
17/04/2025
⛔তিস্তার তলে জমিদার সভা⛔
✍️মহিপুর, গঙ্গাচড়া, রংপুর থেকে গল্পটি পাঠিয়েছেন অন্তরা✍️
তিস্তা নদী—রংপুর অঞ্চলের হৃৎপিণ্ড, যার নীল জলরাশির নিচে যে কত ইতিহাস, কত কান্না, কত অশ্রু, কত অশরীরী উপস্থিতি লুকিয়ে আছে, তা কেউ জানে না, কেউ জানতে চায়ও না। নদী শুকায়, নদী ফুলে ওঠে, আর প্রতিবারেই যেন সে লুকানো কোনো অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
মহিপুর ইউনিয়নের এক প্রান্ত ঘেঁষে তিস্তা যখন দক্ষিণে বয়ে গেছে, ঠিক তার পাশেই একসময় ছিল এক জমিদারবাড়ি। রাজা নয়, তবে সে ছিল নিজের এলাকায় ঈশ্বরস্বরূপ। তার নামে বাজার বসত, খাজনা উঠত, আর প্রজারা মাথা নত করে হাঁটত তার সামনে।
লোকমুখে শোনা যায়, সেই জমিদারের নাম ছিল ‘রঞ্জন বাবু’। তার রক্তচক্ষু ও লোভের গল্প আজও প্রবীণদের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভয় হয় যে কথাটি শুনলে—সে হলো, রঞ্জন বাবু তার ধনসম্পদ জমিয়ে রাখত একটি কুয়োয়, যা বাড়ির ভেতরেই ছিল। বলা হয়, সে কুয়োর গভীর তলায় আছে এক সিন্দুক, যেখানে রাখা সোনা-রুপা, হীরা-জহরত আর কিছু প্রাচীন মন্ত্রগ্রন্থ।
এক বর্ষায় হঠাৎ করেই নদীর গতি বদলে যায়। বিকট শব্দে মাটির নিচে কিছু ফাটল ধরে। জমিদারবাড়ি, কুয়ো, বাগান, গোয়ালঘর—সবকিছু এক রাতেই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কেউ বলে, এটা প্রকৃতির কাজ; আবার কেউ বলে, এটা সেই জমিদারের শাস্তি, কারণ সে মৃত্যুর আগে কাউকে তার ধনসম্পদের ভাগ দিতে রাজি হয়নি।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, জমিদারবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পরও প্রতিবছর বর্ষাকালে কেউ না কেউ নিখোঁজ হতে থাকে। ঘটনাগুলোর ধরন ছিল এক—যে-ই নদীতে নামে, সে যেন আর ফিরে আসে না, আর এলেও অদ্ভুত অবস্থায় মেলে।
ঘটনার শুরু ২০০০ সালের দিকে। গ্রামের কিছু যুবক মাটি খুঁড়ে সিন্দুক খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। অনেক খোঁড়াখুঁড়ির পর একদিন একটি লোহার সিন্দুকের অস্তিত্ব পায় তারা। উল্লসিত হয়ে সিন্দুকটি তারা যখন মাটির উপরে তোলে, ঠিক তখনই ঘটে অবর্ণনীয় ঘটনা—সিন্দুক খুলতেই বেরিয়ে আসে অসংখ্য বিষধর সাপ, যারা কোনো কামড় না দিয়েই কয়েকজনের শরীরে জড়িয়ে পড়ে।
পরের দিন সকালে দেখা যায়, সিন্দুকটি খোলার চেষ্টা করা ছেলেগুলো একে একে মারা যাচ্ছে। কারও শরীরে দংশনের চিহ্ন নেই, কিন্তু তাদের চোখ কোটরের ভেতর ঢুকে গেছে, মুখ বিকৃত হয়ে গেছে। ডাক্তার বললেন, তারা আতঙ্কে মারা গেছে, কিন্তু তাদের চোখে মুখে যে ভয় ছিল, তা কোনো সাধারণ মৃত্যুর চিহ্ন ছিল না।
২০১৮ সালের বর্ষাকাল। জসিম নামের এক তরুণ ব্রিজের পিলারের পাশে মাছ ধরছিল। সে ছিল পাকা সাঁতারু। হঠাৎ দুটো অদ্ভুত বড় মাছ ভেসে ওঠে, একটিকে ধরে সে। কিন্তু যখন সে দ্বিতীয়টি ধরতে পানিতে নামে, তখন আর ফিরে আসে না।
ডুবুরি নামে। ডুব দিয়ে সে যা দেখে, তা তার জীবনটাই পালটে দেয়। নদীর নিচে অন্ধকার, অথচ তার মাঝখানে এক আলোঝলমলে সভাকক্ষ, মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত জমিদারবাড়ি—যেটি বহুকাল আগে তলিয়ে গিয়েছিল। সভার মাঝখানে বিছানো বিছানায় শোয়ানো জসিমের দেহ, চারপাশে বসে আছেন কোট-পাঞ্জাবি পরা জমিদার-আচরণধারী মানুষেরা, যাদের চোখ লাল, ঠোঁট কালচে।
ডুবুরিকে তারা দেখে হঠাৎ থেমে যায়। একজন বলে ওঠে, “এ সভায় বহিরাগত নিষেধ। ফিরে যা।”
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ডুবুরি ফিরে আসে, এবং পরদিন চেয়ারম্যানসহ গ্রামের লোকজনকে সব ঘটনা জানায়। কিন্তু তার জবানবন্দির পরদিনই তার নিথর দেহ পাওয়া যায় তিস্তার এক ভিন্ন পাড়ে। চোখ দুটি কোটরে নেই, জিভ অদ্ভুতভাবে বের হয়ে আছে।
২০২৪ সালের ঈদের পরদিন। গংগাচড়ার মধ্যপাড়া থেকে কিছু যুবক ব্রিজের নিচে ফুটবল খেলছিল। পানির গভীরতা সামান্যই। হঠাৎ এক যুবকের বল পিলারের দিকে চলে যায়। সে বল তুলতে গিয়ে হঠাৎই ডুবে যায়। বন্ধুরা তার হাত ধরে টানতে টানতে দেখল, যেন কেউ নিচ থেকে টানছে তাদের সবাইকে। একে একে সবাই পড়ে যেতে থাকে।
পরে ২০-২৫ জন মিলে ছেলেটিকে উদ্ধার করে। দেখা যায়, তার দেহ স্রোতের বিপরীত দিকে ২৫-৩০ ফুট দূরে পড়েছিল নিথর হয়ে। এমনটা কখনো হয় না। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার জানান—তার শরীরে পানি নেই, বরং দেহের তাপমাত্রা অত্যন্ত কম, এবং চোখে-মুখে গভীর আতঙ্কের ছাপ।
গ্রামের প্রবীণরা বলেন—তিস্তার নিচে আজও সেই জমিদারবাড়ি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবার বর্ষা এলেই জমিদারদের সভা বসে, যেখানে আমন্ত্রিত হয় নদীতে নামা নিরীহ মানুষ। কেউ কেউ শুধু সভার দোরগোড়ায় পৌঁছে ফিরে আসে, আবার কেউ চিরতরে সেই সভার সদস্য হয়ে যায়।
তিস্তার জল যতই ঘোলা হোক না কেন, তার নিচে যে অন্ধকার আর অভিশপ্ত সভা চলছে, তা কোনোদিন থেমে থাকেনি। আর হয়তো কখনো থামবেও না...
⚠️🙏⚠️বিশেষ দ্রষ্টব্য :- ✍️ যারা গল্পগুলোকে পাঠাচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই গল্পগুলো এলোমেলো অবস্থায় দিয়ে থাকে সেই গল্পগুলোকে আমারা গুছিয়ে তৈরি করে পোষ্ট করি, গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ✍️