09/10/2025
বই: আমাজনিয়া
লেখক: জেমস রোলিন্স
অনুবাদক: রাকিব হাসান
জনরা: থ্রিলার (অ্যাডভেঞ্চার)
পৃষ্ঠা সংখ্যা: 415
রিভিউ: মাহমুদা আক্তার মিতু
সারসংক্ষেপ:
পাদ্রি গার্সিয়া লুই বাতিস্তা জঙ্গলে নিড়ানি দেয়ার সময় এক আগন্তুককে দেখতে পান। প্রচন্ড জ্বরে কাবু হয়ে ছিলো লোকটি। গার্সিয়া তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও লোকটি কোনো উত্তর দিতে পারে না। পাদ্রি গার্সিয়া তাকে মিশনারি গ্রামের ভেতর নিয়ে যান।
আগন্তুকের গায়ে কিছু অদ্ভুত এবং অচেনা চিহ্ন আঁকা ছিলো। মিশনারি গ্রামটিতে থাকা এক ইন্ডিয়ান চিহ্নগুলো দেখে ভয়ে আঁতকে ওঠে এবং অশুভ আত্মা বলে সম্বোধন করে। বাতিস্তার নির্দেশে সে চিকিৎসা সামগ্রী আনতে যায় এবং আসার সময় সাথে করে একজন শামানকে নিয়ে আসে।
বৃদ্ধ শামান(চিকিৎসক/বৈদ্য) আগন্তুকের বুকে ও শরীরে ট্যাটুগুলো দেখে অভিশাপ বলে এবং মারা যাওয়ার পর তাকে পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়।
"চিহ্নগুলো ব্যান আলীদের চিহ্ন"
পাদ্রি বাতিস্তা কুসংস্কার বলে ব্যাপারটা উড়িয়ে দেয়।
পরবর্তীতে আগন্তুকের পরিচয় জানতে পেরে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আগন্তুকটি এই মিশনারি গ্রামেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আগন্তুকটি CIA এর সাবেক সৈনিক জেরাল্ড ক্লার্ক। রহস্যের সূচনা এখান থেকেই।
৪বছর আগে সিআইএ'র সদস্যসহ একটি গবেষণা দল চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব আনার উদ্দেশ্যে অভিযান চালান আমাজন জঙ্গলে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর দলটির সাথে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুরো দলটি যেন আমাজনের বুকে চিরতরে হারিয়ে যায়।
দলটির সন্ধানে আরও একটি নতুন দলকে পাঠানো হয় আমাজনে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয় সকলকে। হারিয়ে যাওয়া দলটির প্রধান গবেষক কার্ল র্যান্ডের পুত্র নাথান র্যান্ড নিজ উদ্যোগে অনুসন্ধান চালিয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থাভাব, সাহায্যের অভাব এবং একইসাথে হতাশায় সেই অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হয় না।
এতবছর পর সেই দলেরই একজন অর্থাৎ জেরাল্ড ক্লার্ককে পাওয়া গেছে। এত বছর পর জেরাল্ড ক্লার্ককে খুঁজে পাওয়া গেলেও রহস্যের জন্ম দেয় তার দুটি হাত। কারণ অভিযানে যাওয়ার পূর্বে তার হাত ছিলো একটি। এছাড়াও জেরাল্ড ক্লার্কের গায়ে অনেকগুলো ছোটো ছোটো টিউমার পাওয়া গেছে এবং ক্যান্সারও ছিলো তার।
জেরাল্ড ক্লার্ক কথা বলতে পারেনি কারণ তার জিহবাও ক্যান্সারে খেয়ে নিয়েছে।
সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন তার হাত কী করে জন্ম নিলো? তার শরীরের এই টিউমার এবং ক্যান্সারগুলোর কারণই বা কী?
এই রহস্য উদঘাটনে একটি দল পাঠানো হয় আমাজনের অভিযানে। অপারেশনটিতে অপারেশন লিডার হিসেবে থাকে ফ্রাংক ওব্রেইন, ফ্রাংকের বোন ডক্টর কেলি ওব্রেইন, ভাষা দক্ষতার জন্য অ্যানথ্রপলজিস্ট আনা ফঙ, ডক্টর কাউয়ি তিনি এই জঙ্গল, বিভিন্ন গোত্র, ভাষা এবং শামানদের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানী, টেলাক্স কর্মকর্তা রিচার্ড জেন, বায়োলজিস্ট ম্যানুয়েল, রেঞ্জার্স লিডার ওয়াক্সম্যান এবং অন্যান্য রেঞ্জার্স। আর এই দলের মূল নেতৃত্বদানকারী এবং উপন্যাসের নায়ক নাথান র্যান্ড।
অপরূপ সৌন্দর্যের আড়ালে অকল্পনীয় রহস্য এবং ভয়ংকর বিপদে ঘেরা আমাজনে যাত্রা শুরু হয় দলটির।
বনে প্রতিটি পদে পদে ভয়ংকর সব বিপদ অপেক্ষা করছে দলটির জন্য, সাথে পেছনে ধাওয়া করছে অজানা শত্রু দল।
দুর্গম এই বনে তাদের শেষ পরিণতি কী হয়েছিলো? নাথানের বাবা কার্ল র্যান্ডের এবং বাকিদের ভাগ্যে শেষ অব্দি কী ঘটেছিলো; নাথানরা কি সেই রহস্য উদঘাটনে সফল হয়েছিলো?
জেরাল্ড ক্লার্কের হাত গজানোর রহস্যের কি কোনো কিনারা পেয়েছিলো?
আমাজনের গভীরতা, রহস্যময়তা এবং নিষ্ঠুরতাকে ছাপিয়ে তারা কি আদৌ সভ্য জগতে ফিরতে সক্ষম হয়েছিলো?
সকল প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে আমাজনিয়া বইটিতে।
রিভিউ:
বইটির শুরুটা বেশ ধীরে চলছে বলে মনে হয়। বইটি কেনার পর থেকে মুখবন্ধসহ প্রথম অধ্যায় আমি বেশ কয়েকবার পড়েছি কারণ প্রতিবারই মনোযোগে ভাটা পড়ে। শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালে অর্থাৎ এ বছর বইটি পড়ে শেষ করলাম। সম্ভবত ২মাসের বেশি হয়েছে বইটি পড়ছি। মোট ১৯টি অধ্যায় আছে বইটিতে।
আমার মনে হচ্ছিলো আমিও যেন নাথানসহ অন্যান্য চরিত্রদের (কাউয়ি, ম্যানুয়েল, ফ্রাংক, কেলি, জারগেনসন, ওয়াক্সম্যান, আনা, ক্যারেরা, র্যাকজ্যাক, কসটসদের) সাথে আমাজন জঙ্গল ঘুরে বেড়াচ্ছি। এতো সুন্দর ও জীবন্ত বর্ণনা দিয়েছেন লেখক।
আর জঙ্গলের প্রতিটি বিপদই টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি করছিলো। ওইযে মনে হচ্ছিলো নাথানদের সাথে যেন আমিও আভিযানে আছি; ফলস্বরুপ দুর্গম পথ পারি দিতে গিয়ে, প্রতিটি ভয়ংকর বিপদেই মনে হচ্ছিলো কীভাবে উদ্ধার হওয়া যাবে? কতজনকে হারাতে হবে? এইযে একেক পর একজনকে হারাতে হচ্ছিলো এটা ভীষণ মন খারাপ করে দিচ্ছিলো।
জেমস রোলিন্স সত্যিই অসাধারণ। দারুণ এক অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার উপহার দিয়েছেন পাঠকদের। প্রতিটি অধ্যায় পড়ে শেষ করার পর আমার ভীষণ মন চাচ্ছিলো যে কাউকে সামারিটা শুনাই । ১০ম অধ্যায় থেকে প্রতিটি অধ্যায় শেষ করে ওই অধ্যায়ের ছোটোখাটো একটা সামারি আমি আমার বন্ধুকে শোনাচ্ছিলাম।
বলে রাখা ভালো। এই বইটি আমার অনেক শখের বই। আমি বইটি কিনেছিলাম মূলত ফ্ল্যাপ অংশটুকু পড়ে এবং বইটির নাম দেখে। আমাজন বনের প্রতি আমার এমনিতেও একটু আগ্রহ আছে। আমাজনের প্রতি আগ্রহ যে থাকবে তা অতি স্বাভাবিক।
এক কথায় বলছি বইটি অসাধারণ। আমাজনে যাত্রা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত কষ্ট করে পড়তে পারলে এরপর আর আগ্রহে ভাটা পড়বে না বরং আকর্ষণীয় মনে হবে। আমাজনের অপরূপ সৌন্দর্য যেমন মন কাড়বে ভয়ংকর বিপদ তেমনই ভীত করবে।
যারা থ্রিলার এবং অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের অবশ্যই বইটি পড়া উচিত।