03/10/2025
টেনে হিচড়ে চোখের সামনে নিয়ে যায় সহযাত্রীকে এমনও এক পেশা রয়েছে বাংলাদেশে....
এই পেশাগুলো হলো মৌয়াল, কাকড়া ধরা টিম, জেলে, কাঠুরে যারা সুন্দরবন থেকে তাদের জীবিকা সংগ্রহ করে। এদের এই বনজীবী পেশায় যেমন রয়েছে বৈচিত্র তাঁর চেয়ে বেশি রয়েছে নির্মম বাস্তবতা। এই উপকূলবর্তী মানুষদের কাছে সুন্দরবন ছাড়া তেমন কোনো আয়-রোজগারের পথও নেই। এই বনজীবী মানুষেরা প্রতিনিয়ত চোখের সামনে মৃত্যুকে উপলব্ধি করে, তবুও তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য সুন্দরবনে ছুটে যান।
আর সেখানেই ঘটে তাদের সঙ্গে জীবন-মরণের টিকে থাকার লড়াই। এই তো মাত্র দুদিন আগে ঢাংমারীর সুব্রতকে কুমিরে নিয়ে গেছে। বিষয়টি বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ হয়াতে বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হয়াতে দেশের মানুষ বিষয়টি জানতে পাড়ে। কিন্তু সুন্দরবনে এরকম কত শত বনজীবী যে এ অব্দি বনে যেয়ে মারা গেছেন, তা আল্লাহ মালুম। যাইহোক, উনারা গিয়েছিলেন কাকড়া ধরতে। জানেন, ছোট্ট একটি খাল পার হওয়ার সময় সবাই পাড় হতে পারলেও, পরিশেষে সুব্রত মণ্ডল পাড়ে উঠার সময় দানবীয় আকৃতির কুমিরের মুখের শিকারে পরিণত হন। সুব্রত তৎক্ষণাৎ কুমিরের কবলে পড়ে যান। বাকী সহযাত্রীরা ওই পরিস্থিতি দেখে সুব্রতকে টেনে হিচড়ে কুমিরের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা পেরে ওঠেননি। কুমিরের শক্তির কাছে হেরে যান তারা। তারপর সুব্রতকে মুখে নিয়ে কুমির খালে ডুব দেয়। সহযাত্রীরা কুমিরকে অনুসরণ করতে থাকেন। মাঝে মধ্যে ডুব দেয় আবার উঠে আসে, এভাবে করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তবুও তারা সুব্রত মণ্ডলকে পাননি।
পরবর্তীতে আরও দলবল বাড়ে এবং গভীর রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সুব্রতের নিথর দেহ খুঁজে পান। অথচ সুব্রত মণ্ডল ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগারকারী ব্যক্তি, আর তার স্ত্রী তখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আহা, কী নিয়তি! চলে গেলেন সুব্রত, দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে কুমিরের শিকারে পরিণত হয়ে। তবে কী? সুব্রতের কপালের লিখনেই লিখা ছিলো একদিন কুমিরের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবেন।
হায়, আফসোস!
এই সুন্দরবনাঞ্চলের জনপদের মানুষের জীবন এতটাই সংগ্রামী, তার উপর তাদের জীবনের নিশ্চয়তা বলতে কিছু নেই। তারা কখনো বাঘ, কখনো কুমির এই মাংশাসী প্রাণীর শিকারে পরিণত হয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন। আর তাদের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর শোক বয়ে বেড়াতে হয় স্ত্রী, সন্তান, পরিবারের লোকজনকে। অবশ্য এই জনপদের মানুষের মৃত্যুর মিছিলও বেশ লম্বা। গত বছর সুন্দরবনের একই জায়গায় কুমিরের আক্রমণে মারা গিয়েছিলেন ঢাংমারীর মোশাররফ। তার আগের বছর একইভাবে মারা যান কালাবগীরের খাইরুল। বাঘের আক্রমণেও মৃত্যুর মিছিল কম নয়।
যারা সুব্রতের সঙ্গে ছিলেন তারা নিজ চোখে দেখেছেন সুব্রতের মৃত্যু। কিংবা বাঘ যখন হঠাৎ করে দল থেকে একজনকে নিয়ে যায়, তখনও তারা মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে এই জনপদ ছেড়ে সুন্দরবন থেকে সরে আসতে পারেন না।
সুন্দরবন জনপদের লাখো মানুষ প্রতিনিয়ত এই ভয়ংকর পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকে জীবন-মরণের সুতোয় দুলতে থাকেন।
- বাদশা আল ফাহাদ পিয়াশ।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এন্ড ট্রাভেল কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
গিরিধারা আবাসিক এলাকা, দক্ষিণ মাতুয়াইল, ঢাকা।
৩ অক্টোবর, ২০২৫।