
22/06/2025
আমেনা সুলতানা। রাজবাড়ীর এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর থেকে অনার্স শেষ করতেই পরিবার বিয়ে দিয়ে দেয় তাকে। স্বপ্ন ছিল আরও পড়ার, পৃথিবী ঘুরে দেখার। কিন্তু বিয়ের পর সংসারের চাকা ঘুরছিল স্বামীর সীমিত আয়ের ছোট চাকরিতে। জীবন চলছিল, কিন্তু স্বপ্ন থেমে ছিল।
“মন চাইত বাইরে পড়তে যাই, নতুন কিছু শিখি, নিজেকে গড়ি। কিন্তু তখন মনে হতো, আমার সাধ্য নেই,”—বলছিলেন আমেনা। একসময় সাহস করে IELTS পরীক্ষা দেন। স্কোর খুব একটা ভালো আসেনি—৫.৫ থেকে ৬-এর মতো। চারপাশের মানুষজন বলেছিল, এই স্কোরে বিদেশ যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু আমেনা থেমে থাকেননি। আরও কয়েকবার চেষ্টা করেছেন। নানা বাধা এসেছে—অপমান, স্বপ্নভঙ্গ, ভিসা রিজেকশন—সবই পাড়ি দিয়েছেন তিনি।
“আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন ছিল যেদিন USA ভিসার জন্য অনেক কষ্টে জমানো টাকা খরচ করে আবেদন করেও রিজেক্ট হয়েছিলাম। ভিসা অফিসার কিছু জিজ্ঞেসই করেননি। তখন মনে হচ্ছিল, আমি কি পারব না কখনোই?”
তবে এখানেই থেমে যাননি আমেনা। আবার বুক ভরে স্বপ্ন দেখেছেন। যুক্তরাজ্যের একটি রিসার্চ প্রোগ্রামে আবেদন করেন, ইন্টারভিউ দেন এবং অফার লেটার পান। স্বামীকেও পাশে পান। দুজনেই যুক্তরাজ্যের জন্য ভিসা আবেদন করেন। এবার আর হতাশ হতে হয়নি। মাত্র চার দিনের মাথায় ইন্টারভিউ ছাড়াই হাতে পান ভিসা।
“আমি বিশ্বাস করি, কখনো কখনো ভাগ্য দরজা খোলে, কিন্তু তার আগে অনেকগুলো বন্ধ দরজা পেরিয়ে যেতে হয়।” ভিসা পাওয়ার এক সপ্তাহ পরেই স্বামীও পান ভিসা। দুজন একসঙ্গে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। সেখানে পৌঁছানোর কিছুদিনের মধ্যেই দুজনেই কাজ শুরু করেন, আমেনা পড়াশোনা শুরু করেন।
রাজবাড়ীর এক প্রান্ত থেকে উঠে আসা এই মেয়েটি এখন যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, আর তার পাশে রয়েছেন সেই মানুষটি—যার হাত ধরে একদিন সংসার শুরু করেছিলেন
“আমার IELTS স্কোর ভালো ছিল না, আমার ফলাফল কোনো দিক থেকেই অসাধারণ ছিল না। আমি শুধু থেমে যাইনি। যেখানেই একটা দরজা বন্ধ হয়েছে, আমি অন্য দরজা খুঁজে বের করেছি।”
আজও আমেনা মনে করেন, তার যাত্রা কেবল শুরু। সময় লাগবে, কিন্তু তার জায়গা হবে আরও অনেক ওপরে। তার গল্প প্রমাণ করে, সাধ্য আর সুযোগের ব্যবধান সাহস দিয়ে পার হওয়া যায়।
আর এই সাহসী যাত্রায় সবসময় ছায়ার মতো পাশে ছিলেন তার জীবনসঙ্গী—তার স্বামী। আর পুরো স্বপ্নযাত্রায় সহযোগী হিসেবে ছিলো RSZ Education Service Limited.
কপিরাইটঃ পাবলিকিয়ান