31/07/2023
পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ......ঃ
কৃষি নির্ভর একটি নিম্নবিত্ত পরিবার।সংসারের ঘানি টানতে বড় ছেলের লেখাপড়া বন্ধ। স্বপ্ন ছিল শান্ত শিষ্ঠ ভদ্র ছোট ছেলেকে ঘিরে।গ্রামে মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে ইমেজ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রংপুর এ ভর্তি হওয়া। বেশ কয়েকটি পর্ব পাশও করে।তারপর বিরতি।সংসারের প্রয়োজনে একের পর এক চাকরি বদল।সবশেষে ঠাঁই হয় বিমানবন্দর টার্মিনাল নির্মাণ কাজে,ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির ছাত্র হওয়ায় ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে। ভালোই চলছিল, টেরই পায়নি শরীরে বাসা বেধেছে সর্বনাশা মরনব্যাধী।মাঝে মধ্যে জ্বর, কাশি,মাথাব্যথা,পেট ব্যথা,বমি।ডিউটি শেষে ডাক্তার চেম্বারে চেম্বারে ঘোরা। লাভ হয় না,ক্রমান্বয়ে অবস্থার অবনতি। পেটে কত ক্ষুধা,খাওয়ার সুযোগ নেই, পাকস্থলীতে যাওয়ার আগেই বমি।অবস্থা বেগতিক দেখে নিয়োগকারী কতৃপক্ষ চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়।গ্রামে প্রত্যাবর্তন-রংপুর প্রাইম মেডিকেলে নিশ্চিত হয় মরনব্যধীর ব্যাপারে। বুকফাটা আর্তনাদ, এরপর নিজের মনকে শক্ত করা,স্বজনদের শক্ত করা।নিজেই নেট ঘেঁটে চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়া।শুরু হয় ছোটাছুটি,হাতে সময় নেই। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে টানাপোড়েনের সংসারের প্রিয় বস্তুগুলোর বিয়োগের তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে।রংপুর মেডিকেল হতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।সেখানেও ব্যর্থ,ডাক্তাররা ফেরত দেন।ঠাঁই হয় জন্মস্থানের আতুড়ঘরে।মৃত্যু এত কষ্টের! অসহ্য যন্ত্রণা। কত ক্ষুধা, বমির ভয়ে খাওয়া হয় না।শুধুমাত্র পানি আর স্যালাইন,তারপরও বমি।কাশতে কাশতে নাড়ীভুঁড়ি বের হওয়ার যোগার,রক্তবমি। তারপর বাবা মা আত্নীয় স্বজনের চোখের সামনে অনন্তকালের দিকে ছোটা। পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ, নিম্নবিত্ত পরিবারের স্বপ্নের সর্বনাশ।
বাবা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ আমাকেও অস্থির করে, সান্তনার ভাষা হারিয়ে ফেলি। শোকাতুর পিতাকে নিয়ে কবরের পাশে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ভেবেছি, এই কবরে শায়িত আমার অতি পরিচিত শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছাত্রটি,একদিন আমারও ঠিকানা হবে এই কবর।চিরস্থায়ী ঠিকানা!!