মনের কথা

মনের কথা আসসালামুয়ালাইকুম।

কেমন আছো সবাই?
27/06/2025

কেমন আছো সবাই?

তোমার ছায়ার পাশেপর্ব ৫: নীরব যুদ্ধছোটবেলা থেকেই নীল একটু চুপচাপ। অন্যদের মতো মজার, উচ্ছ্বল নয়। খেলাধুলা, আড্ডা এসবের চে...
07/05/2025

তোমার ছায়ার পাশে
পর্ব ৫: নীরব যুদ্ধ

ছোটবেলা থেকেই নীল একটু চুপচাপ। অন্যদের মতো মজার, উচ্ছ্বল নয়। খেলাধুলা, আড্ডা এসবের চেয়ে ওর মাথায় সবসময় একটা কথাই ঘুরত—"কিভাবে পরিবারটাকে টিকিয়ে রাখব?"

বাবার হঠাৎ মৃত্যু যেন ওদের ছোট্ট সংসারে একটা গভীর গর্ত তৈরি করেছিল। মা বেসরকারি স্কুলে পড়াতেন, সামান্য বেতনে। আর নীল বুঝে গিয়েছিল, নিজের হাতটা এগিয়ে না দিলে ও সংসার নামক শব্দটা একদিন গড়িয়ে যাবে।

স্কুলের পর ছেলেটা স্টেশনের কাছে একটা চায়ের দোকানে কাজ নিল। কাপ ধোয়া, পানি আনা, কাস্টমারকে চা এগিয়ে দেওয়া—সব কিছু করত হাসিমুখে।
তাতে মাস গেলে মিলত মাত্র কয়েকশো টাকা। কিন্তু তাও সে খুশি ছিল।

কলেজে উঠেও নীল থামেনি। সেমেস্টার ফাঁকে ফাঁকে কোচিং সেন্টারে নোট টাইপ করত, এক গ্যারেজে মাঝে মাঝে বাইক ধুত। কেউ জানত না এসব। ও চাইত না কেউ করুণা করুক।

মানুষ অবশ্য করুণা করতো না—তারা করত উপহাস।

"এক কানে কম শোনা ছেলে সেনাবাহিনীতে যাবে?"
"তোর মতো ছেলের তো রোজগারের চেষ্টা বাদ দিয়ে দোকান বসানো উচিত!"
"চা-বিক্রি করে কি হবে রে? সাহেব হবি?"

এই কথা শুনে সে মুখে কিছু বলত না। চোখে একরাশ অভিমান জমত, কিন্তু মুখে থাকত একই শান্ত ছেলেটা।

কখনো কখনো সে বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলত—
"তুই পারবি, নীল। তুই একদিন জব করবি, মানুষ দেখবে, হাসবি—কিন্তু এইসব মানুষদের মতো হবি না।"

মার মুখে বলত না কিছুই। শুধু মা একদিন ওর আঙুল ধরে বলেছিল,
"তুই সবার মতো শুনতে পারিস না, কিন্তু আমি জানি তোর মনটা সবাই থেকে অনেক বেশি শোনে।"

সেই কথা আজও বুকের মাঝে রয়ে গেছে।

বাড়ির খুদের দোকানদার, পাশের বাসার কাকিমা—সবাই নীলকে "চুপচাপ ছেলেটা" বলত। কেউ জানত না, এই ছেলেটার বুকের ভেতরে কত গর্জে ওঠা নদী দৌড়ায়, কত অপমান, কত হেরে যাওয়া ঢেকে রাখা থাকে প্রতিদিন।

নিশুর সাথে দেখা হওয়ার পর, যেন সেই নদীতে একটু আলো পড়েছিল।
কিন্তু এখন—আবার অন্ধকার। আবার নিজেকে গুটিয়ে নিতে হচ্ছে। আবার ভাবতে হচ্ছে,
"আমি কি এই ভালোবাসার উপযুক্ত?"

নীল জানে না নিশুর চোখে নিজের জায়গাটা কোথায়।
সে শুধু জানে—নিজেকে গড়ে তুলতে হলে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে।
আর সেই পথে, খুব সম্ভবত, নিশুর ছায়াও থাকবে না।

---

চলবে…

তোমার ছায়ার পাশেপর্ব ৪: শব্দহীন স্বপ্নসকাল। শহরের এক কোণায় ছোট্ট একটা ঘর। দরজার বাইরের ঘণ্টাটা বাজছে, কিন্তু নীল শুনতে ...
04/05/2025

তোমার ছায়ার পাশে
পর্ব ৪: শব্দহীন স্বপ্ন

সকাল। শহরের এক কোণায় ছোট্ট একটা ঘর। দরজার বাইরের ঘণ্টাটা বাজছে, কিন্তু নীল শুনতে পায় না। তার ডান কানটা সেই স্কুল জীবন থেকেই ঠিক কাজ করে না। বাম কানে হালকা আওয়াজ পেলেও শব্দগুলো অস্পষ্ট।

চোখ মেলে তাকায় সে—ঘড়িতে সকাল ৮টা। আজই ডিফেন্স একাডেমির রেজাল্ট বের হওয়ার দিন।
এই নিয়ে চতুর্থবার।

বিছানা ছেড়ে উঠে নীল আয়নার সামনে দাঁড়ায়। মুখে তেমন উত্তেজনা নেই। বরং একটা নিস্তেজ অভিব্যক্তি।
সে জানে—এবারও হয়তো ‘না’।

প্রিন্ট করা কাগজটা ডেস্কে পড়ে ছিল। “Medical Disqualified – Hearing Loss (Right Ear – 60%)”
একই লাইন, চতুর্থবার।

নীল ধপ করে বসে পড়ে। এক হাতে মাথা চেপে ধরে। এতবার চেষ্টা, এত পরিশ্রম—সব মিথ্যে হয়ে যায় একটামাত্র লাইনে এসে।

“আমি তো শুনতে পাই… কিছুটা। তবুও?”
এই প্রশ্নটা সে বারবার নিজেকে করে।

সেই স্বপ্ন নিয়েই বড় হওয়া নীল। স্কুলের ছুটির পর দৌড়, মেডিটেশন, জিম, সব কিছু নিজে নিজেই করত। অন্য ছেলেরা মোবাইল গেমে ব্যস্ত থাকত, নীল তখন নিজেকে তৈরিতে ব্যস্ত।

কিন্তু হঠাৎ একদিন স্কুলের হেলথ চেকআপে ধরা পড়ে—তার ডান কানে শব্দ অনেকটাই কম পৌঁছায়।

প্রথমবার সে গা করেনি। দ্বিতীয়বার রিজেক্ট হতেই বুঝেছিল—সমস্যাটা ছোট নয়।

তবু হাল ছাড়েনি। বারবার আবেদন করেছে, ফর্ম ভরেছে, পরীক্ষায় পাস করেছে—কিন্তু এক মেডিকেল রিপোর্টেই সব ভেঙে পড়েছে।

আজও তাই। চতুর্থবার, একই উত্তর।

নীল বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। চারদিকে হুলস্থুল শহর, মানুষ ছুটছে কাজে। আর সে—এক অদৃশ্য দেয়ালে আটকে পড়েছে।

তার ফোনটা বেজে উঠল। নিশু।

সে ধরল না। আজ সে মুখোমুখি হতে পারবে না কারো সাথে। বিশেষ করে এমন কারো সাথে, যে তার প্রতি অনুভব তৈরি করছে।

“যে নিজেকে ঠিকঠাক শুনতে পায় না, সে কারো জীবনে থাকবে কীভাবে?”

এই প্রশ্নটা আজ সারাদিন ধরে তাকে কামড়ে খাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর সে খাতার পাতায় লিখতে শুরু করে—

> “নিশু,
তোমার চোখে আমি নতুন স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমি সেই মানুষ নই—যে শব্দ বুঝতে পারে, ধ্বনি ধরতে পারে, কষ্ট লুকাতে পারে।
আমি একটা অসম্পূর্ণ মানুষ। তোমার পাশে দাঁড়ানো মানে তোমার জীবনের সেই গল্প নষ্ট করে ফেলা—যেখানে সব ঠিকঠাক হওয়ার কথা।
তুমি আলোর মেয়ে। আর আমি? আমি ছায়ার মানুষ।
-নীল”

তোমার ছায়ার পাশেপর্ব ৩: ফিরে যাওয়ার পথেট্রেনটা ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম ছাড়ছে। জানালার পাশে বসে নীল বাইরের শহরটার দিকে শ...
03/05/2025

তোমার ছায়ার পাশে
পর্ব ৩: ফিরে যাওয়ার পথে

ট্রেনটা ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম ছাড়ছে। জানালার পাশে বসে নীল বাইরের শহরটার দিকে শেষবারের মতো তাকাল। আলো-আঁধারির শহর। এতদিন পর এসেছিল, যেন কোনো অসমাপ্ত গল্প শেষ করতে। কিন্তু অন্য একটা গল্প, একদম নতুন, তার জীবনে ঢুকে পড়েছে—নিশু।

নীল নিজের চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিল। গঙ্গার ধারে প্রথম দেখা, তারপর হাসপাতালের সেই নীরব গল্প... সব যেন সিনেমার মতো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।

মোবাইলে ভাইব্রেশন। নিশুর নাম ভেসে উঠল স্ক্রিনে।

— “নীল?”
— “হ্যাঁ নিশু, বলো।”
— “শুনে মনটা খারাপ লাগছে... চলে যাচ্ছো আজ।”
— “চলে যাচ্ছি... কিন্তু যাওয়াটা চিরদিনের নয়। ঠিক ফিরে আসব।”

একটু নীরবতা। তারপর নিশু বলল, “তুমি জানো, তোমার মতো করে কেউ এতদিন আমার কথা শোনেনি। কেমন যেন লাগছে... তোমার না থাকাটা আমি যেন বুঝে ফেলছি আগে থেকেই।”

নীল চুপ করে গেল।
তার মন বলছিল—তুমি জানলে, নিশু... আমি সত্যিই থাকব না। আমি ফিরলেও, ফিরব এক অন্য রূপে।

— “তুমি ঠিক মতো পৌঁছেও ফোন দিও, প্লিজ।”
— “দেব। তুমি ভালো থেকো।”
— “তুমি... সত্যি ফিরবে তো?”

এই প্রশ্নের জবাবে নীল কিছু বলল না। চুপ করে জানালার বাইরে তাকাল। বাইরের আলো একে একে মিলিয়ে যাচ্ছে।
ফোনের অপর প্রান্ত থেকেও নিশু চুপ।

শেষমেশ, নীল বলল, “জানো, আমার মনে হচ্ছে কাল সকাল থেকে আমার পৃথিবীটা পালটে যাবে। এমন কিছু শুরু হবে, যেটা শেষ হওয়ার আগে আমি আর আগের মতো থাকব না।”

নিশু ধরা গলায় বলল, “আমি জানি না তুমি কী বোঝাতে চাইছো, কিন্তু... প্লিজ, যদি কখনো কিছু বলতে চাও—আমি থাকব। আমি শুনব।”

নীল চোখ বন্ধ করে বলল, “তুমি শুনবে, কিন্তু আমি হয়তো আর বলতে পারব না। ভালো থেকো, নিশু।”

কল কেটে গেল।

ট্রেন তখন রাতের অন্ধকার ছেদ করে এগিয়ে চলেছে। জানালার বাইরে শহরের আলো এক এক করে হারিয়ে যাচ্ছে। আর ভেতরে, নীলের হৃদয় থেকে নিঃশব্দে হারিয়ে যাচ্ছে কিছু স্বপ্ন।

সে জানে—কাল সকাল থেকে তার জীবনে এক অজানা ঝড় আসছে।
কোনো অসুখ, কোনো গোপন অতীত, নাকি এমন কিছু যা সে নিজেও বোঝে না—
কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট:
নিশুর জন্য এই ভালোবাসা, এই টান, সে ধরে রাখতে পারবে না।

---

চলবে…

তোমার ছায়ার পাশেপর্ব ২: হৃদয়ের সাদা চাদরেবেলা তখন দুপুর গড়িয়েছে। শহরের বড় একটা প্রাইভেট হাসপাতালে প্রতিদিনের মতোই ভিড়, ক...
02/05/2025

তোমার ছায়ার পাশে
পর্ব ২: হৃদয়ের সাদা চাদরে

বেলা তখন দুপুর গড়িয়েছে। শহরের বড় একটা প্রাইভেট হাসপাতালে প্রতিদিনের মতোই ভিড়, কোলাহল, অস্থিরতা। নিশু বসে ছিল একপাশের অপেক্ষা কক্ষের চেয়ারে। বাবাকে গতকালই আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে। স্ট্রোক হয়েছে হঠাৎ। সব কিছু এলোমেলো। মাকে সামলানো, ডাক্তারদের সাথে কথা বলা—সব দায়িত্ব যেন হঠাৎ একা নিশুর ওপর এসে পড়েছে।

চোখে গভীর ক্লান্তি, মুখে চিন্তার রেখা। তবু হাতের খাতায় কিছু একটা লিখে চলেছে। হয়তো নিজের ভেতরের ভাঙাগুলো কাব্যের পেছনে লুকানোর চেষ্টা।

ঠিক তখনই এক সাদা শার্ট পরা ছেলেকে দেখতে পেল সে। ছেলেটা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল, কিন্তু চোখ বারবার ভেতরের দিকে। তার চোখে অস্থিরতা, কিন্তু ঠোঁটে চাপা এক অভিমান। কে যেন তাকে থামিয়ে রেখেছে—ভেতরে যাওয়ার আগে আরেকবার ভাবতে বলছে।

নিশু ওকে চিনে ফেলল।
সেদিন গঙ্গার ধারে দেখা হওয়া ছেলেটা—নীল!

হঠাৎ নীলের চোখও পড়ল নিশুর দিকে। প্রথমে চমকে উঠল দু’জনেই। তারপর এক অদ্ভুত হাসি—অপরিচয়ের উপর তৈরি হওয়া এক নতুন স্বস্তি।

“তুমি?” নিশু উঠে গিয়ে বলল।

নীল কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি... তোমাকে এখানে দেখে একটু অবাক হলাম।”

“বাবা আইসিইউ-তে... তুমি?”

নীল একটু থেমে বলল, “একজনকে দেখতে এসেছি... কিন্তু দেখব কি না, জানি না। অনেক বছর পরে এসেছি এখানে।”

নিশু বুঝল, ওর কথার ভেতরেও একটা গভীর দুঃখ লুকানো। সে আর খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল না।

ওরা হাসপাতালের ক্যান্টিনে গিয়ে বসে পড়ল। নীরবতা প্রথমে অস্বস্তিকর লাগছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে সেই নীরবতাতেই দুজনের মনে অন্য রকম এক শান্তি এল।

“তুমি কফি খাও?” নিশু জিজ্ঞেস করল।

“খাই, তবে আজ খুব ইচ্ছে নেই। তবে তুমি পাশে থাকলে, তেতো কফিও মিষ্টি হয়ে যেতে পারে,” বলে হেসে ফেলল নীল।

নিশু একটু লজ্জা পেলেও হাসি চাপল না।

কথার ফাঁকে নিশু বলল, “সেদিন তোমার কথায় একটা জিনিস বুঝেছি... তুমি মানুষকে বোঝো। খুব কম মানুষ পারে।”

নীল তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটা—এই নিশু—তার ব্যস্ততা, ক্লান্তি, ভয়, সব কিছুর মাঝেও কারো জন্য সময় রাখতে জানে। এমন একজন মানুষ... যে খোলামেলা, কিন্তু ধীরে ধীরে খুলে যায়।

“তুমি খুব অন্যরকম,” নীল বলল হঠাৎ।

“তুমি নিজেও তো,” নিশু জবাব দিল।

সেই মুহূর্তেই, এক অদৃশ্য সেতু তৈরি হয়ে গেল ওদের মাঝে। যেন দুটো ভিন্ন জীবনের কষ্টগুলো, অভিমানগুলো এসে মিশে গেল এক অনুভবে—একটা নামহীন অনুভব।

কথা শেষ হওয়ার আগে, নিশু নিজে থেকেই বলল, “এই যে, আমার নম্বর রাখো। যদি বাবার ব্যাপারে কিছু দরকার হয়, জানাবো।”

নীল ফোনটা হাতে নিয়ে নাম লেখার সময় থামল।

“কি লিখব? নিশু? না অন্য কিছু?”

নিশু হাসল। “তুমি যেটা মনে রাখবে।”

নীল ফোনে লিখল—“নিশু—বৃষ্টির পাতায় লেখা মেয়ে”।

নিশু অবাক হয়ে তাকাল, কিছু বলল না। শুধু মনে মনে বলল, এই ছেলেটা... আমার জীবনের একেবারে অচেনা এক অধ্যায় খুলে দিচ্ছে।

আর নীল... বাইরে বেরিয়ে এসে নিজের ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বলল, “তোমাকে ভুলে যাওয়ার উপায় নেই, নিশু... কিন্তু আমি জানি, একদিন হয়তো আমাকেই যেতে হবে।”

---

চলবে…

তোমার ছায়ার পাশেপর্ব ১: প্রথম দেখাশহরের কোলাহলের মধ্যেও কিছু মুহূর্ত থাকে, যেগুলো একদম নির্জন, নিঃশব্দ। ঠিক যেমন সেদিনটা...
01/05/2025

তোমার ছায়ার পাশে

পর্ব ১: প্রথম দেখা

শহরের কোলাহলের মধ্যেও কিছু মুহূর্ত থাকে, যেগুলো একদম নির্জন, নিঃশব্দ। ঠিক যেমন সেদিনটা ছিল।

নীল হাঁটছিল গঙ্গার ধারে, সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে। চারপাশে গোধূলির আলো, বাতাসে হালকা শীতের আমেজ, আর দূরে কোথাও বাজছিল গিটার—কেউ যেন মন দিয়ে বাজাচ্ছে ‘বৃষ্টি থামার পর’।

নীল সেইসব সুরের ভেতরে হাঁটছিল, নিজের ভেতরের অজানা ক্লান্তি নিয়ে। তার চোখে তখন হাজারটা প্রশ্ন, উত্তর একটাও নেই।

ঠিক তখনই, একটা বইয়ের পাতা উড়ে এসে গিয়ে পড়ল তার পায়ের কাছে।

নীল বইটার পাতাটা হাতে নিয়ে একটু সামনে তাকাতেই মেয়েটাকে দেখল। মেয়েটা উল্টো দিকে ছুটছে, চুল এলোমেলো, হাতে খোলা একটা খাতা, আর মুখে সেইরকম ভীষণ এক অভিব্যক্তি—মিশ্র ভয় আর আশ্চর্যতা।

“এই যে! পাতা উড়ে গেছে!” নীল চিৎকার করল।

মেয়েটা থামল। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, “ওটা... আমার কবিতার খাতা! একটা পাতাও হারালে চলবে না!”

নীল পাতাটা বাড়িয়ে দিল। “এই যে, আছে এখনো। এত গুরুত্বপূর্ণ?”

মেয়েটা হাসল। “তুমি বুঝবে না। কিছু লেখা থাকে যা কেবল নিজের জন্য—not for anyone else.”

নীল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। এমন করে কেউ আগে বলেনি তাকে—“তুমি বুঝবে না।”

“তোমার নাম?” নীল জিজ্ঞেস করল।

“নিশু,” মেয়েটা বলল, গলায় যেন নদীর মতো নরম সুর। “আর তোমার?”

“নীল,” বলেই হেসে ফেলল, “নিশু আর নীল—দুজনেই রং।”

নিশু হেসে ফেলল। সেই হাসিতে গোধূলির আলোও যেন মিশে গেল।

সেদিন, দুজনে গঙ্গার ধারে বসে পড়ল। গল্প শুরু হল কবিতা দিয়ে, শেষ হল জীবনের ব্যর্থ স্বপ্ন নিয়ে। কেউ কাউকে বোঝাতে আসেনি, কেউ কাউকে ভালবাসতে আসেনি—তবুও, কেমন যেন একটা শান্তি ছিল দুজনের মাঝখানে।

যেদিন শেষ আলো গঙ্গার জলে মিশে গেল, সেই দিন শুরু হল নীল আর নিশু’র গল্প।

বৃষ্টিভেজা ভালবাসাশ্রাবণের শেষ দিকের দিনগুলোতে কলকাতার আকাশ যেন নিজের সব জমে থাকা কান্না উজাড় করে দেয়। এমনই এক সন্ধ্যাবে...
01/05/2025

বৃষ্টিভেজা ভালবাসা

শ্রাবণের শেষ দিকের দিনগুলোতে কলকাতার আকাশ যেন নিজের সব জমে থাকা কান্না উজাড় করে দেয়। এমনই এক সন্ধ্যাবেলা, কলেজ স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকান গুলোতে জমে থাকা জল ছপ ছপ শব্দ করে হাঁটার সময় হঠাৎই মুখোমুখি হলো দুই পুরনো পরিচিত—অনিরুদ্ধ আর রেয়া।

চার বছর পর এই হঠাৎ দেখা। দু’জনেই এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। চারপাশের কোলাহল, বৃষ্টির শব্দ, বাসের হর্ণ—সব কিছু যেন হঠাৎ চুপ করে গেল।

“তুমি?” অনিরুদ্ধের কণ্ঠে অবাক হওয়ার সুর।

রেয়া একটু হাসল। “হ্যাঁ, আমি... ভাবিনি, এতদিন পরে আবার এভাবে দেখা হবে।”

একটা সময় ছিল, যখন রেয়া আর অনিরুদ্ধ একে অপরের ছায়া হয়ে ছিল। কলেজের দিনগুলোতে ওদের প্রেম ছিল অনেকটা সিনেমার মতো—গোপন চোখাচোখি, ক্যান্টিনে একসাথে কাটানো সময়, বৃষ্টির দিনে এক ছাতার নিচে হাঁটা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। অনিরুদ্ধ মুম্বাই চলে যায় চাকরির জন্য, আর রেয়া থাকে কলকাতায়, পরিবারের পাশে। কথাবার্তা কমতে কমতে একসময় আর যোগাযোগই থাকেনি।

“চলো, কোথাও বসে একটু কথা বলি?” অনিরুদ্ধ বলল।

রেয়া একটু দ্বিধায় পড়লেও মাথা নেড়ে রাজি হয়ে গেল। দু’জনে ঢুকে পড়ল কলেজ স্ট্রিটের এক পুরনো ক্যাফেতে, যেটা তাদের প্রথম ‘ডেট’-এর সাক্ষী ছিল।

ক্যাফের কোণার টেবিলটায় বসে দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ। এক কাপ করে কফি এসে গেল, কিন্তু কেউ ছুঁয়েও দেখল না।

অনিরুদ্ধই প্রথম মুখ খুলল। “এই চার বছরে কত কিছু বদলে গেছে, তাই না?”

“হ্যাঁ... কিন্তু কিছু কিছু জিনিস বদলায় না,” রেয়া বলল, চোখের দিকে না তাকিয়েই।

“মানে?” অনিরুদ্ধের কণ্ঠে কৌতূহল।

“মানে, স্মৃতি। মনে পড়ে, এখানেই প্রথম তুমি বলেছিলে, ‘তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে সময় থেমে যায়।’ ”

অনিরুদ্ধ হেসে ফেলল। “তুমি এখনও সব মনে রাখো!”

রেয়াও হেসে ফেলল। সেই পুরনো হাসি, যেটা একসময় অনিরুদ্ধের মন ভরিয়ে দিত।

বাইরে তখনও বৃষ্টি ঝরছে। কাঁচের জানালায় বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছে। সেই কফির কাপে যেন গলে যাচ্ছে চার বছরের সব অপূর্ণতা, সব না বলা কথা।

“তুমি এখনও একা?” অনিরুদ্ধ জিজ্ঞেস করল।

রেয়া একটু চুপ করে থেকে বলল, “হ্যাঁ। সম্পর্কের মধ্যে যাওয়া মানেই শুধু কাউকে পাওয়া নয়, নিজের কিছু অংশ হারানোও। আমি সেটা পারিনি।”

অনিরুদ্ধ বলল, “আমিও পারিনি। অনেকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু... তোমার মতো কেউ ছিল না।”

চোখের কোণে জল টলমল করে উঠল রেয়ার। “তবে, আমরা কেন ছাড়লাম একে অপরকে?”

“কারণ, আমরা ভেবেছিলাম দূরত্ব ভালোবাসাকে মুছে দেবে। কিন্তু বুঝিনি, ভালোবাসা কখনও ফুরায় না, শুধু চুপ করে থাকে,” অনিরুদ্ধ বলল, গভীরভাবে।

রেয়া হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। “চলো, হাঁটি একটু। বৃষ্টিতে ভিজে না হয় পুরনো দিনগুলো একটু ফিরিয়ে আনি।”

অনিরুদ্ধ মুচকি হেসে ওর ছায়া অনুসরণ করল। বাইরে তখনো ঝিরঝিরে বৃষ্টি, রাস্তায় জল জমে রয়েছে, কিন্তু দু’জনেই ছাতা ছাড়াই হাঁটতে শুরু করল। পা ভিজে যাচ্ছে, কাপড় সেঁচে যাচ্ছে, কিন্তু মন যেন উড়ছে এক অদ্ভুত আনন্দে।

কলেজ মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে রেয়া হঠাৎ থেমে বলল, “তুমি কি আজও আমায় ভালোবাসো, অনি?”

অনিরুদ্ধ এক মুহূর্ত দেরি না করে বলল, “আজও, ঠিক আগের মতো... হয়তো আরও বেশি।”

রেয়া তখন ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে এল। “তবে এবার হারাতে দিও না, প্লিজ।”

অনিরুদ্ধ ওর হাত ধরল, যেন আর কোনোদিন ছেড়ে দেবে না। “এবার না। এবার সবটা একসাথে কাটাবো—ভালোবাসা, ঝগড়া, বৃষ্টি... সব।”

রেয়া হেসে ফেলল। চারপাশে তখনও বৃষ্টি, কুয়াশা, কিন্তু ওদের মধ্যে যেন একটা রোদ জেগে উঠেছে—ভালোবাসার রোদ।

10/10/2023

Do what you love

Address

Rangpur

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মনের কথা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share