22/09/2025
পাহাড়ি জুমের ফসল ও শহুরে পর্যটক
পাহাড়ে গেলে কি করা যাবে, কিংবা কি করা যাবে না—এইসব শেখানোর বিষয় নয়, এসব পারিবারিক শিক্ষা। কিন্তু তারপরও সমাজে কিছু মানুষ দেখবেন, যারা হয়তো পরিবার থেকে সেই শিক্ষা পায়নি। পেলে নিশ্চিতভাবে অন্যের উৎপাদিত ফসলে হাত দেবার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতো। ধরেই নিলাম ভুলবশত জুমের ফসল ছিঁড়েছে বা নষ্ট করেছে, কিন্তু মুখের উপর বলে দিচ্ছে—এই ফল নাকি খাবার যোগ্য নয়, তিতা।
জরিমানা করেছে মাত্র ২৫০ টাকা। এক পাল ছাপড়ি বাইকার অপরাধ করেছে, সেই অপরাধের জরিমানা হিসেবে ২৫০ টাকার জন্য ঝামেলা করেছে। সেই ভিডিও কাটছাঁট করে নিজের মতো করে বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েছে ভিউ কামানোর জন্য।
পরের ছবিগুলো যুক্ত করলাম পার্থক্য বোঝাতে। জুমে গিয়েছি, জুমের মালিক নিজেই আপ্যায়ন করার জন্য মারফা এনেছে, মাল্টা এনেছে। নিজেরা খাওয়ার জন্য নুডলস নিয়ে গিয়েছিলাম, সেটি ভাগ করে খেয়েছি, গল্প করেছি, সুখ-দুঃখের আলাপ করেছি।
পাহাড়িরা অতিথিপরায়ণ। তারা তাদের অল্প সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ আপ্যায়নের চেষ্টা করেন। কিন্তু আপনি কি করবেন সেটি আপনার সিদ্ধান্ত, সেইসাথে আপনি কোন পরিবার থেকে উঠে এসেছেন সেটিও নির্ধারণ করে।
জুমের ফসল চুরি করে খেলে, প্রথম ছবিটার মতো অবস্থা হবে—আধখাওয়া একটি মারফা হাতে নিয়ে এক ছাপড়ি দাঁড়িয়ে আছে, আরেকটি মারফা মাটিতে পড়ে আছে।
ন্যূনতম লজ্জা থাকলে, মাত্র ২৫০ টাকা তো—জরিমানা দিয়ে চলে আসতো। ভিডিও তো দূরে থাক, কাউকে মুখ দেখাতো না।
এখন শহুরে পর্যটকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা। অনেকেই আমার সাথে পাহাড়ে ঘুরতে যেতে চান, ইনিয়ে-বিনিয়ে হলেও আমি সবাইকে সাথে নিতে চাই না, বা নিয়ে যেতে চাই না। এর প্রধান কারণ যারা সাথে যেতে চান তাদের মানসিকতা। আপনি আমার সাথে দেশ-বিদেশের, কমার্শিয়াল পর্যটনে, কমার্শিয়াল স্পটে আসেন—সমস্যা নাই।
পাহাড়ের গহীনের এই মানুষগুলোর কাছে কাউকে নিয়ে যাবার আগে অন্তত দশবার ভাবি—যাকে নিয়ে যাবো সে কি এই মানুষগুলোর সাথে মেশার যোগ্য? সে যে প্রাণ, প্রকৃতি আর মানুষকে দেখবে, তা ধারণ করার ক্ষমতা কি তার আছে?
সুস্থ পর্যটন বিকশিত হোক, এটাই চাই। কিন্তু তার আগে ছাপড়ি পর্যটকদের নিয়ে আমাদের সবাইকে কথা বলতে হবে। 🙏