25/12/2024
একটি ছোট গ্রামে এক সময় বাস করত ইব্রাহিম নামের এক যুবক। ইব্রাহিম ছিল খুবই সরল মনের মানুষ। তার একটি পুরানো সাইকেল ছিল, আর সেটি ছিল তার একমাত্র সম্বল। কিন্তু ইব্রাহিমের সাইকেলটি সাধারণ সাইকেলের মতো ছিল না। সাইকেলের সামনে একটি বড় ঝুড়ি ছিল, আর ঝুড়িটি প্রতিদিন রঙিন ফুল দিয়ে ভরা থাকত।
ইব্রাহিম ভোরবেলা উঠে গ্রামের বাগানে ফুল সংগ্রহ করত। সকালবেলা শিশিরভেজা ফুলগুলো তার ঝুড়িতে রাখলে সেগুলো আরও বেশি সতেজ আর সুন্দর দেখাত। এরপর সে তার সাইকেল নিয়ে গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়াত। গ্রামের মানুষ তাকে ভালোবেসে ডাকত "ফুলের সাইকেলওয়ালা।"
ইব্রাহিম শুধু ফুল বিক্রি করত না; সে ফুলের সঙ্গে হাসি আর সুখও বিলিয়ে দিত। সে যার বাড়িতে যেত, সেই বাড়িতে যেন নতুন জীবনের ছোঁয়া লাগত। একদিন সে একটি বুড়ি মায়ের কাছে গেল, যিনি তার ছেলেমেয়েদের ছেড়ে একা বসবাস করছিলেন। ইব্রাহিম তাকে একটি লাল গোলাপ দিয়ে বলল, "এই ফুলটা আপনার মতোই সুন্দর। আপনি হাসলে পুরো গ্রাম আলো হয়ে যায়।" কথাগুলো শুনে বুড়ি মা হাসলেন, আর তার চোখে আনন্দের জল।
একদিন ইব্রাহিম একটি মেয়ে শিশুর কান্নার শব্দ শুনল। মেয়েটির মা অসুস্থ ছিল, আর বাড়িতে কোনো আনন্দ ছিল না। ইব্রাহিম ঝুড়ি থেকে কিছু রঙিন ফুল নিয়ে শিশুটির হাতে দিল। সে বলল, "এই ফুলগুলো তোমার মায়ের জন্য। সে এগুলো দেখলে ভালো বোধ করবে।" শিশুটি হাসল, আর সেদিন থেকেই তাদের বাড়িতে আনন্দ ফিরে এল।
এভাবে ইব্রাহিম শুধু ফুল বিক্রি করেই নয়, তার ভালোবাসা, হাসি আর সহানুভূতি দিয়ে পুরো গ্রামটাকে বদলে দিয়েছিল। গ্রামের লোকেরা বুঝতে পেরেছিল, জীবনের সৌন্দর্য শুধু বস্তুগত জিনিসে নয়, বরং তা লুকিয়ে আছে ছোট ছোট আনন্দে।
ইব্রাহিমের সাইকেলের ঘণ্টার আওয়াজ যখন গ্রামে ভেসে উঠত, তখন সবাই জানত—ফুলের সঙ্গে সুখও এসে পড়েছে তাদের দরজায়।