
12/09/2025
গল্প: ভয়ংকর সেই রাত।
আমি অপু। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। ১৯৯৬ সাল। আষাঢ় মাসের বিকেল।
বৃষ্টি ঝিরিঝিরি করে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলে ফিরেও মনটা শান্ত হচ্ছিল না। হঠাৎ এক বন্ধু খবর দিলেন আমার টেলিফোন এসেছে(তখনকার দিনে মোবাইল ফোন ছিল না,ল্যান্ডফোনে কল আসতো)। আমি দৌড়ে গেলাম রিসিপশনে। ফোনের রিসিভার তুলতেই বড় চাচীর কান্নার আওয়াজ পেলাম। জানতে পারলাম, বড় চাচা আর নেই। খবরটা শুনে মুহূর্তের মধ্যে সব এলোমেলো হয়ে গেল।
তখন আজকের মতো এত সহজে বাড়ি যাওয়ার উপায় ছিল না। রাতের ট্রেন ছাড়া আর কোনো ভরসা নেই। কোনোমতে ব্যাগ গুছিয়ে কমলাপুর স্টেশনের দিকে রওনা হলাম। বৃষ্টিটা আরও জেঁকে বসল।
ট্রেন যখন ছাড়ল, তখন প্রায় সন্ধ্যা। কামরার আবছা আলোয় ভেজা রাতের ছবিটা আরও বিষণ্ণ লাগছিল। সারা রাস্তা কেবল চাচার হাসিমাখা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। কত স্মৃতি! ছোটবেলার সেই ঘুড়ি ওড়ানো, পুকুরে ডুব সাঁতার...
রাত তখন দুটো বাজে। ট্রেন গ্রামের ছোট্ট স্টেশনটাতে এসে থামল। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর অঝোর ধারায় বৃষ্টি। স্টেশনে একটাও মানুষ নেই, দূর থেকে একটা শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে। বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠল। এই রাতে, একা, হেঁটে বাড়ি যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
বৃষ্টিতে ভিজে পথঘাট একাকার। কাঁধে ব্যাগ, হাতে ছাতা – তবুও শীত শীত করছিল। গ্রামের মেঠো পথ ধরে একা হাঁটছি। দু'পাশে বাঁশঝাড়, মাঝে মাঝে জোনাকির আলো। হঠাৎ মনে হল, কেউ যেন আমার পিছু নিয়েছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, কেউ নেই। আবার হাঁটা শুরু করলাম।
কিছুদূর যেতেই একটা পুরনো বটগাছ পড়ল। গাছটা এমনিতেই বিশাল আর অন্ধকার লাগছিল, বৃষ্টির জন্য যেন আরও ভয়ংকর দেখাচ্ছিল। গাছের ডালপালাগুলো ভেজা ভূতের হাতের মতো মনে হচ্ছিল। হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস আমার গা ছুঁয়ে গেল। মনে হল যেন কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে।
পা দুটো যেন আর চলতে চাইছে না। তবুও জোর করে পা টেনে টেনে চলছি। বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখি, উঠোনে টিমটিমে একটা আলো জ্বলছে। দরজার কাছে যেতেই মা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর চোখও ভেজা।
ঘরে ঢুকে দেখি, উঠোনের একপাশে চাচার নিথর দেহ রাখা। মুখটা শান্ত, যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কাকা, জেঠিমা, গ্রামের আরও অনেকে সেখানে বসে আছেন। কান্নার রোল থেমে থেমে ভেসে আসছে।
সারারাত ঘুমোতে পারলাম না। চাচাকে হারানোর শোক, আর সেই রাতের অন্ধকার ভেজা পথ – সব মিলিয়ে একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ।
বাকী অংশ কমেন্ট এ