28/01/2025
“শবে মেরাজ এর রোজা কবে রাখবো”??
আচ্ছা একদম লজিকালি একটা বিষয় চিন্তা করুন।মনে করুন আমি ঘুরতে গেলাম গাড়িতে করে কোনো বিশেষ জায়গায়। তারপর ঘুরে এসে সবাইকে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।এখন বলুন এই ঘুরতে যাওয়ার দিনকে স্মরণ করে কি প্রতিবছর রোজা রাখবো??
মেরাজ ঠিক এমনই। মেরাজ অর্থ উর্ধ্বারোহণের যান বা যন্ত্র। অর্থাৎ এমন যানবাহন যেটা দ্বারা ভূমি থেকে সোজা উপরে আরোহণ করা যায়।যেমন:রকেট অনেকটা এরকম।
সংক্ষেপে ঘটনা বলার চেষ্টা করছি।হিজরতের পূর্বের কথা। এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) শুয়েছিলেন। সেখানে আগমন করলেন হযরত জিবরাঈল (আ.)। তিনি নবীজিকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন জমজমের নিকট। জিবরাঈল (আ.) নবীজির বক্ষ মোবারক বিদীর্ণ করলেন। বের করে আনলেন নবীজির হৃদয়। যমযমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দিলেন জায়গামতো।
এরপর আনা হলো নবীজিকে বহন করার জন্য সওয়ারী। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়া থেকে ছোট। নাম বুরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যার একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে।এই বাহনে নবীজি (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে গেলেন বাইতুল মুকাদ্দাসে। বুরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
অতঃপর আনা হলো “মেরাজ”,যাতে আরোহণ করে রাসূল (স.) পৌঁছে গেলেন একদম সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত।তিনি পূর্ববর্তী নবীদের সাথে বিভিন্ন আসমানে সাক্ষাত করলেন, জান্নাত জাহান্নাম পরিদর্শন করলেন।
অতঃপর আল্লাহর নিকট থেকে আমাদের জন্য উপহার আনলেন তিনটি জিনিস।
১) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
২) সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
৩) আল্লাহ তাআলার এই ওয়াদা “শিরক থেকে মুক্ত ব্যক্তির সব গুনাহ মাফ করা হবে।”
তারপর ভ্রমণ শেষে ভোরে রাসূল (স.) এর প্রথমে দেখা হলো আবু বকর (রা.) এর সাথে।তার সাথে ভ্রমণের ঘটনা বললেন এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য সকলের সাথে ঘটনা বললেন। মুমিন রা তখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এর উপর আমল করা শুরু করেন ও শিরক থেকে বিরত থাকেন।
সাহাবিদের মধ্যে এমন কোনো নজির নেই যে তারা মেরাজ এর দিন রোজা রাখতেন বা বারতি ইবাদত করতেন। এমনকি ২৭শে রজব যে শবে মেরাজ এটাও নির্দিষ্ট নয়। তারিখ নিয়েও অনেক মতভেদ রয়েছে।
সুতরাং আমাদের মেরাজ থেকে শিক্ষা কি? আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবো, প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করবো এবং শিরক থেকে মুক্ত থাকবো।
মেরাজ উপলক্ষে নফল রোজা বা নফল কোনো নামাজ নেই। ইসলামে অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করাই বিদআত।বারো চান্দের ফজিলত, মাকসুদুল মুমিনিন, নূরানী অজিফা সহ আরোও কিছু কিতাব আছে যেগুলো বিদআতি আমলে ভরপুর। সঠিক মাসআলা শিখতে হলে ফিকহুন নিসা অথবা আহকামুন নিসা অথবা আহকামে জিন্দেগি কিতাব কিনে নিন। সঠিক ভাবে আমল করুন,জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা গড়ুন।