30/09/2025
সাল ২০৩০। ক্ষমতা হারানোর শোকে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিল্লী থেকে লাশ নিয়ে আসতে হবে ঢাকায়। ভারত সরকার চাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লাশ যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয়। এটা ছিলো শেখ হাসিনার জীবনের শেষ ইচ্ছে।
তবে, বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দিয়েছে, তারা লাশের দায়িত্ব নিতে পারবে না। যদি একান্তই লাশ দেশে আনতে হয়, লাশের সঙ্গে লাশের আত্মীয়স্বজনকে দেশে আসতে হবে। কিন্তু জয়, রেহানা, লিলি কিংবা কোনো আত্মীয়-স্বজনই এই মুহুর্তে লাশের সঙ্গে দেশে আসতে রাজি হচ্ছে না। দেশে আসলেই জেলে ভরে দেওয়ার চান্স আছে।
উপায়ান্তর না দেখে ভারত সরকার আমেরিকায় হাসিনার ঘেটুপুত্র সাকিবাল হাসানকে বার্তা পাঠালো। অনুরোধ করলো অন্তত সে যেন লাশের সঙ্গে বাংলাদেশে যায়। হাসিনা দরদী সাকিবাল হাসান তখন নিউইয়র্কে শো-রুম উদ্বোধনে ব্যস্ত। ৫ বছর আগেও হাসিনার প্রতি তার যে দরদ উথলায়া পড়ত, সেই দরদ এখন আর নাই। একসময় ইচ্ছে ছিলো, হাসিনার কোলে করে দেশে ঢুকবে। কিন্তু এখন সেই সুযোগও নাই। ফলে, শো-রুম উদ্বোধনের ব্যস্ততা দেখিয়ে সেও দেশে যাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিল।
শেষ পর্যন্ত মুজিব তনয়া শেখ হাসিনার লাশ দেশে ফেরানোর দায়িত্ব নিলো মুজিবপ্রেমী ফজলুর রহমান।
কঠোর নিরাপত্তার সাথে দেশে আনা হলো শেখ হাসিনার লাশ। রাতের আঁধারে দাফন করা হলো টুঙ্গিপাড়ায় বাবার কবরের পাশে।
সেই রাতেই বেনাপোল দিয়ে বর্ডার ক্রস করে দেশে ঢুকলো অনলাইন এক্টিভিস্ট হারপিক মজুমদার ও তার সহচর অমি রহমান পিয়াল। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে শিয়ালের মত চুপি চুপি চলে গেল টুঙ্গিপাড়ায়, শেখ হাসিনার কবরের পাশে।
কবরের পাশে বসে নিঝুম মজুমদার অনেকক্ষণ কাঁদলো। তারপর একটা ভাঙা ইটের টুকরো দিয়ে শেখ হাসিনার শিয়রের কাছে ফলকে লিখে দিলো, এখানে শুয়ে আছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জাতির জননী শেখ হাসিনা।
একটি কাকপক্ষীও টের পেলো না তাদের সেই উপস্থিতির কথা। কবরে দু'ফোটা চোখের পানি ফেলে তারা আবারও বর্ডার ক্রস করে ফিরে গেলো নিজ দেশ ভারতে।
সময় গড়াতে গড়াতে কেটে গেলো বিশটি বছর।
সাল দু'হাজার পঞ্চাশ। টুঙ্গিপাড়ার সেই কবরটি এখন জঙ্গলাকীর্ণ মরাভূমি। মানুষজন ভয়ে ওদিকটাতে যায় না। বুড়াবুড়ির মুখে শোনা যায়, কবরস্থানের আশেপাশে নাকি এখনো হাসিনার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরাফেরা করে। মানুষ দেখলেই রক্ত চুষে খায়। রক্তের নেশায় সারারাত হন্য হয়ে ঘুরতে থাকে হাসিনার অতৃপ্ত আত্মা। গোপালগঞ্জের মায়েরা তাদের বাচ্চাদের রাতের বেলা ভাত খাওয়ানোর সময় ভয় দেখায়- তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়, নইলে হাসিনা এসে রক্ত চুষে খাবে। বাচ্চারা হাসিনার গল্প জানে না। তবে এটুক জানে, হাসিনা হচ্ছে একটা ডাইনী, যে রাতের আঁধারে মানুষের রক্ত চুষে খায়।
কেটে যায় আরও বিশটি বছর। এই প্রজন্ম ভুলেই গেছে জাতির জননী শেখ হাসিনার ইতিহাস। তারা জানেই না হাসিনা কে! কী তার পরিচয়!
সেই নতুন প্রজন্মেরই একদল বাচ্চা কিশোর একদিন এডভেঞ্চার করতে গিয়ে ঢুকে পড়ে টুঙ্গিপাড়ার সেই জঙ্গলাকীর্ণ গোরস্তানে। হাঁটতে হাঁটতে ধাক্কা খায় হাসিনার কবরের সাথে। তারা দেখতে পায়, পাশাপাশি দু'টি কবর। একজনের শিয়রের পাশে লেখা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। আরেকজনের পাশে লেখা, জাতির জননী শেখ হাসিনা।
বাচ্চাদের খুব জানতে আগ্রহ হয়, কে এই জাতির পিতা আর জাতির জননী? তারা কি সেই ভাইবোন, যারা ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মারা গেছিলো! নাকি বাবা মায়ের মুখে শোনা সেই হাসিনা ডাইনী, যে মানুষের রক্ত চুষে খেত।
তারা বুঝে উঠতে পারে না। তাদের কৌতুহল আরও বেড়ে যায়।
হঠাৎ কী মনে করে, একটা পাকনা বাচ্চা কবরের কাছে কান পেতে দিয়ে বলে উঠলো- এই কবরে হাসিনা আপা আছে, আমি জানি। আপা, তুমি যদি সত্যিই এই কবরে থেকে থাকো, কথা বলো! প্লিজ কথা বলো।
চারপাশটা হঠাৎই ভৌতিক হয়ে গেলো। কবরের ভেতরটা গমগম করে উঠলো। যেন কবরের ভেতরে থাকা লাশটা কথা বলতে চাইতেছে। বাচ্চারা সবাই কৌতুহলী হয়ে কবরে কান পাতলো।
তখনই কবরের ভেতর থেকে ভেসে আসলো একটা অতৃপ্ত কণ্ঠস্বর- স্বজন হারানোর বেদনা তো আমি বুঝিইইইইইইই.... কী দোষটা করেছিলাম জীবনে..
~ Imran Shahriar