27/07/2025
বহুল আলোচিত নীলফামারীর সৈয়দপুরে ক্ললেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনঃ খুনি গ্রেফতার !
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের চাঁদনগর এলাকায় সংঘটিত একটি ক্লুুুুুুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন থানা পুলিশ। গৃহপরিচারিকা বৃদ্ধা ছামছুন নেহার (৬৭) হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত শামীম বেগকে (৫২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই হত্যার কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও চুরি করে নিয়ে যাওয়া একটি ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি ও ল্যাপটপ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত শামীম বেগ শহরের চাঁদনগর এলাকার মৃত. নঈম বেগের ছেলে।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফইম উদ্দিন আজ শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ ও থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর তুলশীরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রহিলা পারভীনের চাঁদনগরের বাসায় থাকতেন ছামছুন নাহার। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন গত ১ জুলাই (মঙ্গলবার) শিক্ষিকা রহিলা পারভীন তাঁর সম্পর্কে বোন বৃদ্ধা ছামছুন নেহারকে বাসায় একা রেখে স্কুলে চলে যান। ঠিক বেলা সোয়া একটার দিকে তিনি বিদ্যালয়ের টিফিনকালীন বাসায় দুপুরের খাবার খেতে এসে দরজা বন্ধ পেয়ে বৃদ্ধা ছামছুন নাহারকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু এতে তাঁর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশী এক মহিলাকে নিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তারা বাসার বাইরে দরজা খুলে বাসার ড্রয়িং রুমে মেঝেতে ছামছুন নেহারকে রক্তাক্ত ও নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
খবর পেয়ে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম ওহিদুন্নবী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফইম উদ্দিনসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। পরে পুলিশের সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যরা এসে হত্যাকান্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
সৈয়দপুরের পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গারহাট ফকিরপাড়ায় মৃত. আজহার আলীর স্ত্রী ছামছুন নাহার। তিনি বিগত ২০১৮ সাল থেকে ওই শিক্ষিকার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সামসুল হক (৪৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও ঘটনার পর থেকে নীলফামারী পুলিশ সুপারের নির্দেশে বৃদ্ধা ছামসছুন নেহার হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের অধিকতর তদন্তে একটি তদন্ত টীম গঠন করা হয়।
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম ওহিদুন্নবীর নেতৃত্বে এই তদন্ত টিমে ছিলেন থানার ওসি মো. ফইম উদ্দিন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমার ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান খান মারুফ। তারা মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থলে অদূরে থাকা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে সিসিটিভির ফুটেজ ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বৃদ্ধা ছামছুন নেহার হত্যাকান্ডে একই এলাকার বাসিন্দা একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা খেটে গত ২০২০ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আসা শামীম বেগকে সনাক্ত করেন পুলিশ। পরবর্তীতে গত ২০ জুলাই শামীম বেগকে ওই হত্যা ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বৃদ্ধা ছামছুন নেহার হত্যার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নীলফামারী আদালতে সোপর্দ করে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সৈয়দপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান খান মারুফ। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত তাঁর দুই দিনে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরবর্তীতে গত ২৪ জুলাই দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে ছামছুন নাহারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেন শামীম বেগ। এরপর তার স্বীকারোক্তি ও তার দেয়া তথ্য মতে সৈয়দপুর শহরে গোলাহাট এলাকা থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া এলইডি টিভি ও ল্যাপটপটি উদ্ধার করেন পুলিশ।
যেভাবে বৃদ্ধা ছামছুন নেহাকে হত্যা করে শামীম বেগ
গত ১ জুলাই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীম বেগ তাঁর পাশের বাসিন্দা শিক্ষিকা রহিলা পারভীনের বাসায় যান। এ সময় বাসায় শুধুমাত্র বৃদ্ধা ছামছুন নাহার একাই অবস্থান করছিলেন। তিনি (শামীম বেগ) সেখানে গিয়ে মহরমের তবারক দেওয়ার কথা বলে বাসায় কতজন লোক আছে তা জিজ্ঞাসা করেন। পরবর্তীতে বেলা পৌণে একটার দিকে আবার ওই বাসায় গিয়ে দরজায় নক করেন এবং তবারক নিয়ে এসেছেন বলে দরজা খুলতে বলেন। এ সময় বৃদ্ধা ছামছুন নাহার দরজা খুলে দিলে তবারক নেওয়ার জন্য একটি গামলা অথবা বাটি নিয়ে আসতে বলে শামীম বেগ। এরপর বৃদ্ধা গামলা আনতে ভেতরে একটি কক্ষে যাওয়ার প্রাক্কালে সুযোগ বুঝে খুনী শামীম বেগ তার সঙ্গে থাকা ব্যাগে লোহার রড দিয়ে বৃদ্ধার মাথার পেছনের দিকে আঘাত করে। এতে বৃদ্ধা ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন এবং তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরবর্তীতে খুনি শামীম বেগ বাসার অন্যান্য ঘরে ঢুকে দামি মালামাল খুঁজতে থাকে। এ সময় বুদ্ধার মৃত্যু নিশ্চিত করতে শামীম বেগ আবারও বৃদ্ধা কপালে উপর্যুপরি আঘাত করে। এরপর শামীম বেগ স্কুল শিক্ষিকার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে ওয়ারড্রবের ওপর থাকা স্যামসাং ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে সটকে পড়ে। চুরি করে নিয়ে যাওয়া ল্যাপটপ ও টিভি শহরের গোলাহাট এলাকার একটি দোকানে মাত্র ছয় শত টাকায় বিক্রি করে শামীম বেগ।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফইম উদ্দিন জানান, এ হত্যাকান্ডের মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রকৃত রহস্য ও এর সঙ্গে জড়িত শামীম বেগকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।