25/05/2025
মা-বাবা ৩৫ বছরের মহিলাকে হায়ার করলেন ১৮ বছরের লাজুক ছেলের জন্য
রায়হান একজন ১৮ বছরের লাজুক, ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের তরুণ। সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে, তবে বন্ধুবান্ধব নেই বললেই চলে। কথা বলতে সংকোচ করে, মেয়েদের সঙ্গে তো প্রায় কথাই বলে না। মা-বাবা প্রথমে ভেবেছিলেন, সময় গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রায়হানের নির্জনতা আরও গাঢ় হয়ে উঠছে।
চিন্তিত মা-বাবা একসময় সিদ্ধান্ত নিলেন, তাকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনতে একটু ভিন্নধর্মী পন্থা নেওয়া প্রয়োজন। তারা খোঁজ নিতে শুরু করলেন এমন কাউকে, যিনি রায়হানের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন, তাকে বুঝতে পারবেন, এবং ধীরে ধীরে তার ভেতরের লজ্জা কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করবেন। এক ধরণের "ইমোশনাল থেরাপিস্ট" যাকে বলা যেতে পারে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তারা পরিচিত এক কাউন্সেলরের মাধ্যমে ৩৫ বছর বয়সী তানিয়া আপাকে খুঁজে পেলেন। তানিয়া একজন শিক্ষিত, সংবেদনশীল এবং জীবন সম্পর্কে পরিপক্ব দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নারী। তিনি আগে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন কাউন্সেলিং এবং ইয়াং মেন্টরিং-এ সময় দেন। মা-বাবা তাঁর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বললেন, রায়হানের সমস্যার কথা জানালেন, এবং তাঁকে অনুরোধ করলেন, যেন তানিয়া ধীরে ধীরে ছেলের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে সাহায্য করেন।
তানিয়া শুরুতে একটু অবাক হলেও, ব্যাপারটিকে পেশাদার মনোভাবেই গ্রহণ করলেন। তিনি প্রথমে রায়হানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করলেন। বই, মুভি, ভিডিও গেম – যেসব বিষয়ে রায়হানের আগ্রহ, সেসব নিয়েই শুরু করলেন আলোচনা। ধীরে ধীরে রায়হান তার মতো করে মেলতে শুরু করল। সে প্রথমবারের মতো অনুভব করল, কেউ তাকে বিচার করছে না, বরং বুঝতে চাইছে।
তানিয়া কখনও শিক্ষক, কখনও বন্ধু, কখনও বড় বোনের মতো তার পাশে রইলেন। রায়হানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আসতে শুরু করল। সে নিজের কথা বলতে শিখল, নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করতে পারল। সে এমনকি কলেজেও দু-একজন বন্ধু বানাতে পারল। আর সবচেয়ে বড় বিষয়, সে মা-বাবার সঙ্গেও খোলাখুলি কথা বলতে শুরু করল।
তানিয়ার উপস্থিতি এক তরুণের জীবনে এক বিপ্লব নিয়ে এল – তা প্রেম নয়, বরং একজন পরিপক্ব, দয়ালু, অভিজ্ঞ নারীর বন্ধুত্ব এবং মেন্টরশিপ। এই ঘটনা আমাদের শেখায়, সব সমস্যার সমাধান সাধারণ পথে হয় না। কখনও কখনও ভিন্ন পথে হেঁটে হলেও কাউকে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়।
মা-বাবার সেই অপ্রচলিত সিদ্ধান্ত আজ তাদের ছেলের জীবন বদলে দিয়েছে। রায়হান এখন শুধু একটি নাম নয়, বরং একজন আত্মবিশ্বাসী তরুণ – যার ভিত গড়েছেন এক ৩৫ বছরের অভিজ্ঞ নারী, যিনি শুধুই ‘হায়ারড পারসন’ নন, একজন পথপ্রদর্শক।