30/03/2025
ঈদ মোবারক।
এই ঈদে আপনাদেরকে আমার পক্ষ থেকে.....
গল্পঃ বিদেশে প্রেমিকা নয় বউ নিয়ে যাব ।
রচনায়ঃ M.A.T.Himu(অপদার্থ)
আজকে মেঘ জমেছে আকাশে ,
কিন্তু সেদিনটার মতো আজকের আকাশে মেঘের ভেলা নেই
নদীতে উঠেছে জোয়ার ,
শুধু নেই সেদিনের পাল তুলা নৌকাগুলো ।
বাগানে ফুঠেছে হরেক রকমের ফুল ,
শুধু বাগানে নেই কৃষ্ণচুড়া ।
ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌ,ভ্রমরেরা ,
তবে তাদের মুখে নেই ভন ভন শব্দ ।
আজকে বাতাসে বইছে পুষ্পসুঘ্রান ,
নেই শুধু বেলী,চামিলীর গন্দটা ।
বালির উপর শিশুরা নিজেদের প্রতিভা ফুটিয়ে তুলছে ,
তবে আজকে তারা বালির উপর ঘর বানাতে ভুলে গেছে ।
আজকের রাতটা চাদের আলোয় ভরে গিয়েছে ।
কিন্তু আজকে চাঁদের আলোয় নেই সেদিনের জ্যোৎন্সা ।
কবি আল মাহমুদ স্যারের সবার আমি ছাত্র কবিতার মত তাল গাছের লম্বা মাথায় ডাবের মতো টান্ডা ও গোলগাল একটি চাঁদ উঠেছে ।
কবি গুরুর ছোট নদীটা এখনো বইছে হাটু জল নিয়ে ,
এখন সেই নদীতে গরু গাড়ি পাড় হয় না ।
বাবুই পাখিটা খড় দিয়ে বাসা বেধেছে নিমগাছে তবে তার সাথে ঝগড়া করা চড়ুই পাখিটি নেই ।
আজ নদীর দুপাড়ে সেদিনের মতো কাশফুল ফুটেছে কিন্তু সেদিনের মতন রোমাঞ্চকর সময় নেই ।
আজকে আমার কি-বোর্ডের ১১৫টি বাটম কাজ করলেও সেদিনের মতন লিখার শক্তিটুকু নেই ।
এটা কোনো কবিতা/উপন্যাস নয় ।আমার ছাত্রী সাবিহার খাতায় লিখা । আমি তাকে অংক করতে বলেছিলাম ,বাকীটা ইতিহাস ।
আস্ত ফাজিলের হাড্ডি এই মেয়েটা ।কার মুখ দেখে যে এই মেয়েকে পড়াতে রাজী হয়েছিলাম কে জানে ।
এমন ফাজিল মেয়ে আমার জীবনেও ২টা দেখিনি । কিছু বলিনা কারন তার মা বেচে নেই আর তার বাবাও বাইরে থাকে ।আর সব চেয়ে ভয়ঙ্কর দুঃখের কথা হল সে আমার চাচাতো বোন ।এর উপর তারা শহরে থাকে । এখানে আমার চাকরির জন্য এখানে আমার থাকা । সারাদিন অফিসে হাফলেডিস বসের বক বক ,এই মিটিং সেই মিটিং, স্টাফদের সাথে বক বক আর যতক্ষন বাসায় আছি ততক্ষন সাবিহার ফাজলামি সব কিছু মিলিয়ে ফাটাবাঁশের চিপায় আছি ।
বাঁশ আমার বাঁশ অগো বাঁশে বাড়ি ভরা.............
নাহ আমার এখন গান শুনাবার সময় নেই ।আমি এখন অফিসে আছি বসের সামনে মিটিংএ । এই সময় যদি ফোন আসে তাহলে মেজাজটা কেমন লাগে বলেনতো ?
যখন দেখলাম সাবিহার ফোন তখন তাকালাম ঘড়ির দিকে । সাবিহাকে কলেজ থেকে নিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে । দ্রুত মিটিং শেষ করে যেতে হবে ।
তাই বসকে বললাম............
- মেডাম আমি প্রজেক্টটা বুঝে গেছি ।
তো তিনি নিজের চোখগুলোকে ৯।০ ডিগ্রি এঙ্গেলে তাকিয়ে বললেন,
-মিটিং শেষই হলোনা আপনি বুঝে গেছেন? ইয়ার্কি মারার জায়গা পান না?
- আমি যদি কাজটা বুঝে নিই তাহলে এখানে জ্যামিতিক আকারে চোখ করার কি হলো?
- ও ক্লাসে কত নাম্বার স্টুডেন্ট ছিলেন আপনি?
- মেডাম সেটাতো আমার সার্টিফিকেটি বলে দেবে তারপরও বলছি আমি কোনো ক্লাসেই ০১ থেকে ০২এ নামি নি ।
- এ্যাঃ
- হ্যা বস ।
- তাহলে আপনি বেসরকারী প্রতিষ্টানে কি করেন?
- চাকরি করি ।
- আমার সামনে থেকে ভাগেন ।
- ধন্যবাদ ।
অফিস থেকে বেরিয়েই অটো ধরে সাবিহার কলেজে চলে গেলাম । আজকে আমার খবর আছে মনে হয় ৬মিনিট দেরী হয়ে গিয়েছে আজকে ।অটো থেকে নেমেই সাবিহাকে অটোতে উঠতে বললাম । এমন স্পিডে অটোতে উঠলো যেন একটু হলেই আমি পড়ে যেতাম ।
অটো চলতে শুরু করলো ।হঠাৎ করেই সাবিহা হাচি দিতে শুরু করে দিলো । মরেছে রে কালকে ছাদে বৃষ্টিতে ভিজেছিলো আজকে তার ফলাফল বের হচ্ছে ।
কিছু বলতে হবে এবার.............
ঃ কালকে ১০০বার বলেছিলাম বৃষ্টিতে না ভিজতে । এবার হল?
ঃ হেচ্চু.........মিথ্যা কথা বল কেনো মাত্র ৪বার বলে বলছ ১০০বার বলেছো?
দেখলেম কি ফাজিলের ফাজিল? কিভাবে ইয়ার্কি মারে দেখলেনতো ?
ঃ ফাইজলামি থামাবি? এখনি ডক্টরের কাছে চল ।
ঃ ভাইয়া ক্ষিদা লাগছে বাসায় যাই আগে ।
ঃ একদম চুপ কর ।
ঃ ও বুঝছি ডাক্তার মেয়েটার সাথে টাঙ্কি মারার জন্য যাবে তাই না?
ঃ মারব এক চড় ।চুপ করে বসে থাক ।
ঃ হে হে আসল জায়গায় পা দিয়েছি ।
ঃ চুপ ।
সারাটা পথ আমার কানের কাছে বক বক করতে করতে ডাক্তারের কাছে গেলো আবার সেখান থেকে বাসা পর্যন্ত আবার বক বক করতে করতে আসলো । ওকে বাসায় রেখে আমি আবার অফিসে চলে যাই । অফিসে আসতেই বসের হাক পরলো ।সেদিকে ছুটে যেতে বাধ্য হলাম । আমাকে দেখেই......
- কোথায় গিয়েছিলেন ?
- মেডাম আমি....
- অফিস্টাকে কি আপনার মামার বাড়ি পেয়েছেন যে ইচ্ছে হলে আসলেন আর ইচ্ছে হলেই আবার চলে গেলেন !
- মেডাম আপনি ব্রেক করলে একটা কথা বলি ?
- কি?
- মেডাম আমার ডিউটি শেষ হল অনেক আগেই। আমি আমার মোবাইটা নিতে এসেছি ।
- ওহহহহহহহহহ সরি.......আসলে এই প্রজেক্টটা আমার মাথা পুরু খারাপ করে দিলো । দেখেন না ম্যানেজার এখন এসে বললো গুদাম একদম খালি ।কি করি বলেন ?
- কিন্তু মেডাম আমি গত সপ্তাহে হিসেব করে রাখলাম গুদামে যা মালামাল আছে তা দিয়ে আমাদের এবারের প্রজেক্টটা হয়ে যাওয়ার কথা ।
- তাহলে আমাকে মিটিংএর সময় বলেন নি কেনো?
- মেম তখন কি করে জানবো গুদাম খালি!
- এক কাজ করেন আমাকে ১২নাম্বার ফাইলটা দেনতো ।
- মেডাম সেটাতো আজকেই ম্যানেজার সাহেবকে আপনি দিয়ে দিলেন । আমার মনে হয় কি ম্যানেজারকে টাইট দেয়া উচিৎ ।
হে হে ম্যানেজারকে বাঁশ দেয়ার ব্যবস্তা করে দিলাম এবার আমি কেটে পড়ি । বাসায় এসে সাবিহাকে পড়তে বসার জন্য বলে আমি গোসল সেরে নিলাম এবার শান্তি ।পড়ার টেবিলে বসে পড়া লিখতে বলার পর উপরের লিখাগুলো লিখলো ।
মেজাজটা কেমন হয় ভাবেন?
ইচ্ছে করছে টাস করে একটা চড় বসিয়ে দিই গালে ।
কি যে বলি এখন ?
ঃ এটা কার মাথা লিখছস ?
ঃ তোমার মাথা ।
ঃ ফাজলামু হচ্ছে?
ঃ একটু ।
ঃ পড়ালেখার নামে মন এনি সারাদিন খালি ফাইজলামি ।চাচাকে আমি কি জবাব দেব ?
ঃ সে তুমি যাই দেও হেয়েয়েহেচ্ছু আমার পড়ালেখা ভালো লাগে না ।
ঃ ওই তুই ঔষদ খেয়েছিস?
ঃ না ।
ঃ এখনি গিয়ে ঔষদ খেয়ে আয় নইলে কপালে দুঃখ আছে আজকে ।
ঃ হেহেহেচ্চু
ঃ তুই যাবি? নইলে এবার চাচাকে ফোন করতে বাধ্য হব ।
ঃ কথায় কথায় আব্বাকে ফোন দেয়ার হুমকি দেও কেন?আব্বা কি করবে আমার? খুব হলে বকবে আরতো কিছু না । পরে ভেবে দেখো তোমাকে কিন্তু আমি সাইজ করে দেব তুড়ি মেরে ।
ঃ থাপ্পর মেরে দাঁত ফেলে দেবো যা ঔষদ খেয়ে আয় ।
ধমক দিলাম কি না দিলাম তাতেই ঠোট বাকিয়ে কান্না শুরু করে দিলো । বুঝেছি আমি উঠে গিয়ে ঔষদ এনে খাওয়াতে হবে ।
উঠে গিয়ে ঔষদ নিয়ে এসে গ্লাস ভরতি পানি হাতে নিয়ে বললাম..........
ঃ নে খেয়ে নে ।
সে অন্যদিকে নজর দিলো । নাহ আমার হার মানাই উত্তম ।
ঃ ঔষদ খেয়ে নে তাহলে আজকের মত পড়া শেষ ।
ঃ টিকতো?
ঃ ১০০% ।
ঔষদ খেয়েই পড়ার টেবিল ছেড়ে দৌড় দিলো ।কবে যে চাচা দেশে এসে আমাকে এই জাল থেকে মুক্ত করবে কে জানে । এখন আবার গিটারের আওয়াজ কই থেকে আসলো? তাও এমন বেসুরো সুরে?
তার মানে সাবিহা আবার আমার গিটার ধরেছে ।
হায় আল্লাহ আমার গিটারটা আস্ত থাকলেই হয় ।
১০মিনিট সাবিহার রুমের বাইরে দরজার ফাক দিয়ে অর গিটার বাজানো দেখছিলাম । অবশেষে রুমে প্রবেশ করে আগে গিটারটা কেড়ে নিলাম ।
তারপর.........
ঃ আবারো গিটার নিয়ে বসলি?
ঃ তাতে তোমার কি নিজের চড়কায় তেল দাও ।
ঃ হায় আল্লাহ এখানে মাত্র ২টা তার ! বাকী তার গুলা গেলো কই?
ঃ কোথায় আবার যাবে ছিড়ে গেছে।
ঃ সেটাতো দেখছিই কিন্তু ছিড়লো কিভাবে সেটা জানতে চাই ।
ঃ আমি ছিড়েছি ।কেনো অসুবিদা আছেকি?
ঃ কি? আমার এতো শখের গিটারটা ভেঙ্গে দিলি?
ঃ ভাঙ্গিনিতো শুধু তার ছিড়েছি ।
ঃ কি করে এ কাজ করলি?
ঃ কি করবো উপরের গুলো বাজাতে গেলে এই তারগুলো সমস্যা করে ।তাই ছিড়ে ফেললাম ।
ঃ এ কি করলি তুই?
ঃ যা করেছি ভাল করেছি ।
ঃ চুপ করে ঘুমা বলছি ।
ঃ আমি এখন ঘুমাবো না ।একটু পর আব্বার কল আসবে ।
ঃ তাহলে চুপচাপ থাক ।
হঠাৎ মনে পড়লো আমার একটা ফাইল পড়ে আছে সেটা কমপ্লিট করতে হবে ।দৌড়ে নিজের বিছানায় এসে ফাইল বের করে কাজে লাগলাম ।
১ঘন্টা পর ফাইলটা শেষ করে বসকে ফোন দিলাম ।
তারপর............
- গুড নাইট মেডাম, আমার কাজ শেষ ।এখন কি করবো?
- আপনি এক কাজ করেন কাল সকালে অফিসে না গিয়ে বাস ধরে সাইটে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে দেখা করেন আর এর আগে আরেকটি কথা শুনেন ম্যানেজারের চাকরি নট হয়ে গেছে আপনি আগামী ১ বছর আমাদের কোম্পানির ম্যানেজারের পদে জয়েন করুন ।
- ধন্যবাদ ।মেডাম ।
ফোন রাখার পর সাবিহা এসে হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়েই...........
ঃ কি কার সাথে কথা হচ্ছিলো শুনি? গার্লফ্রেন্ড বুঝি?
ঃ সাবিহা মোবাইল দে ।
ঃ দেব না ।
ঃ ওই আমার প্রমোশন হয়েছে ।
ঃ কিসের প্রমোশন? প্রেমিক থেকে জামাই হবে নাকি?
ঃ দূর ফাজিল আমি ম্যানেজার পদে প্রমোশন পেয়েছি আগামী বছরের জন্য?
ঃ হা হা হা হা হা হা হা হে হে হে হে হে হে হু হ হু...........
ঃ দাঁত কেলাচ্ছিস কেনো ।
ঃ মাত্র এক বছরের জন্য হা হা হা হা হা হা হা হা..............
ঃ আবে শুন পরের বছর আমি সেই কোম্পানির আমেরিকা শাখার ম্যানেজার হচ্ছি বুঝলি?
ঃ অহহ তাই........................
ঃ কোনো সন্দেহ আছে?
ঃ আছে বৈকি ।দেশে এতো মানুষ থাকতে তোমাকে নিতে গেলো কেন?
ঃ শুন আমার যোগ্যতায় আমি চান্স পেয়েছি ।
ঃ আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে ।
ঃ বেশি পাকনামি করিস না ।যা ঘুমা সকালে পড়তে বসা লাগবে ।
ঃ দেত ভাল্লাগে না ।
মহারানী কেটে পড়লেন ।আমিও ঘুমের দেশে চলে গেলাম ।
সকালবেলা সাবিহাকে পড়াচ্ছি এমন সময় সাবিহা বললো........
ঃ তোমাকে একটি কথা বলার ছিলো ।
ঃ কি বল ।
ঃ আমি গ্রামে যাবো ।
ঃ প্রয়োজন নেই এখন পড় ।
ঃ প্রয়োজন আছে ।আমি মায়ের কবর দেখবো ।
ঃ চাচির কথা মনে পড়ছে খুব তাই না রে?
ঃ তা নয়তো কি? মা বেচে নেই বলে তোমার এতো শাষন সহ্য করতে হচ্ছে ।কথায় কথায় খাওয়া আর পড়া নিয়ে বক বক শুনতে শুনতে আমার বিরক্ত লাগে ।
ঃ চাচার কাছে আমার জবাব দেয়ার কোনো মুখ থাকবে কি তোর কিছু হলে?
ঃ তাই বলে এতো কড়া হতে হবে? কলেজ থেকে বাসা আর বাসা থেকে কলেজ এই করেইকি আমার জীবন যাবে?
ঃ টিক আছে আমি আজকেই চাচার সাথে কথা বলে দেখি তিনি পার্মিশন দেন কি না ।
ঃ আব্বাকে আবার বলার কি হল? আব্বা কি দেশে যা আমি ধরা খেয়ে যাবো ?
ঃ তো কি করব?
ঃযাই কর আব্বাকে বল আমার লেখাপড়া করতে ভালো লাগে না ।
ঃ তাহলে আমি বাচি ।তোকে চাচা এসে দেশ থেকে নিয়ে গেলে আমাকে জ্বালাবে না কেউ এভাবে ।
ঃ আমি যতদিন বেচে আছি ততদিন তোমাকে জ্বালাবই ।আমাকে নিয়ে যাবে কিনা বল গ্রামে?
ঃ দেখ নতুন পদে প্রমোশন পেয়েছি আগে কাজের চাপ যাক পরে নিয়ে যাব ।\
ঃ এই উপলক্ষেইতো ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারো ।
ঃ টিক আছে আজ যেহেতু কলেজ নেই সেহেতু রেডি হয়ে থাকিস ।আজকে বাইরে লাঞ্চ আর ডিনার করবো ।
ঃ সত্বি?
ঃ হ্যা সত্বি ।
সেই ছোট্ট বয়সে মাকে হারিয়েছে ।তারপর তার বাবা তাকে দশম শ্রেনীতে রেখে চলে গেলেন বিদেশে ।এরপর থেকে আমিই অর দেখাশুনা করছি তাকে ।মেয়েটা ছোট থেকেই একটু বেশিই ফাইজলামি করে ।এখন আস্তে আস্তে কমেছে সেটা ।আমি যেদিন প্রথম তাদের বাসায় পা রাখি সেদিনই আমার মাথায় পানি ঢেলে দেয় সিড়ির উপর থেকে । এরপর চাচা দেশ ছাড়ার আগে আমাকে কম জ্বালায়নি ।
অফিস থেকে আজকে সহ আরো ৩দিনের ছুটি ছেয়ে নিলাম । এর আগে কোনোদিন সাবিহাকে নিয়ে ঘুরতে যাইনি । আজকেই প্রথম ঘুরতে যাচ্ছি ।
কালকে গ্রামে চলে যাবো ।মায়ের কথা হয়তো মনে পড়েছে সাবিহার । অখানে আমার মা,চাচির সাথে দুদিন থাকলে সব টিক হয়ে যাবে । দুপুরের আগে বাসায় ফিরে আসলাম ।এসি দেখি সাবিহা একদম রেডি ।ওর কাছে ২মিনিট সময় ছেয়ে নিয়ে একটি টিশার্ট পড়ে তাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ।
রিক্সা নিলাম একটা ।রিক্ষায় উটার পর.................
ঃ আজকে যেখানে যেতে বলবি আমি সেখানে নিয়ে যাবো সাবিহা ।
ঃ কি উপলক্ষে ? গার্লফ্রেন্ড প্রপোজাল এক্সেপ্ট করলো নাকি?
ঃ না ।করলেও তোকে ঘুরাতে নেব কোন দুঃখে? হ্যা,রে আজকে চাচার ফোন এসেছিলো?
ঃ হ্যা আব্বা নাকি আগামি মাসে দেশে ফিরছেন ।আর জানো আব্বার গলার আওয়াজটা না কেমন জানি লাগছিল ।আমি আব্বকে এ নিয়ে বললে আব্বা বললেন আব্বার নাকি খুব সর্দি হয়েছে টান্ডা লেগেছে ।
ঃ হতে পারে বয়স হয়েছে ।দেশে আসলে সব টিক হয়ে যাবে ।
ঃ আব্বা দেশে আসলে কি তুমি চলে যাবে ?
ঃ হ্যা চাচাজান চলে আসলে আমি আর থেকে কি করবো আমাদের অফিসের কোয়াটারে গিয়ে উটবো ।
ঃ কেন?
ঃ চাচাজান এসে গেলেতো তোকে আর দেখতে হবে না ।
ঃ খুব দেখে রাখো আমাকে ।
ঃ আমি দেখে রাখি না ।
ঃ না ।
ঃ কি বলিস?
ঃ জ্বি ।৯টায় অফিসে যাও ফির সন্ধায় । এসেই আমার উপর আক্রমন চালাও পড়ার জন্য ।১০টায় খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ।তাহলে কি দেখে রাখো ?
ঃ খালি ফাইজলামি?
ঃ আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ঃ আমি কি করে বলবো? আপনি কোথায় যাবেন?
ঃ টিক আছে তাহলে চলো আগে খাওয়া হয়ে যাক ।ফাইভস্টারে চলো ।
ঃ কয় স্টারে?
ঃ ফাইভস্টারে ।
ঃ তারপর?
ঃ তারপর.................তারপর...........তারপর.........সিনেমা দেখবো ।
ঃ তারপর?
ঃ ডিনার করবো ।
ঃ আচ্ছা তোর সাথেতো তোর ফুফু থাকতেন ।উনি কবে আসবেন ?
ঃ জানি না । আসার নামই নেই সেই যে গেলো ।
ঃ ফোন করেছিলি?
ঃ করেছিলাম তার নাকি বাড়িতে খুব কাজ ।
ঃ যাক একটা ভরসা ছিলো তোকে বেধে রাখার সেটাও গেলো । এখন রোজ সন্ধার আগে আমাকে ফিরতে হবে ।
ঃ আমি বুঝিনা গার্লফ্রেন্ডের সাথে বাসায় এসে কথা বললে কি হয়? আমারতো ইচ্ছে করে তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে ।
ঃ বেশি পাকনামি করিস না । তোর মেজোখালার মেয়েকে এখানে এসে থাকতে বলে দে তোর সাথে ।
ঃ এটাতো ভেবে দেখি নি সিমাকে আসতে বলে দিই এখনি ।
ঃ থাক । পরে বলিস ।
ঃ আচ্ছা তুমি যখন বলছো ।
লাঞ্চ করতে রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমার চোখ কপালে । প্রেমিক-প্রেমিকায় ভরপুর ।আমরা এক কোনে গিয়ে বসলাম আমি শুধু বোকার মতো চারিদিকে তাকাতে লাগলাম ।২মিনিট পর ওয়েটার এসে সাবিহাকে বললো ,
- মেডাম আপনার কালকে আপনি আপনার ঘড়ি ফেলে গিয়েছিলেন ।
সাবিহা তখন খানিকটা ভিতু কন্ঠে....,
- আমার ঘড়ি?
- হ্যা কাল যে কয়েকজন বান্ধবির সাথে আসলেন তখন ফেলে গিয়েছিলেন । ঘড়ি নিন আর বলুন কি কি আনবো?
এখন বুঝলাম আমাকে এবং কলেজ ফাকি দিয়ে এদিকদিক ছুটাছুটি করা হয়েছে এতোদিন? দাড়াও মজা দেখাচ্ছি ।
ওয়েটারটা চলে যাওয়ার পর চোরের মতো মুখ করে রইলো কারন সে জানে ইনফর্মেশন চাচার কাছে যাবে ।এখন এতো লোকের সামনে কিছু বলা যাবে না । আমি কিছু বলার আগে সে নিজেই...........
ঃ সরি ভাইয়া আব্বাকে বলো না । ওরা খুব করে জেদ করে বসেছিলো তাই.........!
ঃ তাই বলে ছিঃ ছিঃ আমাকে বললে আমি নিয়ে আসতাম ।
ঃ আর হবে না সরি ।
ঃ যাহ এবারের মতন ক্ষমা করে দিলাম ।
ঃ So sweet আজকে পড়াটাও মাফ করে দাও প্লিজ?
ঃ No no একদম না।
ঃPlea...........................se
ঃ Ok কালকে আরো দুই ঘন্টা বাড়তি পড়তে হবে ।
ঃ ধ্যাত...................
ঃ Miss ,আগামী মাস পর্যন্ত বেশি করে না পড়ে খারাপ রেজাল্ট করলে চাচাজান আসলে সাথে করে নিয়ে যাবেন ।
ঃ পরেরটা পরে ভাবা যাবে ।
ঃ না আগে ভেবে রাখাই ভালো ।
ঃ হয়েছে বলতে হবে না আমি বুঝি সব ।
ঃ এইতো লক্ষি মেয়ে।
এবার আসলো বসের ফোন ।তারপর রিসিভ করে...........
ঃ মেডাম বলেন,
- আপনি কোথায়?
- মেডাম আমিতো.........ছুটিতে আছি তিনদিনের ।
- মেহেরপাড়ার প্রজেক্টটার খবর কি?
ঃ মেডাম সব কাজ শেষের দিকে এখন শুধু টাকা দেয়া বাকী ।
-দিয়ে ফেলুন ।
- মেডাম আপনার কাছ থেকেই টাকাটা নেয়ার কথা ।
- Ok,ভালো করে ছুটি কাটান।
- Thanks mem. Bye.
ফোন শেষ করার পর সাবিহা আমার দিকে 90'' এঙ্গেলে মুখ করে বললো......
ঃ ছুটির সময় বস ফোন না দিলে হয় না?
ঃ তুই বুঝবি না ।অফিসের কাজের ব্যপারে অনেক আলাপ থাকতে পারে । যখন চাকরি করবি তখন বুঝতে পারবি ।
ঃ আমার স্বামীর চাকরী থাকলে আমি চাকরি করবো কেনো?
ঃ আল্লাহ উঠাও আমারে।
ঃ আমি মই এনে দিই?
ঃ NO Thanks পরে মই কেড়ে নিতে পারিস ।
ঃ সে নেবই । কোথাও আটকালে আমার পড়া লাগবে না ।
ঃ খালি পড়া ছাড়ার ধান্দায় থাকিস ।
লাঞ্চ শেষ । আবারো রিক্সায় দুজন ছুটে বেরুচ্ছি । সাবিহার মাথার এলোমেলো চুলগুলো আমার নাকে মুখে হানা দিয়ে বেরাচ্ছে আর সাবিহা বক বক করতেই আছে । কাল কলেজে কার সাথে কি করলো কি কি কথা বললো ইত্যাদি আমার কানে ঢালছে । আমিও তার সব কথা শুনার চেষ্টা করি ।এবারেও শুনছি আর এই সময় বসের ফোন । বসের জ্বালায় বাচি না ।সাবিহার কাছ থেকে এক মিনিট চেয়ে ফোন রিসিভ করলাম তারপর,
- মেডাম বলেন,
- ১২ নং ফাইলটা কোথায় রেখেছেন?
- মেডাম আমার টেবিলের ২ নাম্বার ড্রয়ার..............
আর কিছু বলার আগেই সাবিহা ফোন কেড়ে নয়ে কেটে দিলো ।
তারপর..........
ঃ আচ্ছা আসল কথা বললেইতো হয় যে তোমাদের দুজনের মনে খুব চলছে ।
ঃ এই কি চলছে রে? কি বাজে বকছিস ।
ঃ বাজে কথা নয় ! তাই যদি না হয় তাহলে ছুটিতে থাকার পরও কি এমন কাজ থাকবে তোমার সাথে ?
ঃ আমি তার ম্যানেজার ।তাই অনেক কথা থাকতেই পারে স্বাভাবিক ।
ঃ ট্রিট দেয়ার ভয়ে লুকাচ্ছ বুঝেছি ।
ঃ অই শুন আম্মা আমার জন্য গ্রামে মেয়ে দেখছে আমি তার গিয়ে প্রেম করবো অন্য কারো সাথে নয় ।
ঃ ভাল হবে একলিষ্ট বিয়েতে মজা করতে পারব ।
ঃ না ।তা আর হচ্ছে না । আমার বিয়ে হতে হতে চাচা এসে তোকে বিদেশে নিয়ে যাবে ।
ঃ না ।
ঃ হ্যা ।
ঃ আমি তোমার বিয়ে না খেয়ে যাবো না ।
ঃ আচ্ছা বাবা আমার বিয়ে খেয়েই যাস ।
সারাদিন সিনেমা দেখলাম ।সিনেমা দেখার পর রাতে বাসের টিকেট কিনে নিয়ে এসে পরের দিনই গ্রামে আসলাম আমি আর সাবিহা । প্রথম দিনই মায়ের কবর দেখে কান্নাকাটি করে । নিজেকে সামলাতেও পারে মেয়েটি । নিজেকে নিজের মতন সামলে সবার সাথে মেলামেশা শুরু করে দিলো ।সেই সাথে ফাইজলামি আর তিনগুন বাড়িয়ে দিলো ।
তিনটি দিন তার খুব ভালো কাটার কথাটা আমাকে ইতি মধ্যে আমার কাছে বলে দিয়েছে সাবিহা ।ইন্টার ২য় বর্ষ পড়ুয়া এই সাবিহাকে আমার কাছে একদম শিশুর মতনই লাগছে ।
তিনদিন শেষ হলে আমরা দুজন চলে আসি ।আমরা আসার পর সাবিহার খালাত বোন চলে আসে হোস্টেল থেকে । আমারো চিন্তাটা একটু কম হয় ।আমি আমার মতন অফিসের কাজ করতে পারি যখন তখন তবে রাত ৮টার আগে বাসায় ফিরি ।বাসায় ফিরার পর সাবিহা আর সিমা মানে সাবিহার খালাত বোনকে গিটার বাজিয়ে শুনাই ।সাবিহাকেও শেখাচ্ছি ।
এ মাসে চাচার ফোন খুব কম আসে । সাবিহা রোজ চাচার সাথে অনেক কথা বলে ।আমি পড়া নিয়ে বেশি শাষন করি বলে নালিশ করে ।
তবে সব চেয়ে সন্দেহ জনক বিষয় হল চাচার কন্ঠটা কেমন যেন লাগে আমাদের কাছে ।কিছু বললেই চাচা আমাদের সর্দির অযুহাত দিয়ে কাহিনী শেষ করে দেয় । তবে চাচা যে আগামী মাসের ভোর ৫টার ফ্লাইটে দেশে আসছে সেটা কনফ্রাম ।
আজকে অফিসে কাজ করার সময় বস ডেকে আমাকে ফাইভস্টার হোটেলে মিটিংএ যাওয়ার কথা বললে আমি বস আর বসের ব্যাক্তিগত এসিস্টেন রওয়ানা দিলাম সেদিকে ।আর পথেই সাবিহার ফোন ।রিসিভ করার পর................
ঃ তুমি কোথায়?
ঃ আমি একটি মিটিং এর জন্য ফাইভস্টারে যাচ্ছি ।কিছু লাগবে?
ঃ নাহ । সময় করে আব্বাকে একটা ফোন দিওতো কি যেন কথা আছে ।
ঃ আচ্ছা দেব ।তুই কই?
ঃ বাসায় ।
ঃ আমার বিশ্বাস হয় না ।
ঃ আমি বাসায় বিশ্বাস না হলে নাই ।
ঃ টিক আছে ।বাসায় থাকিস ।একদম বাইরে বের হবি না ।
ঃ হয়েছে ।
ফোন শেষ করে বসের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম ।মিটিংটা শেষে আমি চাচার নাম্বারে ফোন দিলাম ঢুবাইয়ে ।
প্রথমে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিঞ্জেস করার পর তিনি আমাকে বললেন............
ঃ ভাতিজা আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই যদি তুমি নিজেকে শক্ত কর ।
ঃ জ্বি চাচা বলেন ।
ঃ আসলে আমি যা বলব তা শুনার পর তুমি নিজেকে সামলিও বাবাজি ।
ঃ জ্বি বলেন চাচা ।
ঃ আসলে আমি তোমার চাচা নয় । তোমার চাচা মারা গেছেন ।
ঃ কি?
আমার পায়ের নিচের মাটিগুলো সরে যাওয়ার মত অনুভব করলাম । পৃথিবী যেন আমার চারিদিকে ঘুরছে ।সাবিহাকে আমি কিভাবে সামলাবো এটা ভেবে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো ।
নিজেকে কোনোভাবে কোনোরকম সামলিয়ে..........
ঃ কি বলছে আপনি এসব?
ঃ হ্যা উনি মারা গেছেন মাত্র ২৫দিন হল ।
ঃ কি বলছেন আপনি এসব?
ঃ মেনে নিতে না পারলেও এটা বাস্তব ।উনি মারা গেছেন এটাই সত্য ।হার্টেটার্কে মারা গেছেন তিনি ।
ঃ (আমি চুপ)
ঃ মেয়ে ছাড়া নাকি উনার আর কেউ নেই আমাকে বলেছিলেন তাছাড়াও উনি তোমাকে একটা ইমেইল করতে বলেছেন কিছুক্ষনের মাঝে আমি তোমাকে পাটিয়ে দেব আর ১ তারিখ উনার মরদেহ নিয়ে আমিই আসছি দেশে ।ভোর ৫টায় এয়ারপোর্টে এসো ।
লোকটা আমাকে ই-মেইল করলো । ই-মেইলে ছিলো কিছু লিখা । পড়তে শুরু করি ।
সিয়াম(আমি)
গত কয়দিন আগে আমার হার্টে রোগ ধরা পড়ে । আমি হয়তো আর বেশিদিন বাচব না ।মেয়েটার বিয়ে দিতেও পারবো কিনা জানি না । সাবিহাকে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম । দেখ আমার মেয়েটা যেন কোনোদিন কোনো কারনে কষ্ট না পায় । আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো । এখন কাউকে কিছু বল না ।যেদিন আমার লাশ যাবে দেশে তার টিক আগের দিনই সবাইকে বলো আর আমার মেয়েটাকে বল আমার লাশ দেখানোর পর । আমার একটি শেষ কথা রইলো তোমার কাছে ,আমার মেয়েটাকে অন্য কোথায় বিয়ে দিওনা অকে তুমি বিয়ে করো ।
- তোমার ছোট চাচা ।
এটুকুই লিখা ছিলো ।আর কিছু ছিলনা । আমার বাবা চাচাদের মাঝে সব চেয়ে ছোট ছিলেন তিনি ।এত বড় খবরটা আমি কি করে গোপন রাখবো ? কি করে আমি সাবিহাকেইবা কি করে বোঝাবো আমি ? এখন ছেলেমানুষি যায় নি তার ।
এই দেখো এর মাঝে সাবিহাও ফোন করলো । চোখের জল মুছে ফোন রিসিভ করলাম ।তারপর.............
ঃ কিরে বল ।
ঃ ভাইয়া তুমি তারাতারি বাসায় আসো ।
ঃ কি হয়েছে?
ঃ তাড়াতাড়ি আসো ।
ঃ কি হয়েছে আমাকে বলবিতো?
ঃ বলার সময় নেই তুমি তাড়াতাড়ি আসো ।
এক দৌড়ে গিয়ে মেডামের কাছ থেকে ছুটি নিলাম আর্জেন্ট কাজ বলে । ছুটে আসলাম বাসায় ।এসে দেখি কিছুই না ! সিমা ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে সাবিহা একা বাসায়! কেমনটা লাগে বলুন? আমাকে এমনভাবে ছুটিয়ে এনে দাত কেলাচ্ছে!
বুকে ফু দিয়ে পাজিটার কান মলা দিয়ে ধরলাম ।তারপর.......
ঃ আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে এখন হাসা হচ্ছে?
ঃ আউঃ আঃ উঃ লাগছে !
ঃ লাগুক ।আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে হাসা হচ্ছে!
ঃ উঃ আমি কি করব? বাসায় কেউ নেই !
ঃ (কান ছেড়ে দিয়ে......) সিমাটাও না একেবারে বেশি বেশি ।কোথায় গেলে বলে যাবে না ! অসহ্য একেবারে ।
ঃ তোমাকে কেনো বলে যাবে ?তালপাতার সেপাই কোথাকার ।
ঃ আমি তালপাতার সেপাই? নিজে কি?
ঃ আমি ভালো ।
ঃ ইইইইইইহ! দেখতে বাংলা পাঁচের মত লাগে ডান্ডা নাচুনি কোথাকার!
ঃ কি বললে আবার বলো ?
ঃ আমি এক কথা ২বার বলি না রিক্স আছে ।
ঃ আজকে তোমাকে মেরে ফেলবো । .
বলেই আমার গলা ধরে ধাক্কা দিলে আমি টাল সামলাতে না পেরে সাবিহাকে নিহে পড়েই গেলাম ।সাবিহা আমার উপর থেকেই আমার গলা ধরে রইলো এবং বলতে লাগল.............
ঃ এবার কে বাচাবে?
ঃ আমার বউ বাচাবে ও বউ কই গেলেগো আমাকে বাচাও ।
ঃ বউ! আমি ওসব ভয় পাই না ।
ঃ আম চাচার কাছে বিচা...................
সাবিহাকে আমার উপর থেকে সরিয়ে আমার রুমে চলে আসলআম ।আর আসার সময় সাবিহাকে পড়তে বসার আদেশ দিয়ে আসলাম । রুমের দরজা বন্ধ করে চুপ করে বসে রইলাম ।
কথায় বলে না নেই কাজ তো খই ভাজ ! আমারো তাই অবস্তা! আমি ঘুমিয়ে পড়লাম ।
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানি না মুখে পানির আগাতে ঘুম ভাংলো । চোখ মেলে সাবিহাকে খিল খিল করে হাসতে দেখলাম ।
তারপর.........
ঃএটা কি করলি?
ঃ আমাকে ডিউটিতে ফেলে নিজে ঘুমাবে তা হবে না ।
ঃ তো আমি কিরবো?
ঃ আমি তোমার ছাত্রী না! পড়াতে আসো ।
ঃ আজকে তোর ছুটি পড়া লাগবেনা আজকে ।
ঃ এই মন মানষিকতা রোজ কোথায় থাকে বলতো?
ঃ আজ মন খারাপ ।
ঃ এই রকম একটা সুন্দরি মেয়ে পাশে থাকলে কি কারো মন খারাপ থাকে?
ঃ কে সুন্দরি? একদম জরিনা লাগে দেখতে তার আবার সুন্দরি বলে দাবি করছে ।
ঃ কি কি বললে তুমি আবার বলো?
ঃ তুই জরিনা !
ঃ আজকে তোমার একদিন বা আমার একদিন ।।
বলেই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো । এমনিতেই টায়ার্ড তার উপর এখন এর সাথে পেড়ে উঠবো না ।অরে বাবা আস্তে মারবিতো আমার হাড্ডিগুলো আস্ত থাকলেই হয় । মরার মত পড়ে থাকলে কাজ হবে না পাজিটাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে ।
এই ভেবে অর দুই হস্ত ধরতেই আমার মুখের উপর পড়ে গেলো ।ওর টোঠ দুটি একদম আমার টোঠে ঢুবে গেলো ।ফলে লজ্জা পেয়ে উটে পালালো রুম থেকে ।
ঘন্টা দুএক পর সিমা ভার্সিটি থেকে ফিরে আসলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই । পাড়ার চায়ের দোকানে অনেকদিন হয় গিয়ে চা খাই না । আজকে সেদিকেই গেলাম । চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়তে মজাই আলাদা । কিন্তু পত্রিকা পড়তে পড়তে কখনযে সন্ধ্যা হয়ে গেলো বলতে পারলাম না ।
বাসায় ফিরে আসলাম ।এসেই ফাইল নিয়ে বসলাম সাথে সাবিহাকেও বই নিয়ে বসালাম ।
এমনকি সিমাও পড়তে বসলো ।
তো আমি আমার কাজে মন দিচ্ছি আর অরা দুজন পড়ায় ।
আমার কাজ শেষ হতে ঘন্টা দুএক লাগলো ততক্ষনে সিমা উটে চলে গেছে আর সাবিহা টেবিলে পড়ে ঘুমাচ্ছে । একে নিয়ে আর বাচি না ।
ওকে ঘুম থেকে তুলতে আরো ১ঘন্টা লেগে গেলো ততক্ষনে তার পড়ার সময় পের হয়ে গিয়েছে ।
তারপর...............
ঃ সাবিহা তুই কি চাস বলতো?
ঃ গিটার বাজাতে চাই ।
ঃ আল্লাহ.... কোথায় এনে ফেললে আমায়।
ঃ কেন আমাদের বাসায়! আমার সামনে ।
ঃ তখন যদি না আসতাম তাহলে খুব ভালো হতো ।
ঃ হ্যা ভালই হত বসের সাথে প্রেম আর জমত।
ঃ মানে?
ঃ হে হে তোমার ব্রেকাপ করার ব্যবস্থা করেছি কাল যাও অফিসে হু হু ।
বলেই উঠে চলে গেল ।আমি আমার ফোনের কল রেকর্ড চেক করে যা শুনলাম তা হল,
- কে আপনি বলুন?(সাবিহা)
- আমি সিয়ামের বস বলছি। আপনি ?
- বস? কিসের বস? ভাব লন আমার সাথে? লজ্জা করে না একজন বিবাহিত লোককে সন্ধার সময় আপনার কি দরকার হতে পারে?ন রাখুন ফোন ।
এবার আমার চাকরি গেলো ।আর কিছু করার নেই। ওকে ডাকলাম ।আমার ডাকে সাড়া না দেয়ায় আমি ওর রুমে চলে গেলাম ।গিয়ে দেখি বসে বসে আমার গিটার বাজাচ্ছে । তারপর আমার মেজাজকে ১১০কিলোমিটার বেগ দিয়ে বললাম...............
ঃ তার মানে তুই বসের ফোন ধরেছিস?
ঃ ধরেছি ।
ঃ চুপ,একদম চুপ । সব কিছুতেই ফাইজলামি করবি বলে এই নয় আমার ক্যারিয়ার নিয়েও ফাইজলামি করবি । যদি কাল আমার চাকরি যায় তাহলে আমি তোকে ছেড়ে কথা বলব না । এই বলে রাখলাম ।
এই বলে চলে আসলাম ।সারারাত চিন্তায় ঘুম আসলো না । আমার আর চাকরিটা থাকল না ।খুব শখ ছিলো বিদেশের শাখায় চাকরি করবো তা আর হল না ।
সকালবেলা কিছু গেলা হয়নি এই চিন্তায় ।না খেয়েই রওয়ানা দিলাম অফিসে ।
অফিসে গিয়েই আগে মেডামের সামনে গিয়ে দাড়ালাম । তারপর........
-মেডাম, কালকের ঘঠনার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত । ও আসলে বুঝে উঠতে পারেনি ।
- অভিনন্দন!
বুঝেছি এই অফিস থেকে কারো চাকরি চলে গেলে বিদায়ের বদলে অভিনন্দন বলা হয় ।তাও হাসি মুখি! কি যুগ আসলোরে বাবা ।
- ম্যানেজার সাহেব এতকিছু হয়েগেলো আপনি আমাদেরকে জানালেন না !
- কি জানাবো মেডাম ! আদরে বাদর বানিয়েছি কাকে কি বলে নিজেও জানে না ।
- শুধু আপনার বাদর না সবার বাদরই চায় তাকে আদর দেয়া লোকটি তাকে............!
এর কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না ।
- মেডাম আমিতো কিছু বুঝতে পারছিনা ।
- লজ্জা পেতে হবে না ।শুভ হোক আপনার দাম্পত্য জীবন ।
- আসলে মেডাম আপনি যা ভাবছেন তা নয় ও হলো........মেডাম ও আপনাকে যা বলেছে তার জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি ।
- আরে মশাই , আপন কল রেকর্ডটা আবার ভালো করে পুরুটা শুনোন তারপর বঝবেন । সাবিহা খুব ভালো মেয়ে । ইশ একবার যদি তাকে দেখতাম! খুব মিস্টিভাবে কথা বলে মেয়েটি ।
ও আমার চাকরি টিকমতোই আছে ।বেকার ওকে এতটা কথা শুনালাম ।
- মেডাম ও আসলে আমার বউ নয় । আমার হবো বউ ।আমাদের বিয়ের আরো অনেক দেরী আছে ।আপনাকে কিন্তু আমার বিয়েতে আসতেই হবে ।
- অবশ্যই । এবার তাহলে কাজের কথা বলুন ।
- মেডাম আমাদের রংপুরের কাজ প্রায় শেষের দিকে । এখন আপনি উদ্ভদন করা বাকী ।
- টিক আছে ।
যাব বাচা গেলো ।বাসায় ফোন দিয়ে পাগলিটাকে সরি বলে দিই ।
দিলাম ফোন ধরলো সিমা ।তারপর.............
- সিমা সাবিহা কোথায়?
- কলেজে ।
- কি ? তোমার আক্কেল বুদ্ধি বলে কি কিছু নেই? ও কোনোদিন একা কোথাও যায়নি আর তুমি একা একা কলেজে যেথে দিলে?
- ব্রেক প্লিজ, ওকে আমি কলেজে দিয়ে এসেছি ।হয়েছে ?
- ওকে আমি নিয়ে আসবো ।
যাক চিন্তা মুক্ত হলাম । কাজ শেষে অফিসের বাগানের একটা ফুল ছিড়ে নিয়ে গেলাম ।প্রতিদিনের মতন আজকেও অটো নিয়ে কলেজ গেটে গিয়ে দাড়ালাম। আমাকে দেখেই সে কোনো কথা না বলে অটোতে ঊটে বসলো ।
মুখে ভয়ের চাপ দেখা যাচ্ছে ।
যাক এখন কথা না বলে মজা নেয়া যাক ।আমিও রাগি মুখ করে আছি হে হে ।
বাসায় আসার পর সে তার রুমে চলে গেলো ।তার ৩০ মিনিট পর আমি তাকে ডেকে পাটালাম ছাদে ।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাবিহা আমার সামনে এসে দাড়ালো । এসেই নিচের দিকে তাকিয়ে নরম সবরে বললো......
ঃ সরি আর হবে না ।
ঃ যা হবার তো হয়েই গেছে আমার ।
ঃ কান ধরছি আর হবে না ।
ঃ আমার বারোটা বাজিয়ে এখন কান ধরা হচ্ছে? আমি এর সুধে আসলে মিটিইয়ে নেব ।
এই বলে সিড়ি ঘরের দরজাটা বাইরে দিয়ে আটকে দিলাম । ফলে সে দিগুন ভয় পেয়ে গেলো ।দরজা লাগিয়ে ওর সামনে এসেই দাড়াতে সে আরো বেশি করে কাঁপতে শুরু করলো ।
না আর ভয় দেখালে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে । পেছন থেকে ফুলটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম..............
ঃ খুব ফাজিল হয়েছিস তাই না?
বলেই হাসি দিলাম । এবং সেই সাথে তার হাত ধরে টেনে নিলাম বুকে । তারপর সাবিহা আবেগে কেদেই দিলো ।
ঃ সরি আর জীবনেও এমন করবো না ।(সাবিহা)
ঃ সত্যি?
ঃ তিন সত্যি ।
ঃ আমিও সরি । আর কোনোদিন রাগ করবো না । তবে দেখিস আমার বউয়ের সাথে এমন করিস না আমাকে ছেড়ে চলে যাবে পরে ।
ঃ তোমার বউ ভাগলে তুমি কাঁদবে তখন খুব ভালো লাগবে ।
ঃ আমি আমার বউকে তোর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবো ।
ঃ তোমার বউ তোমার জন্যই ভাগবে! গাদা ফুল কেউ কাউকে দেয় কিপটা কোথাকার ।
ঃ এই যাহ................হয়েছে পড়তে বস গিয়ে!
ঃ দূর ভাল্লাগে না ।
চলে গেলো এই বলেই । আমি বের হলাম চা খেতে । চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ে আজকেও বাসায় ফিরলাম । ও হ্যা আসার আগে চাচার মারা যাওয়ার কথা আব্বাকে জানিয়ে দিলাম ।
গ্রামে হয়তো এতক্ষনে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছে । নাহ এবার আর সাবিহার কাছে গোপন রাখলে চলবে না ।শেষে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবে না ।
আজকেই ওকে বুঝিয়ে বলবো সব ।
বাসায় গিয়েই সাবিহাকে দেখলাম আমার গিটার নিয়ে উল্টাপাল্টা সুর তুলছে ।
আমি ওর পাশে বসে গিটারটা ওর হাত থেকে নিয়ে পাশে বসে আমি বাজাতে শুরু করলাম । সে আমার পাশে বসে আমার গিটারের দিকে নজর দিতে লাগলো । কিছুক্ষন বাজানোর পর আমি থেমে গেলাম । থেমে যাওয়ার পর গিটার রেখে একদম সাবিহার চোখের দিকে নজর দিয়ে বললাম.......
ঃ সাবিহা !
ঃ কি দেখছো এমন করে?
ঃ আজকে পড়তে বসেছিস?
ঃ এখনো ৭টা বাজে নিতো ভাইয়া ।
ঃ ও......... আমি তোকে একটা কথা জানাতে চাই ।
ঃ কি কথা?
ঃ আগে বল নিজেকে সামলাতে পারবিতো?
ঃ ইহহ এমনভাবে বলছো যেন আমাকে I Love You বলবে ।
ঃ না রে সেটা না ।খবরটা শুনলে হয়তো নিজেকে টিক রাখতে পারোবিনা ।
ঃ কি এমন খবর যে নিজেকে সামলাতে পারবো না ?
ঃ আসলে সাবিহা..........
ঃ কি?
ঃ না মানে আসলে...........
ঃ কি মানে মানে করছো?
ঃ না আসলে সাবিহা..........
ঃ উফ কি?
ঃ সাবিহা আসলে আমি যা বলতে চাইছি ,চাচা আর বেচে নেই।
ঃ কি?
ঃ এটাই সত্যি চাচা র বেচে নেই এই পৃথিবীতে ।১তারিখ ভোর পাঁচটায় উনার লাশ আসবে বাংলাদেশে ।
ঃ বাবা....................................................................
হ্যা যা ভাবছিলাম ! মেয়েটি অজ্ঞান হয়েই গেলো ।এক চিৎকারে সিমা এসে হাজির ।তাকেও বলে দিলাম চাচার মারা যাওয়ার কথা । তারপর একে একে সবাইকে জানিয়ে দিলাম এ কথা ।কারন ১তারিখ খুব নিকটে । সবাইকে জানানোটা উত্তম হবে ।
আগে সাবিহার জ্ঞান ফিরাতে হবে ।সিমার সাহায্যে সাবিহার জ্ঞান ফিরালাম টিকই কিন্তু আবার সেই আগের মতন চিৎকার দিয়ে আবার অজ্ঞান হয়ে গেলো ।আমি আর্জেন্ট ডক্টর ডাকলাম ।ডক্টর আসলে সে ইঞ্জেকশন দিয়ে সাবিহাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যায় ।টানা ৭ঘন্টা ঘুমানোর পর সাবিহার জ্ঞান ফিরলে আবার সাথে সাথে কাঁদতে শুরু করে দিলো । নাহ এবার আমাকেই শান্ত করাতে হবে ওকে ।
সিমাকে পাশে সরিয়ে আমি তার পাশে বসতেই আমার গলা ঝাপটে বলতে লাগলো..........
ঃ ভাইয়া আমি পুরু এতিম হয়ে গেলাম ।আমার আর কেউ রইলো না পৃথিবীতে ।
এখন কি বলে যে শান্তনা দিই থাকে কে জানে । একেতো ছেলে মানুষি যায়নি ! তারউপর বাবাই তার একমাত্র আপন ছিলো ।
ঃ কে বলেছে তুই এতিম? তুই মোটেও এতিম নয় ।
ঃ ভাইয়া আমার আব্বাকে এনে দাও! ভাইয়া আমার আব্বাকে এনে দাও ।আব্বা আমাকে ছেড়ে কোথায় যেতে পারেনা ।আব্বাকে এনে দাও ভাইয়া..............
ইত্যাদি বলে কাঁদছিল ও ।কিভাবে শান্তনা দেব বুঝে উঠতে পারছিলাম না । অবশেষে গ্রাম থেকে আমার বাবা/চাচ,মা/চাচিরা আসলেন । তাদেরকে দেখে সাবিহা নিজের উপর থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল আরো । কিছুতেই তার কান্না থামানো যাচ্ছে না । খাওয়াদাও্যা সব কিছুর উপর থেকে সরে গিয়েছে সাবিহা ।
অবশেষে সেই ০১তারিখ আসলো ।আমি অ্যাম্বুল