মেহেদী হাসান

মেহেদী হাসান ✍️ মাটির দেহ একদিন মাটিতেই শেষ
হয়ে যাবে💔

✍️যদি_তুমি_জানতে #পর্ব_19তুরানের দরজার সামনে হাতে তুরানের দেওয়া কালো শাড়ী আর নুপুর জোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুপা। রুপ...
13/07/2025

✍️যদি_তুমি_জানতে
#পর্ব_19
তুরানের দরজার সামনে হাতে তুরানের দেওয়া কালো শাড়ী আর নুপুর জোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুপা। রুপার চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের চিহ্ন। চোখে জল ছলছল করছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে একটু আগে খুব কেঁদেছে।
রুপা কে এই অবস্থায় দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে তুরান। রুপা মুর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে এক দৃষ্টিতে তুরানের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ রুপার মুখের রাগান্বিত ভাবটা কেটে যায়, এখন রুপা কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তীব্র অভিমানে দাঁড়িয়ে থাকা এক রমনী। নিরবতা ভেঙে তুরান বলে,
-' কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে রয়েছো কেন? আর হাতে শাড়ি,নুপুর কেন?'
তুরানের কথার প্রত্যুত্তর করছে না নুপুর। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এভাবে কথা না বলে তাকিয়ে থাকা রুপার রাগ, অভিমান টা কে আরো তীব্র করে তোলে। তুরান এবার চিন্তিত হয়ে গেল। রুপার আগের সেই অসুখ টা দেখা দিয়েছে কি? সে জন্যই কি রুপা অস্বাভাবিক আচরণ করছে? নাকি রিং ফেরত দিয়েছি বলে?
-' কিছু বলবে তো? নয়ত বুঝবো কিভাবে?'
এতক্ষন রুপার চোখে জোরপূর্বক আটকে থাকা অবাধ্য জল ফোঁটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। রুপা হাতে থাকা শাড়ীটা আর নুপুর জোড়া তুরানের দিকে ছুঁড়ে মারলো। এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে চলে যেতে লাগলো। তুরান দৌড়ে গিয়ে রুপার পথ আটকে দাঁড়ালো। পথ থেকে তুরান কে সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে রুপা। তীব্র রাগ আর ক্ষোভে ফেটে পড়ছে যেন। এতক্ষন নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে যে রাগ সঞ্চয় করেছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবার।
তুরান ব্যস্ত হয়ে পড়ল রুপার রাগ ভাঙাতে।রাগের কারনে টা কি রিং ফেরত দিয়েছে সেটা?
-' বলবে তো আমি কি করেছি? না বলবে বুঝবো কিভাবে?'
এখনও চুপ করে আছে রুপা। চোখ দিয়ে যেন সমস্ত রাগ প্রকাশ করছে।
-' রুপা এভাবে তাকাবে না কিন্তু! ভয় পাই আমি।'
এ পর্যায়ে রুপার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠে। ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,
-' এত ভাব কিসের আপনার? রিং টা ফেরত দিলেন কেন? শপিং এ বসে শার্ট, প্যান্ট নিতে বললাম তখনো ভাব করেছেন।'
রুপার গম্ভীর মুখ টা ফ্যাকাশে হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে,
-' আপনি আমার দেওয়া কিছু নিতে চান না।আমি কেন নিবো?'
খুব জোরে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তুরান। রুপার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-' এজন্য এত রাগ করা লাগে রুপা বাবু টার।'
-'চুপ একদম চুপ রং ঢং এর কথা বলে রাগ ভাঙানোর ব্যর্থ চেষ্টা করবেন না।'
তুরান কি ভেবে যেন একটু হাসলো। রুপার রাগ যেন উপভোগ্য কিছু। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে না দেখে আচমকা রুপা কে পাঁজা কোলা নিয়ে রুমে চললো রুপা। রুপা অবাধ্য ভাবে হাত পা ছুড়তে শুরু করলো কোল থেকে নামার জন্য।
রুমে এনে রুপা কে জোর করে চেয়ারের উপর বসালো।রুপা ব্যর্থ চেঁচামেচি করতেই থাকলো। তুরান খুব আদুরে গলায় বলল,
-'এভাবে আমার রুমে বসে চেঁচামেচি করলে আমায় কিন্তু আজিজ চৌধুরী এ বাসা থেকে বের করে দিবে।'
অমনি চুপ হয়ে যায় রুপা। রুপার রাগটা পুনরায় অভিমানে পরিনত হয়।
-' আমি আপনার জন্য ভালোবেসে কিনলাম আপনি কিভাবে পারলেন সেটা ফেরত দিতে?'
-' সেটাই তো আমি এত অমানুষ কেন? আমি রুপার ভালোবাসা বুঝলাম না। আমার ফাঁসি হওয়া উচিত। হুকুম করেন আপনার
জল্লাদ কে মহারানী। আমার এখনই ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যেতে বলুন।'
তুরানের রসিকতা দেখে আর না হেসে পারলো না রুপা। রুপার হাসি দেখে তুরানের মন প্রশান্তি যে ছেয়ে যাচ্ছে।
-' তুমি একদম থ্রী,ফোরে পড়া বাচ্চাদের মত রাগ করো। তোমার ভালোবাসা ,রাগ,অভিমান সবই ইউনিক।'
কথাটা বলে রুপা কে আচমকা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তুরান। রুপা হয়ত এতক্ষন এটাই চেয়েছিল। রুপা তুরানের বুকে মিশে রইল। তুরান হেসে বলে,
-' মেঘ হলো, বিদ্যুৎ চমকালো, বজ্রপাত হলো, বৃষ্টি হলো এখন আবার রোদ। আবহাওয়া শুধু চেঞ্জ হয়।'
রুপাও হেসে উঠলো।
-' তখন যদি রিং টা নিতেন তাহলে মেঘ, বৃষ্টি কিছুই হতো না।'
-' এখন তো নিচ্ছি। কি ডেঞ্জারাস তুমি! শাড়ী,নুপুর সব ফেরত নিয়ে আসছো।'
রুপা ভেংচি কেটে বলে,
-'ভালোই করেছি।'
দুই জনেই আবার হেসে উঠলো। পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিস বোধ হয় মেয়ে মানুষ। হাসতে সময় লাগে না, কাঁদতেও সময় লাগে না। পৃথিবীর প্রত্যেক টা মেয়েই বোধ হয় নিজ নিজ রহস্যে রহস্যমণ্ডিত। রুপা রহস্যে আর চার- পাঁচ টা মেয়ে মানুষের থেকে এক কাঠি সরেস।
অদ্ভুত রুপা! অদ্ভুত ধরনের রাগ! অদ্ভুত রকমের ভালোবাসা! ওঁদের ভালোবাসা টাও অদ্ভুত। এসব ভেবে আনমনে হেসে উঠে তুরান।

রুপা ইজি চেয়ারে বসে বসে দুলছে। ওর চেহেরায় দেখে এখন যে কেউ বলতে পারবে মেয়েটার মনে এখন কোন কারনে খুব আনন্দ কাজ করছে। হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। মাঝে মাঝে মিটিমিটি হাসছেও। মৃদু বাতাসে ঘাড়ের কাছের চুল গুলো মুখে উড়ে এসে পড়ছে। অন্য সময় হলে বোধ হয় বিরক্ত বোধ করতো। কিন্তু এখন বাতাসে উড়ে আসা মুখের উপর পড়া চুল গুলো যেন রুপার রোমাঞ্চকর মনের চপলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বারান্দার টবে লাগানো ফুলের মৃদু ঘ্রান রুপার নাকে লাগছে। সব কিছু এখন রুপার কাছে এখন রোমাঞ্চকর লাগছে।
সাহেলা বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে। সাহেলা বেগম একজন দক্ষ সাইকিয়াট্রিস্ট। তাঁর বুঝতে বাকী নেই যে রুপার মনে কিছু একটা চলছে। অনেকক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুপার কান্ড দেখছে।
-'কি ভেবে এত খুশি আম্মা আপনি?'
চারদিকের নিরবতার মাঝে কারো কন্ঠ শুনে ধড়পড়িয়ে উঠে রুপা।
-' উফ আম্মু তুমি! এভাবে হঠাৎ কেউ এসে কথা বলে।'
-' তুই যে প্রতিদিন রান্না ঘরে গিয়ে আমায় ভয় দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করিস!'
-' তুমি তো ভয় পাও না।'
সাহেলা বেগম আগ্রহী কন্ঠে বলে,
-'তা এত রোমাঞ্চ রোমাঞ্চ ভাব কেন তোর মনে? প্রনয়নের কথা মনে পড়েছে বুঝি?'
মূহুর্তেই মুখ টা ফ্যাকাশে হয়ে যায় রুপার। কিছুক্ষণ সাপের মত ফুঁসে থাকে,এই বুঝি ছোবল দিবে।
সাহেলা বেগম হেসে বলে,
-' সরি,সরি মা মনি।আর বলবো না।'
-' আর বলবে না আর বলবে না! প্রতিদিনই তো বলো।'
সাহেলা বেগম হেসে হেসে কথা বলে রুপার রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।
কালকে আজিজ চৌধুরীর বাসার তিন তালায় যে ফ্যামিলি ভাড়া থাকে তাঁদের মেয়ের বিয়ে। বিয়ে আগেই হয়েছে ঘরোয়া ভাবে,এখন আনুষ্ঠানিক ভাবে।
মেয়েটা চট্টগ্রাম থেকে লেখাপড়া করে,রুপার সাথে তেমন ভাব নেই। মাঝে মাঝে এখানে আসলে একটু আধটু কথা হত। লোকটা অনেক বছর ধরে আজিজ চৌধুরীর বাসায় ভাড়া থাকে সে সুবাদে আজিজ চৌধুরীর সাথে সম্পর্ক খুব ভালোই!
অনুষ্ঠান হবে কমিউনিটি সেন্টারে। মেয়েটার নাম নীড়া। দেখতে বেশ সুন্দরী! লেখাপড়ায়ও নাকি অনেক ভালো। নীড়া দের বাসায় মেহমানে ভরপুর। আজিজ চৌধুরী আর সাহেলা বেগমও গিয়েছে সে বাসায়। রুপা কে অনেক বার সেধেছে কিন্তু রুপা যাবে না। রুপার এমন আচরনে নতুন করে অবাক হচ্ছে সাহেলা বেগম। একা রুমে বসে বসে পাঁয়তারা করছে রুপা।
মনে চাচ্ছে নীড়া দের বাসায় যেতে। সবার সাথে ভাব জমাতে। কিন্তু ভার্সিটি তে যাওয়ার আগে তুরান বরাবরের মত একটা কাগজ ছুঁড়ে মেরেছে রুপা দের বারান্দায়। কাগজে লেখা ছিলো,
‘ আমি না আসা পর্যন্ত বিয়া বাড়িতে যাবে না । নীড়ার অনেক কাজিনরা এসেছে। তোমার দিকে অসভ্যের মত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।’
চিঠিটা পড়ে খুব হেসেছিল রুপা। কিন্তু পরমুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে যায় বিয়ে বাড়ি যেতে পারবে না তাই।
একা রুমে থেকে থেকে রুপার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। বিল্ডিং এর সবাই কম বেশি বিয়ের আনন্দে ব্যস্ত। রুপা একটা ব্লেড নিয়ে ছাদে চলে গেল। প্রথমে ছাদে রোদ দেওয়া প্রতিটা শার্টের পিঠে ব্লেড দিয়ে লাভ আকৃতি করে কেটে নিলো শুধু তুরানের শার্ট টা বাদে। আর মহিলা দের জামা কেটে শার্ট করে দিলো।
তারপর দ্রুত ছাদ থেকে নেমে গেল রুপা। রুমে গিয়ে হেসে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এর ভিতর শিষ বাজানোর শব্দ শুনতে পেল রুপা। তার মানে তুরান এসেছে। রুপা কে মাঝে মাঝে না দেখলে শিষ দিয়ে তুরান নিজের উপস্থিতির জানান দেয়।
হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক হয়ে তুরানের কাছে যায়। মনে মনে এখন খুব ভয় পাচ্ছে। ছাদে রোদ দেওয়া সব জামা কাপড় কেটে ফেলেছে, তুরান জানলে খুব রাগাবে।
চলবে...

 #সেই_রাতে #পর্ব_5+6-" কার কাছে ফোন দিচ্ছেন এত? ফোন টা সুইচ অফ দেখাচ্ছে তাও এত ট্রাই করে কি হবে?"-" অনেক সময় কিছু হবে না...
13/07/2025

#সেই_রাতে
#পর্ব_5+6
-" কার কাছে ফোন দিচ্ছেন এত? ফোন টা সুইচ অফ দেখাচ্ছে তাও এত ট্রাই করে কি হবে?"
-" অনেক সময় কিছু হবে না জেনেও কিছু কিছু কাজ আমরা বার বার করি। হয়তো জানি এটা আদো সম্ভব না কিন্তু মন টা কেন জানি মানতে চায় না,ব্রেন বার বার সায় দেয় আর একবার করার জন্য। এই যে ফোন টা সুইচ অফ। কখনো অন হবে কিনা জানিনা। কিন্তু মন বলে ,"আর একটা বার ট্রাই কর,যদি অন হয় এবার?"
-" আপনার এই সাহিত্যিক কথা- বার্তা আমার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে। দয়া করে আমার ফোন টা দেন ঘুমাবো।"
-" আর একটা বার ট্রাই করি প্লীজ ।"
প্রিতম একটু হতাশ ভঙ্গিতে বলল,
-" আচ্ছা করেন ট্রাই । আমি তো বিপদে পরছি,আপনার সব কথাই শুনতে হবে।"
-" হয়েছে,এই নিন আপনার ফোন।"
-" আচ্ছা একটা কথা বলুন তো কার নম্বরে এতক্ষন ফোন দিলেন। আপনার কাহিনী টা কি বলবেন?"
নিঝুম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
-" কোন কাহিনী নেই। আপনার ফোন তো দিয়ে দিলাম এবার শুয়ে পরুন আর ডিস্টার্ব করব না।"
-" আপনি ঘুমাবেন না?"
-" না,চোখ দুটি হরতাল ডাকছে আজকে ঘুমাবে না।"
-" আপনি এমন আশ্চর্য রকমের কথা পান কোথায়?"
-" আশ্চর্য রকম কথা কি আবার?"
-" এই যে বললেন চোখে হরতাল ডাকছে।"
-" শুনেন, যে পাগল হয় সে বুঝতে পারে না যে সে পাগল হয়েছে। আর যে আশ্চর্য রকমের কথা বলে সেও বুঝতে পারে না যে তার কথার ভিতর আশ্চর্য কিছু আছে।"
-" বাব্বাহ!! কি সুন্দর উদাহরন টানলেন। আপনার তো দেখছি বুদ্ধি ভরা মাথা।"
-" বুদ্ধি ভরা মাথা না মাথা ভরা বুদ্ধি। ভাবছেন আমায় আপমান করবেন আমি বুঝতে পারব না।"
-" যাক তাহলে ব্যাপার টা বুঝে গেলান।আপনার মাথায় মিনিমাম কমন সেন্স থাকলে এত রাতে বাসা থেকে বের হতেন না।"
-" কেন বাসা থেকে বের হলে কি হয়?"
-" যা বলছি সহজ ভাবে বুঝার চেষ্টা করেন। কোথায় যাবেন ,কোথায় থাকবেন তা না ভেবে বাসা থেকে পালিয়ে আসলেন।"
-" সব ই ভাবছি কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এই অবস্থা।"
-" মানে কিসের পরিস্থিতির স্বীকার বলেন তো? আপনার রহস্য কি?"
নিঝুম একটু ভাব নিয়ে বলল,
-" কোন রহস্য ই। আমি তো জানি আপনি আমায় রিসিভ করতে যাবেন তাই বাসা থেকে পালিয়েছি।"
প্রিতম মেজাজ খারাপ করে বলল,
-" এই মেয়ে এই আমি আপনায় কখন রিসিভ করতে গেলাম। অদ্ভুধ মেয়ে তো আপনি!"
-" মেয়ে মেয়ে করেন কেন? আমার নাম মেয়ে না আমার নাম নিঝুম । আর আপনি আমাকে রিসিভ করতে না গেলে আমি আপনার বাসায় আসলাম কিভাবে?"
-" প্লীজ আপনি চুপ করবেন? আপনায় বাসায় আনা টা আমার উচিত হয় নি তা অনেক আগেই বুঝছি। আপনি রাস্তায় ই ভালো ছিলেন।"
-" আচ্ছা আমি চুপ।তবে যদি পারমিশন দেন আর একটা কথা বলল?"
-" কি কথা?"
-" আসলে আমার রাস্তায় থাকতে একটুও ভালো লাগে না।"
-" ব্রেন এর ভালো ডাক্তার দেখান নয়তো কোন মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি হন।"
-" আচ্ছা ভেবে দেখব।"
-" আমি ঘুমালাম। দয়া করে আমায় আর ডিস্টার্ব করবেন না। রাত প্রায় শেষ এখন একটু ঘুমাতে দেন।"
প্রিতম সোফায় শুয়ে পরল। মনে মনে ভাবল,আমি এত বোকা কেন? একটা মেয়ে কে নিজের রুমে জায়গা দিলাম,আবার তার জন্য খাট ছেড়ে সোফায় ঘুমাতে হবে। এত রাতে ডিম ভাজতে হয়েছে। আরও কত কি! এসব ভাবতে ভাবতে প্রিতমের নিজের উপর রাগ হচ্ছে । আর মেয়ে টা কি বিচ্ছু! কোন কৃতজ্ঞতা তো নেই ই,উল্টো আমায় উল্টা-পাল্টা কথা শুনায়।
নিঝুম বেলকুনিতে দাড়িয়ে গায়ে চাঁদের আলো মাখছে। আজকে এসব কিছু তে ই মন ভালো হচ্ছে না। যা ই হোক! লোক টা যথেষ্ট ভালো। এত বিরক্ত করা ঠিক হয় নি। লোকটার অনেক ধৈর্য্য।
বেলকুনিতে দাড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না। ঘুমও আসছে না। অসহ্য লাগছে সব! রুমে গিয়ে শুয়ে থাকা ই ভালো।
লোক টা সোফায় শুয়ে আছে। মানুষ এত ভালো হয় কিভাবে ? নিঝুম ফোন টা হাতে নিয়ে শুয়ে শুয়ে স্মৃতিচারন করছে আর চোখের জল ফেলছে।চোখ গুলো খুব ফুলে গেছে আর কাঁদতে পারছে না। মন খারাপ এর সময় গুলো এত দীর্ঘ হয় কেন? একটু কষ্টের মাঝে সব ধরনের কষ্ট এসে উকি দেয়। সব স্মৃতি এসে ভীড় করে । এমন টা কেন হয়?
হাত থেকে ফোন টা রেখে দিল নিঝুম । কি দরকার স্বার্থপর মানুষ গুলোর জন্য চোখের জল ফেলার?
কিন্তু হাজার চেষ্টায়ও আটকে রাখতে পারছে না। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গাল বেয়ে জল পরছে। কানে ইয়ার ফোন গুজে গান শুনলে এখন মন্দ হয় না।সময় কেটে যাবে ।কিন্তু ইয়ার ফোন তো আনি নি।
উনার কাছে এখন ইয়ার ফোন চাইলে কষিয়ে চড় মারবে। ইয়ার ফোন ছাড়া গান শুনলে উনার ঘুম ভেঙে যাবে।দেখি রুমে কোথায়ও ইয়ার ফোন পাই কিনা!
খাটের বিছানার নিচে,টেবিলের উপর কোথায়ও দেখি না ইয়ার ফোন। যাক শেষ পর্যন্ত ড্রেসিং টেবিলের উপর পাওয়া গেল।
কানে ইয়ার ফোন গুজে ফুল সাউন্ডে ইমরানের গান শুনতে কেন জানি খুব বেশী ভালো লাগে।
চোখ ভরা পানি আর কানে ইয়ার ফোন গুজে গান শুনা খারাপ লাগছে না।
হঠাৎ করে নিয়েছ ঠাই,তোমাতে মনোযোগ তুমি ছাড়া ভালো লাগে না এ কেমন রোগ?
আনমনে তুমি আমি হয়েছি নিখোঁজ ভোরের শিশির মাখা প্রতিটি প্রহর বলে যেন এভাবে চলে রোজ।
থামছো কে যেতে হবে আরও অনেক পথ।
এমন তো ছিল নেওয়া তোমার আমার শপথ.......
গান শুনতে শুনতে নিঝুমের চোখ লেগে আসছে। হঠাৎ কারো হাটার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। তাকিয়ে যা দেখে তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না।

#পর্ব_6
নিঝুম তাকিয়ে দেখে প্রিতম অগ্নিমূর্তি হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোক টার চোখে স্পষ্ট রাগের চিহ্ন । ওর দিকে চোখ লাল করে চেয়ে আছে। নিঝুম কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর হাত থেকে ফোন আর ইয়ার ফোন টান দিয়ে নিয়ে গেল।
নিঝুম বিস্মিত হয়ে গেল! লোক টা এরকম অদ্ভুধ আচরন করছে কেন? ও তো কোন ভুল করে নি।
-" এই বের হন আমার রুম থেকে । কি চান আপনি বলুন? আপনি এত বেয়াক্কেল কেন? মাথায় কি কোন সেন্স নেই?"
নিঝুম বিস্ময়ের চরম শিকরে পৌঁছে গেল। লোক টা অযথা কি খারাপ বিহেব করছে। মানছি উনি আমার উপকার করছে। এজন্য এমন বিহেব করতে হবে। খুব কান্না পাচ্ছে আবার ,চোখে জল টলমল করছে। নিঝুম নিচু স্বরে বলল,
-" আমি কি কোন ভুল করেছি? হ্যাঁ চলে তো যাবো ই। রাত টা থাকতে দিবেন কথা তো এমন টা ছিল।"
প্রিতম রাগে কটমট করছে ,
-"না ,না আপনি কোন ভুল করেন নি। আপনি শেষ রাতে ফুল সাউন্ডে গান বাজাচ্ছেন। সেই কখন থেকে জ্বালাচ্ছেন ,এত করে বললাম যে এখন আমি ঘুমাবো কোন ডিস্টার্ব করবেন না। তা আপনি আপনার ইচ্ছা মত কাজ করছেন।"
নিঝুম অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বলল,
-" আমি তো ইয়ার ফোন দিয়ে গান শুনছিলাম যাতে আপনার ডিস্টার্ব না হয়। কিন্তু...
নিঝুমের কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রিতম ওকে থামিয়ে দিল।
-" ইয়ার ফোন দিয়ে গান শুনলে তার সাইন্ড আমার কানে কিভাবে গেল? এত রাতে গানের শব্দ শুনলে বাবা-মা এবার সত্যি ভাব্বে আমি পাগল হয়ে গেছি। শেষে বাকী টা জীবন আমার পাগলা গারদে কাটাতে হবে।"
প্রিতমের চোখ পরল ইয়ার ফোনের দিকে,
-" এটা কি আপনার ইয়ার ফোন? "
নিঝুম সংকুচিত কন্ঠে বলল,
-" না ,মানে আমার কাছে ইয়ার ফোন নেই তাই আপনার ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা ইয়ার ফোন পেয়েছি ওটা দিয়ে গান শুনতেছিলাম।"
প্রিতমের এবার রাগের মাঝেও সত্যি খুব হাসি পেল।
-" নষ্ট ইয়ার ফোন দিয়ে ফুল সাইন্ডে গান শুনছেন তাই না? সেটাও একবার খেয়াল করলেন না?"
নিঝুম এবার সত্যি খুব লজ্জা পেল। ছিঃ কেমন একটা কাজ করে ফেলল। একটা বার খেয়ালও করল না।
-" আসলে আমি খুব ডিপ্রেসনে আছি তো তাই খেয়াল করি নি।"
প্রিতম আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরল।
নিঝুম নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। এই লোক টা কি করে বুঝবে তার মনে অবস্থা। যে বুঝার সে ই তো বুঝল না। কত তা ডিপ্রেসনে আছে সে!
এত গুলো কড়া কথা না শুনালেও পারত। কিছু হলেই শুধু বাড়ি থেকে যাওয়ার হুমকি দেয়! প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে এখন। কান্নাও থামছে না একদম আউট অফ কন্ট্রোল
এসব ভাবতে ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে গেল।
ভোর আট টা বেজে গেছে। প্রিতম তো এত বেলা পর্যন্ত কখনো ঘুমায় না। প্রিতম বাবা প্রিতমের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-" আপনার শাহজাদা পুত্র এখনো উঠে নি?"
-" আমার ছেলে শাহজাদা ই। কালকে অনেক রাতে ঘুমিয়েছে তাই হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছে।"
প্রিতমের বাবা ব্যঙ্গ সুরে বলল,
-" আপনার ছেলে অনেক রাত পর্যন্ত কি এমন শুভ কাজ করছে। ও তো এগারো টা বাজেই অফিস থেকে বের হয়ে আসছে।"
-" এই তুমি আমার ছেলে কে এভাবে বলছো কেন? ভালো হচ্ছে না একদম । হয়তো বন্ধু- বান্ধব এর সাথে কোথায়ও গিয়েছিল ।"
-" অত রাতে বন্ধু- বান্ধবের সাথে কিসের এত আড্ডা?"
-" দেখ প্রিতম এখন আর ছোট নেই। ও এখন বড় হয়েছে। এখন ওর নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে।"
-" দেও দেও স্বাধীনতা । কোন দিন দেখবা কোন অপকর্ম করে বসে আছে।"
-" আমার ছেলের উপর আমার বিশ্বাস- আস্থা সব আছে। আমার ছেলে কেমন তা আমি জানি।"
-" হয়েছে চুপ কর। ওকে নাস্তা খেতে ডাক দেও । আজকে একটু তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে জরুরী মিটিং আছে।"
-" আচ্ছা তুমি বসো আমি ওকে ডেকে আনছি।"
দরজা নক করার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল প্রিতমের । চোখ জ্বলছে খুব । মোটেও উঠতে ইচ্ছে করছে না। দরজা নক করেই যাচ্ছে । কালকের রাতের কথা মনে পরতেই লাফিয়ে উঠল । মেয়ে টা এখনো ঘুমাচ্ছে। কি করবে এখন! মা- বাবা কি ভাব্বে এসব জানলে? কত কষ্ট পাবে কেউ কি আমার এই আজগুবি কথা বিশ্বাস করবে।
-" এই মরার ঘুম ঘুমাচ্ছিস নাকি? কতক্ষন ধরে দরজা নক করছি?"
প্রিতমের মাথায় কিছু আসছে না। কি করবে এখন! মেয়ে টা সজাগ থাকলেও হত। এখন তো ডাকাও যাবে না। কি উটকো বিপদে পরল।
-"মা,আমি আসতেছি। যাও তুমি।"
-" আরে তুই দরজা খোল আগে।"
-" আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি যাও তুমি।"
-" দরজা খোলতে তোর সমস্যা কি? দরজা খোল তোর চাঁদ মুখ খানা দেখি।"
প্রিতম খাটের কাছে গেল। মেয়ে টা বেহুশের মতো ঘুমাচ্ছে। নড়াচড়া করছে না। হে আল্লাহ! মরে গেল না তো আবার।
-" কিরে কি হয়েছে? কি করিস তুই বল তো?"
ধুর! আম্মুও বা দরজা খোলার জন্য এত জোর করছে কেন? প্রতিদিন তো ডেকে ই চলে যায়।
প্রিতম কোন উপায় না পেয়ে নিঝুমের পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিল। মেয়ে টা তাও সজাগ হচ্ছে না। সত্যি কি মরে গেল?
নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। যাক বেচে আছে তাহলে । কপালে হাত দিয়ে দেখে গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । মেয়ে টা মনে হয় সেন্স লেস হয়ে আছে।
মেয়ে টা কে তো এই অবস্থায় ওয়াশরুমেও রাখা যাবে না। প্রিতম কোন উপায় না পেয়ে পাজা কোলে করে খাটের নিচে শুইয়ে দিল। বিছানার চাদর ফ্লোরের ছোয়াছে করে দিল।
তারপর দরজা খুলে দিল।
-" এতক্ষন কি করছিস? দশ মিনিট ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি।"
প্রিতম ভয়ে যথারিতী ঘামতে শুরু করল।
-" আরে আমি ওয়াশরুমে ছিলাম।"
-" ওয়াশরুমে কি করছিস এতক্ষন? এখনো ফ্রেশ হস নি।"
প্রিতম থতমত খেয়ে গেল।
-" আম্মু এত জেরা করছ কেন? আমি কি এখন টয়লেটেও যেতে পারব না?"
-" তুই ই তো বললি ওয়াশরুমে গেছিস। আবার বলিস টয়লেটে সমস্যা কি তোর? তোকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন?"
-" কালকে অনেক রাতে ঘুমাইছি তাই খারাপ লাগছে।"
চলবে......

✍️পানপাতার ঘর 🍃🍃 #পর্বঃ০৭+৮সকাল থেকেই সোহেলা বেগম বেদম রেগে আছেন। আজকে একটা না একটা ব্যবস্থা সে করেই ছাড়বে। সোহেলা বেগম ...
13/07/2025

✍️পানপাতার ঘর 🍃🍃
#পর্বঃ০৭+৮

সকাল থেকেই সোহেলা বেগম বেদম রেগে আছেন। আজকে একটা না একটা ব্যবস্থা সে করেই ছাড়বে।

সোহেলা বেগম উঠোনে পা ছড়িয়ে বসে মুখে বড় পান গুঁজে তার মেয়ে গোলাপীকে চওড়া গলায় ডাকেন। গোলাপী কারো সাথে কথা বলছিল। ফোন কেটে দ্রুত মায়ের কাছে এসে বসে। চিন্তিত গলায় বলে-
- কি মা!? এভাবে ডাকতেছো! সব ঠিক আছে?

সোহেলা বেগম মুখ ভার করে বলেন-
- কিচ্ছু ঠিক নেই রে মা। কিচ্ছু ঠিক নেই। ছেলেটার সরকারি চাকরি হয়েছে। দামড়া হয়েছে অথচ বিয়ের নাম গন্ধ নেই। পাড়া প্রতিবেশী নানান কটু কথা কয়। তাদের মুখ আমি কি করে বন্ধ করবো বল!??

গোলাপীর যেন চিন্তা বেড়ে যায়। আসলেই তো!

তার কত সাধ ছিল তার একমাত্র ননদের সাথে বিয়ে করাবে মেঘের। কিন্তু তার নিজের সংসারই তো টিকলো না! সেখানে ভাইয়ের বিয়ে কিভাবে হয়?

গোলাপী শান্ত গলায় বলে-
- দেখি,মা আমি মেঘের সাথে আবার এই ব্যাপারে কথা বলবো। তুমি চিন্তা করো না। পরে তোমার প্রেসার বেড়ে যাবে।

সোহেলা বেগম বিলাপ পাড়তে পাড়তে বলেন-
- আর প্রেসার! আমি মরে গেলেই বেঁচে যাবে ও। কোন কুক্ষণে এরকম ছেলে জন্ম দিয়েছিলাম কে জানে....!
সরকারি অফিস থেকে মেঘকে ডাকা হয়েছে। মেঘ ফর্মাল ড্রেস আপ করে বের হচ্ছিল তখনি গোলাপী পিছু ডাকে।

- কোথায় বের হচ্ছিস?
মেঘ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে-
- দেখছিস না অফিস যাচ্ছি!
- ওওও। আচ্ছা যা।
- ডাকলি কেন? জরুরি কথা?

গোলাপী আমতা আমতা করে।

- তেমন কিছুনা। যা তুই।

মেঘ না শুনে যাবেনা। কেন তাকে পিছু ডাকা হলো। কি সেই কারন!?

মেঘ আবারো জিজ্ঞেস করে
- বল,কেন ডেকেছিস?

গোলাপী এক রাজ্যের সাহস জুগিয়ে বলে-
- তোর বিয়ের ব্যা...

মেঘ মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে-
- সেদিন তো বলেই দিয়েছি আমি বিয়ে করবো না। তাহলে? তাহলে এখন আবার কেন?

- মেঘ,তুই বুঝতে পারছিস না! আশেপাশের মানুষ নানান কথা বলে। কি জবাব দেবো তাদের?
- তাহলে আমাকে লিমার সাথেই বিয়ে দাওনা! তাকে ছাড়া অন্য কাউকে তো বিয়ে করবো না আমি আপু।
- মা যে মানবে না কিছুতেই। তুই একটু বোঝ না...

মেঘ গোলাপীর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে-
- তোর মনে আছে রাসেল ভাইয়ের কথা? তাকে যে খুব ভালোবাসতি! সেদিন যদি একটু সাহস করতি,আজ তোর সংসার থাকতো। পরিপূর্ণ সংসার।

গোলাপী চুপ হয়ে যায়। তার মনে পড়ে যায় পুরোনো দিনের কথা।
তখন সবে এস এস সি দিয়েছে সে। হুট করেই ফুচকা খেতে গিয়ে পরিচয় হয় রাসেলের সাথে। বয়সে তার থেকে ৪ বছরের বড় ছিল সে। দেখতে সুন্দর,লম্বা,হাসলে গালে দুটো গর্ত হয়। শুধু সমস্যা ছিল একটাই। কোনো ভালো চাকরি ছিল না তার। বাবা মরে যাওয়া এবং আর্থিক সমস্যার কারনে পড়া হয়নি তার। তবুও নিজের একটা গ্যারেজ ছিল। কম বেশি ভালোই আয় হতো তার। গোলাপীর মনে ক্ষীণ আশা ছিল। যদি তার বাবা মেনে নেন! কিন্তু না,হলো না। গোলাপীর বাবা খালেদ মাহমুদ মেনে নেন নি। তিনি গোলাপীর জন্য বিয়ে ঠিক করেন বড় ঘরে...
রাসেল বলেছিল গোলাপী কে চলে আসতে। গোলাপী সাহস করে যেতে পারেনি। ২ বছরের প্রেম,আর তার গভীর ভালোবাসা কে বিসর্জন দিয়ে বিয়ে করে নেয় সে।
গোলাপীর বিয়ের ২ মাস পরেই স্ট্রোক করে মারা যায় খালেদ মাহমুদ। এরপর কেটে যায় ৩ টি বছর...
এই ৩ টা বছর কিভাবে কাটিয়েছে গোলাপী সে নিজেও জানে না। জামাইর নেশা পানির অভ্যেস ছিল। রাত করে বাড়ি ফিরতো। উনিশ থেকে বিশ হলেই গোলাপী কে কি মার টাই না মারতো!
সেই মারের কথা ভাবলে এখনো গোলাপীর বুক কাঁপে...
এরপর আর না পেরে ডিবোর্স নিয়ে আসে সে। তবে এখন বড্ড আফসোস হয়। যদি সেদিন রাসেলের সাথে সত্যিই যেতো..
একটু সাহস করে...!
আজ হয়তো দিন টা অন্যরকম হতো...

গোলাপী চোখ মুছে নেয়। সে শান্ত গলায় মেঘ কে বলে-
- আমি মাকে বুঝিয়ে বলবো। দেখি যদি মেনে নেয় লিমা কে.....!
উদয়ের আজ ক্লাসে মন বসেনি। একদম বসে নি। কেননা মিশি আজ আসেনি ক্লাসে।
কি হলো মেয়েটার! জ্বর টর বাধালো না তো...!

উদয় ভাবে একবার তার বাড়ি গিয়ে দেখে আসবে। আবার ভাবে থাক,দরকার নেই।
মানুষের মন বড়ই অবাধ্য প্রাণী। একে শিকল বা কড়া কিছু দিয়ে বেধে সঠিক পথে রাখা যায়না।

উদয়েরও হয়েছে একই অবস্থা।
তার বারবার ইচ্ছে করছে দৌড়ে যেতে মিশির কাছে।

একবার দেখে আসতে মেয়েটার কি হয়েছে।
কেন আসেনি সে...
সে কি জানে,আজ সারা ক্লাসে উদয় তার পথ চেয়ে বসেছিল।
সে কি জানে,উদয় কোথাও না কোথাও তাকে বড্ড মিস করে এখন।
হয়তো জানে, হয়তো না।
বিকেল বেলা।
মিশিদের বাড়ির সামনে পায়চারি করছে উদয়। পা বারবার ভেতরে টানলেও উদয় যাচ্ছে না। কেন যাবে সে! কি ঠ্যাকা তার!
উদয় কিছুক্ষণ মিশিদের বাসার দিকে তাকিয়ে এক ছুটে চলে যায় সেখান থেকে।

আকাশে মেঘ জমেছে। হয়তো বৃষ্টি হবে...
মিশি ছাঁদে উঠেছিল জামা কাপড় তুলতে। তখনি তার চোখে পড়ে উদয় কে। তার মানে ছেলেটা তার খোজে এসেছিল! শুধু দ্বিধার কারনে ভেতরে আসেনি....!

মিশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
একটা চিঠি লেখা যাক...!
ছেলেটার সমস্ত অস্থিরতা দূর করা যাক।
প্রিয় উদু,
প্রিয় শব্দটা তোর জন্যেই বরাদ্দ। আমি তোর প্রিয় না হতে পারি,তুই তো আমার প্রিয়। জানিস,যখন মাঝরাতে হুট করে আমার ঘুম ভেঙে যায়। সবার আগে আমার তোর কথা মনে পড়ে। কেন পড়ে? জানিনা....
আচ্ছা, তোর কখনো ঘুম ভাঙে মাঝরাতে? মনে পড়ে আমার কথা? আচ্ছা, আমার ভোর সকালের শিশির ফোটা যে তুই,তা কি জানিস? আমি কি তোর কাছে শুধুই গুড়ে বালি? আমি তোকে যেদিন তোকে প্রথম দেখেছিলাম,তোর ঐ গভীর চোখের প্রেমে পড়েছিলাম। তোর উশকো খুশকো চুল গুচ্ছের মায়ায় পড়েছিলাম। তুই কেন সেগুলো দেখতে পেলি না..!?
অংক বোঝার ছলে তোকে ডেকে নিতাম। অংক কি করে বুঝবো বল, আমার চোখ যে তোর উপরেই নিবদ্ধ থাকতো। মনে পড়ে তোর একবার ধুম জ্বর এসেছিল? ৮ দিন স্কুল যেতে পারিস নি। আমি রোজ স্কুল যাওয়ার পথে তোকে দেখতে যেতাম। তবে আড়াল থেকে। সামনে গেলে যে আমার চোখ ভর্তি জল তুই দেখে ফেলতি...
যখন বুঝলাম আমার ভালোবাসা শুধু এক তরফা ভালোবাসা,তখন আমি কেঁদেছি,কেঁপে উঠেছি কিন্তু ভেঙে পড়িনি। যে আমার না,তার মায়া বাড়িয়ে লাভ কি! যে আমার না,তার ছায়া মাড়ানোও যে পাপ। সেই পাপ আমি অনেক করেছি। আর না..
তাই সরে যাচ্ছি...যেতে দে...
তবে তোর কোনো ভুল নেই...
ভুল আমার। কেননা আমি যে তোকে ভালোবেসেছিলাম...
ইতি,
তোর কেউ না।
শিপলু এসে সন্ধ্যের দিকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে উদয় কে। উদয় যেন এক তৃষ্ণার্ত পথিক, ক্লান্ত, জরাজীর্ণ সে। মিশির এক টুকরো কাগজের এক টুকরো চিঠি যেন উদয় কে আবার চাঙা করে তুলেছিল।
কিন্তু চিঠি টা পড়ার পর,আগের থেকেও আরো বেশি ভেঙে পড়ে উদয়।
মিশি কি সত্যিই চলে যাচ্ছে তার থেকে?
সে কি হারিয়ে ফেলছে মিশিকে?

#পর্বঃ০৮

উদয় গায়ে টি শার্ট চাপিয়ে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। বুকের ভেতর টা ভীষণ জ্বালাপোড়া করছে। মনে হচ্ছে খুব আপন কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে। খুব দূরে....খুব দূরে...

উদয় কখনো সিগারেট ছুঁয়ে দেখিনি কিন্তু আজ ইচ্ছে করছে। ভীষণ ইচ্ছে করছে একটা সিগারেট খেতে। শুনেছে সিগারেট খেলে নাকি বুকের ভেতরের কষ্ট বাষ্প হয়ে উড়ে যায়!? তার কষ্ট গুলোও উড়ে যাবে তবে? ভালোই হবে... সে যে আর নিতে পারছে এসব। মাথা টা এলোমেলো হয়ে আছে। নিজেকে নেশাগ্রস্তের চেয়ে কম লাগছে না কোনো অংশেই।

উদয় একটা চা'য়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। এখানে একদম ভীড় নেই বললেই চলে। শুধু দোকানী এবং একজন লোক রয়েছে। উদয় আশেপাশে ঢোক গিলে একবার। ভীষণ ভয় করছে তার। যদি দোকানদার মাইর দেয় তাকে! কিন্তু কেন দিবে? কত লোকে এসে সিগারেট কিনে নিয়ে যায়। কই...কাউকে তো মাইর দেয় না কেউ।

উদয় ঝেড়ে কাশে একবার। তারপর দুরুদুরু বুক নিয়ে বলে-
- চাচা,একটা সিগারেট দেন তো।

দোকানী ভেতর থেকে মুখ বের করে ভালো করে দেখে নেয় একবার উদয় কে। তারপর প্রায় চিল্লিয়ে বলে-
- তুমি মইনুলের ছেলে না..!? হায় হায়! তোমারও সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে? দেশ টা রসাতলে...

বাকি কথা শোনার আগেই উদয় দৌড় লাগায়। এক দৌড়ে বাজার এর অপর প্রান্তে গিয়ে থামে সে। ইচ্ছে করছে নিজেকে নিজেই পুকুরে চুবাক কিছুক্ষন! এত দোকান থাকতে শেষমেশ ঐ দোকানেই যাওয়া লাগলো যেখানে তার বাবা পরিচিত...!?

উদয় আশেপাশে তাকায়। অনেকেই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা ছেলে এভাবে হুট করে দৌড়ে আসলে তাকাবে না?
উদয় সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি হাসার চেষ্টা করে একটু। এরপর দ্রুত পায়ে জায়গা বদল করে নেয়।
বাজারের থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা ছোট্ট দোকান দেখতে পায় উদয়। দোকান টা একদম অজপাড়া গাঁয়ের দোকান টাইপ। একটা ছোট প্রদীপ জ্বলে নিভছে সেখানে।

উদয় গিয়ে সেই দোকানটার সামনে দাঁড়ায়। ভেতরে ভেতরে অনেক নার্ভাস সে। আচ্ছা যদি এই লোকেও তার বাবাকে চিনে থাকে তখন!?

উদয় আর কোনো রিস্ক নিতে চায়না। তাই এবার সরাসরি দোকানদার লোকটাকে জিজ্ঞেস করে -
- আপনি আমাকে চিনেন!?

দোকানী লোকটা পান সাজাচ্ছিল। হুট করে এমন প্রশ্ন শুনে আহাম্মক হয়ে যান তিনি। মাথা ঘাড় অব্দি কাত করে বলেন-
- না।

উদয় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তবুও আরেকটু সিউর হতে প্রশ্ন করে-
- আমার বাবাকে চিনেন? তার নাম মইনুল।

লোকটার কপালে ঈষৎ ভাজ পড়ে। সে কর্কশ কণ্ঠে বলে-
- তোমাকে চিনি না তো তোমার বাপ কে কেমনে চিনবো ছাওয়াল?

উদয় মৃদু হাসে। যাক,একটা ঠিক দোকানে এসেছে তাহলে।
উদয় আঙুল উঁচিয়ে সিগারেট দেখিয়ে বলে-
- তবে আমায় একটা সিগারেট দিন তো। এই নিন টাকা।

উদয় দশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দেয় লোকটির দিকে। লোকটি সিগারেট দিতেই উদয় দৌড়ে চলে যায়। লোকটি বেশ কিছুক্ষণ দোকানের ভেতর থেকে মাথা বের করে উদয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেমন অদ্ভুত ছেলেটা! সিগারেট কিনতে এসে আবোলতাবোল প্রশ্ন করছিল কিসব!? মাথায় সিট আছে বোধহয়।
লোকটা আবার পান সাজাতে সাজাতে মনে মনে ভাবে-
- আহারে,এই টুকুন ছেলেরও মাথায় সিট! আল্লাহ রহমত করুক।
ফাঁকা রাস্তা,নিকষ কালো অন্ধকার। ৮ টা সাড়ে ৮ টা বাজে হয়তো! উদয় আন্দাজ করে মনে মনে। উদয় আশেপাশে তাকিয়ে খুব সন্তর্পণে এগিয়ে যাচ্ছে। তার পকেটে সিগারেট, অথচ সে এমন ভাবে হাটছে যেন তার পকেটে বাংলাদেশ উড়িয়ে দেওয়ার নীল নকশা।
বাজারের কাছাকাছি আসতেই উদয় খেয়াল করে এক জায়গায় সামান্য জটলা। কয়েকটা ছেলে মিলে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উদয় এগিয়ে যায় সেদিকে। সে অবাক হয় যখন সেই হট্টগোলের ভীড়ে লিমা কে দেখতে পায় সে।
লিমার চোখের নিচে দেওয়া কাজল লেপ্টে গেছে জলে। মুখে বিষন্নতার ভাব। সে কাধের ব্যাগ টা সামনে নিয়ে খুব শক্ত করে চেঁপে ধরে আছে সেটা। ৫-৬ টা ছেলে। কারো কারো মুখে ব্যঙ্গ,কারো কারো মুখে উত্যক্ত করার অশ্রবণীয় ভাষা। উদয় খেয়াল করে ছেলে গুলো তাদেরই স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। অর্থাৎ তার দু বছরের জুনিয়র। এই বয়সেই ছেলেগুলো এমন হয়ে গিয়েছে...! ছিঃ!
উদয়ের নিজেরই ঘিন ঘিন লাগে কথা টা ভাবতে গিয়ে।

উদয় ভীড় ঠেলে মধ্যিখানে প্রবেশ করে। উদয় কে দেখে যেন লিমার প্রাণ ফিরে আসে। ছেলেগুলো উদয় কে ভালো করেই চিনতো। তারা সবাই চুপ হয়ে যে যার মতো চলে যায়। উদয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিমার দিকে তাকিয়ে বলে-
- তুই এখানে কেন?

লিমার চোখে তখনো ভয়ের রেশ। লিমা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
- কোচিং-এ পরীক্ষা ছিল। দেড়ি হয়ে গিয়েছে তাই। প্রতিদিন বাবা নিতে আসে। কিন্তু আজ আসেনি। বাবা অসুস্থ যে...!

উদয় আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
লিমা কে সহানুভূতির গলায় বলে-
- আমি বাড়ি অব্দি এগিয়ে দিয়ে আসবো তোকে। চল।
মেঠোপথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে উদয় লিমা। দুজনের মুখে বুলি নেই।

উদয় মিশির দেওয়া চিঠি নিয়ে তখনো ভাবনায় বিরাজমান। তার বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছে,সে কি হারিয়ে ফেলবে মিশিকে?
আর লিমা যেন হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনার সম্মুখীন হয়ে যাওয়ায় একদম কুঁকড়ে পড়েছে। নেতিয়ে গেছে।
উদয়ই নিরবতা ভাঙে।

- আর কখনো একা একা এ পথে আসবি না। এলাকাটা ভীষণ খারাপ।

লিমা নিচু গলায় বলে-
- আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। বাবা না আসলে আমি আর কখনো আসবো না। সম্মানের আগে পড়ালেখা না।

উদয় ছোট্ট করে জবাব দেয়।
- হু।

আবারো চুপচাপ। দুজনেই চাঁদের আলোয় নিজেদের পথ অনুসরণ করে হাটছে অনবরত।

প্রায় লিমার বাড়ির কাছাকাছি আসতেই উদয় থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। উদয়ের সাথে সাথে লিমাও দাঁড়িয়ে পড়ে। লিমা অবাক হয়ে উদয়ের দিকে এগিয়ে এসে বলে-
- কি হলো! দাঁড়িয়ে পড়লি যে..! আর যাবি না?

উদয়ের চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে। আশেপাশের সমস্ত কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। উদয় হঠাৎই হাটু গেড়ে বসে পড়ে রাস্তায়। দু হাতে মুখ লুকিয়ে বলে-
- আমি ভালোবাসি রে মিশি কে। ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি। আমি ওকে মিস করতেছি। ভীষণ করতেছি। আমি ওকে হারাতে পারবো না রে লিমু। হারাতে পারবো না। কিছুতেই না...

লিমার মুখে প্রসন্ন হাসি।
যাক,অবশেষে হাদারাম টা বুঝতে পেরেছে তার ভালোবাসার কথা... ভালোবাসার অনুভূতি...

লিমা এগিয়ে গিয়ে উদয়ের হাত ধরে তাকে টেনে তোলে।
উদয়ের চোখ ফোলা ফোলা। নিশ্চয়ই ছেলেটা বেশিক্ষণ কাঁদতে পারে না।
লিমা হাসি মুখেই উদয় কে বলে-
- এখন যখন বুঝতে পেরেছিস,আর দেড়ি কিসের? প্রকাশ করে ফেল। মেয়েটা তোকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে রে। বড্ড ভালোবাসে। তার যে ভীষণ কষ্ট হয়েছে তোকে ছাড়া থাকতে।

উদয় চোখ মুখ মুছে পকেট থেকে সিগারেট টা বের করে ফেলে দেয়। শান্ত গলায় বলে-
- আমি হারাতে দিবো না মিশিকে। কিছুতেই না....


আকাশে চাঁদ উঠেছিল কিন্তু এখন কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হয়তো কোনো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে। আকাশে মেঘও করেছে বড্ড। মিশি বারান্দা দিয়ে মেঘের ধীর গতিতে উড়ে যাওয়া দেখছে।
হঠাৎ মিশির ইচ্ছে হয় একটা কবিতা আবৃত্তি করতে। এত রাতে কেউ হয়তো জেগে নেই। তাই একদম খোলা মনেই মিশি শুরু করে...

উড়বে হাওয়ায় বিষন্ন চিরকুট
শিউরে দিবে অজস্র বিদ্যুৎ
একটু দাড়া, এখন তো বৈশাখ
শব্দগুলো যত্ন করে রাখ।
দহনগুলো একটু করে লেখ,
হয়তো এখন বড্ড দূরে মেঘ
শুনছে কারোর নানান অনুযোগ
সবাই তো চায় মেঘ শুধু তার হোক।
অবুঝ করে দেয় অধিকার বোধ
তোর দুচোখে ছিপিয়ে উঠে রোদ
সত্যি তাকে সত্যি যদি চাস
ভুল না বুঝে একটু ভালোবাস।
তোর অভিমান অস্বাভাবিক নয়
ভালোবাসাও অনেক রকম হয়
সেও ভোলেনি তোর দেওয়া ডাকনাম
আসবে দেখিস,ঝড়বে অবিশ্রাম।
শব্দগুলোর চমকাবে বিদ্যুৎ
ভিজিয়ে দেবে তোর লেখা চিরকুট
তোকেও ছোঁবে,ক দিন শুয়ে থাক
বৃষ্টি হবেই, সবে তো বৈশাখ।।

কবিতা শেষ হতেই টুপ করে একফোটা জল মিশির চিবুক গড়িয়ে পড়ে। ঠিক তখনি রুমঝুম শব্দ তুলে নামে এক পশলা বৃষ্টি।
মিশি মৃদু হাসে। ঠোঁট বাকিয়ে বলে-
- এই বৃষ্টি না হয় এসে গেলো,কিন্তু আমার সে... সে কি আসবে?
সেই রাতে আর ঘুম হয়না মিশির। সারারাত গোলাপী ডায়রির ভাজে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে সে। ভোরের দিকে ঘুম আসে তার। রাজ্যের ঘুম ভর করে তার ছোট্ট সরু চোখের দু'পাতায়।
সকাল ১০ টার ঘুম ভাঙে মিশির। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সে। মনে মনে একগাল গালি দেয় নিজেকে। আজকেও হলো না স্কুল যাওয়া। এভাবে করলে তো আবার অংকে ডাব্বা মারবে সে....

মিশি রাগে কটমট করতে কর‍তে উঠোনে বের হয়। বকর মোল্লা আর নতুবা বেগম বসে বসে চা খাচ্ছিলেন। নতুবা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বাজখাঁই গলায় বলে-
- মা,উঠালে না কেন আমায়! আজকেও ক্লাস টা মিস গেলো।

নতুবা বেগম চোখে কপালে তুলে বলেন-
- আমি উঠাইনি? মিশির আব্বু,শুনেছো মেয়ের কথা? কত করে ডেকেছি তাকে। তুই তো মুখ কামড়ে পড়েছিলি বিছানায়। টেনেও তুলতে পারিনি।

মিশি হাই তুলতে তুলতে একটা চেয়ার টেনে বসে। বকর মোল্লা কপালে ভাজ এনে বলে-
- কাল রাতে ঘুমাস নি?

মিশি উত্তর দেয় না। চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকে সে। নতুবা বেগম চায়ে আরেকবার চুমুক দিয়ে বলেন-
- তোর দ্বারা তো পড়ালেখা হবে না। অংক ও হবে না। বিয়ে দিয়ে দেই তোর? কি বলিস?

বকর মোল্লা হাত দিয়ে ইশারায় থামতে বলে নতুবা কে। কেননা মিশি কখনো বিয়ের কথা শুনতে পারে না। রেগে উঠে।

নতুবা থামেন না। আবারো বলেন-
- বিদেশ ফেরত এক ছেলে ছিল। কিন্তু তোর বাবার পছন্দ হলো না তাকে। তাই বলে কি আর ছেলে নাই? কত ছেলে তোকে বিয়ে করার জন্য বসে আছে। তুই চাইলে লাইন লেগে যাবে। আমি দেখবো পাত্র মা তোর জন্য?

মিশি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে। শান্ত গলায় বলে-
- দেখো।

এরপর ভেতরের দিকে চলে যায়।
স্কুলে টিফিন টাইমেই ছুটি নিয়ে নেয় উদয়। দৌড়ে আসে মিশিদের বাড়ি। বাড়িতে ঢুকেই দেখে মিশির বাবা মা বসে আছেন উঠোনে।

উদয় সেখানে গিয়ে সালাম জানায় তাদের। মুখ প্রসন্ন হাসি এনে বলে-
- আংকেল,মিশি?

বকর মোল্লা পত্রিকায় মুখ রেখেই বলে-
- ভেতরে আছে। যাও।
- জ্বি আচ্ছা।

উদয় আরেক দফা সালাম জানায় তাদের। এরপর মিশির রুমের দিকে এগোয়।
মিশি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সবে। ঠিক তখনি সে শুনতে পায় ক্ষীণ গলায় কেউ গান গাইছে।

তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি হয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
ছাদ ভেঙে যেই বাষ্প হবে জল
বাষ্প দিয়ে তুই কি করবি বল
তারচেয়ে চল, এইবেলা মেঘ খুঁজে
দুজন মিলে ঝাপ দেই মুখ বুজে......

মিশি কম্পিত চোখে উদয়ের দিকে চেয়ে আছে। উদয় ২ টাকা দামের কোকোলা লাঠি চকলেট মিশির সামনে ধরে হাটু গেড়ে বসে। অনাবীল খুশির আবেশে বলে-
- মিশি, প্রথমেই সরি। আমি এতই নির্বোধ যে এত কাছে ভালোবাসা পেয়েও বুঝতে পারিনি। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম,ভালোবাসা কী,আর আমার ভালোবাসা কে,আমি আর একমুহূর্ত দেড়ি করিনি রে। চলে এসেছি। তোর কাছে চলে এসেছি। দৌড়ে দৌড়ে এসেছি। রাস্তায় কতগুলো হোচট খেয়েছি জানিস? তবুও থামিনি। শ্বাস উঠা নামা করছে। তবুও জিড়োনোর যে সময় নেই একলেশ। আজকেই তোকে বলবোই, বলবোই.....
আ-আমি..তোকে ভালোবাসি মিশি।

মিশির চোখ বন্ধ করে ফেলে। হাজারো জলকণা ভীর করেছে তার চোখে। এগুলো যে সুখের। যে সুখের জন্য সে ৩ টি বছর অপেক্ষা করেছে।

উদয় উঠে দাঁড়ায়। মিশির এলোমেলো চুল গুলো কানের কিনারায় গুঁজে দেয়। ফিসফিস করে বলে-
- টাকা ছিল না রে। তাই ফুল আনতে পারিনি। কিন্তু দেখ,লাঠি চকলেট এনেছি। খাবিনা?

মিশি চোখ খুলে হেসে ফেলে। দু তিন ফোটা পানি তখন গড়িয়ে পড়ে চোখের কিনারা ঘেঁষে। উদয় পরম আবেশে মুছে দেয় সেগুলো। মিশির গালে হাত ছুঁইয়ে বলে-
- এটাই তোর লাস্ট কান্না। আর কাঁদবি না। একদম কাঁদবি না। মনে থাকে যেন...

[কবিতা টি নীলাঞ্জন ব্যানার্জীর লেখা]

চলবে.....
(আগের পর্বগুলো আমার টাইমলাইনে পাবেন)

13/07/2025

✍️আসসালামু আলাইকুম
সবাই কেমন আছেন 🥰
শুভ সকাল

12/07/2025

✍️এখন মধ্যরাত, আমার কোন একটি ফলোয়ার জেগে আছেন

 #যদি_তুমি_জানতে #পর্ব_18একটু একটু শীত পড়তে শুরু করেছে এখন। ঘাসের উপর হালকা হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। ফুল স্পীডে ...
12/07/2025

#যদি_তুমি_জানতে
#পর্ব_18
একটু একটু শীত পড়তে শুরু করেছে এখন। ঘাসের উপর হালকা হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। ফুল স্পীডে ফ্যান ছেড়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে তুরান। আজ ফ্রাইডে। ভার্সিটি বা টিউশনি যে যাওয়ার কোন তাড়া নেই। কিন্তু রুপার জন্য যে বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারবে না সে কথাও অজানা নয়।
হাতে দুই মগ কফি নিয়ে রুপা এসে হাজির। উঠতে ইচ্ছে করছে না তুরানের, ঘুমের ভান করে পড়ে রইলো। রুপা এসে টান মেরে তুরানের গায়ের কাঁথা টা ফেলে দিলো। চোখে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলো রুপা।
-' এত বড় ছেলে থ্রী কোয়ার্টার ফ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট পরে শুয়ে আছে।'
তুরান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কাঁথা টা গায়ে টেনে দিয়ে বলল,
-' তুমি যাও যাও। আমি শার্ট প্যান্ট পরে আসছি।'
তুরান ফ্রেশ হয়ে শার্ট, প্যান্ট পরে এলো। কেমন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলল রুপা! হাতের দুইটা মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুপা। রুপা তুরান কে দেখেই লাজুক হাসি দিলো। কেন হাসে কে জানে। তুরানের হাতে মগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-' হট কফি তো কোল্ড কফি হয়ে গেছে। তারপরও খেতে হবে আপনার।'
তুরান এক চুমুক মুখে দিয়ে বলে,
-' একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে তো। তবে কফিটা বেশ হয়েছিল। লুকিয়ে এনছো তাই না?'
-' নিজের হাতে বানিয়েছি। আপনি লেট করেছেন তাই তো ঠান্ডা হয়ে গেছে। যেমন হোক খেতে হবে।'
তুরান বিস্মিত ভঙ্গিতে বলল,
-' কি তুমি বানিয়েছো! তোমার হাতের বানানো ঠান্ডা কফি ও যেন অমৃত। ঠান্ডা কফি কেন শুধু? তোমার হাতে বিষ পান করতেও আমি শত বার রাজি।'
বলেই হো হো করে হেসে উঠলো তুরান। নাক মুখ কুঁচকে রুপা বলে,
-' ঢং করা হচ্ছে? ঢং রং যাই করেন আপনারই এই কফি খেতে হবে।'
-' তোমার ভাষায় এটা ঢং কিন্তু কবি সাহিত্যিকে ভাষায় এটা প্রেম।'
এবার হেসে উঠলো রুপা। হাসি থামিয়ে বললো,
-' আপনি কি জানেন আপনি আমার মত বাঁচাল হয়ে যাচ্ছেন।'
খানিকক্ষণ চুপ থেকে তুরান বিড়বিড় করে বলে,
-' আসলেই কি আমি বাঁচাল হয়ে যাচ্ছি?'
-' বিড়বিড় করে কি বলেন?'
তুরান হেসে বলে,
-' তোমার সাথে প্রেম করলে বাঁচাল হওয়া কি স্বাভাবিক নয়?'
এ পর্যান্ত বলে তুরান আবার বিড়বিড় করে বলে,
-' সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।'
রুপা তুরানের কথা বুঝার চেষ্টা করলো না। তুরান কয়েক চুমুক কফি খেয়ে তারপর শরবতের মত ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।
রুপা তুরানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
-' এটা কি হলো?'
-' রুপার হাতের স্পেশাল কফির শরবত খাওয়া হলো।'
এর ভিতর ডাক আসলো সাহেলা বেগমের। রুপা চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। বিরক্ত হয়ে বলল,
-' উফ!'
-' হয়েছে বিরক্ত হওয়ার দরকার নেই তাড়াতাড়ি যাও।'
রুপা হনহন করে হেঁটে চলে গেল। তুরান রুপার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সাহেলা বেগম রুম গোছাচ্ছেন। পুরো রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আজিজ চৌধুরীর বই। বিরক্ত হয়ে বই গুলো গোছাচ্ছেন যেন। রুপাকে দেখেই বিরক্ত ভাবটা মুখে প্রকাশ করে বলল,
-' কত বার বলি এখানে সেখানে বই ফেলে রাখবে না।'
রুপা কিছু না বলে চেয়ার টেনে চেয়ারের উপর বসলো। সাহেলা বেগম নিজের মনে রুম গোছাচ্ছে।
রুপা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-' ডাকছো কেন?'
-' তোর বাবা টাকা পাঠিয়েছে তোর শপিং এর জন্য। যা ইচ্ছা কিনতে বলেছে।'
-' হঠাৎ টাকা মতলব কি?'
-' থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো। নন সেন্স এর মত কথা। তোর মা-বাবা তোর পিছনে কত লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে আর তুই সামান্য শপিং এর টাকার জন্য মতলব খুঁজছিস।'
সাহেলা বেগমের রিয়্যাক্ট দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে যায় রুপা। বিড়বিড় করে বলে,
-' সব আমায় ফুঁসলিয়ে তাদের কাছে নেওয়ায় ধান্দা।'
সাহেলা বেগম কোন কথা বলে না।
-' আচ্ছা দেও দেও টাকা দেও। কত লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে শুনি?'
সাহেলা বেগম মেজাজ খারাপ হচ্ছে প্রচুর। রাগ সংযত করে বলে,
-' শপিং এর জন্য লাখ টাকা লাগে? আর তোর যদি প্রয়োজন হয় লাখ টাকাই দিবে। ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়েছে , টাকা আরো লাগলে তোকে ফোন দিতে বলেছে।'
রুপা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
-' সবই বুঝি।'
-' আর শোন, আমার আজ অনেক কাজ আছে আমি যেতে পারবো না। ওই বাসার তু্রান ছেলে টা কে বলে দেখি যায় কিনা, ছেলে টা খুব ভালো।'
রুপা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,
-' না,না তোমার বলতে হবে না ,আমিই বলছি।'
সাহেলা বেগম নিজের কাজে মন দেয়।
তুরান আবার ঘুমাচ্ছে। রুপার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এত ঘুমানোর কি আছে?
এক গ্লাস পানি তুরানের মুখের উপর ঢেলে দেয়। তুরান উঠে বসে। ঘুম ঘুম চোখে বলে,
-' আরে রুপা আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।'
-' ওকে ঘুমান।'
রুপা রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুপা কি রাগ করে চলে যাচ্ছে? তুরান দৌড়ে গিয়ে রুপার পথ আটকে দাঁড়ালো।
-' আরে কোথায় যাচ্ছো? আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম না, তোমায় দেখে ভান করছি।'
-' জানি কি করছেন। পথ ছাড়ুন! আমি বাসায় যাবো।'
তুরান রুপার হাত ধরে জোর করে রুমে নিয়ে যায়। রুপা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
-' আমি শপিং করতে যাবো। আম্মু ব্যস্ত তাই আপনায় নিয়ে যেতে বলেছে। আর আমি এই সুযোগটাই খুঁজছিলাম।'
তুরান অবাক হয়ে বলল,
-' সাহেলা আন্টি আমায় নিয়ে যেতে বলেছে! আসলেই তাঁরা দুই জন খুব ফ্রেশ মাইন্ডের।'
তুরান রুপার আর একটু কাছে গিয়ে বললো,
-' আচ্ছা.. আচ্ছা তুমি এই সুযোগ খুঁজছিলে কেন?'
-' ইস ন্যাকা! কিছু বুঝে না। উনারা যদি জানে আপনার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক তাহলে বুঝবেন কেমন মাইন্ডের।'
তুরান অনেক সময় চুপ করে রইল। তারপর বললো,
-' রুপা তুমি আগের থেকে অনেক টা চেঞ্জ হচ্ছো। আগে অনেক পাগলামি করতে কিন্তু এখন অনেক টা স্বাভাবিক হয়ে গেছো।'
কথা শেষ‌ করে রুপার দিকে তাকায় তুরান। না..রুপা এসব কথা নিয়ে বরাবরের মত মন খারাপ করলো না কিংবা পাগলামিও করলো না বরংচ মুচকি হেসে বলল,
-' আম্মু বলেছে আমি ধীরে ধীরে আরো সুস্থ হয়ে যাবো।'
রুপা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
-' আপনি সব সময় জানতে চান না আমি কেন এমন? আজকে বলছি শুনুন।'
তুরান অধিক আগ্রহী আর শঙ্কিত হয়ে বলে,
-'বলো।'
-' আমার একটা অসুখ হয়। তারপর আমি এলেমেলো হয়ে যাই।'
এ পর্যন্ত বলে উদাস হয়ে যায় রুপা। তুরান স্বস্তি বোধ করে। যাক তাহলে অসুখের কারনেই রুপা এমন হয়েছে, লেখাপড়া ও হয়ত ছেড়ে দিয়েছে। জটিল কোন কারন নেই ।
-' আচ্ছা রুপা রাখো এসব কথা। চলো শপিং এ যাই। এসব নিয়ে ভেবে তুমি একদম মন খারাপ করো না।'
রিক্সায় পাশাপাশি বসা দুই জন। রুপা তুরানের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। রিক্সার সিট গুলো বোধ হয় দিনে দিনে সংকীর্ণ হচ্ছে। রুপা একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে। কথার মাঝে কোন ব্রেক দিচ্ছে না। তুরানও মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছে।
-' তোমার লম্বা চুল গুলো মিস করছি খুব।'
রুপা মুখ কালো করে বলে,
-' আমিও মিস করি খুব।'
একটা শপিং মলের সামনে রিক্সা থামায়। তুরানের হাত ধরে হাঁটছে রুপা। রুপা হাঁফিয়ে গেছে যেন।
-' এত মানুষের হৈচৈ ভালো লাগছে না আমার। তাড়াতাড়ি করেন একটু।'
তুরান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-' কেনাকাটা করবে তুমি আর তাড়াতাড়ি করতে বলছো আমায়?'
-' আপনায় সাথে এনেছি কেন ? আপনি পছন্দ করে কিনে দিবেন তাই।'
-' আমি মেয়েলি জিনিস পত্র পছন্দ করতে পারি নাকি?'
-' আমি জানি পারেন ।আপনার বোনদের জন্য কেনাকাটা করেন তখন?'
রুপার তর্কের সাথে পেরে উঠতে পারছে না তুরান। তুরান নিজের পছন্দ মত সব কিছু কিনে দিয়েছে রুপা কে।
তুরানের পছন্দ বেশ ভালোই!
-' হয়েছে আমার জন্য আর কিছু লাগবেনা। এখন আপনি আপনার জন্য হোয়াইট কালারের শার্ট আর ব্লাক প্যান্ট চুজ করেন।'
তুরান এ ব্যাপারে নারাজ। গার্লফ্রেন্ডের টাকায় শপিং ব্যাপারটা তুরানের পার্সনালিটির সাথে যায় না। রুপাও জিদ ধরে বসে আছে। তুরানের কোন রকম যুক্তি মানছে না।
-' আপনি যদি আমার কথা না শুনেন আমি এখন সিন ক্রিয়েট করব।'
এই বলে তুরানের হাত থেকে শপিং এর সব ব্যাগ গুলো নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে নেয় রুপা।
-' আচ্ছা.. আচ্ছা কোন পাগলামি করোনা। আমি তোমার কথা মানছি।'
বিশ্বজয়ের হাসি দেয় রুপা।
-' রুপা তুমি তো খুব ডেঞ্জারাস।'
শপিং মল থেকে বের হয়ে রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। রিক্সা চলতে শুরু করলো। চারদিকে এত কোলাহল , যানজট বিরক্ত লাগছে রুপার। তুরানের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।
-' জুয়েলারির দোকানের সামনে রিক্সা থামাবেন একটু।'
-' কেন জুয়েলারির দোকানে কি কাজ?'
-' আছে একটু কাজ।'
রিক্সা কিছুদূর আসতেই জুয়েলারির দোকান দেখে রিক্সা থামালো তুরান।
রুপা রিক্সা থেকে নেমে বলে,
-' দুই মিনিট দাঁড়ান এখানে আমি যাবো আর আসবো।'
-' এখানে তোমার.....!'
তুরানের কথা শেষ না হতেই রুপা তুরান কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-' দাঁড়িয়ে থাকেন এখানে।'
তুরান রুপার কথা মত দাঁড়িয়ে রইল। জুয়েলারির দোকানের পাশেই একটা চুড়ির দোকান।এই ফাঁকে তুরান রুপার জন্য কয়েক মুঠ চুড়ি কিনে নেয়।
জুয়েলারি দোকানে মাঝ বয়সী এক ভদ্র মহিলার সাথে দেখা হয় রুপার। রুপাকে দেখেই ভদ্র মহিলা আন্তরিকতার সাথে বিস্মিত হয়ে বলে,
-' শতরুপা তুমি এখানে? তুমি এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়েছো? কত দিন পর তোমায় দেখছি।'
রুপা কিছু না বলে মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-' আরে তুমি আমায় চিনতে পারছো না? আগে বলো কেমন আছো তুমি?'
-' ভালো।'
ভদ্র মহিলার তীব্র উৎকণ্ঠা এবং আন্তরিকতার বিপরীতে শুধু ভালো বলে উত্তর দেওয়া যেন অপমান জনক। রুপা রিং এর টাকাটা মিটিয়ে দিয়ে চলে আসে।
শতরুপা? কে শতরুপা? মানুষ কথা গুলো বড্ড অদ্ভুত লাগে। এমন সব কথা বলে যেসব কথার সাথে ও পরিচিতই না।
-' জুয়েলারির দোকানে কেন গিয়েছে?'
-' বাসায় গিয়ে বললো।'
তুরান চুড়ির ব্যাগ টা রুপার হাতে দেয়। চুড়ি গুলো দেখে রুপার সব মন খারাপ উবে গেল। আনন্দে রুপার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সামান্য জিনিসে রুপার এই খুশি হওয়ার ব্যাপারটা তুরানের খুবই ভালোলাগে। যে সামান্য তে খুশি হয় সুখ তাঁর কাছে ধরা দিতে বাধ্য।
বাসার গেটের সামনে এসে রুপা তুরানের হাতে ছোট একটা জুয়েলারির বক্স দেয়।
তুরান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-' কি এটা?'
-' বক্সটা খুলে দেখেন আপনার জন্য এনেছি। দেখেন তো আপনার আঙুলে হয় কিনা?'
তুরান বক্সটা না খুলেই রুপার হাতে দিয়ে দিলো। ক্ষুব্ধ গলায় বলে,
-' বিকাল আমার সাথে সেই জুয়েলারির দোকানে যাবে এটা ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে আসবে। আর যদি টাকা না দেয় তাহলে তুমি নিজের জন্য কিছু কিনবে।'
রুপা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় তুরান। রুপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
তুরান এমন কেন করলে? শ্যার্ট, প্যান্ট কিনতে বললো তাও কিনতে চাইলো না। আবার রিংটা এভাবে ফেরত দিলো।
তুরানের দেওয়া শাড়ি আর নুপুর জোড়া নিয়ে তুরানের রুমের দিকে যায় রুপা। তুরান যদি আমার দেওয়া জিনিস না নেয় আমি কেন নিবো?
চলবে...

Address

Rangpur

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মেহেদী হাসান posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share