16/08/2025
যে সোশ্যাল মিডিয়া বাংলাদেশে তৈরি।
সময় থাকলে আরিফ আজাদ ভাইয়ের পোস্টের ক্যাপশনটা পড়ে নিয়েন।
দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু দালান কোনটি বলতে পারেন? দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফা? আমরা অনেকেই হয়ত এটাই জানি। এখন পর্যন্ত যদিও এটাই সঠিক তথ্য, তবে ২০২৮ সালে এই তথ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে। শ্রেষ্ঠত্বের এই মুকুট উঠবে আরেক বনেদি আরব জাতি সৌদি আরবের মাথায়। ২০২৮ সালে সৌদি আরব নির্মাণ শেষ করবে ‘জেদ্দা টাওয়ার’ এর কাজ যা হয়ে উঠবে দুনিয়ার বুকে বিদ্যমান থাকা সবচাইতে উঁচু দালান। বুর্জ আল খলিফার উচ্চতা হলো ৮২৮ মিটার। অন্যদিকে জেদ্দা টাওয়ারের উচ্চতা গিয়ে দাঁড়াবে ১০০০ মিটারে!
প্রতিযোগিতাটা এখানেই শেষ হলে পারত। কিন্তু ধনাঢ্য আরবেরা সেখানেই বা থামবেন কেন! আপনি জেনে হয়ত বিস্মিত হবেন, সৌদি আরবের হাতে আছে ‘Rise Tower’ নামে আরেকটা সুউচ্চ দালান নির্মাণ প্রকল্প যা কী না ছাড়িয়ে যাবে ইতোপূর্বের সকল রেকর্ড। এমনকি সৌদি নিজেই ছাড়িয়ে যাবে নিজেকে। বুর্জ আল খলিফাকে পেছনে ফেলে, ১০০০ মিটার উচ্চতা নিয়ে যে জেদ্দা টাওয়ার হয়ে উঠছে দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু দালান, সেখানে প্রস্তাবিত Rise Tower এর উচ্চতাই হবে ২০০০ মিটার! মানে—দুটো জেদ্দা টাওয়ারের সমান! এ যেন এক অভাবনীয় প্রতিযোগিতা!
Rise Tower এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর দুনিয়ার সবচাইতে উঁচু তিনটি দালানের মালিকানাতেই থাকবে মুসলিম দেশের নাম। আরও সহজ করে বললে আরবদের নাম।
এবার আপনাদের আরেকটা ঘটনা শোনাই। এই বছরের এপ্রিল মাসের ঘটনা। ঘটনাটা কমবেশি আমরা সকলে জানি। কিছুদিন আগে মাইক্রোসফটের ৫০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে মাইক্রোসফট এআই এর সিইও মোস্তফা সুলেইমান যখন বক্তৃতা শুরু করেন, তখন মাইক্রোসফটেরই একজন এআই ইঞ্জিনিয়ার, এক মরোক্কান বোন যার নাম ছিল ইবতিহাল আবু’সাদ, সভাস্থলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। নিজের প্রতিষ্ঠানের সিইও’র দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন—‘Moustofa, Shame on you.’
যে সময়ে মাইক্রোসফটের ৫০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছিল, ঠিক একই সময়ে শয়তানিয়াহুর সৈন্যরা মাযলুম উপত্যকায় চালাচ্ছিল শতাব্দীর ভয়াবহ নির্মমতা! ইবতিহাল আবু’সাদ চিৎকার করে বলেন, ‘তোমরা বলো যে মাইক্রোসফট তার এআইকে ভালো কাজে ব্যবহার করে, কিন্তু তোমরাই শয়তানিয়াহুর সৈন্যদের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি অস্ত্র বিক্রি করো। ৫০ হাজার মানুষকে মেরে ফেলা হলো এবং এই কাজে তোমাদের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সরাসরি সংযোগ রয়েছে।’
ইবতিহাল দুঃসাহসিক এই কাজটি যখন করছিলেন, তখন অতিথির আসনে বসা ছিলেন মাইক্রোসফটের কো-ফাউন্ডার বিলগেটস। তারপর যা হওয়ার তা-ই হলো। ইবতিহালকে ফায়ার করা হলো চাকরি থেকে।
ঘটনা দুটো তুলে আনার কারণ হচ্ছে—কোন জাতি কী নিয়ে ব্যস্ত আছে সেই প্রায়োরিটিকে বোঝা। বিশ্বের সবচাইতে উঁচু তিনটি দালানই মুসলমানদের মালিকানায়। কিন্তু দুনিয়া কাঁপানো তো দূরের কথা, একটা উপমহাদেশে হইচই ফেলার মতোন কোনো টেকনোলোজি মুসলমানেরা আবিষ্কার করতে পারেনি আজ পর্যন্ত।
মুসলমানদের কী মেধার অভাব? মেটা, গুগল, মাইক্রোসফট সহ দুনিয়ার জায়ান্ট সব টেক কোম্পানিতে প্রচুর মুসলমানের ছেলেপিলেরা কাজ করে। বুদ্ধিতে, সৃষ্টিশীলতায় অন্য কোনো জাতির চেয়ে পিছিয়ে নেই মুসলমানেরা। মুসলমান দেশ থেকে বা মুসলমানদের হাত ধরে দুনিয়া কাঁপানো আবিষ্কার না আসার একমাত্র কারণ হলো—প্রায়োরিটি।
মুসলিম দেশের সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধানেরা এমন জায়গায় বিনিয়োগ করেন যার কেবল অর্থনৈতিক ভ্যালুটাই বিদ্যমান। তারা শুধু তাদের চেয়ার, গদি আর ভূখণ্ডকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। দুনিয়াকে জয় করা কিংবা দুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণের যে সিলসিলা একদা তাদের শিরা-ধমনিতে ছিল, সেই সিলসিলা থেকে তারা ছিটকে পড়েছে বহু আগেই। ফলে অন্যেরা যখন জায়ান্ট জায়ান্ট সব টেকনোলোজি আবিষ্কার করে নিজেরাই নিজেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের ধনকুবের দেশগুলো ব্যস্ত আছেন সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণের মোহনীয় প্রতিযোগিতায়।
গুগল যে পরিমাণ বিনিয়োগ করে, মেটা এবং মাইক্রোসফট যে লেভেলের বিনিয়োগ করে, সেই একই পরিমাণ বিনিয়োগ করার ক্যাপাসিটি কি সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, দুবাইয়ের মতো দেশগুলো রাখে না? অথচ—তারা বানাচ্ছে বুর্জ আল খলিফা, জেদ্দা টাওয়ার, Rise Tower. তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে ফুটবলারদের তাদের দেশে আনছে যেসব খেলোয়াড়েরা আর ইউরোপে খেলবার মতো যোগ্যতা রাখে না।
তারা কৃত্রিম বীচ বানাবে, সমুদ্রের তলদেশে রিসোর্ট বানাবে, কিন্তু গুগলের মতো বা মেটার মতো অথবা মাইক্রোসফটের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়া করাতে বিনিয়োগ করবে না। যা করে তার সবটাই নামকাওয়াস্তে।
ফলে কী হয়? ইবতিহাল আবু’সাদের মতো মেধাগুলোকে মাইক্রোসফটে গিয়ে চাকরি করতে হয়। বিবেকের তাড়নায় তারা যখন অন্যায়ের প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, তাদেরকে ছাটাই করা হয় চাকরি থেকে। দ্যাটস দ্য রিয়ালিটি!
তবু কেউ কেউ চেষ্টা করে। ব্যক্তিগত পরিসরে, একটা টিম হয়ে কিংবা একটা কমিউনিটি তৈরির মাধ্যমে। খুবই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সেসব। হয়ত গুগলের পাঁচ হাজার ভাগের একভাগের সমানও নয়। হয়ত ফেইসবুকের দশহাজার ভাগের একভাগের কাছাকাছিও সেসবকে তুলনা করা যায় না। কিন্তু তবু—চেষ্টা তো করে। ইন্নামাল আমালু বিন নিয়্যাহ। প্রত্যেকটা কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আল্লাহর রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুস্পষ্ট হাদিস।
সেই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার অংশ হিশেবে, কাহাফ থেকে আমরা চেষ্টা করছি এমন একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে যেখানে মুসলিমদের জন্য আমরা অন্তত কিছু জিনিস তৈরি করে যেতে পারব। কাহাফের অনেক প্রোডাক্ট নিয়ে ইতোপূর্বেই আমি লিখেছি, আজ লিখছি কাহাফ থেকে আমাদের তৈরি করা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে যেটার নাম আমরা রেখেছি—Hikmah.
হিকমাহকে আপনি ফেইসবুকের সাথে তুলনা করতে পারেন। ফিচার বা স্মুথনেসের দিক থেকে নয়, সাদৃশ্যতার দিক থেকে।
ফেইসবুকে আমরা যা করি—পোস্ট/ভিডিও দেওয়া, পোস্ট পড়া, কমেন্ট করা, শেয়ার করা, গ্রুপ তৈরি করা, স্ক্রলিং, ফ্রেন্ডলিস্ট, ফলোয়িং, পেইজ তৈরি সহ ফেইসবুকের মতোই নানান ফিচার দিয়ে তৈরি হিকমাহ। ফেইসবুকের মতো এখানেও এর সবই করা যায়। পার্থক্য হলো—ফেইসবুকের মতো অশ্লীলতা এখানে থাকবে না। হিকমাহতে কেউ অশালীন কিছু বলতেও পারে না, লিখতেও পারে না।
যেহেতু আমরা ভ্যালু এবং ফেইথ-বেইজড সোশ্যাল মিডিয়াতে বিশ্বাসী, তাই কোনোরকমের অশ্লীলতা বা কদর্যতাকে এখানে আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।
হিকমাহতে এখনই ফেইসবুকের মতো স্মুথনেস হয়ত নেই। তবে যত দিন গড়াবে, হিকমাহ আস্তে আস্তে পরিণত থেকে আরও সু-পরিণত হয়ে উঠতে থাকবে, ইন শা আল্লাহ।
কেন বলছি এটা? কারণ এখানে কাজ করছে অত্যন্ত মেধাবী একদল ইঞ্জিনিয়ার, যারা কাজ করেছেন দেশ এবং দেশের বাইরের স্বনামধন্য সব জায়গায়। হিকমাহতে এমন মেধাবী মানুষও ফুল টাইম সময় দিয়ে লেগে আছেন যিনি ফেইসবুকে (মেটা) সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিশেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই দায়িত্বে ইস্তফা দিয়ে তিনি এখন পুরোদমে সময় দিচ্ছেন এখানে, আলহামদুলিল্লাহ। তিনি ছাড়াও আরও একঝাঁক মেধাবী মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করছে হিকমাহ নিয়ে।
আমরা আশাবাদী, ইন শা আল্লাহ। জানি পথটা খুব সহজ নয়। আমরা হয়ত ফেইসবুক বা টুইটার হয়ে উঠতে পারব না। তবে আমরা যে চেষ্টা করেছি, সেটা কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে বলতে পারব।
হিকমাহ আমাদের সকলের। হিকমাহ বাংলাদেশের। নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা একটা নিরাপদ সোশ্যাল মিডিয়া তৈরির কাজ করতে পেরেছি—এটাও বড় পাওনা। সফলতা দানের মালিক তো আল্লাহ ওয়ামা তাউফিকি ইল্লাবিল্লাহ।
হিকমাহতে আসুন। লিখুন। কথা বলুন। আর ছড়িয়ে দিন শুদ্ধতা ও শুভ্রতার স্পন্দন—প্রাণে প্রাণে।
হিকমাহ পাবেন এখানে— https://kahf.to/hikmah