30/03/2025
আজকে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। ছোটোবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম। একদিন আমি বর সেজে বিয়ে করতে যাবো। অবশেষে আজ আমার স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ এর মাঝেই আমি আমার হবু বঊ এর বাসায় চলে এলাম। তাদের বাসার সবাই এসে আমাকে বরণ করে ভিতরে নিয়ে এলো। বর আর কনে কে পাশাপাশি বসানো হলো। আমার খুব ইচ্ছে করছে বউ এর মুখ টা দেখতে। তাই আমি যেই না আমার বউ এর ঘোমটা টা খুলতে যাবো ঠিক তখনি মনে হলো চার দিকে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল। আমি ভয়ে চার দিকে তাকাতে থাকলাম। আর ফাঁকা জায়গা খুজতে থাকলাম, কোন দিক দিয়ে দৌড়ে পালানো যায়। বউ গেলে আর একটা বিয়ে করতে পারবো, কিন্তু জীবন গেলে,,,,। তাই দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিলাম। ঠিক তখন মনে হলো,, আরে এটা তো ভুমিকম্প না, আমার ফোন যা ভাইব্রেটর মুডে আছে। কিন্তু এ কি আমার ফোন কোথাও খুজে পাচ্ছি না। কিন্তু আমার শরীর এখনো কাপতে আছে। কিছুক্ষণ পর বালিশের নিচে হাত দিতেই ফোন টা পেলাম। ওহ তার মানে এতো ক্ষন আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। মেজাস টাই খারাপ হয়ে গেলো, বউ এর মুখ টাও দেখতে পারলাম না। ইচ্ছে করছে যে ফোন দিয়েছে তাকে ইচ্ছে মতো গালি দিবো। তাই ফোন টা হাতে নিয়েই তাকিয়ে দেখি, ফোন আর কেউ দেয় নি, মায়া ফোন দিয়েছে।
ফোন টা রিসিভ করেই,,,
- ওই তুই ফোন দেওয়ার আর সময় পেলি ন,?
- কেন রে..
- তুই জানিস, তোর জন্য আমি আমার হবু বউকে হাতে পেয়েও পেলাম না,,
- মানে,,
- মানে আর কি, তোর জন্য তো একটা গার্লফ্রেন্ডও পাইলাম না, তাই স্বপ্নে একটা বিয়ে করতেছিলাম, আর তুই বিয়ে টাও শেষ করতে দিলি না,,,,
- হা হা হা হা,,, আমি তোর স্বপ্নে গিয়েও বাগড়া দিয়েছি,,,,
- চুপ, স্বপ্নে গিয়ে না, ফোন দিয়ে,,
- হয়েছে,, এতো বক বক না করে, রেডি হয়ে ক্যাম্পাসে আয়,,
- ঠিক আছে, ফোন রাখ,,
এরপর ফোন রেখে আমি ফ্রেস হতে চলে গেলাম। ফ্রেস হতে হতে না হয় আমি আপনাদের আমার পরিচয় টা দিয়ে দেই। আমি শুভ্র, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর যে আমার স্বপ্নের বারো টা বাজালো সে আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড মায়া। শুভ্রের মায়া। হা হা হা হা,,,। সুন্দর না।
সেইদিন ভার্সিটি তে আমার তৃতীয় দিন। আমি আর রিয়াদ আমার ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় দুইটা মেয়ে আমাদের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে তারা নতুন। তাই ভাবলাম একটু মজা করি,,। আমি মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়ালাম,,,
- এই যে মেয়ে কোন ইয়ার শুনি,,,
কোনো জবাব না দিয়ে তারা চলে যেতে থাকে। আমি আবার তাদের সামনে গিয়ে বললাম,,।
- এই মেয়ে তুমি তো অনেক বেয়াদব, সিনিয়র রা তোমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করছে আর তুমি উত্তর না দিয়ে যাচ্ছো,,,। নাম কি তোমার,,
- তখন একজন আমতা আমতা করে বললো,, মায়া,,,
- ভালো না, তা সিনিয়র দের দেখলে সালাম দিতে হয় জানো না,,,
এইটা বলার সাথে সাথে আমার ঘারে হাত এর স্পর্শ পেলাম। তাকিয়ে দেখি লিলি আপু,, আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর বড় আপু।
- কিরে, তুই কি ভালো হবি না,, প্রথম দিন তো বড় আপু কে র্যাগ দিতে ধরছিলি, আর আজ আবার আর একজন কে,,, এই মেয়ে কোন ইয়ার তুমি,,
- আমি ফাস্ট ইয়ার। (মায়া)
- কোন ডিপার্টমেন্ট,,, (লিলি আপু)
- ম্যানেজমেন্ট।
কি,, তার মানে এই মেয়ে আমার ডিপার্টমেন্ট এর। এখনি পালাতে হবে,,,
- আপু আমি যাই, আর কখনো কাউকে র্যাগ দিবো না,,,,(আমি)
এই বলে আমি সেইখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে এলাম।
এরপর মায়া, আপু কে জিজ্ঞেস করলো,,,
- আচ্ছা আপু, উনি এইভাবে দৌড়ে পালালো কেন,,,
- ক্লাসে যাও, বুঝতে পারবে, আর হ্যা শোনো, কোনো রকম সমস্যা হলে আমাকে জানাবে,,,
আমি ক্লাসে এসে হাপাতে হাপাতে বসে পড়লাম।
একটু পর সেই মেয়ে টা মানে মায়া, ক্লাসে প্রবেশ করে।ক্লাসে ডুকেই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার দিকে তাকাতেই বুঝলাম সে অনেক রেগে আছে। ভাবছিলাম মেয়েটা হয়তো আমাকে বোকাঝকা করবে কিন্তু কিছুই করলো না। যাক বাবা বেঁচে গেলাম।
ওই মেয়ের সাথে আর কখনো কথা বলার সাহস হয় নি আমার। এইভাবে কয়েক দিন চলে গেলো। দেখতে দেখতে ভার্সিটিতে প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স চলে এলো। আমার ফ্রেন্ডরা সবাই মিলে আমাকে চেপে ধরলো যে, আজকে যেকোনো একজন কে প্রপোজ করতেই হবে। আমি তাদের বললাম, দেখ এই সব প্রেম আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। পরে তাদের জোড়াজুড়ি তে রাজি হলাম। কিন্তু শর্ত একটাই প্রপোজ করবো কিন্তু প্রেম করবো না। সবাই মেলে নিলো।
- কিন্তু কাকে প্রপোজ করতে হবে।
- 5 মিনিট এর মধ্যে এই দোড়জা খুলে যেই মেয়ে আগে রুমে প্রবেশ সে,,
আমি ফুল হাতে দোড়জার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। বুকের ধুকপুকানি টা অনেক বেরে যাচ্ছে। মনে মনে ভয় হচ্ছে প্রপোজ করতে গিয়ে উত্তম মাধ্যম না খেলেই হলো। একটু পর কারো পায়ের শব্দ পেতে থাকি। তখন সাথে সাথে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলি,,
এরপর দোড়জা খোলার সাথে সাথে বলে উঠি,,
- i love u, will you be my girlfriend?
- তোর প্রপোজ করা আমি বের করছি,,
এইটা শুনে তাকিয়ে দেখি মায়া,, রীতিমতো ঢক গিলতে শুরু করি,, এরপর মায়াও এদিক ওদিক কি যেন খুজতে থাকে, সে একটি ছোট লাঠিও পায়। আমার এই খানে থাকা বিপদজনক। এই ভেবে দৌড় মারি। মায়াও আমার পেছন পেছন দৌড় দেয়।
- ওই দ্বারা দৌড়াচ্ছিস কেন, প্রেম করবি না আমার সাথে, আমাকে তোর গার্লফ্রেন্ড বানাবি না,, পালাচ্ছিস কেন,,,
- আমাকে কি পাগলে পেয়েছে,, যাই হয়ে যাক, আজকে আমাকে কেউ আঠকাতে পারবেন না।
সেই দিন মায়া আমাকে সম্পুর্ন ক্যাম্পাস দৌড় করিয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে আমারা দুইজনেই খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। একজন যেন আর একজন কে ছাড়া চলেই না।।।
কিছুক্ষণ পর আবার মায়া ফোন দিলো,,
- কিরে তোর আসতে আর কতক্ষন লাগবে।
- এইতো বের হচ্ছে,, একটু ওয়েট কর,,,
এরপর আমি ক্যাম্পাসে চলে আসি। এসে দেখি মায়া শহীদ মিনারের সামনে বসে আছে,,,,
- কিরে, এখানে বসে কি করছিস,,
- সেই কথা পড়ে বলছি, আগে আমার ঝালমুড়ি দে,,,।
(এই যা, তাড়াহুড়োর জন্য তো ওর জন্য ঝালমুড়ি আনতে ভুলে গিয়েছি, এখন কি করি,, আসলে ও আমার কাছে শুধু এই টুকুই চায়, বলতে গেলে এইটা আমার ডিউটি, কি করি এখন)
- একটা কথা বলি,, আমি না, ঝালমুড়ি আনতে ভুলে গেছি,,,
- ভুলে তো যাবিই, আমি কে যে আমার কথা তোর মনে থাকে৷ তোর তো এখন স্বপ্নের বউ হয়েছে, যা তুই তোর সে বউ এর কাছে,,
- যাবো কি করে, তুই তো ওর মুখ দেখতে দিলি নি,,,
- কি বললি তুই, অন্য মেয়ের মুখ দেখতে পারিস নি দেখে তোর আফসোস হচ্ছে,, থাকবো না আমি তোর সাথে,, তুই থাক,,
- ওই কই যাচ্ছিস৷ থাম,,
এরপর মায়া সেইখান থেকে উঠে অন্য একজায়গায় বসলো,, আমি তো জানি কি করে তার রাগ ভাঙ্গাতে হবে,,,।
তাই আমি সোজা তার জন্য ঝালমুড়ি আনতে চলে গেলাম। এরপর তার হাতে দিয়ে চাইলাম কিন্তু সে নিলো না,, বললো,,
- তোর ঝালমুড়ি তুই খা, আমার লাগবে না,,
আমিও নাছোড়বান্দা,, মিছে মিছে ঝালমুড়ি খাচ্ছি আর বলছি,,
- আজিকের ঝালমুড়ি টা আগের চেয়ে অনেক মজা হয়েছে,,, মামা যে কিভাবে এতো সুন্দর ঝালমুড়ি মাখে,,,
( আড় চোখে মায়ার দিকে তাকাচ্ছি, দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে লোভ সামলাতে পারছে না)
এরপর।সে আমার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কেড়ে নিয়ে বললো,,
- তোর লজ্জা করে না, অন্যের জিনিস না বলে খাইতে,,, এইটা আমার সো এতে একদম নজর দিবি না,,।
- তোর জন্যই এনেছি, আমি একটুও খাই নি,,
- ভালো করেছিস৷ এখন তুই চুপচাপ বসে থাক আর আমাকে খাইতে দে,,, আর হ্যা নজর দিবি না একদম, যদি পেট খারাপ হয় না, তো বুঝবি,,
- ঠিক আছে তুই খা, কিন্তু এখন তো বল, এতো আর্জেন্ট ডাকলি কেন,,
- আরে এমনি, একা একা বোর লাগছিলো তাই,,,
- ধুর, তোর জন্য আমি শান্তি মত খাইতেও পারলাম না,,।
- ঠিক আছে কান্না কাটি করিস না, তোর জন্য আমি খিচুড়ি রান্না করে এনেছি,,
- সত্যি বলছিস, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে, দে না, আমি এখনি খাবো,,
- খিচুড়ির কথা শুনলে তোর হুস থাকে না তাই না,
- তুই তো জানিস, খিচুড়ি আমার কতো প্রিয়,,
- ঠিক আছে, একটু গল্প করে নেই তারপর একসাথে খাবো,,
কথা বলতে বলতে আমাদের ফাস্ট ইয়ার এর একটা মেয়ে এসে আমাকে বলছে,,
- শুভ্র ভাইয়া, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনি যদি সেইদিন আমাকে পড়া টা না বুঝিয়ে দিতেন আমি আজকে ফাস্ট হতে পারতাম না, এই নেন এই একটা চকলেট আপনার,,,
আমি মায়ার দিকে শুধু তাকিয়ে আছি, সে আমার দিকে অগ্নিকাণ্ডের লাভার মত তাকিয়ে আছে,, এইটা দেখে আমি মনে মনে ভাবছি,, এইবার আমার খবর আছে,, জানি না, আজ বেঁচে থাকবো কি না,, যদি বেঁচে থাকি তাহলে পরের পার্ট এ দেখা হবে,,,।
wait for next part...
#ডিয়ার_বেস্টফ্রেন্ড-2
#লেখকঃ_কাব্য (পার্টঃ 1)