24/05/2023
“ইস্তিগফার ও কালোজিরা”
মানসিক ও শারীরিক যাবতীয় সমস্যার দুই মহাঔষধ।
◾ইস্তিগফার:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- “যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণে ইস্তেগফার করবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যে কোন অভাব ও সংকটের সময় তার জন্য রাস্তা খুলে দিবেন, যেকোন দুঃখ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন এবং তার জন্য এমন রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করে দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” [১]
কুরআন থেকে- “আমি বললাম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের প্রতি মুষলধারে বৃষ্টি প্রেরণ করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে সম্পদ ও সন্তানাদি বৃদ্ধি করে দেবেন। তিনি তোমাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যান ও নদ-নদী সৃষ্টি করে দেবেন।” [২]
“হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর কাছে তাওবা কর। তিনি তোমাদের প্রতি মুষলধারে বৃষ্টি প্রেরণ করবেন। তোমাদের শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দেবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।” [৩]
এভাবে কুরআন ও হাদিসে তাওবা ও ইস্তিগফারের অনেক ফায়দা ও উপকারের কথা বলা হয়েছে। তাই আল্লাহ তাআলার ক্ষমা, দয়া এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সব দিক থেকে তাঁর সাহায্য লাভ করার জন্য তাওবা ও ইস্তিগফারের বিকল্প নেই।
মোটকথা, তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে একজন মুমিনের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও সফল হয়। এর মাধ্যমে একজন মুমিন লাভ করে উভয় জাহানের সমৃদ্ধি। সর্বোপরি তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহ তাআলার নিকটতম বান্দায় পরিণত হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলের সগীরা-কবীরা গুনাহসহ সব ধরনের অন্যায়-অপরাধ ক্ষমা করেন। এবং আমাদেরকে সব ধরনের গুনাহ থেকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন— আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।
তবে নিজেকে সবধরনের অশ্লীলতা, অপবিত্রতা থেকে পবিত্র থাকা চাই।
◾কালোজিরা:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- “তোমরা কালোজিরা নিজেদের জন্য ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করে নাও। কেননা মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের নিরাময় এর মধ্যে রয়েছে।” [৪]
হযরত খালিদ ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন– আমরা (যু/দ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদীনায় ফিরলাম তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ ‘আতীক।তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা এ কালোজিরা সাথে রেখ। এত্থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তৈল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে।
কেননা, ‘আয়িশাহ (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছেনঃ– এই কালোজিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আমি বললামঃ ‘সাম’ কী? তিনি বললেনঃ মৃত্যু। [৫]
✓রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে যে কোন জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে।
✓রক্তের শর্করা কমায়- কালোজিরা ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা কমিয়ে ডায়াবেটিক আয়ত্তে রাখতে সহায়তা করে।
✓রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন- কালোজিরা নিন্ম রক্তচাপকে বৃদ্ধি এবং উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাসের মাধ্যমে শরীরে রক্তচাপ এর স্বাভাবিক মাত্রা সুনিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
✓স্মরণ শক্তি উন্নয়ন- কালোজিরা মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
✓হাঁপানীঃ কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা সমাধনে সহায়তা করে।
✓চুল পড়া বন্ধ করে- কালোজিরা চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুলপড়া বন্ধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
✓রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যাথা-কালোজিরা রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
✓মায়ের দুধ বৃদ্ধি-কালোজিরা মায়েদের বুকের দুধের প্রবাহ এবং স্থায়ীত্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
✓শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি-কালোজিরা শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।
✓দেহের সাধারণ উন্নতি-নিয়মিত কালোজিরাসেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
-------
তথ্যসূত্র:
[১] সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ১৫১৮
[২] সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২
[৩] সূরা হুদ, আয়াত: ৫২
[৪] সুনান আত তিরমিজী, হাদিস নং: ২০৪১
[৫] সহীহ বুখারী, হাদিস নং: ৫৬৮৭
-সংগৃহীত