28/07/2025
-- সাতকানিয়া কলেজ প্রতিস্টার ইতিকতা" -সৈয়দ মাহফুজ-উন নবী খোকন এর স্মৃতি চারণ ঃ-- আলহাজ্ব মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী টি,কে । তিনি সাতকানিয়া সরকারী কলেজের প্রতিষ্টাতা । শুধু সাতকানিয়া সরকারী কলেজ নয় - কলেজের পশ্চিম পাশেই সুন্দর মসজিদ,মসজিদের পৃকুর,পুকুরের ঘাট, টয়লেট, কবর স্হান, আজানখানা,কলেজের বিশাল মাঠ, মসজিদের পশ্চিম থেকে উপজেলা পর্যন্ত সড়ক( চেমন আরা সড়ক) টি প্রতিষ্টা করেন। জেলা পরিষদের ডাকবাংলো'র জন্য তিনি জমি দান করেন। তার প্রতিষ্টিত কলেজে প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন রায় বাহাদুর কামিনি কুমার ঘোষ। কিছুদিন অধ্যক্ষ হিসেবে নসরুল্লাহ খান ছিলেন ( তিনি পরবর্তি কালে পুলিশে যোগদিয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হন)। পরে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন চট্রগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলার আবুল খায়ের চৌধুরী। তখন কলেজ সরকারী ছিলনা। কলেজে পর্যায়ক্রমে যোগদান করেন বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের অধ্যাপক গোলাাম রসুল চৌধুরী (ছাএদের কাছে বাংলা মামা নামে পরিচিত) বাংলা পড়াতেন বলে তিনি সকলের কাছে বাংলা মামা। আমিও তারই ছাএ ছিলাম। অধ্যাপক শ্রী অসিত কুমার লালা, অধ্যাপক মোজাফ্ফর হোসেন,অধ্যাপক আবুল বশর, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন,অধ্যাপক আবদুর রব, অধ্যাপক আক্তার আলম খান( বুদ্বিজীবি সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাই) পরে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে ম্যাজিষ্ট্রেট হন। অধ্যাপক হীরেন্দ্র, অধ্যাপক করিম, অধ্যাপক ইউচুফ চৌধুরী,অধ্যাপক আলী হায়দার, বাংলা ব্যাকরণের লেখক অধ্যাপক হরলাল রায়, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,অধ্যাপক ডা:মোজহারুল হক, অধ্যাপক আনোয়ারুল হক,অধ্যাপক আনোয়ার কাদের চৌধুরী, অধ্যাপক জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, অধ্যাপক হীরেন বাবু, অধ্যাপক তপন সিংহ, অধ্যাপক হারাধন নাগ, অধ্যাপক ওসমান গণি, অধ্যাপক নূরুল হুদা সিকদার মনসুর, অধ্যাপক আশরাফউদ্দিন, সহ আরো অনেকে । অধ্যাপক আলী হায়দার,অধ্যাপক মোজাফ্ফর হোসেন থাকতেন কলেজের মাঠের পূর্বদিকে ছাএ হোস্টেলের দক্ষিন পাশে। হোস্টেলটি আগুনে পুড়ে গেছে। কাঠ বাঁশের বেড়া উপরে টিন দেয়া বিশাল আঁকার এ হোস্টেলটিতে। তখনকার দিনে কলেজ হোস্টেলটি দৃস্টি নন্দন ছিল। এ কলেজে বায়োলজি,বোটানি (বিজ্ঞান বিভাগ)এবং বিশালাকার লাইব্রেরী চট্রগ্রাম সরকারী কলেজ বা মহসিন কলেজে ও নেই।। সে সময়ের কলেজের শিক্ষকরা সততা, নিষ্টা, কর্তব্য পরায়ন,দায়িত্ববান,আদর্শবান, সৎ চরিএবান, সামাজিক মর্যাদাশীল । এলাকার সর্ব শ্রেণির সর্ব পেশার মানুষেরা এ কলেজের অধ্যাপকদের শুধু শ্রদ্বা করতেননা নিজেদের বাসা-বাড়ীতে সবচে বেশী সম্মান দিয়ে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন । সাতকানিয়ায় সর্বক্ষেএে তারা ছিল সম্মানিত ব্যাক্তি । মানুষেরা এ কলেজের অধ্যাপকদের নিজের অন্তর থেকে শ্রদ্বা করতেন । এখনো যারা বেচে আছেন তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলে কি ভাবেযে সম্মান শ্রদ্বা জানায় তা একমাএ তারাই জানেন। পূর্ব পাকিস্তান আমলে ইস্ট পাকিস্তানের তৎকালিন গভর্নর মোনায়েম খান আসছিনেন কলেজ পরিদর্শনে । তখন আমি ছিলাম ছোট। আমাদের বাড়ীতে ছিলেন কলেজের তংকালিন মেধাবী কলেজ ষ্টুড়েন্ট গৃহ শিক্ষক। গৃহ শিক্ষক স্যারের কথায় কলেজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয় আমার। তখন আমি ছিলাম হাইস্কুলের ছাত্র। ইষ্ট পাকিস্তানের গর্ভনর মোনায়েম খান আসার আগ মূহুর্তে বহুদূর পর্যন্ত সড়কের দু'পাশে মানুষের লাইন। কলেজের ভিতরে মূল প্রবেশ পথে বিশালাকার মঞ্চ । মঞ্চে আসলেন গর্ভনর মোনায়েম খান। সারাদিন রাত পরিশ্রম করলেন কলেজের প্রতিষ্টাতা জনাব মোজাফফর আহমদ চৌধুরী টিকে।মোনায়েম খান খবর পাটালেন সাবেক মুসলিম লীগের সাবেক এমএলএ আহমদ কবির চৌধুরীকে। আহমদ কবির চৌধুরী আসার পর মোনায়েম খান আসন থেকে নেমে এসে আহমদ কবির চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করলেন। এ সময় পাশে দাঁডিয়ে থাকা কলেজ প্রতিষ্টাতা মোজাফফর আহমদ চৌধুরী টিকে কে মোনায়েম খান তার হাতের কনুই দিয়ে গুঁতো মারলেন। যাতে কলেজ প্রতিস্টাতা চুপচাপ থাকেন। তখন মুসলিম লীগ ছিল দুটি বিভক্ত। মোনায়েম খান ছিল কলেজ প্রতিষ্টাতা দল করতেন। কলেজে আহমদ কবির চৌধুরীর নামে কলেজের দক্ষিণ পাশে একটি ছোট্র গ্যালারী আহমেদ কবির চৌধুরীর দেয়া । তখন আহমেদ কবির চৌধুরী ছিলেন জমিদার। তিনি কলেজ প্রতিস্টার বিরোধী ছিলেন বলে কলেজের জনশ্রুতি রয়েছে। দু'জনেই সাবেক পাকিস্তান সরকার আমলের রাজনৈতিক দল মুসলিমলীগ করলেও রাজনৈতিক কারনে একে অপরের সাথে মিল ছিলনা। দু’জনেই একে অপরের প্রতিদন্ধি ছিলেন । নির্বাচনী এলাকা ও ছিল একটাই। দুজনেই সাতকানিয়া ইউনিয়নের রুপকানিয়া মৌজার অধিবাসী । রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে জমিদার আলহাজ্ব আহমদ কবির চৌধুরী নিজ বুদ্ধিতে সুকৌশলে করলেন। তিনি মোজাফফর আহমদ চৌধুরী কে রুপকানিয়া মৌজার একটি অংশ ভাগ করে নিলেন। সাতকানিয়া রহমত আলী দীঘির পশ্চিমাংশের পশ্চিম ঢেমশা মৌজার অংশ কে নিজ এলাকা করে নিলেন।অপর দিকে সাতকানিয়া কলেজ রোডের রুপকানিয়া মৌজার অংশ টি মোজাফফর আহমদ চৌধুরীকে দিয়ে মৌজা ভাগ করে রাজনৈতিক দন্ধের অবসান ঘটিয়ে নিলেন। সে থেকে সাতকানিয়া ইউনিয়নের সাথে সাতকানিয়া পশ্চিম ঢেমশা মৌজার কিছু অংশ সাতকানিয়া ইউনিয়নের হয়ে গেল।অপরদিকে সাতকানিয়া ইউনিয়ন এর রুপকানিয়া মৌজার একটি অংশ চরপাড়ার সাথে পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নর হয়ে যাওয়ায় দু'জনের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধের অবসান হয়। জানা যায় - তখন সাতকানিয়া থানা সার্কেল অফিসার ছিলেন জনাব তাজুল ইসলাম চৌধুরী। (কলেজের অধ্যক্ষ রুমে উনার ছবি এখনো টাঙানো আছে) । তিনি ইনকাম টেক্স ফাঁকি দেবার কারনে নোটিশ প্রদান করা হলে প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠ সম্মানিত জনাব সোলতান মাষ্টার এর সাথে সার্কেল অফিসারের সাথে আপোষ মিমাংসায় কলেজে আহমদ কবির চৌধুরীর নামে গ্যালারী ভবনটি করে দেন। আহমেদ কবির চৌধুরী একজন সম্মানিত বিশিষ্টজন। তিনি সমগ্র সাতকানিয়া লোহাগাড়া বাঁশখালী, চকোরিয়া সহ সমগ্র কক্সবাজার পর্যন্ত জমিদারী ছিল। তিনি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিস্টান সামাজিক , ধর্মীয় প্রতিষ্টান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানে জমিদাতা। তিনি সাবেক মুসলিম লীগের এমএলএ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘবছর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সাতকানিয়া পাবলিক লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম এর জন্য ১৫ গন্ড়া ( ৩০শতক জমি দান করেন,সাতকানিয়া সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্টাতা ও জমিদাতা, সাতকানিয়া প্রেসক্লাবের জন্য ৫গন্ড়া বা দশ শতক জমিদাতা। একজন দায়িত্বশীল সমাজের অভিভাবক। সাতকানিয়া কলেজ ছাড়া তখন দক্ষিনে ক্ক্সবাজার টেকনাফ, কুতুবদিয়া, পূর্বে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, পশ্চিম বাঁশখালীএবং উওরে পাটিয়া পর্যন্ত কোন কলেজ ছিলনা। তখন সেই সকল এলাকার ছাএরা সাতকানিয়া কলেজে অধ্যায়ন করতো। ক্ক্সবাজার সমিতি, কুতুবদিয়া সমিতি প্রতিস্টা করেন। সাতকানিয়া কলেজের উওরে শুধুমাএ কানুনগোপাড়া কলেজ ছিল।
স্বাধীনতার পর সরকারের ১৫ সদস্য বিশিস্ট ড. খুদরুতে খোদা শিক্ষা কমিশনের সকলেই সাতকানিয়া কলেজ পরিদর্শনে আসেন। তখন আমরা কলেজের ছাএ। এ শিক্ষা কমিশনের অন্যতম সদস্য সাতকানিয়ার কৃর্তি সন্তান তৎকালিন চট্রগ্রাম সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান তিনি পরবর্তি আমলে সরকারের স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব ছিলেন। দক্ষিন ঢেমসার কৃর্তি সন্তান সাবেক গণ পরিষদ সদস্য (এমএনএ) বীর মুক্তিযোদ্বা জনাব আবু সালেহ এর আপন বড় ভাই । কলেজ প্রতিষ্টাতা মরহুম মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরীটিকে ( স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালিন পাকিস্তান আমলে সর্ব্বোচ বেসরকারি খেতাব তমগায়ে খেদমত (টিকে) সম্মানে ভূষিত করেন। তারই নিরলস প্রচেষ্টায় সাতকানিয়ার রাস্তার মাথা থেকে কলেজ পর্যন্ত সড়কটি প্রতিস্টিত হয়। জাতীয় পার্টির এরশাদ সবকার আমলে কলেজের প্রাক্তন ছাএ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্বা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান,সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পরবর্তী জাতীয় সংসদ সদস্য ইব্রাহিম বিন খলিল চৌধুরী তৎকালিন সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী দৈনিক ইওেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মন্জু সড়কটির নামকরণ করে উদ্বোধন করেন "আলহাজ্ব মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী টিকে সড়ক " হিসেবে। জনাব আনোয়ার হোসেন মন্জু সাবেক সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ছিলেন । তৎকালিন কলেজের (বেসরকারী থাকা কালে) ভাইস প্রিন্সিপাল শ্রী অসিত কুমার লালার এক সত্য ঘটনা :- সাতকানিয়া কলেজের তার( শ্রী অসিত কুমার লালার বাসভবনে থেকে নিজের শালী কলেজে লেখাপড়া করতো। ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অসিত কুমার লালা বাবুর শালী কলেজে ফাইন্যাল পরীক্ষা দেয়ার সময় শালী তখন পরীক্ষায় নকল করছিলেন। আপন দুলাভাই ভাইস প্রিন্সিপ্যাল এর চোখে ধরা পড়ে শালীর নকল করা । সংগে সংগে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অসিত বাবু আপন শালী বলে ক্ষমা করেননি। তাৎক্ষনিক কতর্ব্যবিমুড় নিজ শালীকে পরীক্ষা কেন্দ্র হতে বহিস্কার করেন। পরীক্ষা শেষে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল শ্রী লালা নিজ বাসায় যাচ্ছিলেন। তখন লালা বাবুর সহধর্মিনী লালা বাবুকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন । অগত্য লালা বাবু স্যার পুকুরের উত্তর পাড়ে প্রায় অধ্যাপক ডমেটরি বিল্ডিং এ অন্যান্য অধ্যাপকদের সাথে ছিলেন। ১৫/২০ দিন পর অন্যান্য অধ্যাপকরা লালা বাবুর সহ ধর্মিনীকে শান্ত করেন স্যারের সাথে মিলমিশ করে দেন । *******ছবিটি সাতকানিয়া সরকারী কলেজের প্রতিস্টাতা মরহুম আলহাজ্ব মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী টিকে, মুসলিম লীগ সরকার আমলের এমএলএ সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আহমদ কবির চৌধুরী, কলেজেের প্রথম অধ্যক্ষ রায় বাহাদুর কামিনী কুমার ঘোষ, ভাইস প্রিন্সিপাল শ্রী অসিত কুমার লালা, কলেজের অধ্যাপক ও চিকিৎসক ডাক্তার মোজহারুল হক, তৎকালিন কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল শ্রী অসিত। কুমার। লালা স্যার সাতকানিয়া প্রেসক্লাব ভবনের স্টোন পাথর ও আহমদ কবির চৌধুরীর জন্মও মৃত্যুসাল সহ স্টোন পাথর । বিঃ দ্রঃ- ভূল ত্রুটিসহ কারো নিকট কোন সঠিক তথ্যাদি জানা থাকলে অবহেলিত করার জন্য সনিবদ্ধ অনুরোধ রইলো। আগামীতে বিস্তারিত পুস্তক আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল। ******************************** :--চলবে