15/07/2025
(Dead Sea) এর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
ডেড সি (মৃত সাগর) কী?
ডেড সি, যা বাংলায় মৃত সাগর নামে পরিচিত, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত জলাশয়গুলির মধ্যে একটি এবং ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে নিম্নতম স্থান। এর উচ্চ লবণাক্ততার কারণে এখানে কোনো মাছ বা জলজ উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না, তাই এর নাম হয়েছে 'মৃত সাগর'।
অবস্থান ও ভূগোল
* কোথায় অবস্থিত: মৃত সাগর মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত। এর পূর্ব দিকে জর্ডান এবং পশ্চিম দিকে ইসরায়েল ও ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর অবস্থিত।
* পৃথিবীর নিম্নতম স্থান: এর পৃষ্ঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৩০ মিটার (১,৪১০ ফুট) নিচে অবস্থিত, যা একে পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থলভাগ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।
* জর্ডান রিফ্ট ভ্যালি: এটি জর্ডান রিফ্ট ভ্যালিতে অবস্থিত, যা আফ্রিকা এবং আরবীয় টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় ডেড সি ট্রান্সফর্ম দ্বারা গঠিত একটি দীর্ঘ ফাটল।
* প্রধান উৎস: জর্ডান নদী হলো এর প্রধান জলের উৎস।
চরম লবণাক্ততা
* অবিশ্বাস্য রকম লবণাক্ত: মৃত সাগর বিশ্বের সবচেয়ে লবণাক্ত জলাশয়গুলির মধ্যে একটি। এর লবণাক্ততা প্রায় ৩৪.২% (২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী), যা সমুদ্রের জলের (গড় ৩.৫% লবণাক্ততা) চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি!
* কেন এত লবণাক্ত: এটি একটি 'এন্ডোরহেইক' হ্রদ, অর্থাৎ এর কোনো বহির্গমন পথ নেই। জর্ডান নদী এবং অন্যান্য ছোট ছোট নদী থেকে জল এতে প্রবেশ করে, কিন্তু জল বেরিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো বাষ্পীভবন। উষ্ণ, শুষ্ক মরুভূমির আবহাওয়ায় জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়, এবং লবণ ও খনিজ পদার্থগুলি হাজার হাজার বছর ধরে জমা হতে থাকে।
* প্লবতা: এই চরম লবণাক্ততার কারণে জল অবিশ্বাস্যভাবে ঘন হয়। ফলস্বরূপ, মানুষ খুব সহজেই এর পৃষ্ঠে ভেসে থাকতে পারে, যা এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
প্রাণের অভাব (এবং কেন এটি "মৃত")
* মাছ বা উদ্ভিদ নেই: অত্যন্ত উচ্চ লবণের ঘনত্বের কারণে, কোনো বড় আকারের জীবন (যেমন মাছ, জলজ উদ্ভিদ) মৃত সাগরে বাঁচতে পারে না। এই কারণেই এর এমন নামকরণ।
* মাইক্রোবস: শুধুমাত্র কিছু চরমপন্থী অণুজীব (মাইক্রোস্কোপিক অর্গানিজম) এর প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে।
খনিজ সমৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
* খনিজ সমৃদ্ধ: সাধারণ লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) ছাড়াও, মৃত সাগরের জল এবং কাদা বিভিন্ন খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যার মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ব্রোমিন এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে।
* থেরাপিউটিক গুণাবলী: এই খনিজগুলির থেরাপিউটিক গুণাবলী বহু শতাব্দী ধরে স্বীকৃত। মানুষ বিভিন্ন কারণে মৃত সাগরে যান:
* ত্বকের স্বাস্থ্য: খনিজগুলি সোরিয়াসিস, একজিমা এবং ব্রণ-এর মতো ত্বকের বিভিন্ন অবস্থার চিকিৎসায় সহায়তা করে বলে মনে করা হয়, এবং ত্বকের আর্দ্রতা ও সামগ্রিক চেহারা উন্নত করে।
* আর্থ্রাইটিস ও পেশী ব্যথা উপশম: উষ্ণ, খনিজ-সমৃদ্ধ জলে স্নান জয়েন্টের ব্যথা, শক্তভাব এবং পেশীর ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
* ডিটক্সিফিকেশন ও শিথিলকরণ: খনিজগুলি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে এবং শিথিলকরণ ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।
* শ্বাসযন্ত্রের উপকারিতা: নিম্ন উচ্চতার কারণে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বেশি থাকে এবং অক্সিজেনের পরিমাণও বেশি হয়, যা শ্বাসযন্ত্রের কিছু সমস্যার জন্য উপকারী হতে পারে।
পরিবেশগত উদ্বেগ
* জলস্তর হ্রাস: মৃত সাগর একটি গুরুতর পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি: এটি দ্রুত সঙ্কুচিত হচ্ছে। এর জলস্তর প্রতি বছর প্রায় ১ মিটার (৩ ফুট) করে কমছে।
* কারণ:
* জল ডাইভারশন: প্রধান কারণ হলো ইসরায়েল, জর্ডান এবং সিরিয়া দ্বারা কৃষি ও পানীয় জলের জন্য জর্ডান নদী এবং এর উপনদীগুলি থেকে জল সরিয়ে নেওয়া।
* খনিজ নিষ্কাশন: মৃত সাগর থেকে পটাশের মতো খনিজ পদার্থ নিষ্কাশনকারী শিল্পগুলিও বাষ্পীভবন পুকুরের মাধ্যমে জল হ্রাসে অবদান রাখে।
* জলবায়ু পরিবর্তন: কম বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাষ্পীভবন বৃদ্ধিও একটি কারণ।
* পরিণতি:
* সিঙ্কহোল: জলস্তর কমে যাওয়ায়, পরিধির চারপাশে ভূগর্ভস্থ মিঠা জলের স্তরও নেমে যাচ্ছে। যখন এই মিঠা জল ভূগর্ভস্থ লবণ জমাকে দ্রবীভূত করে, তখন ফাঁকা স্থান তৈরি হয় এবং এর ফলে উপরের জমি হঠাৎ ধসে পড়ে সিঙ্কহোল তৈরি হয়, যা বিপজ্জনক হতে পারে। হাজার হাজার সিঙ্কহোল দেখা দিয়েছে, যা অবকাঠামো এবং সুরক্ষাকে প্রভাবিত করছে।
* বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাব: হ্রদের সঙ্কুচিত হওয়া এর অনন্য বাস্তুতন্ত্র এবং আশেপাশের মরুদ্যানকে প্রভাবিত করছে।
মৃত সাগর একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়, একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান এবং একটি অনন্য প্রাকৃতিক স্পা। তবে, এর পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি জরুরি মনোযোগ এবং সহযোগিতামূলক সমাধান দাবি করে, যাতে এই অসাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
আপনার আর কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন!