08/07/2025
🕊 এক পুত্রবধূর চিঠি — বৃদ্ধাশ্রমে থাকা প্রিয় শাশুড়িমাকে
প্রিয় মা,
আজ এই "মা" শব্দটা হৃদয়ের গভীর থেকে আপনার জন্য লিখছি। জানি, আপনাকে কোনোদিন সত্যি সত্যি এই নামে ডাকিনি, ডেকে উঠিনি একবারও আন্তরিকভাবে।
আজ আমি সেই ঘরে বসে আছি — যেখানে আপনি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছিলেন। সেই বৃদ্ধাশ্রমের নিঃস্তব্ধ দেয়ালের মাঝে আপনার উপস্থিতি অনুভব করছি। আজ এই নিঃসঙ্গ বিকেলে, আপনাকে একটা চিঠি লিখতে খুব ইচ্ছে করছে।
আপনার সেই পুরোনো রুমেই আমি আছি, জানেন মা? এখানে প্রতিটি কোণ যেন আপনার স্মৃতিতে মোড়া।
আমি জানি না, আপনি আমার লেখা আর কোনোদিন পড়বেন কি না...
তবু লিখছি।
মনে হয় হয়তো আপনি আকাশের ওপার থেকে একটুখানি তাকিয়ে আছেন।
মা, আমি খুব অবাধ্য ছিলাম।
আপনি যখন সংসারটাকে আগলে রাখতেন, আমার মনে হতো আপনি আমাকে আটকে দিচ্ছেন। আমি বুঝিনি — আসলে আপনি আগলে রাখছিলেন, শেখাচ্ছিলেন সংসার নামের ছোট্ট জাহাজটা কীভাবে পার করতে হয়।
আপনার সেই কথা — “বউমা, যতটা খাবে ততটাই নিও, অপচয় কোরো না”— তখন রাগ লাগতো!
আজ বুঝি, আপনি আমাকে বাঁচাতেন। শিখাতেন হিসাব করে চলতে।
আপনি যখন নিজের হাতে ছেলের বেতন রাখতেন, আমি অপমানিত বোধ করতাম।
ভাবতাম, কখন আপনি সরবেন, কখন আপনার ছেলেকে একা পাবো!
একসময় কান্নাকাটি করে স্বামীকে রাজি করালাম — যেন আমাকে তার সাথে কর্মস্থলে নিয়ে যায়।
আপনাকে বাড়িতে রেখে আমরা চলে এলাম নতুন ভাড়াবাড়িতে, নতুন জীবনে।
ভেবেছিলাম আপনি দূরে থাকলে শান্তি পাবো।
কিন্তু যখন আমি অন্তঃসত্ত্বা হলাম, আমার স্বামী আপনাকে আবার ডেকে আনলো — আমার দেখাশোনা করতে।
আপনি এলেন, হাসিমুখে। বাড়ির সব কাজ করতেন, আমায় খাওয়াতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।
তবুও, মা… আমি অন্ধই ছিলাম। আমার অহংকার আপনাকে গ্রহণ করতে দেয়নি।
আমার সন্তান যখন আপনাকে ‘ঠাম্মা’ বলে ডেকে উঠতো, আমার অজান্তেই মন খারাপ হতো।
ভাবতাম, আমার সন্তান যেন আপনাকে বেশি ভালো না বাসে!
আজ, আমি সেই সন্তানকে মানুষ করছি একা।
আমার স্বামী আর নেই, সময়ও নেই।
এই বৃদ্ধাশ্রমই এখন আমার ঠিকানা — আর আপনি যেন আমার প্রতিচ্ছবি হয়ে আছেন এই দেয়ালে।
মা,
আপনাকে আমি ভালোবাসি — এটা কোনোদিন বলিনি, কিন্তু আজ বুক ভরে বলতে চাই,
"আপনি ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।"
ক্ষমা করে দিন, মা।
আপনার বউমা…