22/12/2024
Lovely Lover (part-1)
স্টেশনের ভীড় ঢেলে বড়ো লাগেজটি ছোট্ট বাচ্চাদের যেমন জোর করে স্কুলে পাঠানো হয় তেমনভাবে টানতে টানতে নিয়ে ট্রেনে উঠলো সাদা টিশার্ট,ফেসেড জিন্স পরিহিতা বয়স একুশের মেয়েটি।ট্রেনে উঠতেই ফর্সা আদুরে মুখের উপর ফুটে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলোকে একহাতে মুছে নিয়ে, বুকে হাত দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর নিজের কেবিনের দিকে যাওয়ার সময় পকেট থেকে ফোন বের করে একটি নাম্বার ডায়েল করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই মেয়েটি চিল চিৎকার শুরু করলো...."শুঁটকির কিমা,কেঁচোর সুপ,আরশোলা ফ্রাই,টিকটিকির মালাইকারি..."। মেয়েটি আরও কিছু বলতো যদি না ফোনের ওপাশে থাকা মেয়েটি থামাতো।
-"ওরে থাম থাম,এবার কি বমি করিয়ে ছাড়বি নাকি তানিশা সোনা?"
তানিশা:- হ্যাঁ হ্যাঁ বমি কর তুই মিলি,দিয়ে ওটাতেই ডুবে মর।😠
মিলি:- আচ্ছা শান্ত হ।
তানিশা:- শান্ত হবো? তুই আমাকে শান্ত হতে বলিস কিভাবে?
মিলি:- মুখ দিয়েই তো বললাম!!
তানিশা:- শাটআপ। লজ্জা করে না কথা বলতে?
মিলি:-মাগুর মাছ ঘষার মতো তুই তো আমার লজ্জাটা পরিস্কার করে দিয়েছিস বেবি।
তানিশা:- একদম মজা করবি না বলে দিলাম। আমি কিন্তু হেব্বি হট হয়ে আছি।
মিলি:- কেন জানু? স্টেশনে হট পোলা দেখেছো নাকি?
তানিশা:- ধূর একটাও চোখে ধরার মতো কাউকে পেলাম না। এই একমিনিট, তুই আমার মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবি না।আমি রেগে আছি।
মিলি:- উফফ আমি আর রিয়া তো কান ধরে সরি বলার ভিডিও তোকে সেন্ড করেছি তাও রেগে যাচ্ছিস কেন?
তানিশা:- লাইক সিরিয়াসলি মিলি? তোরা যেটা করলি তারপর ওই কয়েক মিনিটের ভিডিও দেখে সব ভুলে যাবো?
মিলি:- হ্যাঁ মানছি এটা আমাদের তিনজনের ট্রিপ ছিল,আর যেতে হচ্ছে তোকে একা। কিন্তু কি করবো বল,হুট করে দিদিমার শরীর খারাপ করে গেল।আর মা আমাকে না নিয়ে মামার বাড়ি যাবে না। রিয়া বেচারিও তো পরে গিয়ে হাতে চোট পেয়েছে।
তানিশা:- হাতের বদলে ঘাড় মটকে পরলে ভালো হতো।
মিলি:- আরে রাগ করছিস কেন,এটাকে সলো ট্রিপ ভেবে নে, তাহলেই হবে।
তানিশা:-রাখ তোর সলো ট্রিপ। এমনিতেই বাড়িতে না জানিয়ে পালিয়ে এসেছি তার উপর তোরাও গাদ্দারী করলি। নেহাত পাহাড় আমাকে ডাকছে নাহলে আমি কোনদিন ও যেতাম না।
মিলি:- ন্যাকামি করিস না। নেহাত টিকিট খরচাটা তোর পকেটমানি থেকে ধসেছে তাই যাচ্ছিস।
তানিশা:- ধূর...আমি তোদের মিস করছি।
মিলি:- মিস ইউ দু জানু। আচ্ছা বলছি যে তুই কি নিজের সীটে বসে গেছিস?
তানিশা:- আরে না না সেদিকেই যাচ্ছি। আমরা সবাই মিলে মজা করে যাবো বলে ফাস্ট ক্লাস কোচের টিকিট কাটলাম।এবার আমি একা একা ওই কেবিনে কি করবো?
মিলি:- একা তো না। ওখানে তো চারটে সিট আছে।তিনটে আমাদের ছিল একটা তো অন্যজনের।
তানিশা:- ওটাই তো চিন্তা হচ্ছে। আমি একা আছি,কি জানি সেই ব্যক্তি কেমন হবে!!
তানিশা বেশ চিন্তিত হয়ে বললো।
মিলি:- চিন্তা করিস না,কিচ্ছু হবে না। তাছাড়া বেশি বাড়াবাড়ি করলে মুখের সাথে হাতটাও চালিয়ে দিবি।
তানিশা:- আচ্ছা আমি একটু পরে ফোন করছি।
মিলি:- হুম হুম,তোর কেবিন পার্টনার কেমন পেলি জানাবি মনে করে।
তানিশা:- মাথা খাসনা রাখ।
তানিশা ফোনটা পকেটে ভরে নিজের জন্য বরাদ্দ কেবিনের সামনে গিয়ে ঠাকুর প্রণাম করে ভিতরে ঢুকলো। বড়ো লাগেজটার ব্যাবস্থা করে ঘুরতেই হাঁ হয়ে গেল। একজন পুরুষ,থুরি সুপুরুষ আগে থেকেই একটি সিট দখল করে আধশোয়া অবস্থায় আছে। পরনে মেরুন টিশার্ট,ধূসর প্যান্ট,হাতে ঘড়ি,চুলগুলো হালকা এলোমেলো হয়ে আছে।
তানিশা:- উফফফফ....
ছেলেটিকে দেখে তানিশার মুখ থেকে এইটুকুর বেশি কিছুই বের হলো না। ছেলেটি এতক্ষনে হাতে থাকা বইটির থেকে মুখ তুলে তানিশার দিকে তাকালো।
--"আর ইউ ওকে?"
ছেলেটির সৌন্দর্যের সাথে গলার স্বরও হ্যান্ডসাম লাগলো তানিশার কাছে।(গলার স্বর হ্যান্ডসাম হয়?!🙄কিজানি,তানিশার কাছে তো সবই অবশ্য সম্ভব)
তানিশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকেই ছেলেটি আবার প্রশ্ন করলো.."এই যে মিস আপনি ঠিক আছেন?"
তানিশা:- না।
তানিশা নিজের চিন্তা জগৎ থেকে না বেরিয়েই উত্তর দিলো।পরক্ষণেই হুস ফিরলো তানিশার। ততক্ষণে সে ছেলেটির সামনের সিটে নিজেকে সেট করে নিয়েছে।
তানিশা:- ইয়ে মানে হ্যাঁ.আমি ঠিক আছি। আচ্ছা আপনার এখানেই সিট?
-"হুম।"
তানিশা:- আপনি সত্যি বলছেন?😍
-"আজব তো,এখানে সিট বলেই তো বসেছি। অকারণে অন্যের জায়গা দখল করতে যাবো কেন?"
তানিশা:-তোমার মতো হ্যান্ডসাম কাউকে দেখলে আমি তো ট্রেন চালকের সিটে বসতেও রাজি আছি।
তানিশা বিড়বিড় করে বললো।
-"কিছু বললেন?"
ছেলেটির এক ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করার স্টাইল দেখে তানিশা আরেক দফা ক্রাশ খেল। নিজের আবেগকে কোনো রকমে সামলে নিয়ে হাসিমুখে ছেলেটির দিকে নিজের ডান হাত বাড়িয়ে দিল।
তানিশা:- হাই.... আমি তানিশা।
ছেলেটি ভ্রু কুঁচকে একবার তানিশার বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে আবার ওর মুখের দিকে তাকালো।
তানিশা:- ও আচ্ছা..(হাত জোড় করে)নমস্কার, আমি তানিশা চ্যাটার্জি।
ছেলেটি তানিশার আচরণে বিরক্ত হয়ে হাতে ধরে রাখা বইটি আবার মুখের সামনে তুলে নিল। আজ পর্যন্ত তানিশাকে কেউ এইভাবে ইগনোর করেনি। স্কুল,কলেজে তানিশা সর্বদা নিজের চুলবুলি স্বভাবের জন্য বেশ পরিচিত থেকেছে। অনেকেই যেচে এসে তানিশার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু তানিশা অতটা পাত্তা দেয়নি। ওর দুই সখীকে নিয়ে তানিশা নিজের দুস্টুমির জগৎ গড়ে তুলেছে। আজকে প্রথমবার তানিশা নিজে থেকে কারো দিকে হাত বাড়ালো,আর প্রথমবারের মতো রিজেক্ট হলো,ব্যাপারটা তানিশাকে খুবই অবাক করেছে।
তানিশা:- এই যে....ও হ্যালো... শুনছেন!!
ছেলেটি আবার বিরক্ত হয়ে বইটা নামিয়ে তানিশার দিকে তাকালো।
-কি হয়েছে?
তানিশা:- আমি আমার নাম বললাম,আপনি কিছু বললেন না?
-বললাম না মানেই তো আপনার বুঝে যাওয়া উচিত,আমি ইন্টারেস্টড না নিজের পরিচয় দিতে।
তানিশা:- তাই বললে হয়!!না মানে লং জার্নি,দুজনে একজায়গায় আছি,সুবিধা অসুবিধায় টুকটাক কথা হবে,গল্প হবে,আড্ডা হবে...
তানিশার কথার রাজধানীকে চেন টেনে,,ইয়ে মানে হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে ছেলেটি উত্তর দিলো।
-অযথা এত কথা বলেন কেন?
তানিশা:- নিজের নাম বলতেই বা এত সমস্যা কিসের?আমি মেয়ে হয়ে বলে দিলাম,আর আপনি বলতে পারছেন না? এই আপনি কি সন্ত্রাসবাদী? ও মাই গড...হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনার নিশ্চই কোনো গন্ডগোল আছে তাই নিজের নাম বলতে চাইছেন না!! আপনি..
তানিশা নার্ভাস হয়ে আবার নিজের কথার রেলগাড়ি চালু করলো, এবার ছেলেটি বিরোক্তিমাখা গলায় উত্তর দিলো.."আবির,আবির চ্যাটার্জি। আর শুনুন,আমি কোনো সন্ত্রাসবাদী না।"
তানিশা:- ওয়াও..আপনিও চ্যাটার্জি!!বাহঃ বাহঃ দুই চ্যাটার্জি মিলে তাহলে ভালোয় চিট চ্যাট করতে করতে সময় কাটবে। তাইনা বলুন?
আবির:- না।
তানিশা:-কি না?
আবির:- একটা কথা পরিস্কার ভাবে শুনে নিন,এইভাবে অকারণ কথা বলা বা বিরক্ত করা আমি পছন্দ করিনা।কথাটা আশাকরি মনে রাখবেন।"
আবির কথাগুলো বলেই হাতে থাকা বইটা মুখের উপর তুলে নিলো। তানিশা উঁকি ঝুঁকি মেরেও আবিরের মুখদর্শন করতে পারলো না। এজন্য মন খারাপ করে মিলির নাম্বারে ডায়েল করে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো কথা বলার জন্য।তানিশা চলে যেতেই আবির বইটা সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আবির:- উফফ সো মাচ ইরিটেটিং। জানিনা এই জার্নি কেমন কাটবে। আবির,বি কেয়ারফুল।
আবির কথাগুলো নিজের মনে বিড়বিড় করে আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
চলবে........
আপনাদের অনুরোধে সবার পছন্দের আবির,তানিশাকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনলাম। তবে হ্যাঁ এটা যেহেতু নতুন গল্প,তাই গল্পের চরিত্র গুলির মধ্যে হালকা একটু পরিবর্তন থাকবে। আশা করি আমার বাকি গল্প গুলোর মতো এই গল্পটিও আপনাদের মনে জায়গা গড়ে তুলতে পারবে। 😊