11/10/2025
দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি আর বোরকা নয়, সুন্দর আচরণই আসল দ্বীন!
মানুষ যখন দ্বীন পালন শুরু করে, তখন বেশিরভাগ সময় ফোকাস দেয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,
পুরুষ হলে দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি, আর নারী হলে বোরকা-নিকাব পরায়।
অবশ্যই একজন মুসলিমের নামাজ পড়া জরুরি,
কারণ মুসলিম হওয়া মানেই আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছাকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করা।
এই আত্মসমর্পণ প্রকাশ পায় রুকু ও সিজদার মাধ্যমে।
তাই নামাজ কোনো আলাদা বিষয় নয় —
একজন মুসলিম সারাদিনে ১৭ রাকাত ফরজ নামাজ পড়তেই হবে,
না পড়লে সে পূর্ণ মুসলিম হতে পারে না।
টুপি, দাঁড়ি, পাগড়ি, পাঞ্জাবি — এগুলো ইসলামের মূল দ্বীনি কোন বিষয় নয়।
রাসূল ﷺ-এর দাঁড়ি ছিল বলে কেউ যদি দাঁড়ি রাখে,
অথবা তিনি লাউ-খাসির মাংস পছন্দ করতেন বলে কেউ লাউ খায় —
এগুলো ব্যক্তিগত অনুকরণ হতে পারে, কিন্তু দ্বীনের বাধ্যতামূলক অংশ নয়।
তেমনি “পর্দা” শব্দটিও কুরআন-হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই।
আল্লাহ তাআলা সূরা নূরে মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য কিছু আদব ও নিয়ম দিয়েছেন, যেমনঃ
১) উভয়ে দৃষ্টি সংযত রাখবে —
অপরিচিত নারী-পুরুষের সাথে কথা বলা বা চলাফেরার সময় চোখ-মুখ, দৃষ্টি শালীন রাখবে।
যদি দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যায়, সাথে সাথে নিচু করে নেবে।
২) উভয়ে লজ্জাস্থান হেফাজত করবে —
যেমন আমরা গয়না বা টাকা লুকিয়ে রাখি, তেমনি লজ্জাস্থানও হেফাজত করে রাখবে।
পুরুষের জন্য নাভি থেকে রান পর্যন্ত,
নারীর জন্য নুন্যতম গলা থেকে হাতের কনুই ও পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে রাখার আদেশ আছে। এর অতিরিক্ত কেউ ঢাকতে চাইলে সেটা আরো উত্তম কাজ হবে, কিন্তু ফরজ বা বাধ্যতামূলক নয়।
৩️) নারীদের জন্য অতিরিক্ত একটি আদব বলা হয়েছে —
যদি তারা সাজগোজ, মেকআপ বা অলংকার পরে,
তাহলে গায়রে মাহরাম (যাদেরকে বিয়ে করা যায়) ব্যক্তিদের সামনে
মুখ, হাত ও পা ছাড়া শরীরের অন্য কোনো অংশ প্রকাশ করবে না।
- ব্যস, এতটুকুই।
এখন আসি মূল কথায় —
দাড়ি, টুপি, পর্দা আর নামাজ মানেই কি দ্বীন? না!
বরং দ্বীনের আসল শুরু হয় আখলাক বা চরিত্র থেকে।
নামাজ মুসলিমের জন্য ফরজ, কিন্তু
যদি কিছু পরিবর্তন করতে হয় — সেটা চরিত্রে করতে হবে।
কারণ মানুষ জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে তার চরিত্রের কারণে।
চরিত্র গঠনের শুরু হবে ঘর থেকে —
স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন —
সবাইয়ের সাথে ভদ্রতা ও উত্তম আচরণ করতে হবে।
তারপর প্রতিবেশী, বন্ধু, রাস্তায় মানুষ, পশুপাখি —
সবাইয়ের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে।
যদি এই আখলাক না থাকে, তাহলে
নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, দান, দাঁড়ি-টুপি-বোরকা কিছুই
জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেবে না।
তাই দ্বীন মানে শুধু নামাজ বা পোশাক নয় —
প্রথমে নিজের আচরণ ঠিক করুন।
স্বামী হলে স্ত্রীর হক আদায় করুন, তার সাথে সমাজের
সবচাইতে উত্তম আচরনটি করুন।
স্ত্রী হলে স্বামীর আনুগত্য করুন।
বাবা-মায়ের প্রতি ভালো ব্যবহার করুন,
শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে ভদ্র থাকুন।
সন্তান, ভাইবোন, আত্মীয়, প্রতিবেশী, ভিক্ষুক, পথচারি,
এমনকি পশুপাখির প্রতিও দয়া দেখান।
এই আচরণই আপনাকে জান্নাতের পথে নিয়ে যাবে।
এরপর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লজ্জাস্থানের হেফাজত।
বিয়ের আগে স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া লজ্জাস্থানের কোনো প্রকাশ নয়,
অশ্লীলতা, প্রেম-ভালবাসার নামে পাপ থেকে দূরে থাকুন।
তবেই জান্নাত নিশ্চিত — এই কথা রাসূল ﷺ বলেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার (সন্তুষ্টির) জন্য তার দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহবা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর হিফাযত করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি। সহিহ বুখারী (হাদিস: ৬৪৭৪)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ মুখ ও লজ্জাস্থান। তিরমিজি (হাদিস: ২০০৪)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক মহিলা রাত্রিবেলায় নফল নামায পড়ে এবং দিনের বেলায় নফল রোযা রাখে অথচ সে কর্কশভাষী তথা নিজ মুখ দিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার মধ্যে কোন কল্যাণ নিহিত নেই। সে জাহান্নামী’’।
পরে বলল — “আরেকজন মহিলা শুধু ফরজ নামাজ পড়ে, রমজান রাখে, অল্প দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না।” আপনি বললেন — “ওই মহিলা তো জান্নাতি।” (হা’কিম ৪/১৬৬)