26/06/2025
দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলবে না!
তুমি সবসময় গরিব ছিলে এবং কোনোরকম টিকে থাকতে তোমাকে নিদারুণ কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে—এই তথ্য প্রচার করাতে দুনিয়ার ধনসম্পদ বা সুখ কিছুই বাড়ে না। দারিদ্র্য নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু নেই, ঠিক যেমন মূর্খতা নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই!
পুরনো যে কথাটি প্রচলিত আছে—'গরিব হওয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়'—এটি অর্ধসত্য।
প্রকৃত অর্থে, গরিব হওয়াটাই আসলে একটি লজ্জার বিষয়।
দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলা, দুঃখগাঁথা শোনানো বা গরিব থাকার ইতিহাসকে গর্বের বিষয় হিসেবে তুলে ধরা মোটেও গঠনমূলক নয়। এতে ব্যক্তি বা সমাজের উন্নতি হয় না, বরং তা পিছিয়ে পড়ার মানসিকতা তৈরি করে।
দারিদ্র্যকে আত্মপরিচয় হিসেবে লালন করা বা গর্বের বিষয় হিসেবে দেখানো জীবনের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।
গরিব ছিলে সেটা নিয়ে পড়ে না থেকে, কীভাবে উন্নতির পথে যাবে তা নিয়ে ভাবতে এবং কথা বলতে হবে।
কেউ গরিব হয় বা কঠিন সংগ্রামে আটকে থাকে তিন কারণে— (ক) তারা অজ্ঞ, (খ) তারা অলস, এবং (গ) তারা অযোগ্য।
এটা শুনতে কর্কশ লাগতে পারে। তুমি হয়তো এখনই উত্তেজিত হয়ে পড়বে এবং বলতে চাইবে যে, বস্তিতে বসবাসকারী গরিবরা বা মজুরি নির্ভর শ্রমিকদের তো কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু একটু থামো।
মজুর শ্রেণিই আসলে এই পৃথিবীর মালিক। তারাই সবকিছু তৈরি করেছে এবং চাইলে আগামীকালই তারা এগুলোর মালিকানা অধিকারে নিতে পারে। তাদের মালিকদের জন্য সম্পদ উৎপাদন করার পরিবর্তে তারা যেকোনো সময় কারখানাগুলো ব্যবহার করে নিজেদের জন্য জিনিসপত্র তৈরি শুরু করতে পারে।
কিন্তু তারা তা করে না, কারণ তারা— (ক) এতটাই অজ্ঞ যে, তারা জানেই না এই জগৎ তাদেরই; (খ) এতটাই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অলস যে, তারা চিন্তা করে না এবং তাই আবিষ্কারও করে না যে, এই জগৎ তাদেরই; এবং (গ) তারা অযোগ্য, কারণ তারা চিন্তা করে না।
বুদ্ধিবৃত্তিক আলস্যই জনগণকে নিচে আটকে রাখে। তারা অন্য সবভাবে কঠোর পরিশ্রম স্বেচ্ছায় করে, কিন্তু টেকসই ও ধারাবাহিক চিন্তার পরিশ্রমকে এড়িয়ে চলে। আর যেহেতু তারা তাদের চিন্তা অন্য লোকদেরকে করতে দেয়, সেকারণেই তারা হলো দাস। তারা নিজের মস্তিষ্ক ও বিচারশক্তি ব্যবহার না করে অন্যের মত, বিশ্বাস ও আদেশের ওপর নির্ভর করে চলে।
যতদিন সিনেমা হলগুলো ভিড়ে ঠাসা থাকবে, আর পাবলিক লাইব্রেরিগুলো ফাঁকা থাকবে, ততদিন সাধারণ মানুষ মজুরি-দাস (wage slaves) হয়েই থাকবে।
আমি তোমাকে এসব বলছি, যেন তুমি বুঝতে পারো—দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলার নিরর্থকতা কতটুকু। দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার কথা বলে বেড়ানোয় কারো কোনো উপকার হয়না। এটা কেবল মানুষকে ঠেলে দেয় সস্তা বিনোদনে লিপ্ত হওয়া কিংবা নানা ক্ষণস্থায়ী আনন্দে তার দুর্দশা ভুলে থাকার চেষ্টার দিকে।
তুমি যত বেশি তোমার কঠিন সময়ের ব্যাপারে বলবে ও ভাববে, তত বেশি তুমি কোনো মনের মাদক (mental narcotic) নিতে ক্ষুধিত হবে, কিছু সময়ের জন্য তোমার দুর্দশার তীব্রতা কমাতে। এর ফলে আরো দীর্ঘ সময় তুমি ভুগবে।
তাদের দারিদ্র্য নিয়ে অবিরাম লেখালেখি ও আলোচনা করা—গরিব জনগণকে গরিব রাখতে এর চেয়ে কার্যকর কোনো পদ্ধতি আর নেই!
এটা তাদের মনে গেঁথে দেয়—তারা অসহায়, অক্ষম, তাদের মুক্তির পথ বন্ধ।
তাই,
আগামীর সুসময় সম্পর্কে কথা বলো।
সুসময় আসছেই। তবে এটা কত দ্রুত আসবে তা নির্ভর করে কতজন মানুষ এটা নিয়ে চিন্তা করে এবং কথা বলে তার উপর।
যারা বস্তিতে বাস করে তাদের অবস্থার শোচনীয় ছবি দেখিয়ে বেড়ানোর পরিবর্তে, আগামীর শহরটায় যারা বাস করবে তাদের জীবনযাত্রার সুন্দর চিত্রগুলো দেখাও।
তুমি দশজন লোককে বর্তমান কষ্ট-দুর্দশা কমাতে ব্যস্ত করার চেয়ে বেশি কল্যাণ সাধন করবে—যদি তুমি একজন মানুষকেও আগামীর সেই সুন্দর শহরের জন্য কাজ শুরু করতে অনুপ্রাণিত করতে পারো!
কারণ, সত্যিকারের পরিবর্তন আসে তখনই—যখন কেউ স্বপ্ন দেখে ও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে।
শিশু শ্রম এবং কারখানার খারাপ অবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার বদলে, শ্রমজীবী মানুষদের বুঝাও—তারা যখন জেগে উঠবে এবং নিজেদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিজ পরিচালনা করতে শুরু করবে, তখন কত চমৎকার উন্নত অবস্থা তারা পাবে।
সাধারণ মানুষ কোনো শৃঙ্খলে আটকে নেই, তারা শুধু অজ্ঞতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অলসতায় বন্দি।
তারা যা চায়, তা-ই পেতে পারে—যদি তারা চিন্তা করা শুরু করে!
আর তাদের চিন্তা করানোর উপায় হলো—ধনসম্পদ ও সমৃদ্ধির কথা বলা। এটাই জনসাধারণের জন্য উপযুক্ত দর্শন। এবং একই ব্যাপার একজন ব্যক্তি হিসেবে তোমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যদি জনসাধারণ প্রস্তুত না হয় বা উপরে উঠতে ইচ্ছুক না হয়, তাহলে তোমাকে তাদের সঙ্গে নিচে পড়ে থাকতে হবেনা; তুমি চাইলে এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারো।
কিন্তু তুমি কখনোই এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারবেনা, যদি তুমি তাদের সাথে নিজেকে সবসময় বলতে থাকো যে, তুমি নিচে পড়ে আছো।
তুমি যদি নিজের ব্যাপারে বার বার বলো যে, তুমি কঠিন অবস্থায় আটকে আছো, তাহলে তুমি এই অবস্থার বাইরে বেরোতে পারবে না!
তুমি যদি বার বার নিজেকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখো, যে জীবনে কঠিন সময় পার করছে, তাহলে তুমি আগের মতোই কঠিন সময় পার করতে থাকবে!
তোমার মা-বাবা কত দরিদ্র ছিল, অথবা তুমি শৈশবে কত কষ্টে ছিলে—এসব গল্প বোলো না।
এসব কথা বলার মানে মানসিকভাবে অতীতের সেই দুর্দশার অবস্থায় ফিরে যাওয়া; আর মানসিকভাবে সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়া মানে বাস্তবেও ঐ অবস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো।
তোমার কৈশোর ও যৌবনে যে সুখের সময়গুলো পেয়েছিলে তা নিয়ে কথা বলো এবং সমস্ত দুঃখের সময়গুলো ভুলে যাও।
তুমি কত কঠোর পরিশ্রম করেও কত কম পেয়েছো তা নিয়ে কথা বলো না।
যদি তুমি বেকার পরিশ্রম করে থাকো, তাহলে তুমিই মাথামোটা ছিলে।
আর তোমার উচিত নয় নিজেকে মাথামোটা হিসেবে প্রচার করা।
তোমার করা ভালো কাজের কথা বলো, আর সেই কাজের জন্য তুমি যে ভালো বিনিময় পেয়েছো সেটাও বলো; তাহলে এভাবে তুমি নিজেকে একজন দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করবে, যে কিনা ভালো পারিশ্রমিক অর্জন করতে পারে।
ছলনা, মিথ্যা, চতুরতা, দুষ্টামি, ভন্ডামি এবং দুনম্বরীর আশ্রয় নিয়ো না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নয় বরং নির্ভেজালভাবে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মানুষদের সমতুল্য ঘোষণা করো এবং যে চমৎকার জীবন তুমি পেতে যাচ্ছো ও সমৃদ্ধিলাভের প্রক্রিয়ার ভিতর আছো তা বর্ণনা করো।
উদাহরণ হিসেবে, তোমার বর্তমান আউটফিট নিয়ে লজ্জিত, দুঃখিত, হীনম্মণ্য হয়োনা, তোমার কম পোশাক থাকার কথা বলোনা বা ‘পরার জন্য কিছুই নেই’ বলোনা।
বরং তুমি যে সুন্দর দামী পোশাকগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছো বা ব্যবস্থা করছো, সেগুলোর কথা ভাবো।
অভাব নয়, সম্ভাবনার দিকে মনোযোগ দাও।
ভবিষ্যতের সৌন্দর্য কল্পনা করো এবং সেটার দিকে এগিয়ে চলো।
কোনোভাবেই দারিদ্র্যের কথা বলো না, আলোচনা কোরো না।
দারিদ্র্যের অস্তিত্ব আছে—এমন ধরেই নিও না।
অভাবকে বাস্তব বলে স্বীকার করো না।
তোমার জীবনে কোনো দারিদ্র্য নেই।
ধনসম্পদের কথা বলো, চিন্তা করো।
সমৃদ্ধির কথা বলো, চিন্তা করো।