27/11/2025
জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন: রাতে ছিনতাইকারীদের দাপট, নিরাপত্তাহীনতায় যাত্রীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার শতবর্ষী জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন রাতে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এ ঐতিহাসিক স্টেশনে সময়ের সঙ্গে উন্নয়ন না হয়ে বরং অবনতি ঘটেছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের হাতে। যাত্রীদের অভিযোগও আর কেউ শোনে না বলে অনেকেই এখন আর অভিযোগের ঝামেলায় যান না।
স্টেশনে স্থাপন করা ১৮টি সিসি ক্যামেরার বেশিরভাগই অকার্যকর বা নিম্নমানের হওয়ায় ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা যায় না। প্ল্যাটফর্মের দুই প্রান্ত, পাশের অন্ধকার গলি এবং চলন্ত ট্রেনের দরজায় প্রতিদিন রাতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে ৭–৮ জনের একটি যুবক দল। বয়স ২৮ বছরের নিচে এই দলটি প্রায় ১০ মাস ধরে যাত্রীদের মোবাইল, ব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে রাত সাড়ে ১০টার পর স্টেশনে ট্রেন ক্রসিংয়ের সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসে এসব ছিনতাই বেশি হয়। অন্ধকারের সুযোগে অপরাধীরা মুহূর্তেই গা-ঢাকা দেয়। ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও আলোর স্বল্পতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে যাত্রীরা তা ব্যবহার করেন না।
স্টেশনের এক দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ক্যামেরায় মুখ বোঝা যায় না। আলো না থাকায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাইকারীরা অন্ধকারে হারিয়ে যায়।”
অন্যদিকে জিআরপি পুলিশ দাবি করেছে, আগের তুলনায় ছিনতাই কমেছে এবং চলতি বছরে জড়িত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন রেলওয়ে থানার ওসি দুলাল উদ্দিন বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে।”
স্টেশনের দক্ষিণ পাশের কামারের গলির দোকানসংলগ্ন এলাকা এবং উত্তর পাশের কমিউনিস্ট পার্টি অফিসসংলগ্ন অন্ধকার গলিকে ছিনতাইকারীদের প্রধান আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় লাইন আলোকবিহীন থাকায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
স্টেশনমাস্টার (ইনচার্জ) আবু হান্নান বলেন, “প্রায় প্রতিরাতে ট্রেন ছাড়ার সময় ছিনতাই হয়। যাত্রীরা চলন্ত অবস্থায় থাকায় অভিযোগ করে না। ক্যামেরার মান এতটাই খারাপ যে কারও মুখ চিনতে পারি না।”
এক যাত্রী রুহুল জানান, “রাতে ট্রেনে উঠতে মোবাইল হাতে রাখতে ভয় লাগে। মনে হয় যে কোনো সময় ছিনতাই হয়ে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, গত আগস্টে তাজুরপাড়া ব্রিজ এলাকায় সিগন্যাল লাইটে বস্তা ঢুকিয়ে বন্ধ করে ট্রেন থামানোর চেষ্টা হয়েছিল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে।
উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে কামারখন্দের ইউএনও বিপাশা হোসাইন বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের তেমন করণীয় নেই।”
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিষয়টি জিআরপি দেখে। অচল সিসি ক্যামেরার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। কেন স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ি নেই—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর দেখে। তবে উল্লাপাড়া স্টেশনে নতুন পুলিশ ফাঁড়ি অনুমোদনের প্রস্তাব এসেছে এবং দুই মাসের মধ্যে তা চালু হলে জামতৈলসহ আশপাশের স্টেশনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত হতে পারে বলে আশা করেন তিনি।