21/11/2025
হিন্দু ধর্ম মতে ভূমিকম্প (একটি ত্রিতাপ ক্লেশ):-
আমাদের জীবনে সুখ আর দুঃখ আসবেই।সুখ আসলে পরবর্তীতে দুঃখ আসে আবার দুঃখ আসলে আবার সুখ আসে যা এটা ঋতু পরিবর্তনের মত হয়ে থাকে।এই কথাটি ভগবদ্গীতার ২/১৪ নং শ্লোকে বলা হয়েছে।যদিও এই জগতে সুখ বলতে কিছু
নেই এখানে খালি দুঃখই পাওয়া যায়,(দুঃখালয়মশাশ্বতম্-গীতা ৮/১৫)
আর সুখটা হচ্ছে দুঃখের সাময়িক নিবৃতিকে বোঝায়।
তাই বৈদিক শাস্ত্রে ৩ ধরনের দুঃখ বা ক্লেশের কথা বলা
হয়েছে।
১) আধ্যাত্মিক ক্লেশ
২) আধিভৌতিক ক্লেশ
৩) আধিদৈবিক ক্লেশ
মন ও শরীর থেকে যে দুঃখ পাব তাকে আধ্যাত্মিক ক্লেশ বলে।
কখনো কখনো আমাদের রোগ, জরা, মানসিক দুঃখ হয়ে থাকে যার কারনে আমরা খুবই দুঃখ অনুভব করি।
এই ধরনের দুঃখ নির্মূলের জন্যে বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু তারা এই দুঃখ চিরতরে বন্ধ করতে পারছে না বরং দিন দিন তা উত্তরাত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
আরেকটি দুঃখ হল আধিভৌতিক দুঃখ, এই দুঃখটি আমরা অন্য কোন জীব থেকে পেয়ে থাকি, যেমন–জীবানুর
আক্রমন,সর্পদংশন,মানুষের শত্রুতা ইত্যাদি। এমনকি মশা-মাছিও
আমাদের প্রাণসংশয় করে ফেলে।তাই বহু জীব থেকে আমাদের এই দুঃখ ভোগ করতে হয়। আর আধিদৈবিক ক্লেশ বা দুঃখ হল দেবতারা আমাদের যে
দুঃখ দিয়ে থাকে।যেমন– ভূমিকম্প,টর্নেডো,সাইক্লোন,
প্রবল ঝড়, বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরি, সুনামি, বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি,শৈতপ্রবাহ, অতিরিক্ত গরম ইত্যাদি।এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে আমরা এতই দুঃখ পাই যা আমাদের জীবনে অতিশয় চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।বিজ্ঞানীরা এসব
দুঃখের নির্মূলের জন্য কতিপয় অনেক ব্যবস্থা নিলেও এই দুঃখ
দিন দিন বেড়েই চলছে।
উপরের ক্লেশ থেকে বুঝা যায় ভূমিকম্প হলো একটি আধিদৈবিক
ক্লেশ।যা পৃথিবীর যেকোন জায়গায় যেকোন সময় হতে পারে যার কোন পূর্ব বার্তা নেয়।
অথর্ব্বেদ ১৯/১/১০/৮
বলা হয়েছে-
শং নো ভুমির্বেপ্যমানা শমুল্কা নির্হতং চ যৎ।
শং গাবো লোহিতক্ষীরাঃ শং ভুমিরব তীর্যতীঃ।।
অনুবাদ-
কম্পমানা পৃথিবী আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোক ।
উল্কাপাতে দগ্ধ যাহা কিছু, তাহা মঙ্গলের জন্যে হোক ।
লোহিতক্ষীরা গাভীগণ দোষনিবারিকা হোক ।
(ভূমিকম্পাদির দ্বারা) বিদীর্যমাণ পৃথিবী মঙ্গলজনক হউক।
এই মন্ত্রে বর্ননা করা হয়েছে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয় এবং
ভূমিকম্পের ফলে মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই জন্যে
প্রার্থনা করা হয়েছে। এমনকি মাঝে মাঝে সমুদ্রেও ভূমিকম্প হয় তা যজুর্বেদে ৮/২৮/১ বলা হয়েছে–
এজতু দশমাসো গর্ভো জরায়ুণা সহ।
যথাহয়ং বায়ুরেজিত যথা সমুদ্র এজতি।
এবায়ং দশমাস্যো অস্রজ্জরায়ুণা সহ।।
অনুবাদ-
বায়ু যেরূপ চলে, সমুদ্র যেরূপ কাঁপে, সেরূপ দশ মাসের গর্ভ গর্ভবেষ্টরে সাথে কম্পিত হোক,সম্পূর্ণ অবয়ব এ গর্ভ
গর্ভবেষ্টনের সাথে নির্গত হোক ।
এই মন্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে যে,সমুদ্রে কম্পন হয় যা সামুদ্রিক ভূমিকম্প নামে পরিচিত ।যদিও বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারে নাই।তবে তারা কিছু থিউরি প্রদান করে ভূমিকম্প হওয়ার কারন।কিন্তু বৈদিক
শাস্ত্রে ভূমিকম্পনের কিছু কারণ বর্ণনা করা হয়েছে।যেমন–চন্দ্রের কারনে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
ত্বং সমুদ্রিয়া অপোহগ্রিয়ো বাচ ঈরয়ন্।পবস্ব বিশ্বমেজয়।।
(ঋকবেদ-সংহিতা ৯/৬২/২৬)
অনুবাদ-
হে চন্দ্র!তুমি শ্রেষ্ঠ,পৃথিবীকে কাঁপিয়ে থাক।তুমি আমাদের স্তুতিবাক্য গ্রহণপূর্বক আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করিয়া দাও।
এই মন্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে চন্দ্রের কারণে এই জগৎ মাঝে
মাঝে কাঁপিয়া থাকে।যাহোক এই ভূমিকম্প নিয়ে শাস্ত্রে অনেক ব্যখ্যা আছে। কিন্তু এই দুঃখ কেন আমরা পাই তার কারন
হলো যখনই আমরা কোন পাপ কার্য করব বা প্রকৃতির বিরুদ্ধ কর্ম করব তখন সেই কর্মের ফল আমাদের ভোগ করতে হবে।তাই আমাদের এই দুঃখ নির্মূল কোন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
হবে না।তার জন্যে চাই আধ্যাত্মিক সমাধান।তাই আমরা যতবেশি ভগবানের সেবা,নাম করব এবং বেশি বেশি
আধ্যাত্মিক কর্মগুলো করব ততই এই ত্রিতাপ দুঃখগুলো কমতে থাকবে।
তাই আমাদের ভগবান গীতাতে শিখিয়েছে কিভাবে এই দুঃখের নিরসন করতে হয় আর এই দুঃখগুলো কিভাবে সহ্য করতে হয়।
আমাদের উচিত সর্বদা প্রস্তুত থাকা, যেকোন সময় আমাদের এই মায়াজগত ছেড়ে যেতে হতে পারে।
তাই নিত্য কৃষ্ণ নাম জপ করুন, নাম প্রচার করুন, ভালো কর্ম করুন।
- হরে কৃষ্ণ |🌿🌺
Copy Post