21/07/2025
"তিনি আকাশে মারা যাননি… তিনি মরে গিয়েছিলেন অনেক আগেই।"
নাম তার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম।
নব্য বিবাহিত — ঘরে নতুন বউ, দেয়ালে ঝুলছে বিয়ের ফ্রেম করা ছবি, মা হয়তো দোয়া পড়ে পাঞ্জেরি রেখেছেন ওড়নার কোণায়। আজ সকালেও হয়তো চা খাওয়ার সময় স্ত্রী বলেছিল, “ফিরে এসো ঠিকঠাক মতো, বিকেলে একসাথে বাজারে যাব।”
কিন্তু তিনি ফিরলেন না।
আজ তৌকিরের হাতে ছিল একটা বোতাম — যেটা টিপলেই সে ছিটকে পড়তে পারতো আকাশ থেকে নিরাপদে। ফিরে যেতে পারতো বাড়ি, স্ত্রী, পরিবার, জীবন—সবকিছুর কাছে। আল্লাহর কাছে সেজদায় লুটিয়ে বলতো, “আপনি আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন!”
কিন্তু… তিনি সেই বোতাম চাপলেন না।
তৌকির জানতেন — তার নিচে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহর। মেট্রোরেল, ভবনের পর ভবন… একটা ভুলে শত শত প্রাণ নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।
তবুও, নিজের জীবন বাজি রেখে, তিনি বিমানটিকে টানলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। চেয়েছিলেন যেন আর কারও গায়ে আঁচ না লাগে।
কিন্তু নিয়তির নির্মমতা — তার ইচ্ছা সত্ত্বেও, তার হাত ধরেই চলে গেলো আরও কিছু তাজা প্রাণ। বাচ্চারা… যারা স্কুলে ছিল, ক্লাসে ছিল, স্বপ্নে ছিল।
এটা কি দুর্ঘটনা?
না। এটা ব্যর্থতা। এটা দুর্নীতি। এটা একটা রাষ্ট্রীয় খুন।
একটি পুরনো F-7 বিমান, যেটা চীনে এখন জাদুঘরে টাঙানো হয়, বাংলাদেশে সেটা উড়ছে — কারণ আমাদের বাজেট চুরি হয়, নতুন বিমানের বরাদ্দ যায় বিলাসবহুল গাড়ি আর কমিশনে।
তৌকির মারা যাননি আজ। তিনি মরে গিয়েছিলেন সেই দিন— যেদিন তাঁকে দেওয়া হয়েছিল পুরনো লোহা আর বিপজ্জনক দায়িত্ব, সেই বাজেট চুরির দিনে, যেদিন যুদ্ধের নামে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ভাঙা খেলনা।
আজ শুধু একজন পাইলট নয়, নিচে থাকা শিশুদের মৃত্যুও দুর্নীতির মাশুল। তাদের বাবা-মা আজ কাঁদছেন, কিন্তু এই কান্না পৌঁছাবে না কোনো হিমশীতল অফিস ঘরে।
কারণ এখানে তদন্ত হয়, দায়ভার হয় না। প্রেস রিলিজ হয়, বিচার হয় না। মোমবাতি জ্বলে, দায়ী কেউ জেলে যায় না।
আমরা ভুলে যাব না। আমরা চুপ থাকব না। এই মৃত্যু আমাদের জাগিয়ে তুলবে — যতক্ষণ না আমরা বলি, “এই রাষ্ট্র শুধু শোক চায় না, জবাবদিহি চায়।”
Edit post:
পোস্ট টা করেছি গতকাল ঘটনার পরেই, আর তখন পর্যন্ত আমরা সবাই যেটা জানতাম তাই লিখেছিলাম আর
যারা কমেন্টে বলছেন পাইলটের অদক্ষের কারণে এতোগুলা বাচ্চার এই অবস্থা। কিন্তু আমার মনে হয় আপনাকেও যদি এরকম যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত একটা প্লেন দিতো যেই মডেলের প্লেন চাইনাতে যাদুঘরে রাখা আর আমাদের দেশে ব্যাস্ত শহরের উপরে উড়ছে তাহলে আপনার দাড়াও এই দূর্ঘটনা হতে পারতো। কারণ এখানে উনার জীবনও রিস্কেই ছিলো, উনি ইজেক্টের আগেও ক্রাশ হতে পারতো। এইখানে উনারতো কোনো হাত ছিলো, উনিও আমাদের এই দেশের ভুল ব্যাবস্থাপনার শিকার! উনিতো আর নিজে সিদ্ধান্ত নেইনি কোথায় প্লেন প্রশিক্ষণ করা হবে। তাহলে এতোগুলো প্রাণের জন্য দায়ী মূলত কে?