
27/07/2025
গল্প- চালাক মা, তালাক কন্যা
একটি ছোট শহরে থাকতেন রোজিনা বেগম। দেখতে সাধারণ হলেও মাথা খাঁটানোয় ছিলেন ওস্তাদ। কথা ঘুরিয়ে নিজের মত চাপিয়ে দেওয়া, ছোট বিষয়কে বড় করে তোলা—এসব ছিল তার অভ্যাস।
তার একমাত্র মেয়ে সানজিদা—রূপে গুণে অনন্যা, ভালো পড়াশোনা করেছে। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে শিখেছে, "জীবনে কখনো কারও কাছে মাথা নত করা যাবে না।" ফলস্বরূপ, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে অহংকারও জন্ম নেয় তার ভেতর।
বিয়ের আগে রোজিনা প্রায়ই মেয়েকে উপদেশ দিতেন— "শোন সানজিদা, শ্বশুরবাড়ির কেউ যদি তোকে কষ্ট দেয়, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করবি। নীরব থাকা মানে দুর্বলতা। আমরা কারও চেয়ে কম নই!"
সানজিদার বিয়ে হয় রাশেদ নামের শান্ত, ভদ্র প্রকৃতির এক যুবকের সঙ্গে। শ্বশুর-শাশুড়িও ছিলেন নরম মনের মানুষ। শুরুতে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু ছোটখাটো বিষয়েই সানজিদা মায়ের শেখানো নিয়মে আচরণ করতে লাগল।
একদিন ডাল পাতলা হতেই সে রেগে গিয়ে পুরো হাঁড়ি ফেলে দিল রান্নাঘরে। আরেকদিন রাশেদ অফিস থেকে দেরি করে ফিরলে দরজা খুলতে দিল না। ধীরে ধীরে তার আচরণ এমন হয়ে উঠল যেন সংসারের সবাই তার অধীনস্থ।
রাশেদ চেয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান। কিন্তু কথা বললেই ঝগড়া, চুপ থাকলেই অপমান। শেষ পর্যন্ত কয়েক মাসের মাথায় বিয়ে ভেঙে গেল। তালাকের পর রোজিনা মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন—"ওরা তোকে বোঝেনি। তুই ঠিকই ছিলি।"
এরপর সানজিদার দ্বিতীয় বিয়ে, তারপর তৃতীয় বিয়ে। নতুন স্বামী, নতুন সংসার—কিন্তু একই আচরণ, একই মানসিকতা। প্রতিবারই সম্পর্ক ভেঙে যেতে লাগল। অবশেষে, একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সানজিদা নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবল—"প্রতিবার কি দোষ শুধু তাদেরই ছিল? নাকি আমার ভেতরেই কিছু ভুল রয়ে গেছে? মা যদি শুধু চালাকি নয়, ধৈর্য আর ভালোবাসার পাঠও শিখাতেন, তাহলে কি আমার জীবন অন্যরকম হতো?"
শেষে সত্যিটা স্পষ্ট হলো—
চালাকি দিয়ে নয়, সম্পর্ক টিকে থাকে সহনশীলতা, সম্মান আর মনের মিল দিয়ে। মায়ের চাতুর্যের ছায়া যদি অহংকার হয়ে মেয়ের জীবনে ঢুকে পড়ে, তবে সেখানে প্রেম নয়, জায়গা নেয় কেবল তালাকের কাগজ।
– সমাপ্ত।