31/05/2024
বিভিন্ন প্লাস্টিক বা পলিথিন এর পন্যে ১ থেক ৭ পর্যন্ত যে রিসাইকেলিং চিহ্ন ব্যাবহার করা হয় এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পাবি কোনটি আমাদের সাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ আর কোনটি নয় । আসুন আজ আমরা এই সাতটি ক্যাটাগরি সম্পর্কে জেনে নেই । পন্য কেনার আগে অবশ্যই রিসাইকেলিং চিহ্ন দেখে কিনবো ।
প্রথম ক্যাটাগরি :
এই ক্যাটাগরি সিম্বলের নিচেই লেখা থাকে PETE অথবা PET (Polyethylene Terephthalate)। এর মানে হলো, প্লাস্টিকটিতে টেরেফথালেট পলিথিলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে। এই ধরনের প্লাস্টিক সাধারণত ব্যবহার করা হয় পানি, পানীয় সোডা ও তেলের জন্য বোতল বা কন্টেইনার তৈরিতে। ব্যবহার শেষে এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে তৈরি করা হয় গালিচা, ব্যাগ, ছোট ছোট খেলনা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ একে নিরাপদ প্লাস্টিক মনে করলেও এ ধরনের প্লাস্টিক মূলত ব্যাকটেরিয়া বহন করে এবং ছড়াতে থাকে।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরি :
এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিকের লেখা থাকে HDPE (High Density Polyethylene)। এর মানে হলো, প্লাস্টিকটিতে উচ্চ ঘন পলিথিলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে । এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় শ্যাম্পুর বোতল, দুধের জগ, ঘর পরিষ্কারের পাত্র, জুসের বোতল, খাদ্যশস্য রাখার বৈয়ম, ডিটারজেন্ট পাউডারের বৈয়ম, মোটরের তেল রাখার গ্যালন, দই ও মাখনের কন্টেইনার ইত্যাদির জন্য। ব্যবহার শেষে এই প্লাস্টিককে রিসাইক্লিং করে তৈরি করা হয় কলম, বেঞ্চ, টেবিল ইত্যাদি। এই ধরনের প্লাস্টিক নিরাপদ। তবে বেশিদিন ব্যবহারের জন্য কোনো প্লাস্টিকই নিরাপদ নয়।
তৃতীয় ক্যাটাগরি :
এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিকের গায়ে লেখা থাকে V or PVC (Vinyl) এর মানে হলো, প্লাস্টিকটিতে পলিভিনাইল ক্লোরাইড পদার্থের প্রভাব রয়েছে। খাবার মোড়ানোর প্যাকেট, প্লাম্বিং পাইপ, ডিটারজেন্ট বোতল, এটিএম কার্ড বা মেম্বারশিপ কার্ড, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ইত্যাদি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় এই প্লাস্টিক। এ ক্যাটাগরির প্লাস্টিক অস্বাস্থ্যকর। গর্ভপাতের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি করে এই প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিকে রয়েছে এমন জীবাণু, যা দীর্ঘমেয়াদী ঘুমন্ত ক্যান্সার, হাড় ক্ষয় ও যকৃতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
চতুর্থ ক্যাটাগরি :
এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিকের গায়ে লেখা থাকে LDPE (Low Density Polyethylene)। এর মানে হলো, প্লাস্টিকটিতে লঘু ঘনত্বের পলিথিলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে । এই প্লাস্টিকের ব্যবহার পাওয়া যায় শপিং ব্যাগ, পোশাক, গালিচা, হিমায়িত খাবার, রুটির ব্যাগ, ও খাবার মোড়ানোর পলিথিন ব্যাগে। রিসাইক্লিং পদ্ধতি যদিও এই প্লাস্টিকটির বাছাই প্রক্রিয়ায় এখনও স্বীকৃতি দেয়নি, তবুও এটি নিরাপদ প্লাস্টিক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পঞ্চম ক্যাটাগরি :
এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিকের গায়ে রিসাইক্লিংয়ের ত্রিভুজ আকৃতিটির নিচেই লেখা থাকে PP (Polypropylene)। এর মানে হলো, প্লাস্টিকটিতে পলিপ্রোপলিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে । এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় কেচাপের বোতল, সিরাপের বোতল, এবং ঔষধের বোতল ইত্যাদিতে। নিরাপদ প্লাস্টিকগুলোর মধ্যে এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিক অন্যতম।
ষষ্ঠ ক্যাটাগরি :
এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিকের গায়ে লেখা থাকে PS (Polystyrene)। এর মানে এই ধরনের প্লাস্টিকে পলেস্টারিন পদার্থের প্রভাব রয়েছে। রিসাইক্লিং করা বেশ কষ্টসাধ্য এই ক্যাটাগরির প্লাস্টিক। ফলে এটা পরিবেশের খুবই ক্ষতি করে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাও সৃষ্টি করে থাকে। এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার হয় ডিমের খাঁচা, প্লাস্টিকের তৈরি মগ, কাপ, পিরিচ ইত্যাদিতে।
সপ্তম ক্যাটাগরি
এই প্লাস্টিক বিভিন্ন পদার্থের মিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি হয়, যা পলিকার্বনেটের অন্তর্ভুক্ত। সানগ্লাস, আইপড কেস, কম্পিউটারের ক্ষেত্রে নাইলন, এবং বুলেটপ্রুফ সামগ্রীতে ব্যবহার হয় এই প্লাস্টিক। এর মধ্যে বিষাক্ত bisphenol-A (BPA) রয়েছে। এই প্লাস্টিকে BPA– থাকার কারণে এতে হরমোনের ব্যাধি, বন্ধ্যাত্ব, হাইপার অ্যাক্টিভিটি, প্রজনন সমস্যা এবং স্বাস্থ্যগত অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কিত বিষয় ঘটতে পারে। তাই এমন প্লাস্টিক এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
আসুন প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাবহারে নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি ।