30/04/2025
"গুরুর সামনে সবাই ছাত্র"
গ্রামের এক কোণায় ছোট্ট একটি স্কুল, সেখানেই ছিলেন প্রফেসর সুধাংশু—একজন প্রজ্ঞাবান শিক্ষক। বয়সের ভারে নত হলেও, তার জ্ঞানের ভার এতই বিশাল ছিল যে গ্রামের সবাই তাকে "জ্ঞানপাহাড়" বলত।
একদিন গ্রামে এক বড় উৎসবের আয়োজন হলো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নামকরা ডাক্তার, শহর থেকে আসা এক বিখ্যাত আইনজীবী, এবং আরও অনেক পণ্ডিত মানুষ। সুধাংশুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অতিথি হিসেবে, কিন্তু তিনি সাদামাটা পোশাকে চুপচাপ বসে ছিলেন এক কোণে।
হঠাৎ কেউ বলল, “চলুন, একটি বুদ্ধির খেলা হয়—যিনি যুক্তিতে সেরা, তিনিই হবেন উৎসবের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত!”
সবাই রাজি হয়ে গেল। প্রথমে ডাক্তার রোগ আর ওষুধের তত্ত্ব নিয়ে যুক্তি দিলেন। তারপর আইনজীবী বিচার আর আইনের ধারা তুলে ধরলেন। দুজনেই নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণে ব্যস্ত।
তখন এক যুবক বলল, “এই বৃদ্ধ শিক্ষককেও তো প্রশ্ন করা যাক।”
সুধাংশু হালকা হেসে বললেন, “একটা প্রশ্ন করি—জীবন বড় না ন্যায় বড়?”
ডাক্তার বললেন, “জীবনই বড়, না বাঁচলে কিছুই নেই।”
আইনজীবী বললেন, “ন্যায় বড়, না থাকলে সমাজ চলবে না।”
সুধাংশু শান্তভাবে বললেন, “জীবন বুঝতে শিক্ষক লাগে, ন্যায় বুঝতেও শিক্ষক লাগে। আমি শুধু প্রশ্ন করেই দেখিয়ে দিলাম—তোমরা এখনও উত্তর খুঁজছো, আর আমি তা শিখিয়েছি বহু বছর আগে।”
সবার মুখে একরাশ নীরবতা। ডাক্তার মাথা নিচু করলেন, আইনজীবী হাতজোড় করলেন।
তারা বললেন, “আপনি আমাদের শিক্ষক, আপনার সঙ্গে যুক্তি করতে গেলে নিজেরাই ছাত্র হয়ে যাই।”
সেই দিন থেকেই সুধাংশুকে সবাই ডাকত, “গুরুজী, যার সামনে সব পেশাই শ্রেণিকক্ষের একটি বেঞ্চ মাত্র।”