
15/06/2025
➡️কার্ডিয়াক মনিটর হলো একটি মেডিকেল ডিভাইস যা হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ নিরীক্ষণ এবং রেকর্ড করে। এর প্রধান কাজ হলো হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক ছন্দ বা অন্য কোনো সমস্যা শনাক্ত করা, যা নিয়মিত ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম) পরীক্ষায় ধরা নাও পড়তে পারে।
▪️কার্ডিয়াক মনিটরে যা যা মনিটর করা হয়:
কার্ডিয়াক মনিটর বিভিন্ন প্যারামিটার নিরীক্ষণ করে, যার মধ্যে প্রধানগুলি হলো:
১. হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ (ইসিজি/ইকেজি - Electrocardiogram): এটি হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত রেকর্ড করে। এই সংকেতগুলির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের ছন্দ, গতি এবং বৈদ্যুতিক পথের কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা বোঝা যায়। বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক ছন্দ (arrhythmia) যেমন - অস্বাভাবিক দ্রুত হৃৎস্পন্দন (tachycardia), অস্বাভাবিক ধীর হৃৎস্পন্দন (bradycardia), অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন (fibrillation) ইত্যাদি এর মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়।
২. হৃৎস্পন্দন (Heart Rate): প্রতি মিনিটে হৃৎপিণ্ড কতবার স্পন্দিত হচ্ছে তা মনিটর করা হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হৃৎস্পন্দন বিভিন্ন সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
৩. রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন (SpO2 - Blood Oxygen Saturation): রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিরীক্ষণ করা হয়। হৃৎপিণ্ডের সমস্যা থাকলে এটি প্রভাবিত হতে পারে।
৪. রক্তচাপ (Blood Pressure - NIBP/IBP): রোগীর রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়, যা হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
৫. শ্বসন (Respiration - RESP): শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং ধরনও কিছু মনিটরে দেখা হয়, কারণ হৃৎপিণ্ডের সমস্যা শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৬. শরীরের তাপমাত্রা (Temperature - TEMP): কিছু উন্নত কার্ডিয়াক মনিটরে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থাও থাকে।
৭. EtCO2 (এন্ড-টাইডাল কার্বন ডাই অক্সাইড) মনিটর করা যায়। এটি একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম যা রোগীর নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) মাত্রা পরিমাপ করে। এটি একটি অ-আক্রমণাত্মক পদ্ধতি, যার অর্থ এটি শরীরের অভ্যন্তরে কোনো কিছু প্রবেশ না করিয়েই কাজ করে।
৮. Bispectral Index (BIS) মনিটর করা যায়। Bispectral Index (BIS) মনিটর হলো একটি চিকিৎসা যন্ত্র যা রোগীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে অ্যানেস্থেশিয়ার গভীরতা পরিমাপ করে
★★★কার্ডিয়াক মনিটরের প্রকারভেদ এবং তাদের কার্যকারিতা:
বিভিন্ন ধরনের কার্ডিয়াক মনিটর রয়েছে, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়:
* হোল্টার মনিটর (Holter Monitor): এটি একটি ছোট, ব্যাটারি চালিত পোর্টেবল ডিভাইস যা সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে হৃৎপিণ্ডের কার্যকলাপ ক্রমাগত রেকর্ড করে। যেসব অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন নিয়মিত ইসিজি-তে ধরা পড়ে না, সেগুলি নির্ণয়ের জন্য এটি খুব কার্যকর। এটি বুকের সাথে ইলেক্ট্রোডগুলির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
* কার্ডিয়াক ইভেন্ট মনিটর (Cardiac Event Monitor): এটি হোল্টার মনিটরের মতোই, তবে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা রোগীর দ্বারা লক্ষণ দেখা দেওয়ার সময় সক্রিয় হয়। যেসব অ্যারিথমিয়া খুব বিরলভাবে ঘটে, সেগুলি সনাক্তকরণের জন্য এটি বিশেষভাবে মূল্যবান। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময়, যেমন কয়েক সপ্তাহ ধরে পরা হয়।
* ইমপ্ল্যান্টেড লুপ রেকর্ডার (Implanted Loop Recorder - ILR): এটি ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয় এবং কয়েক বছর পর্যন্ত হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক ছন্দ রেকর্ড করতে পারে। যেসব লক্ষণ খুব কমই দেখা যায় বা যাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন, তাদের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
* টেলিমেট্রি (Telemetry): হাসপাতালের সেটিংসে, রোগীকে একটি পোর্টেবল মনিটরের সাথে সংযুক্ত করা হয় যা তার হৃৎপিণ্ডের ডেটা একটি দূরবর্তী মনিটরিং স্টেশনে প্রেরণ করে। এর ফলে ডাক্তাররা রিয়েল-টাইমে রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
@@ # # # # # # # # # # #@* আইসিইউ মনিটর (ICU Monitor): নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (ICU) ব্যবহৃত মাল্টি-প্যারামিটার মনিটরগুলি হৃৎপিণ্ডের কার্যকলাপের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক পরামিতিগুলি (যেমন রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন) একটানা প্রদর্শন করে।
কেন কার্ডিয়াক মনিটর ব্যবহার করা হয়?
* অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন) নির্ণয় ও তার ধরণ বোঝার জন্য।
* হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসার (যেমন: পেসমেকার বা ওষুধের কার্যকারিতা) মূল্যায়ন করার জন্য।
* বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা বুক ধড়ফড় করার মতো অব্যক্ত উপসর্গের কারণ অনুসন্ধান করার জন্য।
* হৃৎপিণ্ডের রোগের (যেমন: অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, করোনারি আর্টারি ডিজিজ) রোগীদের ঝুঁকি মূল্যায়ন ও তাদের হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা নিরীক্ষণের জন্য।
* হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি মূল্যায়ন করার জন্য।
সংক্ষেপে, কার্ডিয়াক মনিটর হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে এবং এর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।