29/07/2025
ভালুকা চাঁদপুর জামে মসজিদ: সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী এক প্রাচীন ইতিহাস
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদপুর গ্রামে সাড়ে চারশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন স্থাপনা—পীর মানিক চৌধুরী জামে মসজিদ।
জনশ্রুতি আছে, এই মসজিদটি অলৌকিকভাবে জ্বীনের মাধ্যমে এক রাতেই নির্মিত হয়েছিল। অনেকে আবার বলেন, মসজিদ ও পাশের বিশাল দিঘিটি মাটির নিচ থেকে উঠে এসেছিল।
এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস, লোককথা ও বিশ্বাস। স্থানীয়দের মতে, মানিক চৌধুরী ছিলেন জমিদার বংশের এক পরহেজগার ওলিয়ে কামেল। তিনিই মানুষের নামাজের সুবিধার্থে নির্মাণ করেছিলেন তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ। ৪৫ ইঞ্চি পুরু দেয়ালের মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২৬ হাত ও প্রস্থ ১০ হাত। মসজিদের পাশেই রয়েছে সাড়ে চার বিঘার একটি দিঘি এবং আড়াই বিঘা আয়তনের কবরস্থান।
প্রতি শুক্রবার এখানে বসে এক ব্যতিক্রমী মেলা—আশা-প্রত্যাশা আর মানতের মিলনমেলা। শতশত মানুষ, শুধু মুসলমান নয় বরং বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, দিঘির পানি ও মসজিদের সামনের মাটি সংগ্রহ করেন মহৌষধ হিসেবে। কেউ সন্তান কামনায়, কেউ রোগমুক্তির আশায়, আবার কেউ ফসল বা ব্যবসায় সফলতার জন্য মানত করে আসেন।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, অনেকে এখানে রান্না করে গরিবদের খাওয়ান, কেউ কেউ নিয়ে আসেন মুরগি, ছাগল বা গরু দান হিসেবে। কেউ ক্ষেতের প্রথম ফসল, কেউ বাগানের ফল, আবার কেউ প্রথম ধরা মাছ নিয়ে আসেন দান করতে।
মসজিদের সাবেক ইমাম ও বর্তমান মাদ্রাসার সুপার মহসীন উল ইসলাম জানান, একসময় মান্নতকারীরা মুরগি ছেড়ে যেতেন খোলা জায়গায়। পরে তা সংগঠিত করে মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়। তিনি বলেন, আল্লাহর নামে মানত করলে তাতে কোনো শিরক নেই, বরং এটি একটি বিশ্বাস ও আস্থা থেকে উৎসারিত প্রথা।
আজও প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে নামাজ আদায় করেন। শুক্রবারে ভিড় বেড়ে দাঁড়ায় ১০-১২ হাজারে। নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও রয়েছে—একসাথে প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
এই মসজিদ শুধু নামাজ বা ইবাদতের জায়গা নয়—এটি একটি আস্থা, বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতীক হয়ে আছে শত শত বছর ধরে।