25/08/2025
রাত বাজে বারোটা। বেলকনির রেলিংয়ের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে সায়রা! চাঁদ সেই নিঃশব্দ আলোয় ঝলমল করছে, ঠিক যেন তার একাকিত্বকে আরও গভীর করে দিচ্ছে। চার দিন ধরে তার দেহ ভাঙছে, একটার পর একটা ইনফিউশন, রোগের ভারে মনও ক্লান্ত। কিন্তু দেহের কষ্টের চেয়েও বড় কষ্ট তার হৃদয়ে, কারণ তার প্রিয় মানুষ—যাকে সে ভালোবেসে ডাকত “ডাক্তার সাহেব” বলে!!এখন সে মানুষ টা তার নয়। অন্য নারীর হাত ধরেছে সে,,অন্য নারীর হালাল পুরুষ সে,,সায়রার জন্য পরপুরুষ!
সায়রা চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো—কেন অসুস্থতা তার পিছু ছাড়ে না? কেন এই রোগ তাকে এত ভালোবাসছে, যতটা ভালোবাসা সে তার প্রিয় মানুষের কাছে পেতো না? কেন তার প্রিয় মানুষ এখন অন্য কারো? চোখ ভিজে গেছে, হৃদয় ব্যথায় ভারাক্রান্ত।
সে ভাবতেছিলো-তার ডাক্তার সাহেব তো ওই সময় গুলোতে তার পাশে থাকতো, যখন সে এত কষ্টে ভুগত। কিন্তু আজ??, আজ তার মনে পড়ে না।কেন এত নিষ্ঠুরতা, কেন এত অপ্রাপ্য দূরত্ব?সায়রার মনের মধ্যে প্রশ্নগুলো অনন্ত!!অসুস্থতা কেন তাকে ছেড়ে যায় না? এই রোগ কেন এত নিবিড়ভাবে ভালোবাসলো? তবে কি এই অসুস্থতাই তার পরম বন্ধু! আচ্ছা সায়রার প্রিয় মানুষটা কেন তাকে এভাবে জড়িয়ে থাকলো না? কেন তার ডাক্তার সাহেব তার নয়?
অজস্র প্রশ্ন সায়রার মনে!
চাদ আকাশে ঝলমল করছে, কিন্তু তার নীরবতা, নিঃশব্দ উপস্থিতি—কোনো উত্তর দেয় না। যেন সেই নিঃশব্দই সায়রার সমস্ত প্রশ্নের একমাত্র উত্তর, যা কখনো বলা হবে না। এবং সায়রা বুঝলো, কিছু প্রশ্নের উত্তর কখনো শব্দে আসে না, আসে শুধু নিঃশব্দ বেদনা, আসে শুধু একাকিত্বের গভীরতা।
সায়রার চোখে জল জমেছে, মনে হলো আকাশের অসীম নীরবতা তার চোখে বৃষ্টির ন্যায় অঝোড়ে ভেঙে পড়ছে। “আমাকে ভুলে গেছে, নাকি? আমার না হওয়া মানুষ টা?” সে চেঁচিয়ে বলতে চায়, কিন্তু শব্দ বের হয় না। চারপাশে শুধু নিস্তব্ধ রাত, চাদ,! এবং তার নিজের ভাঙা হৃদয়ের শব্দ,,আর অসুস্থতায় কুকড়ে যাওয়া জীর্ণ শরীর টা!
সায়রা মনে মনে তার ডাক্তার সাহেবকে খুঁজে ফিরছিল—সেই ছায়া, সেই মৃদু হাসি, সেই একচেটিয়া ভালোবাসা, যা শুধু তার জন্যই ছিল। সায়রা আগের কথা গুলো মনে করতেছিলো,, সে অসুস্থ হলে যে ডাক্তার সাহেব কতো অস্থির হতো, আজ কেন তার মনে পড়ছে না? এত নিষ্ঠুরতা কি সম্ভব? ভালোবাসার অযোগ্য কি সে সত্যিই?
বেলকনির ধূসর আলোয় তার শরীর হালকা কাঁপছে, কিন্তু মন টা আরও বেশি ভিষণ ভাবে কাঁপছে। এই মুহুর্তে তার সাথে বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই। আর সেই প্রিয় মানুষ, যার কাছে সে নিজের সব কথা জানাতো, আজ সেই মানুষ টিও নেই। অথচ হৃদয়ের কোনোকোনায় এখনও চিহ্ন রয়ে গেছে তার স্পর্শের—মৃদু হাসি, সেই গভীর চেয়ে থাকা চোখ।
সায়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, চোখ বন্ধ করে। মনে হয়, ডাক্তার সাহেব যেন এখনো তার সব কথা শুনতে পারে, তার নিঃশ্বাসে, তার ব্যথায়। কিন্তু বাস্তবতা তখনি চোখের সামনে এসে আঘাত হানে—সে তো এখন তার নয়। অন্য নারীর হাতে তার মন আর শরীর ২ টোই রয়েছে,,অন্য নারীর বক্ষে সে সুখ খুজছে!! আর সে শুধুই দূরের ছায়া, নিঃসঙ্গতার সাক্ষী।
রাতের চাদ যেন সব কিছু জানে। সেই শান্ত, কাশফুলের মতো ঠান্ডা আলোতে সায়রার ব্যথা ফুটে উঠছে। মনে হয়, তার ভালোবাসা এত গভীর যে, দূরত্ব, সময়, অন্য কেউ—,,এবং কোণ কিছুই এখন তাকে ছুঁতে পারবে না। অথচ সেই ভালোবাসা এখন শুধুই নিঃশব্দ প্রার্থনা, শুধুই একাকিত্বের অন্তহীন অন্ধকারে হারানো চাঁদের মতো।
সায়রা জানে, সে ভালোবাসার অযোগ্য নয়। ভালোবাসা তাকে ছেড়ে যায়নি, বরং সে নিজেকে হারিয়েছে, প্রিয় মানুষকে হারিয়েছে। তার চোখে অশ্রু, হৃদয়ে ব্যথা, আর বেলকনির সেই চাদ—সব মিলিয়ে এক অনন্ত নিঃশব্দ, এক অব্যক্ত কাব্য।
শরীর ক্লান্ত, মন বিষণ্ণ, কিন্তু ভালোবাসা—তার হৃদয়ে এখনও অমলিন। ডাক্তার সাহেব এখন অন্য নারীর শখের পুরুষ,হালাল পুরুষ!!, কিন্তু সায়রার ভালোবাসা?? এখনও সেটা চেয়ে আছে, দূর থেকে, নিঃশব্দে, চাদঁকে ছুঁয়ে। আর রাতের সেই নিঃসঙ্গতা, অসুস্থতার ক্ষীণ আলো—সব মিলিয়ে এক চিরন্তন কাব্যিক বেদনা, যা কখনো শেষ হবে না।..................কত অব্যাক্ত কথা রয়ে গেলো,,অন্য সময় না হয় লিখবো,,আজ এখানেই থামলাম!