31/07/2024
'ও যাবে। না গেলে মুনাফিক হয়ে যাবে।'
১৯ জুলাই শুক্রবার। ঘড়িতে সময় বিকাল ৫টা বেজে ৩০ মিনিট।
মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর আহম্মেদ তাঁর বাবার সাথে কথা বলছিলেন। বাবা গ্রামে থাকা সাধারণ কৃষক।
সাগর: আব্বু আমাদের এখানকার অবস্থা ভালো না। আমাকে বিকাশে এক হাজার টাকা পাঠাও।
বাবা::মণিরে সাবধানে থাইকো।
বাবা জানান, 'ফোনের কথা শেষ করেই নারুয়া বাজারে যাই। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে সাইকেলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে টাকা পাইছে কি না নিশ্চিত হতে ফোন করি, কিন্তু ফোন আর ধরে না। তখন থেকে আমার বুকটা কেমন যেন করছিল।
মাগরিবের নামাজ শেষ করে সালাম ফেরানোর সময় পকেটের ফোন বাইজা ওঠে। মনটা কেমন যেন আঁতকে ওঠে। আমার মেয়ে মৌসুমি ফোন করে বলে, “আব্বু বাড়ি আইসো।”
বাড়ি আইসা দেখি সব এলোপাতাড়ি। কেউ কিছু বলছে না। বড় ভাইয়ের বড় জামাতা রঞ্জু এদিক-ওদিক করছে। পরে আমার এক নাতি বলছে, বাবাইর (সাগর) মাথায় গুলি লাগছে, হাসপাতালে আছে।’
১৯ জুলাই সকালেও মা-বাবার সাথে সাগরের কথা হয়।
সাগর ওর মাকে বলে- ঢাকার পরিস্থিতি ভাল না। আমার জন্য দোয়া করো, আন্দোলনে যাব। মা বলেছিলেন- যেয়ো না বাবা।
তখন বাবা বললেন- ও যাবে। না গেলে মুনাফিক হয়ে যাবে।
তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘যখনই কথা হতো তখনই সাগর বলত, “আব্বু তোমাকে আর রোদে পুড়ে মাঠে কাজ করতে হবে না। চাকরি করে তোমাদের ঢাকায় নিয়ে যাব।” আমার মানিক হোটেলে কাজ করত। রাতে মেসে ফেরার সময় কিছু খাবার নিয়ে আসত, রাস্তায় থাকা মানুষকে দিত।’
মায়ের কাছে দোয়া চেয়ে সাগর বলেছিল- মা তোমার সাগরের জন্য না, লক্ষ সাগরের জন্য দোয়া কোরো।
সাগরের চাচাতো ভাই সাইফুল বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে লাশের স্তূপ থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা খোঁজ করে পরিচয়পত্র দেখে সাগরের লাশ শনাক্ত করেন তাঁরা। দেখা যায়, সাগরের মাথার ডান দিকে গুলি লেগে পেছন দিয়ে বের হয়েছে।
- আসিফ আদনান