19/07/2025
আধুনিক গণতন্ত্র মুখে যতোই স্বাধীনতা আর অধিকারের কথা বলুক, কিন্তু তার রূহ এখনো পশ্চিমা কাঠামোয় বন্দী। আজকের তথাকথিত ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রগুলোতেও গণতন্ত্র কার্যত দেশীয় এলিট আর বিদেশি স্বার্থের আঁতাতে গড়া এক যৌথ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
IMF, World Bank, USAID-এর মতো সংস্থা কিংবা আঞ্চলিক মোড়লের ইশারাতেই রাষ্ট্রের বাজেট, অর্থনীতির গতিপথ, উন্নয়ন নীতিমালা, এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের রূপরেখা তৈরি হয়।
কে নির্বাচনে জিতছে, কে ক্ষমতায় আসছে, সেটা অনেক সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ না। সরকার শপথ নেয়ার আগেই নীতিমালাগুলো চূড়ান্ত হয়ে যায় বিদেশি পরামর্শক, এনজিও এবং তথাকথিত ‘নাগরিক সমাজের’ আলোচনার টেবিলে।
পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কথা মতো। কোথায় করিডোর হবে, কোথায় সামরিক ঘাঁটি বসবে, কোন বন্দর কাকে দেওয়া হবে, কোন জোটে যোগ দেওয়া হবে কিংবা জাতিসংঘে কী ভোট পড়বে—এসব সিদ্ধান্ত আসে দূতাবাসের নির্দেশ, সামরিক অনুদান অথবা গোপন চুক্তির শর্ত মেনে। নির্বাচিত সরকার কেবল ঘোষণার কাজটি করে, সিদ্ধান্ত আসে বাইরে থেকে।
এর অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ আছে। শুধু এশিয়া কিংবা আফ্রিকাতে না, খোদ পশ্চিমেই। ২০১৫ সালে গ্রিসের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন বামপন্থী বুদ্ধিজীবি এবং অর্থনীতিবিদ ইয়ানিস ভারুফাকিস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, নতুন সরকার আগের ঋণের শর্তগুলো পুনর্বিবেচনা করতে চায়। এটাই আমাদের জনগণের স্পষ্ট চাওয়া, তাদের দেয়া ম্যান্ডেট।
জার্মান অর্থমন্ত্রীর জবাব ছিল,“নির্বাচনের ফলে অর্থনৈতিক নীতি বদলাতে পারে না।”
এই এক বাক্যেই পুরো বাস্তবতাটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। আপনি জনগণের আকাঙ্ক্ষার নিয়ে পাতার পর পাতা রচনা লিখতে পারেন, গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতা দিতে পারেন, এমনকি ভোটেও জিততে পারেন।
কিন্তু নির্বাচিত সরকার যখন দেশের অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক, সামরিক কিংবা পররাষ্ট্র নীতি স্বাধীনভাবে নির্ধারন করতে পারে না, তখন ঐ দেশকে স্বাধীন বলা যায় কোন অর্থে? আর একে জনগণের শাসন বলা যায় কোন মুখে?
গণতন্ত্র আপনাকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে হাতে খেলনা স্টিয়ারিং ধরিয়ে দেবে। আপনি খুশি মনে ভাববেন, গাড়ি আপনিই চালাচ্ছেন। অথচ পথ, গন্তব্য, গতিসহ সব ঠিক করছে অন্য কেউ।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র, জনগণের আকাঙ্ক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু আদতে বাস্তবায়ন হয় দিল্লি বা ওয়াশিংটনের প্রভুদের নির্দেশনাই। যার লেটেস্ট প্রমাণ হল দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে, একপাক্ষিক সিদ্ধান্তে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের কান্ট্রি অফিস খোলার সিদ্ধান্ত।