08/09/2025
ডাকসু নির্বাচনের ডামাডোলের ভেতর দেশের শিক্ষাঙ্গন ও মানবসম্পদের বাজারে একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে!
দীর্ঘদিন ধরে ফিসফিসানি থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকায় ধরা পড়েছে আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের দুই সদস্য - মো. মামুন খান ও তার সহযোগী কেয়া ওরফে পন্না। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ২০১৯ সাল থেকে এই চক্র সক্রিয়।
মিরাজ, প্রিন্স, মেহেদী, গিয়াস এবং কর্পোরেট কর্মকর্তা তারেক আজিজের মতো বিভিন্ন স্তরের মানুষ এতে জড়িত। আর কিছু কোচিং সেন্টার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থী জোগাড় করে কমিশন নিত।
চক্রের কৌশল ছিল ভয়ংকর পরিকল্পিত। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের মতোই, পরীক্ষার আগের রাতে প্রর্থীদের হোটেলে রেখে আসল প্রশ্নপত্র ও উত্তর তুলে দেওয়া হতো। ভোরে রিডিং ও লিসনিং অংশের উত্তর মুখস্থ করিয়ে সকালে নির্দিষ্ট গাড়িতে করে পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠানো হতো। পরীক্ষার কেন্দ্রে হুবহু মিলে যেত ফাঁসকৃত প্রশ্ন আর পরীক্ষা শেষে অভিভাবকদের কাছ থেকে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। সরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থী- অনেকে এই সুবিধা নিয়েছে।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান-এর দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে আজ এই খবর বেরিয়ে এসেছে। তাদের পুরো টিমকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।
এখন বড় প্রশ্ন হলো, এই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছিল কোথা থেকে? ভেতরের কর্মী বা আন্তর্জাতিক সংযোগ ছাড়া এমন ফাঁস কি সম্ভব? তবে কি ক্যামব্রিজ, আইডিপি আর ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মকর্তারাও জড়িত, নাকি এখানেও সেই প্রিন্টিং প্রেস সিন্ডিকেট?
সবচেয়ে বড় বিপদ হলো- আন্তর্জাতিক দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যদি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হয়, তাহলে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, নিয়োগকর্তা এবং অভিবাসন অফিস আমাদের রেজাল্টকে সন্দেহ করবে। শিক্ষার্থীদের ভিসা ও ভর্তি প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সৎ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরাও অন্যায়ভাবে অবিশ্বাসের শিকার হবে। এমনকি বাংলাদেশের আইইএলটিএস সেন্টার বাতিল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হবে।
বাংলাদেশে স্থানীয় নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে- এ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সার্চলাইট টিম। কিন্তু আইইএলটিএস পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের এই ঘটনায় এবার আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেশের ভাবমূর্তি ঝুঁকিতে পড়বে। কেননা, এটা শুধু একটা চক্রের অপরাধ নয়, বরং দেশের ভেতরের পচনের ভয়াবহ আরেকটা দিক, যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
বিচারহীনতা, জবাবদিহির অভাব আর প্রতিবার প্রশ্নফাঁসের পরও কর্তৃপক্ষের অস্বীকারের প্রবণতা- এসবই এই চক্রকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। আমরা যেন চোখের সামনেই একটা পুরো প্রজন্ম গড়ে তুলছি সিস্টেমেটিক দুর্নীতির ওপর ভর করে, যেখানে মেধা নয়, অর্থই সফলতার মাপকাঠি।
~ আবদুল্লাহ আল ইমরান