21/07/2025
আজকের এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার দায় কোনোভাবেই বিমান বাহিনী এড়াতে পারে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক বিমান দুর্ঘটনাটিতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। পুড়েছে শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। আরও অনেকেই মৃত্যুপথযাত্রী।
যদিও বিমান বিধ্বস্ত হবার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে, কিন্তু সবগুলো কারণের দায় বিমান বাহিনীর উপরেই বর্তাবে। যান্ত্রিক ত্রুটি হলে সেটা তাদের মেইনটেনেন্স এর গাফিলতি ছিল। অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে বিমানের এয়ারফ্রেমে বাড়তি চাপ পড়ে থাকলে সেটাও বাহিনীর দোষ কেননা তারা নতুন, আরও রিলায়েবল বিমান সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পাইলট কিংবা ATC এর নির্দেশনা ভুল হয়ে থাকলে বাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং ইমার্জেন্সি রেসপন্স এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
প্রত্যেকটি বিমান বিধ্বস্ত হবার পরে ISPR একটা মুখস্ত বুলি আওড়ায়। "দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাইলট বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন।" । এগুলো ইমেজ রক্ষায় ড্যামেজ কনট্রোল ছাড়া কিছুই নয়। দুনিয়ার সব দেশের পাইলটদেরই এমন স্ট্যান্ডার্ড নির্দেশনা থাকে। এটা ব্যতিক্রম কিছু না। এসব ইমোশনাল কথা বলে পাইলটকে নিয়ে ফাল পাড়া একটা দৃষ্টিকটু বিষয়। এছাড়া অনলাইনে কিছু অতি উৎসাহী আছে যারা ক্র্যাশ করা পাইলটের বীরত্বগাঁথা নিয়ে আকাশ-কুসুম কাল্পনিক গল্প লেখে প্রচার করা শুরু করে। এসব ভংচং বাদ দিয়ে পুরো বিষয়টিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করার তাগিদ রইলো। পাইলটের ভুল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। দুনিয়া জুড়ে সব দেশের পাইলটের ভুলের জন্যই বিমান বিধ্বস্ত হয়। তারা কেউ ফেরেশতা নয়। সব পাইলটই চায় তাদের বিমান ক্র্যাশ করে কেউ যেন মারা না যায়। একটি পাইলটকে হারানো সবসময়ই একটা কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা। একটা তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়া কাম্য নয়। একটি পাইলট গড়ে তুলতে বহু রিসোর্স বিনিয়োগ করতে হয়। আমাদের বিশ্বাস, তিনিও আজকের এই মর্মান্তিক ঘটনা ইচ্ছা করে ঘটাননি। তবে, তার যদি ভুল থাকে, সেটিও আমাদেরকে আলোচনা করতে হবে। এসব দোষ লুকিয়ে রাখা ভবিষ্যতে ভালো কিছু বয়ে আনে না। এতে করে মানুষের মধ্যে একটা ভুল সুপেরিওরিটি কমপ্লেক্স তৈরি হয়। এটা খারাপ জিনিস। আশা করবো বিমান বাহিনী ফাইনাল তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশে আনবে। কার দোষ ছিল সেটি জানার অধিকার আমাদের সবার আছে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কোনোভাবেই এই ঘটনার জন্য দায়মুক্তি দেওয়া যাবে না। তারা মোটা দাগে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী বিমান বাহিনী নির্মাণে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালে জরুরি ভিত্তিতে স্টপ গ্যাপ হিসাবে F-7BGI কিনলেও ২০২৫ সালে এসে এসব বিমান মুড়ির টিন ছাড়া কিছুই নয়।
এই ঘটনায় দোষীদের যথাযথ বিচারের দাবি জানাই। একইসাথে নিহতদের পরিবারকে এবং আহতদেরকে যথোপযুক্ত আর্থিক সহায়তা দান এবং বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা- দোষকে দোষ হিসাবেই দেখতে হবে। ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের পক্ষ নিবেন না কেউ।
Copied!