10/10/2025
বিশেষ রিপোর্ট :
মানবিক মানুষটার নাম মংচিংনু মারমা
কেফায়েত উল্লাহ কায়সার
সিনিয়র সাংবাদিক।
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আট রেমিট্যান্স যোদ্ধার সাতজন ছিলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পৈত্রিক নিবাসের। মৃত্যু যেমন স্বাভাবিক, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর বেদনা আরো করুণ। আর তা যদি হয় হাজার মাইল দূরে, প্রিয়জনের চোখের আড়ালে, নিঃসঙ্গ কোন মরুর দেশে তাহলে সেই শোক বহন করা আরও কষ্টের। এমন সময়ে আমরা অনেকেই দেখি প্রশাসনের 'নির্বিকার' চেহারা। ফাইল ঘোরানো, প্রটোকলের আড়ালে শোকের বাস্তবতা থেকে দূরে থাকা, দায়সারা সহানুভূতি। কিন্তু সন্দ্বীপে যা ঘটেছে, তা একটি ব্যতিক্রম। সেটি শুধু একটি ‘দাপ্তরিক সমবেদনা সফর’ নয়, বরং এক মানবিক প্রশাসনিক উদ্যোগের উজ্জ্বল উদাহরণ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মংচিংনু মারমা সরাসরি গিয়ে নিহত প্রবাসীদের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি শুধু সহানুভূতি জানাননি, বরং "আমি আপনাদের পাশে আছি"—এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চোখে চোখ রেখে। সরকারি সহায়তার আশ্বাস, তাৎক্ষণিক কিছু অনুদান প্রদান, এবং প্রতিটি মসজিদে বিশেষ দোয়ার উদ্যোগ, সবকিছুই একটি ‘ মানবিক ও হৃদয়বান প্রশাসনের’ প্রকাশ।
একজন ইউএনও কী করতে পারেন, তাঁর সীমাবদ্ধতা কত, আর সম্ভাবনা কত দূর বিস্তৃত তা বোঝার জন্য সন্দ্বীপের এই ঘটনাটি একটি পাঠ হতে পারে। একটি প্রশাসন তখনই মানুষকে আপন করে নিতে পারে, যখন তার চোখেও কান্না জমে। অশ্রু আসে।
এই ঘটনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- মর্যাদার সাথে প্রবাসীদের বেদনার স্বীকৃতি। আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যে মানুষগুলো মরুপ্রান্তরে জীবন বিলিয়ে দেন, তাঁদের মৃত্যুকে আমরা প্রায়ই সংখ্যায় পরিণত করি। শিরোনামে দেখি—“৭ জন নিহত”। কিন্তু মংচিংনু মারমা দেখালেন, প্রতিটি মৃত্যু একটি গল্প, একটি সংসার, একটি হারানো স্বপ্ন। প্রশাসনের মানবিক রূপ সেই গল্পগুলোকেই প্রকাশ্য করে তোলে। এই মৃত্যু শুধুমাত্র সাতটি পরিবারের নয়, এ জাতিরও। আমরা আশা করি, দেশের অন্যান্য প্রশাসনিক অঞ্চলেও মানবিকতা এমনই জেগে উঠবে। আমরা এমনই এক প্রশাসন চাই—যেখানে আইন ও আদেশের বাইরেও সহানুভূতির অধিকার থাকে। সন্দ্বীপের ইউএনও সেটি প্রমাণ করেছেন। তাঁর এই পদক্ষেপ শুধু শোকের সঙ্গী নয়, এক নতুন প্রশাসনিক সংস্কৃতির সম্ভাবনাও।