নাওফিল উঠে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে প্রিয়তার পা দেখে বলল,
- আবার? তোমাকে ইচ্ছে মত মাইর দিলে শুধরাবে তুমি, প্রিয়? তোমার স্বভাব বদলাতে মা'র আবশ্যক মনে হচ্ছে। এখন-ই শুরু করি?শরীরের কোন জায়গাগুলোয় কা'টাছেড়া বাকি আছে?
প্রিয়তা এবারও নিশ্চুপ। নাওফিল বলল,
- এখনও কাঁচ ফুটে আছে। ঠিক করে ড্রেসিং করা হয়নি।
প্রিয়তার পায়ে ড্রেসিং করে নাওফিল শুয়ে বলল,
- আমার বোনদের আমি চিনি প্রিয়। কি করবো বলো? বোন তো, বড়দের ভুলে ওদের এমন অবস্থা হয়েছে। ওদের কিছু বললে ওরা আরো বাড়াবাড়ি করবে, আমি বাড়ি থাকিনা, তোমাকে দেখে রাখি কি করে? এসে ধরে তিনবার ওদের মিসবিহেভ দেখলে।যদি চাও ঝামেলা মেটানোর আগ অবধি ওবাড়িতে গিয়ে থাকো।
- কি কি জানতে পারলেন? দুদিনের কথা বলে ষোলো দিন পর ফিরলেন। এত সময় লাগল কেন? ওদের তো পেয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে?

নাওফিল হতাশ হলো, বুঝতে পারল প্রিয়তা যাবে না। সে এখানেই পড়ে থাকবে আর এসব সহ্য করবে। লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাওফিল ধীরগলায় বলল,
- একটা নাম জেনেছি কিন্তু পরিচিত নয়। খুজতে হবে তাকে।
- কি নাম?
- মাহিন ইকবাল।
প্রিয়তা চমকে তাঁকাল। বলল,
- ইকবাল আঙ্কেল? আমি এ নামে একজনকে চিনি। কিন্তু উনি তো দেশের বাইরে থাকতেন।
নাওফিল নিজেকে ধাতস্থ করে বলল, "তুমি চেনো তাকে?"
- হ্যাঁ। দাদুর বন্ধুর ছেলে। ছোট থাকতে কয়েকবার দেখেছি তাকে। মাঝে, মেধা আপুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন কিন্তু তার আগেই আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলে ওনারা আর আসেনি।
নাওফিল হেসে বলল,
- তোমার এই ইকবাল আঙ্কেলকে যে এবার দ্রুত গ্রামে ফিরতে হবে প্রিয়। তাহের চাচাদের মজুরি একবার অন্ততো, সরাসরি নিজহাতে দিক।

চলবে...

✍️অনুপম_ভালোবাসা #পর্ব ১১তিন মাস পর,রাদ সুস্থ হলে নজরাত নিজের বাসায় ফিরে আসে।রাদ এর পরীক্ষার মুহূর্তে সে থাকলে রাদ পড়া...
26/08/2025

✍️অনুপম_ভালোবাসা
#পর্ব ১১

তিন মাস পর,
রাদ সুস্থ হলে নজরাত নিজের বাসায় ফিরে আসে।রাদ এর পরীক্ষার মুহূর্তে সে থাকলে রাদ পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে না তাই ফিরে আসা। নজরাত চলে আসার দিন রাদ তাকে একদম ছাড়তে চাইছিল না। বেশ কিছুক্ষণ ঝাপটে ধরে বসে ছিল। আর বলেছিল,
__" এই কদিনে আমি তোমাতে আসক্ত হয়ে গিয়েছি প্রিয়। তুমি থেকে গেলে হয় না?
নজরাত কঠোর মুখভঙ্গি করে বলেছিল,
__" না হয় না।

রাদ মন খারাপ করে থাকলেও আর কিছু বলেনি।
নিজেই নজরাতকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়। তারপর পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখন আর আগের মত বন্ধুদের সাথে আড্ডা জামাতে পারেনা। ভাইয়ের মৃত্যুতে অনেকটা নীরব হয়ে যায় রাদ।

রাসেল এর ব‌উ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। লিপি বেগম তাকে নিয়ে এসেছেন। ছেলের মৃ ত্যুর পর এখন আর কোন রাগ নেই তার। হয়তো রাসেলের ব‌উ চৈতির সাথে পুরোপুরি স্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন না তবে সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ।
তাছাড়া জুঁই বা জান্নাত কে দিয়ে সময় মতো খাবার দাবার পৌঁছে দেন চৈতির ঘরে। চৈতি সারাক্ষণ মনমরা হয়ে বসে থাকে নিজের ঘরে। বাহিরের কিছু নিয়ে তার কোন আগ্রহ জাগে না। সারাক্ষণ ঘরবন্দি হয়ে থাকতেই ভালো লাগে যেন।

রাসেল দের বাড়ি থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে একটা বাড়িতে চৈতির বাবা-মা ভাড়া থাকতেন। রাসেল ওই পথ দিয়ে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করত। মাঝে মাঝেই চৈতিকে দেখতে পেত আর সেখান থেকেই ভালোলাগা তৈরি হয় তারপর দুজনের মধ্যে প্রেম।
লিপি বেগম কে একদিন জানিয়েছিল তাদের প্রেমের কথা। কিন্তু লিপি বেগম বলেছিলেন,
__" এসব হারাম সম্পর্ক আমি কিছুতেই মেনে নিব না। আমার পছন্দ করা মেয়েকে তোকে বিয়ে করতে হবে।

এদিকে চৈতির প্রচুর বিয়ের ঘর আসছিল। রাসেল একথা জানার পর সিদ্ধান্ত নেয় তারা পালিয়ে বিয়ে করবে। অতঃপর তাই করলো। বিয়ে করার পর লিপি বেগম মেনে না নিলে দুটো রুমের ছোট একটা বাসা ভাড়া করে তাদের ছোট্ট সংসার শুরু করে। খুবই আনন্দের দিন পান করছিল তারা। তার মধ্যে নতুন অতিথি এর আগমনী বার্তা সংসারে সুখ দ্বিগুণ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বেশিদিন তা সইলো না চৈতির কপালে। রাসেলের মৃ ত্যু যেন দুমড়ে মুছে শেষ করে দিল চৈতির সুখের সংসার।
তার মতে, যেখানে আমার স্বামীকে হারাতে হয় এমন স্বাধীন দেশ তো আমি চাই না।
নজরাত আবার ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করেছে। এখন আর আগের মতো রাদ কে কোথাও দেখতে পায় না সে। আগে বিরক্ত লাগতো কিন্তু এখন দেখতে পেলে ভালো লাগতো। সবার আড়ালে লুকিয়ে তাকিয়ে থাকতো। কি আর করার সময় পাল্টায় সাথে মুহূর্ত গুলোও।

রাদ পড়া শেষ করে রাতে কল করে প্রতিদিন তাছাড়া আর তাদের মধ্যে কথা হয় না।
আজকে নজরাত কিছুতেই চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে পারছে না, জোর করে সজাগ থাকলে ভীষণ মাথা ব্যথা করে তার। তাই ঘুমিয়ে পড়লো। সেই ঘুম রাত দুইটায় একটা স্বপ্ন দেখে ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠেই সে ব্যালকনিতে চলে গেল নিচে রাস্তায় কাউকে খুঁজলো। স্বপ্নে দেখেছে রাদ এসেছে, এখন ভালো করে খুঁজে বুঝলো এটা তার স্বপ্ন ছিল। রুমে ফিরে এসে কিছুক্ষণ বসে রইল। এখন ক্ষিদা অনুভব হচ্ছে। না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন।

বাথরুম থেকে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসে বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে বসলো। ফোন ইউজ করছে আর বিস্কুট খাচ্ছে।
অনলাইনে গিয়ে দেখলো রাদ বেশ কয়েকবার কল করেছিল। নজরাত কল রিসিভ করেনি বলে মেসেজ দেয়, "ব‌উ ঘুমিয়ে পড়েছো"?
মেসেজ টা দেখে নজরাত এর খুব আফসোস হচ্ছে কেন সে ঘুমিয়ে গেল?
এখনি রিপ্লাই দিল, হুম ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতে না হতেই কল আসে। কলের শব্দে নজরাত কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। নজরাত বুঝতে পারেনি রাদ জেগে আছে তার উপর নিস্তব্ধ রুমে হঠাৎ কলে ভয় চমকে উঠে। নিজেকে সামলে রুমের লাইট অন করে কল রিসিভ করে। রাদ বালিশের উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। নজরাত বলল,
__" আপনি কি ঘুমান নাই এখনো?
__" না।
__" কেন? রাত জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে না?
__" আমার বউ এর সাথে কথা হয়নি বলে ঘুম আসছিল না। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলে, খাবার খেয়েছিলে?
__" ঘুমের জন্য খাবার খাওয়ার সময় ছিল না। তাই এখন বিস্কুট খাচ্ছি।
__" তুমি এমন ঘুম কাতুরে জানতাম না তো। এদিকে তোমার ঘুমের জন্য আমার ঘুমের আড়াইটা বেজে গেল। এই দায় এখন কে নিবে বল? তোমাকে শাস্তি দেওয়া উচিৎ।
__" ইশ আসছে। আমি কি আপনাকে নিষেধ করেছি ঘুমানোর জন্য? আপনি নিজ থেকেই ঘুমান নাই।
__" তোমার মত লবণ ছাড়া তরকারি তার কি বুঝবে?
__" হইছে। আমি তরকারিতে লবণ দিয়েই খাই। আপনার মত মুঠো করে লবণ খাই না। আসছে লবণখোর কোথাকার। আমি যখন পার্মানেন্টলি আপনাদের বাসায় আসবো তখন লবণ ছাড়া তরকারি রান্না করে আপনাকে খাওয়াবো। লবণ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা আপনি জানেন?

রাদ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলল,
__" অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। এর কারণ হল, সোডিয়াম-জাতীয় খাবার রক্তের চাপ বাড়ায়। ফলে ধনীর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হয়। সেইসঙ্গে এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার ঝুঁকি।

নজরাত বিরক্ত মুখে বলল,
__" এসব জানার পরেও কি করে পারেন এতো লবণ খেতে?
__" আমি অনেক পানি খাই সো লবণ আর শরীরে থাকে না ওটা ড্রেন হয়ে যায়।
__" আপনার এই কচুর মাথার যুক্তি আপনার কাছেই রাখেন। ঘুমাবেন কখন? আমি ঘুমাবো।

নজরাত যে রে গে গেল এটা বুঝতে পারলো রাদ। তাই বলল,
__" আগামীকাল দেখা করবে? তাহলে আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব।
__" ঠিক আছে। এখন রাখছি আপনি ঘুমান।
__" ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।
__" আল্লাহ হাফেজ।
_________________

এতদিন ব্যাপারটা আমলে না নিলেও এখন লিপি বেগমের কাছে চৈতির এভাবে ঘরবন্দি হওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে না। মেয়েটা এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে তাই তিনি চৈতির ঘরে গেলেন।
নাস্তা টেবিলেই পরে আছে। এতক্ষণে মনে হয় সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। মেয়েটা না খেয়ে জানলার গ্রিলে ধরে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। লিপি বেগমের ভিতরটা কেমন যেন করে উঠলো। সেও সন্তান হারিয়েছে কিন্তু তার বাকি সন্তানদের দিকে তাকিয়ে হয়তো কিছুটা হলেও কষ্ট ভুলে থাকতে পারেন কিন্তু এই মেয়েটা তো কোন কিছু বিনিময়ে সেটা পারে না। তাদের উচিৎ সবাই মিলে মেয়েটাকে সময় দেওয়া যেন খারাপ চিন্তা গুলো মনের মধ্যে না আসতে পারে।

লিপি বেগম দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। চৈতি সামনে ঘুরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি বললেন,
__" খাবারটা খাওনি কেন? ঠান্ডা হয়ে গেল তো।
__" খেতে ইচ্ছা করছিল না।
__" সকালের ওষুধ আছে না?
__" জ্বি আছে।
__" আমি খাবারটা গরম পরে আনছি খেয়ে ওষুধ খেয়েও।
__" গরম করতে হবে না এমনিতেই খেয়ে নিতে পারব।

ভুনা খিচুড়ি আর ডিম ভুনা ঠান্ডা খেতে ভালো লাগে না। তাই লিপি বেগম শুনলেন না ওভেন থেকে গরম করে আনলেন। বললেন,
__" আমি খাইয়ে দেই?

এ কথা শুনে চৈতির চোখ পানিতে চিকচিক করছে।আজ রাসেল এই দৃশ্য দেখতে পেলে ভীষণ খুশি হত।
লিপি বেগম চৈতিকে খাইয়ে দুপুরের রান্নার কাজ শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর চৈতি রান্না ঘরে এসে বলল,
__" দিন আমি সবজি গুলো কে/টে দেই?

কাজের মধ্যে থাকলেও মেয়েটা একটু স্বাভাবিক হতে পারবে তাই লিপি বেগম নিষেধ করলেন না।

রাদ নাস্তা করে নজরাত কে নিয়ে একটা লেকে নিয়ে যায়। বেঞ্চে বসে রাদ বলল,
__" দুদিন পর পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে আর আমাদের দেখা হচ্ছেনা। আচ্ছা তোমার কি খারাপ লাগবে?
__" আমি অপেক্ষার প্রহর গুনবো। যেদিন পরীক্ষা শেষ হবে সেদিন আমাদের দেখা হবে ইনশা আল্লাহ।
__" ইনশা আল্লাহ।
শুনো তোমাকে একটা ছেলের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করার আছে!
__" কোন ছেলে?.....

#চলবে... ইনশা আল্লাহ।

✍️অপ্রিয়_মাস্টার #পার্ট [১২]কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের আজ রেক ডে সেই সুবাদে কলেজে অনেক বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে, অনুষ্ঠান বলতে শু...
26/08/2025

✍️অপ্রিয়_মাস্টার
#পার্ট [১২]

কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের আজ রেক ডে সেই সুবাদে কলেজে অনেক বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে, অনুষ্ঠান বলতে শুধুমাত্র সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টরা থাকবে।এই সুযোগ মিস করার নয় ভেবে ছয় জন মিলে প্ল্যান করলো তারাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। কিন্তু সমস্যা তখন দেখা দিল যখন জানতে পারলো অন্য ব্যাচের স্টুডেন্ট এলাও না।
নাক মুখ কুঁ'চকে নেয় কন্ঠ,সান কে উদ্দেশ্য করে বলে।

" দেখলি তোর প্ল্যান কোনো কাজের না, আমরা চাইলেও যেতে পারব না।"

রিয়া মলিন মুখে বলে।
" ধুর কই ভেবেছিলাম এত দিন পর একটা প্রোগ্রাম হবে, কিচ্ছু হলো না ছে।"

তারিফ মুখের সামনে হাত দুটো মাইকের মত ধরে নাটকিয় ভাবে বলে।

" শুনো জনগন্স আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।"

সান তারিফের মাথায় চা'টি মে'রে বলে।
" অভিনয় ছাড় আসল কথাটা বল।"

ঠোঁট কা'ম'ড়ে ধরে তারিফ, বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে।
" এই শুন একদিন দেখবি আমি ঠিকই খুব বড় সুপার স্টার হয়ে গেছি।"

তাহিয়া হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
" গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল,হা হা হা।"
"ভাই তুই কী বলবি?"

রিয়া বেশ রাগান্বিত স্বরে বলে উঠে, অবশেষে তারিফ বলল।
" আমারা সবাই মুখে রং দিয়ে মেখে যাবো কারন ওখানে সবাই রঙ লাগাবে। আমাগো কেউ চিনতেই পারব না হি হি।"

সোহার ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে উঠে।
" ওরেএএএএ তারিফ তোকে চুম্মা,চল রেডি করি সব কিছু।"
_________
ফ্লাইট কিছুক্ষণ আগেই ল্যান্ড করেছে,ব্যাগ নিয়ে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তুফায়েল কিন্তু তার মধ্যে একটা শপে গিয়ে সাধারণ কো'ল্ড ড্রিং নিয়ে নেয়।এখন পর্যন্ত কিছু খাওয়া হয়নি,আপাতত এতটাই যথেষ্ট। কিন্তু এর-ই মধ্যে যে বিশ্রী একটি কান্ড ঘটে যাবে তা একদমই ভাবেনি।
" এইইইইইইইইইইইইইইইইই আপনি এটা কী করলেন হুঁ?ছে ছে আমাকে কো'ল্ড ড্রিং দিয়ে মাখো মাখো করে দিলেন?"

লম্বা এলোকেশী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, চোখের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত টেনে কাজল দেওয়া, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,হাত ভর্তি বাহারী রঙের চুড়ি। আঁখি যোগল কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে।

" এই যে আপনি কি শুনতে পাননি??"

তুফায়েলের ধ্যান ভঙ্গ হয়, নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে, অতঃপর কিছু একটা ভেবে বলে।
" আ'ম ভেরি সরি।"

উল্টো পথে হাঁটতে লাগে তুফায়েল,মেয়েটিও নাছোড়বান্দা,তুফায়েলের সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
" এইইইইইইইইইইইইইইইইই আপনি আমাকে নোং'রা করেছেন সো জরিমা'না প্লিজ?।"

কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে নেয় তুফায়েল।
"জরিমা'না?"
" ইয়েস ইয়েস, আপনি সরি বলে যে চলে যাচ্ছেন আমি কী সরি এক্সসেপ্ট করেছি? না তো?সো গিভ মি জরিমা'না।"

" সো সিলি।"
" যাই হোক জরিমা'না প্লিজ, আমার লেইট হচ্ছে।"

তুফায়েল মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার নোট দিতেই মেয়েটি দৌড়ে চলে যায়, বিরক্ত হয় তুফায়েল।বিড় বিড় করে বলে উঠে।
" এখানের মেয়েরা এমন?যতটা দেখলাম মনে হচ্ছিল বাঙালি,কী একটা অবস্থা?"
___________
" কন্ঠ কিন্তু বেশ মিষ্টি মেয়ে কী বল ছোট?"

অহনা খানের কথায় মাথা দুলায় শাহা খান, কিন্তু তবুও তিনি যেন কোনো একটা ভাবনায় বেশ ব্যস্ত।

" কী রে কী ভাবছিস?"

খানিকটা চমকে উঠে শাহা খান, এলোমেলো ভাবে বলে।
" কই কিছু না তো আপা? আসলে আমার তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।"

অহনা খান হাতের বাটি গুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে রাখতে বলল।
" হ্যা বল কী বলবি?"

শাহা খান আমতা আমতা করে বলে।
" আপা কন্ঠের সাথে তো তূর্যের বিয়ে দিয়ে দিলে, কিন্তু ওরা কী সুখী হবে?"

বিরক্ত হয় অহনা খান,শাহার এই একটা স্বভাব ওনার বেশ বিরক্ত লাগে। ভালো কিছুর মধ্যে হুট করে খারাপ কিছু বলে বসে।
" হঠাৎ এমন কথা বলছিস যে?"

শাহা খান একটু নড়ে চড়ে উঠলো।
" আপা সহিতা তো তূর্য কে পছন্দ করে,এটা তো আমরা সবাই জানি।"

" হ্যা তো কী হয়েছে?"
" কী হয়নি সেটা বলো? তূর্য যে বিয়ে করে নিয়েছে তা জানলে কী হবে বুঝতে পারছো?"
" দেখ ছোট সহিতা তূর্য কে পছন্দ করতো এটা ঠিক, কিন্তু তূর্য তো পছন্দ করতো না? তূর্য আমাকে বলেছে,সে বরাবরই সহিতা কে ভালো বন্ধু ভেবে এসেছে।কারণ দু'জনেই ছোট থেকে এক স্কুলে একই কলেজে পড়াশোনা করেছে।"

" আপা তুমি যা বলছো ঠিক আছে, কিন্তু আমি ভাবছি সহিতা আসলে এগুলো শুনে কী করবে?"
" আপাতত তুই এত চিন্তা করিস না, এখন ওকে এসব জানানোর প্রয়োজন নেই।"

শাহা খান মনে মনে ভাবেন।
" কী যে বলো আপা?এইটা কী না জানালে চলে?"
_____________
সন্ধ্যা বেলা,চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে,পাখিরা যে যার নিড়ে ফিরে যাচ্ছে। অন্ধকার ঘরে আলো জ্বে'লে দেয় কন্ঠ,বাইরে থেকে সবে মাত্র বাড়িতে ফিরেছে তূর্য।এসেই সোফায় গা এলিয়ে দেয় সে,শাহিনা খান পাশেই বসে ছিলেন।উনি কন্ঠ কে ডাকেন।
" ছোট নাত বউ কই তুমি? ছেলেটা মাত্র আইছে,কই গোঁ তুমি?"

কন্ঠ তড়িৎ গতিতে ছুটে নিচে আসে।
" জ্বী দাদী?"

শাহিনা খান বেশ বিরক্ত নিয়ে বলেন।
" আমার নাতিটা মাত্র আইছে তুমি কই থাকো?যাও ওর জন্য পানি নিয়া আসো।"

কন্ঠ এক নজর তাকায় তূর্যের দিকে,মলিন মুখে বসে । সত্যি বোধহয় বড্ড বেশি ক্লান্ত লোকটা।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে তূর্য, শরীর ভালো নেই তার।
রুমে এসে কন্ঠ দেখে তূর্য শুয়ে আছে রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। বাথরুমে গিয়ে জমা বদলে পাতলা একটা কামিজ ও প্লাজু পড়ে বেরিয়ে আসে কন্ঠ। কারো কঁকিয়ে উঠার শব্দ কর্ণ স্পর্শ করতেই থমকে যায় কন্ঠ।
" তূর্য স্যারের আবার কী হয়েছে?"

বিছানার কাছে এগিয়ে এলো কন্ঠ, হ্যা তূর্য শব্দ করছে। কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অবাক হয় কন্ঠ। লোকটার কী হয়েছে? বিকেলে বাসায় আসার পর ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল, আবার রাতেও তেমনটাই লাগছিল।তার উপর কিছুই মুখে তুলেনি।
কাছে গিয়ে কন্ঠ ডাকে।
" স্যার?স্যার কী হয়েছে আপনার?"

তূর্য নিজের মনে বিড় বিড় করে চলেছে, কন্ঠ তূর্যের মাথায় হাত রাখল।তাতেই যেন তার হাত ঝলসে গেছে এমন অনুভব করেছে।
" ওনার তো ভীষণ জ্বর।"

বেশ চিন্তিত হয় কন্ঠ, এখন কী করবে?এত রাত হয়ে গেছে, সবাই তো ঘুমাচ্ছে। এখন কী করবে? চিন্তারা এসে ভিড় জমাচ্ছে কন্ঠের মস্তিষ্কে।
অবশেষে কিছু না ভেবে রান্না ঘরে গিয়ে বড় বাটি পানি আসে, রুমাল ভিজিয়ে মাথায় দেয় সে। তূর্য একদম অচেতন হয়ে পড়ে আছে।
কন্ঠ ড্রয়ার থেকে জ্বরের ওষুধ বের করে নিয়ে আসে।
" ওনাকে এটা খাওয়াতে হবে, কিন্তু তার আগে কিছু একটা খাইয়ে এরপর এই ওষুধ খাওয়াতে হবে।"

যেই ভাবনা সেই কাজ, কন্ঠ রান্না ঘরে যায়, সামান্য সোপ তৈরি করে নিয়ে আসে।

" তূর্য স্যার?উঠুন প্লিজ?"
কন্ঠ অনেক কষ্ট করে উঠে বসায় তূর্য কে, মুখে তুলে খাইয়ে দেয় গরম গরম সোপ।
লোকটার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অনেক কষ্টে ওনাকে খাইয়ে শুইয়ে দেয় কন্ঠ।

রাত আড়াইটা বাজে, এখনও জ্বর কমেনি তূর্যের , এখন বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে কন্ঠ।কী করবে? অবশেষে বাথরুম থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে আসে। শরীর মুছে দিলে হয়তো জ্বর কমবে।
সেই আগের মত করে তূর্য কে উঠে বসায়, এবার বেশ ইতস্তত লাগছে তার। এভাবে কারো জামা খুলে দেবে ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে সে। কিন্তু এটা তো লজ্জা পাওয়ার সময় নয়, ওনার জ্বর তো এখন ওনাকে ভালো করার দায়িত্ব আমার।
কন্ঠ তূর্যের ট্রি-শার্ট খুলে দিল, শার্ট খোলা মাত্র বুকেল লোমকূপ উঁকি দিচ্ছে।তাকাতে পারছে না কন্ঠ,কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে।আলতো হাতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছিয়ে দেয় সে।এরই মধ্যে তূর্য আকস্মিক ভাবে কন্ঠের হাত টেনে নিজের উপর নিয়ে আসে।ভড়কে যায় কন্ঠ,মুখ থেকে বেরিয়ে আসে 'উফ্' শব্দটি।
" স্যার,,
" হুস।"
নিজের পুরুষালী বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে ধরে কন্ঠের অধরে,নেশা'ক্ত দৃষ্টি নি'ক্ষে'প করে কন্ঠের দিকে।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে।
" একটু শান্তি চাই।"

নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে কন্ঠের, নিস্তব্ধ রাতে এক পুরুষ এতটা কাছে এসে শান্তি চাই বলে,তার মানে কী দাঁড়ায়? আলগোছে বিছানার উপর রাখে কন্ঠ কে,হুট করে ওর উপর চড়ে বসে।
কন্ঠ খিঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়, অকপটে জড়িয়ে ধরে তূর্য কন্ঠ কে।খনিকের জন্য কন্ঠও পৃথিবীর সবথেকে সুখময় মূহুর্ত অনুভব করে। পরমুহূর্তে বুঝতে পারে কোনো জ্বলত লাভা খানিকটা যেন তার উপর ছেড়ে দিয়েছে কেউ, তূর্যের শরীর ততটাই তাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
" আমি তোমাকে ভালোবাসি।আরো কাছে চাই, অনেক কাছে লাগবে।প্লিজ আমাকে একটু শান্তি দাও?"

চলবে...............✨।

Address

Rangpur

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মেহেদী হাসান posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share