27/08/2025
"পুরুষের নারী লোভ থাকাটা দরকার।"
কীহ্........? বাক্যটা শুনেই আপনার কপালের শিরা দপদপ করে উঠলো? রক্তে আগুন ধরে গেল..? মনে হচ্ছে, লেখক একজন বিকৃতমস্তিষ্ক, নারীবিদ্বেষী, লম্পট...? আপনার সব বিশেষণ মাথা পেতে নিলাম। আপনার সব রাগ, সব ক্ষোভকেও সম্মান জানাচ্ছি। কিন্তু অনুরোধ একটাই, আর্টিকেলটি বিচার করার আগে, আমাকে গালি দেওয়ার আগে, শেষ পর্যন্ত পড়ুন। যদি আপনার ভাবনার জগতে সামান্যতম ভূমিকম্পও ঘটাতে না পারি, তবে বুঝবেন আমার লেখা ব্যর্থ।
আমরা এক অদ্ভুত ভণ্ড সমাজে বাস করি, যেখানে আমরা প্রকৃতির সবচেয়ে আদিম এবং মৌলিক সত্যগুলোকে অস্বীকার করতে ভালোবাসি। আমরা সভ্যতার চাদর মুড়ি দিয়ে এমন সব নৈতিকতার বুলি আওড়াই, যা আমাদের ভেতরের পশুটাকে অস্বীকার করে। কিন্তু সেই পশুটাকেই যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেত, তবে সেটাই হয়ে উঠত সৃষ্টির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। আর পুরুষের নারী দেহের প্রতি আকর্ষণ বা আরও সহজ ভাষায় বললে 'লোভ', সেই আদিম শক্তিরই এক রূপ।
এই লেখাটি কোনো লম্পট পুরুষের সাফাই গাওয়ার জন্য নয়। এই লেখাটি ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানিকে বৈধতা দেওয়ার জন্যও নয়। এই লেখাটি হলো সেই সূক্ষ্ম রেখাটি উন্মোচন করার একটি প্রচেষ্টা, যা একজন প্রেমিক পুরুষ এবং একজন চরিত্রহীন লম্পটের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। এই লেখাটি হলো প্রকৃতি, সমাজ এবং সম্পর্কের সেই জটিল রসায়নকে বোঝার চেষ্টা, যা আমরা হয় এড়িয়ে যাই, নয়তো ভুল বুঝি।
অধ্যায় ১: প্রকৃতির আদিম ডাক - যদি লোভ না থাকতো?
আসুন, একটা কল্পনার জগতে ডুব দিই। ভাবুন তো, এমন এক পৃথিবীর কথা যেখানে পুরুষের নারীর প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। নারীর দেহ, তার বাঁক, তার সুবাস, তার চাহনি—কোনোকিছুই পুরুষকে বিন্দুমাত্র টানে না। কেমন হতো সেই পৃথিবী?
পুরুষ হয়তো তখন আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক হতো। সে বাঁচত শুধু নিজের জন্য। তার জীবনে তখন লক্ষ্য থাকত শুধু ক্ষমতা, অর্থ, জ্ঞান বা অ্যাডভেঞ্চার। সে হয়তো হিমালয়ের চূড়ায় উঠত, নতুন মহাদেশ আবিষ্কার করত, বিশাল সাম্রাজ্য গড়ত—কিন্তু তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য, তার সাফল্যকে ভাগ করে নেওয়ার জন্য কোনো নারী থাকত না। কারণ নারীকে তার প্রয়োজনই হতো না।
পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটির হয়তো জন্মই হতো না। কারণ 'পরিবার' মানেই তো একটা বন্ধন, একটা দায়বদ্ধতা। একজন পুরুষের ঘাড়ে এই দায়বদ্ধতা কে চাপিয়ে দিত? কেন সে নিজের কষ্টার্জিত অর্থ, সময় এবং শক্তি একজন নারীর জন্য ব্যয় করবে, যার প্রতি তার কোনো শারীরিক বা মানসিক টানই নেই? সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়া হয়তো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ থাকত, কিন্তু 'বাবা' নামক আবেগঘন অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটত।
নারী দেহের প্রতি এই যে আদিম, অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ—এটাই পুরুষকে প্রথম শিখিয়েছে নিজের বাইরে অন্য কারও জন্য ভাবতে। এই 'লোভ'ই তাকে শিখিয়েছে একটি নির্দিষ্ট নারীকে পাওয়ার জন্য লড়াই করতে, তাকে আগলে রাখতে এবং তার জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করতে। এই লোভই তাকে শিখিয়েছে শিকারি থেকে কৃষক হতে, যাযাবর থেকে সংসারী হতে। সভ্যতার গোড়াপত্তনের পেছনে পুরুষের এই আদিম কামনার এক বিশাল ভূমিকা আছে, যা আমরা ভদ্রতার মুখোশে ঢেকে রাখি।
নারী শরীর পুরুষের কাছে এক অনন্ত রহস্যের নাম। এটা শুধু মাংসপিণ্ড নয়, এটা সৃষ্টির আঁতুড়ঘর। এই শরীরের প্রতি আকর্ষণ না থাকলে বংশবিস্তারের প্রক্রিয়াটাই থেমে যেত। মানবজাতি হয়তো কয়েক প্রজন্ম পরেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। সুতরাং, যে 'লোভ' মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকৃতির নিজের তৈরি করা এক অমোঘ অস্ত্র, তাকে আমরা এককথায় 'অপরাধ' বলে উড়িয়ে দিই কোন যুক্তিতে?
অধ্যায় ২: লোভ থেকে ভালোবাসার জন্ম - রূপান্তরের আশ্চর্য রসায়ন
প্রেম কি শুধুই মানসিক? যারা এমনটা বলেন, তারা হয় চরম বোকা, নয়তো ভণ্ড। প্রেম হলো শরীর এবং মনের এক জটিল ককটেল। এর सुरुवातটাই হয় শরীরী আকর্ষণ দিয়ে। একটি নারীর হাসি, তার চোখের চাহনি, তার হাঁটার ভঙ্গি বা শরীরের কোনো বিশেষ ভাঁজ—এগুলোই পুরুষের মনে প্রথম ঢেউ তোলে। এই প্রথম ঢেউটাই হলো সেই 'লোভ' বা 'কামনা'।
কিন্তু একজন বুদ্ধিমান এবং সংবেদনশীল পুরুষের ক্ষেত্রে এই কামনা এক জায়গায় থেমে থাকে না। সে যখন তার 'শখের নারীকে' পায়, তখন তার এই শারীরিক আকর্ষণ এক নতুন রূপ নিতে শুরু করে। সে তখন শুধু শরীরেই আটকে থাকে না, সে সেই শরীরের ভেতরের মানুষটাকে আবিষ্কার করতে চায়। তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা, তার স্বপ্ন, তার ভয়—সবকিছুর অংশীদার হতে চায়।
এখানেই ঘটে সেই আশ্চর্য রূপান্তর। যে 'লোভ' দিয়ে শুরু হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে যত্ন, দায়বদ্ধতা এবং ভালোবাসায় পরিণত হয়। পুরুষটি তখন তার সঙ্গিনীকে শুধু ভোগ করতে চায় না, তাকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ দিয়ে ভরিয়ে দিতে চায়। তাকে খুশি রাখার জন্য, তার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে। তার সঙ্গিনীর সন্তুষ্টি তখন তার নিজের সন্তুষ্টির চেয়েও বড় হয়ে ওঠে।
নারী দেহের প্রতি আকর্ষণ আছে বলেই পুরুষ তার সঙ্গিনীকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে দেখতে চায়। তাকে সাজিয়ে তুলতে ভালোবাসে। তার জন্য দামী উপহার কেনে। তাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। এগুলো কি শুধুই লোকদেখানো? না। এর গভীরে কাজ করে সেই আদিম প্রবৃত্তি—আমার শিকার, আমার সম্পদ, আমার নারী পৃথিবীর সেরা। এই 'মালিকানা' বোধ যদি ইতিবাচকভাবে পরিচালিত হয়, তবে তা সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলে।
সুতরাং, যে আকর্ষণকে আমরা 'লোভ' বলে গালি দিচ্ছি, সেটাই আসলে ভালোবাসার প্রথম সিঁড়ি। যে পুরুষ তার স্ত্রীর শরীরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে না, সে আসলে তার প্রতি ভালোবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের সম্পর্কটা হয়তো টিকে থাকবে, কিন্তু তাতে কোনো উত্তাপ থাকবে না, কোনো বিদ্যুৎ থাকবে না। সেটা হবে অনেকটা লবণ ছাড়া তরকারির মতো—খেতে হয়তো পারবেন, কিন্তু কোনো স্বাদ পাবেন না।
অধ্যায় ৩: নারী-পুরুষের আকাঙ্ক্ষার ভিন্ন মেরু - প্রেম রোগী বনাম দেহ লোভী
সমাজ পুরুষের 'নারী লোভ'-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, কিন্তু নারীর 'প্রেম রোগ'-কে মহিমান্বিত করে। এটা কি চরম ভণ্ডামি নয়?
আসুন, নারীর মনস্তত্ত্বের গভীরে যাই। একজন নারী কী চায়? সে চায় ভালোবাসা, আদর, যত্ন, নিরাপত্তা এবং মনোযোগ। সে তার প্রিয় পুরুষের কাছে রাণী হয়ে থাকতে চায়। একজন নারী দিনের পর দিন, এমনকি মাসের পর মাস শারীরিক মিলন ছাড়াও কাটিয়ে দিতে পারে, যদি সে তার সঙ্গীর কাছ থেকে পর্যাপ্ত মানসিক আদর পায়। তার চুল নিয়ে একটু খেলা করা, কপালে একটা চুমু খাওয়া, শক্ত করে জড়িয়ে ধরা, তার কথা মন দিয়ে শোনা—এই ছোট ছোট জিনিসগুলোই তার কাছে চরম পাওয়া। নারী হলো 'প্রেম লোভী', 'যত্ন লোভী', 'আদর লোভী'।
এখন প্রশ্ন হলো, নারীর এই যে ভালোবাসার প্রতি, যত্নের প্রতি তীব্র লোভ—এটা যদি অপরাধ না হয়, যদি এটাকে তার প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নেওয়া হয়, তাহলে পুরুষের নারী দেহের প্রতি লোভকে কেন অপরাধ হিসেবে দেখা হবে?
প্রকৃতি নারী ও পুরুষকে ভিন্নভাবে তৈরি করেছে। পুরুষের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ অনেকটা সরাসরি এবং শারীরিক। নারীর আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ তুলনামূলকভাবে পরোক্ষ এবং মানসিক। পুরুষ শরীর দিয়ে মন জয় করতে চায়, আর নারী মন দিয়ে শরীর জয় করতে চায়। দুটোই অসম্পূর্ণ, যদি না একে অপরের পরিপূরক হয়।
একজন নারী যেমন তার স্বামীর কাছ থেকে 'আই লাভ ইউ' শোনার জন্য ক্ষুধার্ত থাকে, একজন পুরুষও তেমনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে একটু শরীরী উষ্ণতার জন্য ক্ষুধার্ত থাকে। নারীর কাছে যেমন 'শুধু সেক্স' একটা অপমানজনক শব্দ, পুরুষের কাছে তেমনি 'শুধু রোম্যান্স' একটা অসম্পূর্ণ অনুভূতি।
যদি নারীর 'প্রেম রোগ' অপরাধ না হয়, তবে পুরুষের 'দেহ লোভ'ও অপরাধ নয়। দুটোই প্রকৃতির তৈরি করা দুটি ভিন্ন চালিকাশক্তি, যা একটি সফল সম্পর্কের জন্য সমানভাবে জরুরি। সমস্যাটা 'লোভে' নয়, সমস্যাটা সেই লোভের প্রকাশ এবং নিয়ন্ত্রণে।
অধ্যায় ৪: নিয়ন্ত্রণের খেলা - বুদ্ধিমান পুরুষ বনাম চরিত্রহীন লুচ্চা
এই আর্টিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত অংশ এটাই। এতক্ষণ ধরে পুরুষের 'নারী লোভে'র পক্ষে যা কিছু বলা হলো, তার সবকিছুই নির্ভর করছে একটিমাত্র শব্দের ওপর—'নিয়ন্ত্রণ'।
আগুন যেমন মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার, যা দিয়ে রান্না করা যায়, ঘর গরম রাখা যায়, আবার সেই আগুনই সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে। পুরুষের কামনাও ঠিক সেই আগুনের মতো।
বুদ্ধিমান পুরুষ কে?
একজন বুদ্ধিমান পুরুষ তার ভেতরের এই আদিম শক্তিকে স্বীকার করে। সে জানে যে নারীর প্রতি তার আকর্ষণ আছে। কিন্তু সে এই শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। সে তার কামনা, তার 'লোভ'-কে একটি নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত করে—তার স্ত্রী বা প্রেমিকার দিকে। তার সমস্ত আকর্ষণ, সমস্ত ফ্যান্টাসি তার সঙ্গিনীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সে বাইরের কোনো নারীকে দেখে আকৃষ্ট হলেও, সেই আকর্ষণকে কীভাবে নিজের সীমানার মধ্যে রাখতে হয়, তা সে জানে। তার 'লোভ' তার সম্পর্ককে আরও উষ্ণ, আরও রঙিন করে তোলে। সে তার সঙ্গিনীর কাছে একজন প্রেমিক, একজন প্যাশনেট লাভার। তার আকর্ষণটা সম্মানের সঙ্গে মিশে থাকে।
চরিত্রহীন লুচ্চা কে?
অন্যদিকে, একজন লুচ্চা বা চরিত্রহীন পুরুষ হলো সেই ব্যক্তি, যে তার ভেতরের আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তার কামনা হলো দাবানলের মতো, যা সবকিছুকে গ্রাস করতে চায়। তার কাছে নারী মানেই একটি ভোগের বস্তু। সে তার স্ত্রী, প্রেমিকা বা রাস্তার কোনো অচেনা মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারে না। তার চোখ সবসময় শিকার খুঁজে বেড়ায়। সে তার 'লোভে'র দাস, প্রভু নয়। তার এই অনিয়ন্ত্রিত কামনাই সমাজে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি এবং অন্যান্য যৌন অপরাধের জন্ম দেয়। তার আকর্ষণটা অসম্মান এবং দখলের মানসিকতা দিয়ে ভরা।
সুতরাং, পার্থক্যটা 'লোভ' থাকা বা না থাকায় নয়। পার্থক্যটা হলো সেই লোভের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে কি না, তার ওপর। একজন পুরুষের 'নারী লোভ' থাকাটা তার পুরুষত্বের পরিচায়ক, কিন্তু সেই লোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই তার মনুষ্যত্বের আসল পরীক্ষা। যে এই পরীক্ষায় পাশ করে, সে-ই প্রকৃত পুরুষ। আর যে ফেল করে, সে নিছকই এক কামনা-সর্বস্ব পশু।
অধ্যায় ৫: বিশ্বাসঘাতকতার ব্যবচ্ছেদ - কেন ভাঙে সম্পর্ক?
এবার আসা যাক সম্পর্কের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায়ে—বিশ্বাসঘাতকতা।
অনেক সময় শোনা যায়, একজন নারী তার স্বামীকে ছেড়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে গেছে। সমাজ সঙ্গে সঙ্গে সেই নারীকে 'নষ্টা', 'চরিত্রহীনা' বলে দাগিয়ে দেয়। আবার যখন একজন পুরুষ তার সুন্দরী স্ত্রীকে রেখে অন্য কোনো সাধারণ নারীর কাছে যায়, তখন তাকে 'লোমপ', 'লোভী' বলা হয়।
কিন্তু আমরা কি কখনো গভীরে গিয়ে কারণটা খোঁজার চেষ্টা করি?
যে নারীটি পালিয়ে যায়, সে কি তার স্বামীর ঘরে ভালো ছিল? সে কি সেই ভালোবাসা, যত্ন আর মনোযোগ পাচ্ছিল, যার জন্য সে একজন 'প্রেম রোগী'র মতো সারাজীবন অপেক্ষা করে? হতে পারে তার স্বামী অনেক টাকা উপার্জন করে, তাকে দামী শাড়ি-গয়না কিনে দেয়, কিন্তু তাকে পাঁচ মিনিট সময় দেয় না। তার মনের কথা শোনে না। তাকে জড়িয়ে ধরে বলে না, "তুমি আছো বলেই আমি আছি।" এই যে মানসিক শূন্যতা, এই যে আদরের জন্য হাহাকার—এই সুযোগটাই অন্য কোনো পুরুষ নেয়। সে হয়তো আর্থিকভাবে দুর্বল, কিন্তু সে ওই নারীকে সেই মানসিক আশ্রয়টা দেয়, যা তার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল।
একইভাবে, যে পুরুষটি অন্য নারীর কাছে যায়, তার দিকেও তাকান। হতে পারে তার স্ত্রী খুব সুন্দরী, গুণবতী এবং সংসারী। কিন্তু সে হয়তো স্বামীর শরীরী চাহিদাকে গুরুত্ব দেয় না। স্বামী কাছে আসতে চাইলে সে হয়তো 'মাথা ধরেছে', 'শরীর ভালো লাগছে না' বা 'অনেক কাজ বাকি' বলে এড়িয়ে যায়। সে হয়তো স্বামীর সাথে মন খুলে কথা বলে, কিন্তু তার শরীরী ভাষায় কোনো আমন্ত্রণ থাকে না। পুরুষের কাছে শারীরিক মিলন শুধু দেহের চাহিদা মেটানো নয়, এটা তার ভালোবাসার প্রকাশ এবং তার পৌরুষের স্বীকৃতি। যখন সে নিজের স্ত্রীর কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়, তখন তার মনে হয় সে অনাকাঙ্ক্ষিত, তার পৌরুষে আঘাত লাগে। এই সুযোগেই অন্য কোনো নারী তার জীবনে প্রবেশ করে, যে তাকে সেই শরীরী উষ্ণতা এবং স্বীকৃতি দেয়।
আমি বিশ্বাসঘাতকতাকে সমর্থন করছি না। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভয়ঙ্কর অপরাধ। কিন্তু অপরকে দোষ দেওয়ার আগে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার প্রশ্ন করা উচিত—আমার সঙ্গীর যে মৌলিক চাহিদা, যা প্রকৃতিগতভাবেই তার মধ্যে আছে, সেটা কি আমি পূরণ করতে পারছি? নারী কি তার 'প্রেমের ক্ষুধা' মেটাতে পারছে? পুরুষ কি তার 'দেহের ক্ষুধা' মেটাতে পারছে?
যদি এই দুইটির কোনো একটিতে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি তৈরি হয়, তবে সম্পর্ক নামক গাড়ির চাকা পাংচার হতে বাধ্য। আজ না হোক কাল, সেই সম্পর্ক ভেঙে পড়বেই।
শেষ কথা: সত্যকে স্বীকার করার সাহস দেখান
পুরুষের 'নারী লোভ' আছে এবং থাকবে। এটা প্রকৃতির নিয়ম। এটাকে অস্বীকার করা মানে নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা। সমস্যাটা লোভে নয়, সমস্যাটা হলো আমাদের ভণ্ডামি, অজ্ঞতা এবং নিয়ন্ত্রণের অভাব।
আমাদের সমাজ ভালোবাসার মানসিক দিকটাকে নিয়ে যত আলোচনা করে, শারীরিক দিকটাকে নিয়ে ততটাই চুপ করে থাকে। সেক্স বা কামনা নিয়ে কথা বলাটা যেন এখনও লজ্জার বিষয়। এই লজ্জার কারণেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক বিশাল কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়। তারা একে অপরের চাহিদা বুঝতে পারে না, বা বুঝতে চাইলেও প্রকাশ করতে পারে না।
সময় এসেছে এই ভণ্ডামির চাদর ছিঁড়ে ফেলার। সময় এসেছে এটা মেনে নেওয়ার যে, একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য মানসিক ভালোবাসার মতোই শরীরী আকর্ষণও সমানভাবে জরুরি। পুরুষের নারী দেহের প্রতি নিয়ন্ত্রিত এবং সম্মানজনক আকর্ষণই হলো একটি страстный (passionate) সম্পর্কের মূল ভিত্তি। আর নারীর প্রেম, আদর এবং যত্নের প্রতি আকাঙ্ক্ষা সেই সম্পর্ককে দিয়েছে গভীরতা এবং স্থায়িত্ব।
আসুন, আমরা লোভকে ভয় না পেয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি। আসুন, আমরা সঙ্গীর প্রকৃতিগত চাহিদাকে সম্মান করতে শিখি। কারণ যে পুরুষ তার ভেতরের আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করে শুধুমাত্র তার সঙ্গিনীর জন্য প্রজ্বলিত রাখতে পারে, তার চেয়ে বড় প্রেমিক আর কেউ হতে পারে না। আর যে নারী সেই আগুনে নিজের ভালোবাসা দিয়ে ঘি ঢালে, তার চেয়ে বড় প্রেমিকা আর কেউ হতে পারে না।
এখন বলুন, আপনার কি এখনো রাগ লাগছে? নাকি আপনার ভাবনার দেওয়ালে সামান্যতম চিড় ধরেছে?
#সংগৃহীত