
19/09/2025
#নোয়াখালীতে জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব সংকট কাটছে শিগগির,আলোচনায় যারা! / noakhali channel 24,
দীর্ঘ এক বছর ধরে নেতৃত্ব শূন্য নোয়াখালী জেলা ছাত্রদল। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তির পর এখনও গঠিত হয়নি নতুন নেতৃত্ব। ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিলুপ্ত করা হয় নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কমিটি। এরপর কেটে গেছে এক বছর, তবু নতুন কমিটি না হওয়ায় তীব্র হতাশা বিরাজ করছে জেলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত এ কমিটি শিগগিরই ঘোষণা করা হতে পারে। নেতৃত্ব ঘোষণার প্রাক্কালে জেলায় শুরু হয়েছে আলোচনা, গুঞ্জন ও নানা জল্পনা-কল্পনা। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির নিজে নোয়াখালী জেলার হওয়ায় নেতৃত্ব বাছাই নিয়ে তৃণমূলে চলছে তীব্র আগ্রহ ও কিছুটা সংশয়ও। কে হচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের কর্ণধার, কারা পাচ্ছেন নেতৃত্ব—এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা ভিন্নতর। বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমানে রাজনৈতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলায় তাদের দরকার এমন নেতৃত্ব, যারা মাঠে-ঘাটে সক্রিয় থাকবে, ত্যাগী ও সাহসী হবে এবং ছাত্রদের পাশে দাঁড়াবে। তারা বলেন, যারা সাম্প্রতিক আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে ছিলেন, যাঁরা দুঃসময়ে রাজপথে ছিলেন, বারবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন এবং এখনো ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত—তাদেরকেই নেতৃত্বে আনা হোক।
নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘বিগত সময়ে নোয়াখালীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেয়া অনেক কমিটিই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। সেখানে ভাগাভাগি, গ্রুপিং ও ব্যক্তিস্বার্থে অছাত্র, হাইব্রিডদের স্থান দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সংগঠনের মূল কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। এবার তারা চান, নেতৃত্বে যেন প্রকৃত ত্যাগীদেরই মূল্যায়ন করা হয়।’ এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রার্থী রয়েছেন ডজনখানেক, তবে আলোচনায় উঠে আসছেন কয়েকজন। সভাপতি পদপ্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সদ্য সাবেক সহসভাপতি এবং নোয়াখালী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক এনবিএস রাসেল, সদ্য সাবেক সহসভাপতি আনোয়ার রকি, শহর ছাত্রদলের বর্তমান আহ্বায়ক মো. ওয়াসিম, কলেজ ছাত্রদলের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক মো. আকবর হোসেন এবং সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ চৌধুরী বাবু। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও সোনাপুর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক সজীব রহমান সজীব, শহর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল করিম পাভেল, সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন রনি এবং সদর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান রায়হান। এছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় আছেন কারাবরণকারী ও বহুবার নির্যাতিত ছাত্রনেতা, শহর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল।নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সজীব রহমান বলেন, ‘ছাত্রদল মানে দেশের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্রের প্রথম কণ্ঠস্বর। আমি সেই কণ্ঠস্বরকে আরও শক্তিশালী করতে চাই, প্রিয় সংগঠনকে আধুনিক, সুশৃঙ্খল ও আদর্শিকভাবে গড়ে তুলতে চাই। আমার লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূলের কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করা। ছাত্র রাজনীতিকে শিক্ষাবান্ধব ও গঠনমূলক পথে এগিয়ে নেওয়া। আমার হাতে যদি দায়িত্ব আসে, তবে সব স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সাহসী নেতৃত্ব প্রদান করবো ইনশাআল্লাহ।’ নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের বর্তমান আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন রনি বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। ছাত্র রাজনীতিতে জীবনের সবচাইতে বেশি যা হারিয়েছি সেটা হলো আমার বাবা-মা দুজনকেই হারানো। তাদের মৃত্যুর সময় জানাযাও ঠিক মতো পড়তে পারি নাই। বিগত দিনে কয়েক বার আমার বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও পরিবারকে নির্যাতিত করা হয়েছে। বাবা-মার চিকিৎসা ঠিক মতো করাতে পারি নাই! তবে আমি আশাবাদী আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবংবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ অবশ্যই ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করবে।’ নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী আশরাফুল করিম পাভেল বলেন, ‘বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে ১৯টি রাজনৈতিক মামলা খেয়েছি এবং ৮ বার কারাবরণ করেছি। নিজেকে প্রমাণ করবার আর কিছুই নেই। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের মাঝে ঐক্য, শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ধারাবাহিক কার্যক্রম গ্রহণ করব। যেকোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপে সংগঠনের স্বার্থে আপোষ করব না। মেধাবী ও প্রতিভাবান ছাত্রদের বিকাশে সহায়তা করব। ছাত্রদের ন্যায্য দাবি ও অধিকার আদায়ে সর্বদা সোচ্চার থাকব। দলের বঞ্চিত, অবহেলিত, পরীক্ষিত মেধাবী কর্মীদের মূল্যায়ন করব।’নোয়াখালী কলেজ ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রত্যাশী আকবর হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ছাত্র রাজনীতিতে আমি মোট ১১টি মামলার আসামি হয়েছি এবং ৩ বার কারাবরণ করেছি। আমি রাজনীতিকে ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে নয় বরং সেবার মাধ্যম মনে করি। নোয়াখালী জেলার প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বার্থ রক্ষায়, ক্যাম্পাসে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবো। কারণ ছাত্রসমাজ গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি। ২৮ অক্টোবর ২০২৩ পরবর্তী সময়ে দলের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ছিলাম এবং দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এক কদমও পিছপা হইনি।’ নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ও বর্তমান শহর ছাত্রদলের আহবায়ক মো. ওয়াসিম বলেন, 'আমি ওয়ার্ড ছাত্রদল থেকে শুরু করে শহর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক এবং বর্তমান আহবায়ক হিসেবে শহর এবং জেলায় সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব ও সকল আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি। ১৭ বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে ৬ বার কারাবরণসহ ১৯ টা মামলার আসামী হয়েছি। আমার ত্যাগের মূল্যায়নে আমি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশা করি।’ নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন রকি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সক্রিয় থেকে দলের সংকটময় সময়ে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং সংগঠনের স্বার্থে জেল-জুলুম, নির্যাতনসহ নানা ত্যাগ স্বীকার করেছি। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থাকার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা আমাকে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী করে তুলেছে। আমি নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলকে ঐক্যবদ্ধ ও আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।’নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ও নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এনবিএস রাসেল বলেন, ‘খুনী হাসিনার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আমি সব সময় সোচ্চার ছিলাম। তারুন্যের অহংকার ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে দলীয় সকল কর্মসূচিতে জীবন বাজি রেখে হরতাল-অবরোধ সফল করেছি। দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আ.লীগের হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি এবং অসংখ্য রাজনৈতিক মামলায় কয়েকবার কারাবরণ করেছি। শরীরে এখনো রয়েছে কোপের চিহ্ন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল কর্মসূচিতে সম্মুখ সারিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীদের নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীবান্ধব অনেক ইতিবাচক কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করে যাবো ইনশাআল্লাহ! ’কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের! কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহসভাপতি মঞ্জুরুল আলম রিয়াদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘যারা বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিল, শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে রাজনীতি করেছে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠন করা হবে। তবে নোয়াখালীর জেলা ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।’তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা—নোয়াখালী জেলার সন্তান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির দায়িত্বশীল ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করবেন। দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষা, সংগঠনের ভবিষ্যৎ শক্তিশালী করা এবং তৃণমূলে আস্থা ফিরিয়ে আনতেই এই নেতৃত্ব বাছাই হবে বলে আশা করছেন তারা। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নেতৃত্ব সংকট কাটিয়ে উঠবে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদল এমনটাই এখন প্রত্যাশা গোটা জেলার ছাত্রদল নেতাকর্মীদের। #নোয়াখালী_ছাত্রদল!