10/12/2024
বিদায় প্রিয়তম.... (ছলছল চোখ)
০১
আজ বিদায়ের দিন । ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানো হচ্ছে মুআয রা.কে । নবীজী (স.) নিরবে উটের পাশে পাশে হাঁটছেন । কারও মুখে কোনো রা নেই । নবীজীর (স.) এর এমন অদ্ভুত নিরবতা কেমন যেনো ঠেকছে মুআয রা. এর কাছে । এমন সময় নিরবতা ভাঙলেন নবীজী (স.) । শিতল কন্ঠে বললেন:
"মুআয, আল্লাহর কসম তোমাকে আমি ভালোবাসি । তুমি যখন ফিরে আসবে, আমাকে হয়তো আর পাবে না ।"...ধড়াস করে উঠলো মুআয রা. এর বুকটা । বন বন করে ঘুরতে থাকা দুনিয়াটা হটাৎ থেমে পড়লো । মনে হলো মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন উট থেকে । মানে? মানে কি? নবীজী (স.) বলে চললেন:
"সম্ভবত তুমি আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে পার হবে ।"
কী বয়ে যাচ্ছিলো মুআয (রা.) এর অন্তরে সেসময়? কেমন লাগছিলো মুআয রা. এর? উনার কি মনে হচ্ছিলো, বুকের ভেতর ফুসফুস-হৃদপিণ্ড কিচ্ছু নেই । আবার যখন আসবো, সব থাকবে । শুধু আমার নবী নেই । ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন মুআয রা. । তা কিভাবে হয়? বাঁচবো কিভাবে আমি উনাকে ছাড়া । নবীজী (স.) সান্ত্বনা দিতে দিতে বললেন:
"কেঁদো না মুআয । কান্না শয়তানের তরফ থেকে ।"
০২
মঙ্গল-বুধের মধ্যবর্তী রাতে দাফন শেষ হলো । ক্রন্দসী শহর । পুরো শহর হেঁচকি তুলে কাঁদছে । ফজরের আযান ভেসে এলো মসজিদ থেকে ।
"আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ" পর্যন্ত এসে বিলাল রা. আর সামনে এগোতে পারলেন না । নেই, তিনি নেই । ঝরঝর করে কাঁদতে লাগলেন । "হাইয়া আলাস সালাহ" ঢেকে গেলো কান্নার আড়ালে । সবাই নিজের পরানখানি মাটিচাপা দিয়ে এসেছে । বুক ফাঁকা । শূন্য দৃষ্টি । ফাতিমা রা. কাঁদছেন আর বলছেন:
"আনাস, তোমার পক্ষে কী করে সম্ভব হলো, তুমি তোমার রসূলকে মাটিচাপা দিয়ে রেখে এলে?"
০৩
বিলাল রা. তো নবীজী (স.) এর মৃত্যুর পর মদীনা শহর ছেড়েই চলে গিয়েছিলেন । এ শহরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভবই না, চারিপাশ নবীময় । মদিনার এই রাস্তা, বাজার, মসজিদ, গাছ, খেজুরবাগান । নবীজীর (স.) মৃতি মেখে আছে সবাই । এর চেয়ে মরে যাওয়া সহজ । জিহাদেই চলে গেলেন সিরিয়া সীমান্তে । মৃত্যু, আর কতো দূরে তুমি? এসো আমাকে নিয়ে যাও আমার প্রিয়তমের কাছে । আমার চাঁদমুখের কাছে । এ জীবন আমি আর বইতে পারছি না । একদিন ঘুমঘোরে এলেন প্রিয়তম ।
"বিলাল, এ কেমন ব্যবহার তোমার! ভুলে গেলে আমাকে? একেবারেই যে আসছো না আমার কাছে!"
শিশুর মতো কেঁদে উঠলেন বিলাল রা. । আপনাকে কিভাবে ভুলি! ইয়া রসূলাল্লাহ? চোখের পানিতে বিরহের নাও । ভেসে ভেসে রওনা দিলেন হাবিবের পানে । সাহাবীরা (রা) তাকে আযান দিতে অনুরোধ করলেন । বহুদিন পর । মদীনার আনাচো কানাচে ধ্বনিত হলো নবীযুগের সুর । কাঁদতে কাঁদতে মদীনা ছুটলো মসজিদ মুখে । স্মৃতি, প্রিয়তমের স্মৃতি । দগদগে স্মৃতি ।
বই: পরানবন্দি (শামসুল আরেফিন শক্তি)
Send a message to learn more