Aizan's sister Lubaba

05/07/2025

ফুল কিনতে কোথায় গেলাম। #ফুল

11/06/2025

১০০ টাকায় ৩০ পিছ মমো এ ও সম্ভব😲

16/01/2025

#তোমারে_আমি_দেবোনা_হতে_অন্য_কারো
#ফিরে_দেখা_পর্ব_০৬
#লেখনিতে_সাজিন_জান্নীই

"মহু বলছো?"
দ্বিতীয়বার একই কন্ঠস্বর শুনে শ্বাস-প্রশ্বাস যেন আটকে যাচ্ছে আমার। সেই চেনা ডাক। অবাক হলাম না খুশি হলাম, ঠিক বুঝতে পারছি না। একি আদৌও সম্ভব! নিনীত ভাই! নিনীত ভাই কল করেছেন আমাকে! নাকি জ্বরের ঘোরে উল্টো পাল্টা শুনছি। নিজের কানের প্রতি বিশ্বাস অবিশ্বাসের পালার চলমান অবস্থায়ই মোবাইলের ওপর পাশ থেকে আবারো নেশালো আওয়াজ ভেসে এলো।
"হ্যালো!"

অন্যদিকে নিনীত ভাবছে ভুলে অচেনা কারোর নম্বরে ডায়াল করে ফেললো নাকি! সালাম দিয়ে আর তো কথা বলে না কেউ। কে'টে দিবেই ভাবছিলো তখন মনে হলো ওপাশের মানুষ কিছু বলছে।

আবার আওয়াজ পেয়ে হালকা স্বরে উত্তর করলাম,
'জি, আমি মহুয়া বলছি।"
তৎক্ষণাৎ জবাব, "কেমন আছো মহু?"
নিনীত ও যেন উত্তর পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
না, সঠিক মানুষের কাছেই কল করেছে সে। ওপাশ থেকে এতক্ষণ উত্তর না পেয়ে মোবাইল কানে ঠেকিয়েই পিজ্জ্বাতে কেবল এক কা'মড় বসিয়েছিল, সেইটা ওভাবেই নামিয়ে বাকি খাবারের পাশে আবার রেখে দিয়ে কথায় মনোযোগী হলো সে।

ধীর কন্ঠে বললাম,
"আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন নিনীত ভাই?"
"আমি ও ভালো। চিনলে কিভাবে আমায়?"
উনার কণ্ঠস্বরের সাথে কিছুটা উত্তেজনার আভাস এলো বোধহয়। তাই হালকা করে বললাম,
"আপনার ডাক শুনে।"
এরপর দুজনেই চুপ। কেউ যেন কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছি না বলার জন্য।
খানিক থেকে উনিই বললেন,
"কাল রাতে ওমন ভিজে বাড়িতে ফিরলে, ভাবলাম সুস্থ আছো কিনা! তা জানতেই কল করা।"
যেন কৈফিয়ত দিচ্ছেন উনি আমাকে।
"ঠিক আছি আমি। আপনিও তো ভিজেছিলেন, শরীর খারাপ করেনি?"
নিজের অসুস্থতার কথা চেপে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
উনার সরাসরি উত্তর,
"আরে, এইটুকু বৃষ্টির পানি কি আমার কোনো ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে? আমি একদম ফিট আছি।"
বৃষ্টির পানি উনার কোনো ক্ষতি করতে পারে না, অথচ এই বৃষ্টির পানিই আমার আদরের ভাইকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিল। না চাইতেও ভাইয়ের চিন্তায় মাথায় চাপ পড়তে লাগলো। ব্যথা সইতে না পেরে ভুলে হালকা আওয়াজ করে ফেললাম। তা শুনেই নিনীত ভাইয়ের ব্যস্ত স্বর,
"কি হয়েছে মহু! ব্যথা পেয়েছো মনে হলো।"
অসুস্থ বুঝে গেল নাকি! তাড়াতাড়ি বলে বসলাম,
"না। মশা কা'মড়ে দিয়েছিল হাতে।"
কিন্তু বলার পর বুঝলাম এইটা কোনো অজুহাত হলো! অবাস্তব বিষয় প্রায়।
উনি ও কিছুটা কৌতুক করেই বললেন,
"এই সকাল দুপুরের মাঝে মশা কোথায় পাও তুমি?"
কথা যখন একটা বলেই ফেলেছি, কিছু তো উত্তর দিতেই হবে। এজন্য আগেপিছে না ভেবে বলে দিলাম,
"আমাদের বাড়ির আশেপাশে ছোট-বড় গাছ আছে না, ওখান থেকেই মশা আসে। নিজের বাড়ি মনে করে সবসময় ই থাকে ওরা আমাদের বাড়িতে।"
উনি বোধহয় হাসলেন আমার কথায়, এমনটাই মনে হলো। এরপর বললেন,
"মশা গুলোর মনে হচ্ছে আমার মহু'কে অনেক পছন্দ, তাই থেকে থেকে চুমু খেতে আসে।"
উনার কথা শুনে লজ্জায় কান রিরি করে উঠলো। ইস, কি বললেন উনি এসব! এক মিনিট! "আমার মহু" বললেন কি উনি আমায়! তাইতো শুনলাম মনে হচ্ছে।

কথার মাঝে নিনীত ভুলে 'আমার' বলে সম্বোধন করে ফেলেছে মহুয়াকে। ব্যাপারটা যেন মহুয়া ধরতে না পারে তাই সাথে সাথেই আবার বলে উঠলো,
"সাবধানে থেকো। এখন মশার কা'মড় খাওয়া কিন্তু ভালো নয়।"
বিপরীতে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না, তার উপর লজ্জায় গলার আওয়াজ ও আটকে গিয়েছে প্রায়। কেন ওইটা বললেন উনি ওভাবে! কোনোরকমে কথা ঘুরাতে জিজ্ঞেস করলাম, "আন্টি ফিরেছেন বাসায়?"

প্রশ্নটায় নিনীতের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কারণ এখনো তার মা ফিরে আসেনি। পুরো একদিন পার হয়ে গিয়েছে। ছেলে তার ম'রে আছে না বেঁচে আছে, আর একবার কল করে জানতেও চায়নি। তাছাড়া নীতির স্কুলে সেমিস্টার শুরু কিছুদিন পর। এখন মেয়েকে নিয়ে এমন বেপরোয়া ঘুরা ফিরা একদম পছন্দ হচ্ছেনা নিনীতের। তার উপর ওই বাসায় যাওয়া আরো পছন্দের নয়। মহুয়ার ডাকে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো সে।

উত্তর দিচ্ছেনা বিধায় ডাক দিলাম উনাকে। তখন উত্তর দিলেন,
"ওহ্ হ্যাঁ, ভালো কথা মনে করিয়েছো। না, আম্মু ফিরেনি এখনো। নীতিও সাথেই রয়েছে। আজ আর পড়াতে এসো না, কালকের মতোন কষ্ট করে ফিরে যেতে হবে।"
কথার মাঝেই আম্মা খাবার নিয়ে ঘরে এলো।

"আচ্ছা, জানানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ও ফিরলে আসবো তাহলে আমি। আজ রাখছি, ভালো থাকবেন।"
শেষের লাইনটা একটু ধীর স্বরেই বললাম,
"আর... খোঁজ নেওয়ার জন্যও ধন্যবাদ।"
আম্মাকে দেখে সংক্ষেপে কথা শেষ করে দিলাম।
আবারো উনার হালকা হাসি শুনলাম মনে হলো, সাথে উত্তর-
"মেনশন নট। এটাতো আমার দায়িত্ব ছিল। ওরা ফিরে এলে প্রয়োজনে আমি তোমায় জানিয়ে দিব। তুমিও সাবধানে থেকো, বিশেষ করে মশার কা'মড় থেকে। গুড বায়।"
"মশার কা'মড় থেকে" কথাটুকু একটু জোর দিয়েই বললেন বোঝা গেলো। ব্যাঙ্গ করলেন নাকি!
ততক্ষণে কল কে'টে গিয়েছে।
_______________________

রাহেলা বেগম মেয়েকে ডেকে চলেছেন সেই কখন থেকে, কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছেন না শীহার। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাধ্য হয়েই ওর রুমের সামনে এলেন। এসে দেখছেন দরজা ভেতর থেকে লাগানো। নিনীত'রা চলে গিয়েছে তাও ঘন্টা দুয়েক পেরিয়ে গিয়েছে। এতক্ষণেও উনার মেয়েকে বাহিরে একবার দেখলেন না। নিনীত চলে যাওয়ার সময়ও বিদায় দিতে এলো না মেয়েটা। হলো কি! এগিয়ে গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে ডেকে উঠলেন মেয়েকে।

"শীহা মা, দরজা খুল। কখন থেকে ডাকছি তোকে। দরজাটা খুল মা আমার।"
উনি ডেকেই চলেছেন কিন্তু ভেতর থেকে কোনো উত্তর আসছে না। ভয় পেয়ে গেলেন রাহেলা বেগম। কোনো বিপদ হলো নাতো তার মেয়ের!
ভয় পেয়ে জোরে জোরে দরজা পি'টতে লাগলেন। তখনই ভেতর থেকে দরজা খোলার আওয়াজ এলো। দরজার সামনে বিধ্ব'স্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল শীহা'কে।
রাহেলা বেগমের ভেতরটা ধক করে উঠলো। এইতো কত হাসিখুশি ছিল সকালে মেয়েটা। ঘন্টার ব্যবধানে একি অবস্থা হয়েছে তার!
মেয়েকে ধরে ভেতরে গিয়ে বসালেন বিছানায়, নিজেও পাশে বসে পড়লেন। মেয়ের মুখটা দুহাতে ধরে ভালো করে দেখতে লাগলেন। লাল হয়ে আছে চোখ। ফোলা ফোলা মুখ। চুলগুলোর উস্কো খুস্কো অবস্থা। পরনের কামিজের কুঁচকানো অবস্থা। লাগছে যেন ঝড় বইয়ে গিয়েছে তার উপর দিয়ে।
শান্ত কন্ঠে মেয়েকে শুধালেন কি হয়েছে।
উনার এই একটা কথার অপেক্ষায় ই যেন এতক্ষন ছিল শীহা। প্রশ্ন করা মাত্রই তার মা'কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। রাহেলা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বললেন ওকে।
"নিনীত চলে গিয়েছে বলে এত কষ্ট পাচ্ছিস?"
মায়ের প্রশ্নে শীহা মুখ তুলে তাকালো উপরের দিকে, এরপর আবার জড়িয়ে ধরলো। কান্নারত অবস্থায় উত্তর দিলো,
"আমি এতো করে থাকতে বললাম ভাইয়াকে, আমার কথা রাখলো না। ওর জন্য আমি কলেজ কামাই দিলাম, নিজ হাতে রেঁধে খাওয়াতে চাইলাম, কত করে বললাম তাও থাকলো না। কেন চলে গেল! ও বুঝেনা আমার কষ্ট লাগে!"

মেয়ের কথা শুনে উনার নিজের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। আসলেই তো কত খুশি ছিল মেয়েটা নিনীত আসাতে। একটা দিন থেকে গেলেই পারতো ছেলেটা। পরক্ষণেই মনে হলো, হয়তো জরুরি কাজে চলে গিয়েছে।
তাই শীহাকে সান্তনা দিয়ে বললো,
"হয়তো কাজ ছিল ওর মা, তাই তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছে। আমি কল করে বলবো আবার আসতে। তাও আর কাঁদিস না তুই। নিজের কি অবস্থা করেছিস দেখ একবার!"
তাও মেয়ের কান্না থামে না। বাপ ম'রা আদরের একমাত্র মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখতে কষ্ট হচ্ছে রাহেলা বেগমের। শেষ সান্তনা স্বরুপ বলে দিলেন,
"আচ্ছা মা, আমরাই দু একদিনের মধ্যে যাব ওদের বাসায়। এবার তো শান্ত হ! আর কাঁদিস না। নিনীত চলে গিয়েছে তাই কি হয়েছে? শুধু ওকেই রান্না করে খাওয়াবি? এই বৃদ্ধ মা'কে কখনো খাওয়াতে ইচ্ছে করে না?"
মায়ের কথায় কান্না থামিয়ে সোজা হয়ে বসলো শীহা।
"সত্যিই আম্মু! আমরা ওদের বাসায় যাবো?"
রাহেলা বেগম মুচকি হেসে জবাব দিলেন, "সত্যিই।"

মূহুর্তেই শীহার চোখমুখে হাসির ঝলক দেখা গেল। খুশি মনে বলে দিল আজকে সে তার মা'কে রান্না করে খাওয়াবে। এজন্য হাতমুখ ধুয়ে রান্না ঘরে চলে গেল রাঁধতে। রাহেলা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। মেয়েটা তার নিনীতের কথা শুনলেই কেমন খুশি হয়ে যায়। যখন জানবে নিনীতের কাছে ওর জন্য প্রস্তাব নিয়ে যাবেন উনারা, তখন না জানি খুশিতে পাগল হয়ে যায়। এরপর উনিও উঠে রান্নাঘরের দিকে চললেন। তার মেয়ে একা হাতে সব করতে পারবে না, সাহায্যের প্রয়োজন হবে ওর।
___________________

"আম্মা, কার সাথে কথা বলছিলি?"
গুল্মতা মেয়েকে মোবাইল রাখতে দেখে প্রশ্ন করে বসলেন।

"আম্মা, নীতি আজকে পড়বে না, তাই জানাতে কল করেছিলেন নিনীত ভাই"
"ছেলেটা ভালো আছে রে? রাতে তুই ভিজে শরীরে এলি, ছেলেটাও নিশ্চিত ভিজে গিয়েছিল।"
"হ্যাঁ আম্মা, ঠিক আছেন উনি। এখন জলদি জলদি তোমার হাত দিয়ে খাইয়ে দাও তো আমায়, ক্ষুধা লেগেছে।"
মেয়ের বাচ্চামো দেখে হেসে ফেললেন গুল্মতা। এরপর কাছে গিয়ে নিজ হাতে ভাত মেখে খাওয়াতে লাগলেন।

খেয়ে, ওষুধ খেয়ে মাত্রই শুয়েছি। দুপুর হয়ে গিয়েছে। আম্মা খেয়ে শুয়েছেন একটু। আমার চিন্তায় সারারাত মনে হয় ঘুমাতে পারেনি। বাবা খেয়ে আমার পাশে এসে বসলেন।
"কেমন লাগছে এখন মা?"
"ভালো আছি বাবা। শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে সকালে?"
মেয়ের প্রশ্নে হাসিমুখে জাহিদ উত্তর দিলেন,
"নারে মা। সকালের ওষুধ খাওয়া ছিলনা তো, তাই একটু চাপ লাগছিলো বুকে। এখন একদম ঠিক আছি।"
একটু থেমে আবার বললেন,
"মা তোকে একটা কথা বলার ছিল।"
বাবাকে ইতস্ত করতে দেখে বলে দিলাম নির্দিধায় বলে ফেলতে, কি বলতে চায়।
বাবা কিছুটা দুমনা নিয়ে বললেন,
"তোর দূরের ওই টিউশনি টা এবার ছেড়ে দে। অনেক কষ্ট হয় তোর ওইটায় যাওয়া আসা করতে। দেখ কাল কেমন অসুখে পড়ে গেলি ওইটার জন্য। তোর এই আশেপাশের পড়ানো বাচ্চা আর আমার দোকানের থেকে পাওয়া টাকা দিয়েই ঠিক চলে যাবে আমাদের দেখিস। তুই ওইটা ছেড়েই দে।"
আমার জন্য বাবার চিন্তা হয় প্রচুর, বুঝি। উনাদের শেষ অবলম্বন আমি। কিন্তু একটু কষ্টের জন্য এই টিউশনি ছাড়তে পারবো না আমি। কলেজের ভর্তির টাকা, খাওয়া, বাজার ইত্যাদির এত খরচ একা সামলাতে পারবে না বাবা।

বাবাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম,
"চিন্তা করো না বাবা। গত এক বছরে তো কিছুই হয়নি। হঠাৎ দু একদিন সমস্যা হতেই পারে। আমি ঠিক সামলে নিব। তুমি এতো ভেবো না। তুমি অসুস্থ, গিয়ে বিশ্রাম করো।"
এরপরও অনেকবার বুঝালেন বাবা টিউশনি টা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আমি বুঝিয়ে সুঝিয়ে বললাম সামলে নিব আমি। একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে আমার মাথায় একটা আদরের পরশ বুলিয়ে দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলেন বাবা।
___________________

মায়ের সাহায্যে রান্না করছে শীহা। নিনীত ভাইয়ার জন্য মাছ ভাজি, পোলাও আর রোস্ট বানাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ভাইয়া তো চলেই গেল। তাই এখন নিজের মা আর দাদার জন্য রান্না করছে এসব।
শাওম ভার্সিটি থেকে ফিরলে একসাথে খাবে সবাই।

মহুয়ার সাথে কথা বলার পর থেকেই মনটা ফুরফুরে নিনীতের। অর্ডার করা খাবার খেয়ে শুয়ে আছে সে। মেয়েটা কেমন ভীত কন্ঠে সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিল, ভাবতেই হাসি পাচ্ছে তার। শুধুমাত্র ওর একটা ডাক শুনে কেমন চিনেও ফেলেছিল! এইটা ভালো লেগেছে নিনীতের। তবে মায়ের উপর রাগ উঠছে আবারো। নিশ্চিত আজকেও মেয়েটাকে বলেনি তারা ফিরছে না। ঘুরে যেত মেয়েটা আজও। তাও ভালো কথার ফাঁকে মহুয়ার তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিল, নাহলে সেও জানাতে ভুলে গিয়েছিল প্রায়।

বাবা চলে যেতেই খেয়াল হলো আজ ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ ছিল। অথচ এই অসুস্থতার জন্য আমি বিছানায় পড়ে আছি। ঘন্টার পর ঘন্টা ভিজলেও যেখানে কিছু হয় না, সেই আমিই একটু বৃষ্টিতে ভিজে এমন জ্বরে কুপো'কাত হয়ে গেলাম! অবাক করা বিষয় ই বটে। কল করে প্রিন্সিপাল স্যারকে জানাতে হবে সমস্যার কথা। অনুরোধ করতে হবে যেন আমায় আর কিছুদিন সময় দেওয়া হয় ভর্তির জন্য।
ফোন করার উদ্দেশ্যে মোবাইল টা হাতে নিতেই মনে পড়লো একটু আগে নিনীত ভাই কল করেছিলেন আমায়। কি সব বললেন তখন। হয়তো বেখেয়ালে বলে ফেলেছিলেন কিন্তু তবুও আমার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। তাও ভালো উনি জানিয়ে দিলেন আজও নীতি পড়বে না, নাহয় চিন্তায় ই পড়ে গিয়েছিলাম এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কিভাবে যাব আজ। শুধু শুক্রবার ছাড়া তো একদিনও আর ছুটি মিলে না। পারলে আন্টি শুক্রবারও ওকে পড়িয়ে নিতেন আমায় দিয়ে।

এরপর এসব ভাবনা চিন্তা পাশে রেখে স্যারকে কল করে আরেকটু সময় চেয়ে নিলাম। স্যার অনেক স্নেহ করেন আমায়। অসুস্থতার কথা শুনেই বলে দিলেন সুস্থ হলেই যেন আসি কলেজে, তার আগে শুধু বিশ্রাম আর বিশ্রাম।
কথা শেষে মোবাইল পাশের টেবিলে রেখে শুয়ে পড়লাম। কথা বলার দরুন মাথাটা আবার ব্যথা করছে। চোখ বুজে পড়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তখনই চোখের পাতায় ভেসে উঠলো গত রাতের মুহূর্ত। ইস, কি সুন্দর ছিল! বৃষ্টির পর রাতের বেলা একজন পর পুরুষের সাথে রিকশায় চড়েছিলাম, তাও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংকিত ছিলাম না। নিনীত ভাইয়ের মতোন মানুষ যদি প্রতিটা মেয়েই বিপদের সময় পাশে পেতো! তাহলে আর এত দূর্ঘ'টনা ঘটতো না রাস্তায় রাস্তায়।

উনি বলেছিলেন পরিবেশটা উপভোগ করতে, কিন্তু আজেবাজে চিন্তায় তার সুযোগ ই পেলাম না তখন। খারাপ ই লাগছে কিছুটা।
হঠাৎ খেয়াল হলো- উনি আমার বাড়ির ঠিকানা জানলেন কিভাবে! রাতে তো এই বিষয়টা খেয়াল ই করিনি। মূহূর্তেই মস্তিস্ক সজাগ হয়ে উঠলো। আমি তো কখনো উনাদের কাউকে বাড়ির ঠিকানা বলিনি, শুধু চড়াইতে থাকি বলেছিলাম। উনি তাহলে ঠিক কিভাবে পৌঁছে দিলেন কাল আমায়! যতদূর জানি উনার বন্ধুর বাসা আমাদের বাড়ির আশেপাশে নয়। তাহলে উনি আমার বাড়ি চিনলেন কিভাবে!
তারমানে কি নিনীত ভাই আগেও এসেছেন আমার বাড়ির কাছে! ভাবনায় ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠলো আমার মস্তিষ্ক, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো মাথা ব্যথা।

পরের পর্ব পেতে চাইলে আমার পেজটি ফলো দিয়ে রাখুন।
চলবে ~

(জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত Tanvi Nokshi House প্রতিটি কাথার উপর চলছে বিশেষ মুল্য ছাড়। তাই যারা এখনো Tanvi Nokshi House থেকে কেনা কাটা করেননি অথবা করবেন ভাবছেন তারা কিন্তু এখনই ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।)

14/01/2025

#তোমারে_আমি_দেবোনা_হতে_অন্য_কারো
#ফিরে_দেখা_পর্ব_০৫
#লেখনিতে_সাজিন_জান্নীই

শাওম হেঁটে ফিরে এলে সবাই খেতে বসে। রাহেলা বেগম আর শীহা মিলে সকালের নাস্তা তৈরি করেছে। খাওয়া শেষে নিনীত ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হতে চলে যায়।
রাহেলা বেগম টেবিল গোছানোর সময় শীহাকে কলেজের জন্য তৈরি হতে বললে সে জানায় আজ যাবে না। এ কথা শুনে কিছুটা অবাক হলেন উনি। শীহা কখনো বিনা কারণে কলেজ কামাই দেয় না। আজ হঠাৎ কি হলো!

"তুই কি অসুস্থ শীহা?"
"কেন আম্মু? কোনো দরকার ছিল?"
"তুই কলেজ যাচ্ছিস না যে!"
"নিনীত ভাইয়া এসেছে না! তাই আজ কোথাও যাবো না।"
"নিনীত তো একটু পরেই চলে যাবে। তুই ও তৈরি হয়ে কলেজে যা। শাওমকে বল দিয়ে আসবে তোকে।"
"আমি বললেই থাকবে ভাইয়া, দাঁড়াও আমি বলে আসছি। দাদা'র ও আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে না। আজকে দুপুরে কিন্তু আমি রান্না করে খাওয়াবো ভাইয়াকে। তারপর বিকেলে সবাই মিলে আড্ডা দিব কিন্তু, তুমি ও থাকবে আজ।"
বলেই খুশিমনে গেস্ট রুমে চলে গেল শীহা।

মেয়ের উত্তেজনা দেখে মুচকি হাসলেন রাহেলা বেগম। তার মেয়েটা নিনীতকে খুব পছন্দ করে তা তিনি বোঝেন। নিনীতের ব্যবহারেও মনে হয় শীহাকে ওর পছন্দ। মেয়ের পরীক্ষা শেষ হলেই একবার কথা বলতে হবে নিনীতের সাথে। এরপর পারিবারিক ভাবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন নীমলা আপার কাছে। মনে মনে এসব ভাবছিলেন রাহেলা বেগম।
নীমলা আপার চোখে মুখেও মেয়েটার জন্য মায়া দেখেছেন তিনি। সবাই রাজি থাকলে চার হাত এক করতে আর দেরি করবেন না উনি। মেয়ের বিয়ের বয়স ও তো হয়েই এলো। নিনীতের মতোন একজন সুপুত্র উনার মেয়ের জামাই হবে, ভাবলেই গর্বে বুকটা ভরে উঠছে।

"তৈরি হচ্ছো যে তুমি! কোথাও যাবে?"
শীহাকে ঘরে আসতে দেখে চুল ব্রাশ করা অবস্থায় নিনীতের উত্তর,
"ফিরতে হবে না! এজন্য তৈরি হচ্ছিলাম।"
"আজ থেকে যাও না ভাইয়া। আমি তোমায় রেঁধে খাওয়াবো, বিকেলে সবাই মিলে আড্ডা দিব। আজ প্লিজ থেকে যাও। আগের মতোন তো আসো না আর আমাদের বাসায়।"
বলতে বলতে মনটা খারাপ করে ফেললো শীহা।
হাতের ব্রাশটা টেবিলে রেখে ওর নাকটা হালকা টিপে দিয়ে নিনীত আবার উত্তর দিলো,
"আজ নয় পুঁচকু। আবার আসবো আমি। পরেরবার এলে শুধু তোর হাতের রান্নাই খাবো প্রমিজ। তখন অনেকদিন থেকেও যাবো। আজ ফিরতেই হবে রে। তুই মন খারাপ করবি না কিন্তু একদম। সবাইকে নিয়ে বাসা থেকে ঘুরে আসিস কিছুদিনের মধ্যেই।"
আবারো তৈরি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো নিনীত।

শীহার চোখ টলমল করছে। ও এত উত্তেজনা নিয়ে এসেছিল ঘরটায়। ওর কথাটা রেখে আজ থেকে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো! এই ছেলেটা কি কখনোই ওর মনের অবস্থা বুঝবে না! দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো শীহা।
শীহাকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে নিনীত ভ্রু কুঁচকে তাকালো সেই দিকে।
"আজব! হঠাৎ কি হলো মেয়েটার! এইতো হাসিমুখে কথা বলছিল এসে।"
ওর এই হাসি-এই কান্নার ব্যাপারটা কখনোই বুঝতে পারেনা নিনীত। এত বছর ধরেই দেখে আসছে। মেয়ে জাতি বড়ই অদ্ভুত।
হাত ঘড়িতে সময় দেখে ভাবলো এখন আর এসব বোঝার সময় ও নেই। বেরুতে হবে এখনই। শাওমের দেওয়া ড্রেস সেট বিছানায় রেখে গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো নিনীত।
ড্রইং এ আসতেই শাওমের সাথে দেখা।

"রেডি!"
"হু। ভার্সিটি যাচ্ছিস?"
"যাই, অনেকদিন নিজের চেহারাটা কাউকে দেখাই না।" বলেই চোখ টিপ দিলো শাওম। আবার বললো,
"তুই তো মনে হয় আজও যাবি না। চল বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাই তোকে।"
"ভালোই হয়, চল।"

"চলেই যাচ্ছিস বাবা? থেকে গেলে হতো না আজ!"
রাহেলা বেগমের অনুরোধী কন্ঠস্বর।
"আবার আসবো আন্টি। মন খারাপ করো না। আজ যাই। তুমি যেও বাসায়। সাবধানে থেকো। আসছি।"

মেয়েটা তার কত আগ্রহী হয়ে থাকার কথা বলতে গেল তখন, থাকবে না জানলে হয়তো কষ্ট পাবে- ভাবলেন তিনি।
কিন্তু মেয়েটা গেল কোথায়! নিনীত চলে যাচ্ছে জানে না বোধহয়। এরপর নিনীতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি। বিদায় জানানোর সময় দেখা গেল শীহা তার ঘরের দরজার আড়াল থেকে তাকিয়ে আছে। কান্নার দরুন চোখমুখ তার ফুলে রয়েছে। কিন্তু কেউ ওকে দেখলো না। শাওম আর নিনীত বেড়িয়ে যেতেই আবার দরজা আটকে দিল শীহা।
________________

কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরেছে মহুয়ার। গুল্মতা আর জাহিদ দুজনই পাশে বসে আছেন দ্বিতীয়বার জ্ঞান হারানোর পর থেকে।

তাকানোর চেষ্টা করতেই কপালের ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে আসছে। একদিকে মাথা ভার লাগছে তার উপর আবার এমন ব্যথা। হঠাৎ এমন ব্যথার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমায় তাকাতে দেখেই আম্মা জড়িয়ে ধরলো। হালকা তাকিয়ে দেখি আম্মা, বাবা দুজনেই পাশে বসা।
"কেমন লাগছে মা? বেশি খারাপ লাগছে?"
বাবার প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বুঝলাম।
আমি তো নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম তখন, খাটে এলাম কিভাবে? ওসব কি স্বপ্ন দেখছিলাম তবে! ইদানিং সব এতো বাস্তব স্বপ্ন দেখছি কিভাবে! স্বপ্নে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি, নিচে পড়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত তো!

"গুল্ম, আমার মায়ের পাশে বসো তুমি। দেখে আসি রঞ্জন বাবু এলেন কিনা বাজারে।"
"সাবধানে যাবেন।"
চলে গেলেন জাহিদ।
ব্যথায় বসে থাকাই দায়। বাবা বেরিয়ে যেতেই চোখ বুজে আম্মার কাঁধে মাথা রেখে হেলান দিলাম। আম্মা হালকা হাতে চুলগুলো টেনে দিচ্ছেন। কিছুটা আরামবোধ হচ্ছে এখন। ওভাবেই পড়ে রইলাম কোলে।
______________

শাওম বাইকে করে বাসায় দিয়ে গিয়েছে নিনীতকে। ভার্সিটিতে যাবেই আজ ও, তাই নিনীত জোর করলো না বাসায় আসতে। দরজায় এসে দেখে এখনো তালা ঝুলছে।
"মানে আম্মু এখনো আসেনি!"
মেজাজ টা চটে গেলো নিনীতের। সাড়ে বারোটা বাজে। এখনো কি বৃষ্টি আছে বাহিরে! কোথায়, সে তো দেখতে পাচ্ছে না। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে নিজের ঘরে গিয়ে উল্টে পড়ে রইল কিছুক্ষণ।
শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন। ঘরে কোনো খাবার ও নেই। সেই বাহিরের খাবার ই খেতে হবে। তাই অনলাইনে কিছু অর্ডার করে শাওয়ার নিতে চলে গেল ওয়াশরুমে।

শাওয়ারের পর বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল মোছায় ব্যস্ত ছিল নিনীত। তখন নিচে রিকশার বেল বাজানোর আওয়াজে তাকিয়ে দেখে এক জোড়া কপত-কপতী যাচ্ছে তাতে চড়ে। এইটা দেখে মনে পড়ে গেল কাল রাতের কথা। মূহুর্তেই ভাবনার একাংশ দখল করে নিলো মহুয়া নামের মেয়েটি।
মহুয়ার কথা খেয়াল হতেই ভাবলো একবার খোঁজ নেওয়া দরকার মেয়েটার। কাল ওমন ভিজে অবস্থাতেই অনেকক্ষণ ছিল। শরীর ঠিক আছে কিনা কে জানে!
কিন্তু কল করতে গিয়েই খেয়াল হলো কখনো তো কথাই হয়নি কলে মহুয়ার সাথে। নম্বর কি আদৌও আছে ওর ফোনে! খুঁজে দেখলো নেই। এখন খোঁজ নিবে কিভাবে! তাছাড়া আম্মুর যা অবস্থা, মনে হয় না আজ সন্ধ্যার আগে ফিরবে। আজও মেয়েটার এসে ফিরে যেতে হবে।

কি মনে করে নিনীত ওর আম্মুর রুমে গিয়ে উনার ডায়েরিটা ঘাঁটতে লাগলো। কয়েক পৃষ্ঠা উল্টিয়েই কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে গেল সে।
ওর আম্মু সবার মোবাইল নম্বর উনার এই ডায়েরিতে লিখে রাখেন।
নম্বরটা নিজের ফোনে তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে এলো নিনীত। কিন্তু কল করতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলো। হুট করে এভাবে একজন যুবতী মেয়েকে কল করাটা কি ঠিক হবে তার! ওর বাসার কেউ দেখলে কি ভেবে বসবে! নিজের মোবাইল টা রেখে দিল পাশে। বারান্দায় গিয়ে দেখতে লাগলো ভেলিভারি বয় খাবার নিয়ে আসছে কিনা। কিন্তু কিছুতেই মনের অস্থিরতা কমছে না। এপাশ ওপাশ পায়চারি করে সিদ্ধান্ত নিলো কল একবার করা উচিত। নিজেদের বাসায় পড়াতে আসে, এইটুকু খোঁজ নেওয়া তো ওর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এরপরও ওর বাসার কেউ ধরলে বলে দিবে আজ নীতি'কে পড়াতে আসতে মানা করার জন্যই কল করেছে।
যেমন চিন্তা তেমন কাজ। কল করে বসলো মহুয়ার নম্বরে। রিং হচ্ছে। এরই মাঝে ভেলিভারি বয় এসে হাজির। বিরক্ত হয়ে কলটা কে'টে দিয়ে খাবার নিতে গেল নিনীত।
___________

বাবা রঞ্জন আঙ্কেলকে নিয়ে এসেছিলেন বাজারে গিয়ে। উনি আসার পর জানতে পারলাম জ্বরের ঘোরে দুবার জ্ঞান হারিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার পড়ে গিয়েই কপাল কে'টে ফেলেছি, স্বপ্ন ছিল না ওইটা। ভালোই অংশ কে'টে গিয়েছে। আঙ্কেল মাথায় প্রাথমিক একটা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেলেন। জ্বর কমেছিলো কিন্তু ব্যথার চোটে আবার জ্বর বাড়ছে। আঙ্কেল ওষুধ ও দিয়ে গিয়েছেন আর অন্তত দু'দিন জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত বিছানা ছেড়ে উঠতে না করেছেন।
আম্মা মাত্রই খাবার আনতে গেলো আমার জন্য। দুপুর হতে চললো, এই অসুস্থ শরীরে না খাওয়া আমি আর ওষুধ ও খেতে হবে।
চোখ বুজে শুয়ে আম্মার আসার অপেক্ষা করছি, এমন সময় আমার বাটন মোবাইল টা স্বশব্দে বেজে উঠলো। হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে মোবাইল টা নেওয়ার আগেই কে'টে গেল কল। মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। তাই আর দেখলাম না কে কল করেছিলো।

নিনীত খাবার নিয়ে এসে মোবাইল টা আবার হাতে নিলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পুনরায় ডায়াল করলো মহুয়ার নম্বরে। মোবাইল কানে নিয়ে বিছানায় ঠেক দিয়ে বসে রইল।

আবার মোবাইল তার স্বরে চিৎকার করছে। একটু বিরক্তই লাগছে এসময় কল আসাতে। এত মাথা ব্যাথা নিয়ে কি কথা বলা যাবে! তাও জরুরি কল ভেবে মোবাইল টা তুলে নিলাম।
আননোন নম্বার! আমার কাছে অচেনা কারোর কি দরকার হলো হঠাৎ! কলটা ধরবো কি ধরবো না ভাবতে ভাবতে ধরেই ফেললাম।
মোবাইল কানে ঠেকিয়ে রেখেছি, কেউ কথা বলে না। তাই আমিই প্রথমে আওয়াজ তুললাম।
"আসসালামু আ'লাইকুম, কে বলছেন?"
খানিক নিরবতার পর ওপর পাশ থেকে ভেসে এলো সেই পরিচিত নেশালো কন্ঠের ডাক,
"মহু!"

চলবে ~

জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত Tanvi Nokshi House প্রতিটি কাথার উপর চলছে বিশেষ মুল্য ছাড়। তাই যারা এখনো Tanvi Nokshi House থেকে কেনা কাটা করেননি অথবা করবেন ভাবছেন তারা কিন্তু এখনই ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।

13/01/2025

❤️ হাতের কাজের নকশিকাঁথা ❤️
★ কিং সাইজ: ৭ ফিট বাই ৮ ফিট নিতে চাইলে ইনবক্সে নক করুন অথবা হোয়াষ্টএপ এ নক দিন
-----------------------------------------------------------------
➡️ অনলাইনে অর্ডার করলে ঢাকার ভিতরে এবং ঢাকার বাহিরে জেলা শহরে রেড এক্স কুরিয়ারের মাধ্যমে পাচ্ছেন হোম ডেলিভারি সুবিধা।
➡️ অর্ডার করার জন্য আমাদের সাথে ইনবক্স, হোয়াষ্টএপ অথবা ফোনে ☎️ 01315-929339 ☎️ 01908890970 যোগাযোগ করতে পারেন।
👉 IMO, WhatsApp & Personal Nogot Number : 01315929339
---------------------------------------------------------

13/01/2025

#তোমারে_আমি_দেবোনা_হতে_অন্য_কারো
#ফিরে_দেখা_পর্ব_০৪
#লেখনিতে_সাজিন_জান্নীই

"আমার আম্মা তো চোখ খুলে না, কি হলো আমার আম্মাটার! কিছু করেন আপনি।"

গত রাত থেকেই জ্বরের ঘোরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে মহুয়া। সকালে মেয়ের ঘরে এসে দূর থেকেই গুল্মতা অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেন মহুয়াকে। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কাছে এসে ওকে আলতো ধা'ক্কা দিতেই বাম হাতটা খাটের সাইডে একা থেকেই পড়ে গেল। ভয় পেয়ে গুল্মতা মেয়ের শরীরে হাত রাখতেই বুঝতে পারেন মেয়ে তার জ্বরে পু'ড়ে যাচ্ছে। মেয়েকে ধরে ঝাঁকাতে শুরু করে কেঁদে দেয় গুল্মতা। তবুও কোনোরকম নড়াচড়া না দেখে প্রচন্ড ঘাবড়ে যান তিনি। জ্বরের কারণে যে মহুয়া অজ্ঞান হয়েছে গিয়েছে, তা যেন উনার মস্তিষ্ক ধারণ করতে পারেনি তৎক্ষণাৎ। মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেই চিৎকার করে ডাকতে থাকেন মহুয়ার বাবা'কে।
গুল্মতার চিৎকার শুনে দৌড়ে মহুয়ার ঘরে এসে জাহিদ দেখতে পায় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে উনার প্রিয়তমা স্ত্রী কেঁদে চলেছেন। খারাপ কিছু হয়েছে ভেবে দিশেহারা হয়ে মেয়ের পাশে বসে পড়েন উনিও। এরপরই গুল্মতার বলা বাক্য শুনে মেয়ের কপালে হাত রেখে বুঝতে পারলেন আসলে কি হয়েছে।

"আহা গুল্ম! এভাবে ওকে ধরে কান্নাকাটি করলে কি কোনো সমাধান হবে? ওকে বিছানার কিনারে শুইয়ে দাও। আমি আসছি।"
বলেই বাহিরে চলে গেলেন জাহিদ।
গুল্মতাকে যেন মেয়ে হারানোর শোক ঘিরে ধরেছে। তার মনে হচ্ছে কান্না ছাড়া আর কোনো কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে। তবে জাহিদের কথা মতোন মেয়েকে টেনে বিছানার কিনারে নিয়ে শুইয়ে দিলেন তিনি। আবারো মেয়ের মাথাটা কোলে রেখে কাঁদতে শুরু করলেন।
জাহিদ কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বালতি পানি, একটা মগ আর বড় এক পলিথিন নিয়ে ঘরে এলেন।
গুল্মতার সাহায্যে মেয়ের মাথার নিচে পলিথিন টা বিছিয়ে দিয়ে মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলেন তিনি।

"জ্বরের কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। ভয় পেয়ো না, আমাদের মেয়ের কিছুই হবে না।"
এই বলে শান্তনা দিলেন তিনি গুল্মতাকে।
এভাবে কিছুক্ষণ পানি ঢেলে মেয়ের মাথাটা মুছে দিয়ে ঠিক করে শুইয়ে দিলেন দু'জনে মিলে।
"থাকো, আমি বাজার থেকে জ্বরের ওষুধ নিয়ে আসি গিয়ে। জ্বর আবার বাড়তে নিলে জলপট্টি দিও। তাড়াতাড়িই চলে আসবো আমি। সাবধানে থেকো।"
"আপনিও সাবধানে যাবেন। বেশি দেরি করবেন না কিন্তু।"

এই সাত সকালেই বাজারে ছুটলেন জাহিদ। আদৌও কোনো দোকান খোলা পাবেন কিনা উনি তা আল্লহ মালিক ই জানেন। গুল্মতার ও এতক্ষণে হুস ফিরলো। মেয়ে জেগে গেলে তো কিছু খেতে দিতে হবে। উনার স্বামীও না খাওয়া অবস্থায় বেড়িয়েছেন। যদিও মেয়েকে ছেড়ে একটুও সরতে ইচ্ছে করছে না, তাও মহুয়াকে কাঁথা দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে রেখে গুল্মতা চলে গেলেন রাঁধতে।
__________

সকালেই মাথায় কারোর হাতের আদুরে স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভে'ঙ্গে গেল নিনীতের। আড়মোড়া ভে'ঙে হালকা তাকিয়ে দেখতে পায় মাথার কাছে বসে আছেন রাহেলা বেগম।
নিনীতকে ওভাবে জাগতে দেখে মাথার হাত সরিয়ে কিছুটা অপরাধীর স্বরে তিনি বলে উঠলেন,
"ধরলে তুই জেগে যাবি আমি বুঝতে পারি নাই বাবা। অনেকদিন পর এলি তো, রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাড়াতাড়ি, ভোরে শাওম বললো তুই এসেছিস। তাই উঠে ভাবলাম আগে তোর সাথে দেখা করে আসি।"

উনাকে কাঁচুমাচু করতে দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে হাতটা আবার মাথায় রেখে উনার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো নিনীত।
"তোমার হাতের মায়াময় ছোঁয়া পেয়ে আমার সকাল শুরু হলো, এতো আমার পরম সৌভাগ্য! এইযে তোমার কোলে মাথা রাখতে পারছি, এই সুযোগ কি পরে একা থেকে উঠলে পেতাম আমি?"
নিনীতের কথায় যেন প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল রাহেলা বেগমের অন্তরে।
"শাওম উঠে পড়েছে এত সকালেই? ও তো প্রচুর ঘুম কাতুরে, কিভাবে কি!"
"হাঁটতে বেরুলো। কিছুদিন ধরে যাচ্ছে। কিসব ফিটনেস মেইনটেইন করতে হবে বলে, আমি ওতো সব বুঝি না।"
"আমায় না ডেকেই চলে গেল!"
"বললো অনেক রাত হয়েছে তোর ঘুমাতে, তাই বিরক্ত করেনি হয়তো। চলে আসবে এখনই।"
"আচ্ছা না ডেকে ভালোই করেছে। এইযে তোমার আদর এখন একা খাবো আমি। ও থাকলে নিশ্চিত হিংসে করতো দেখতে।"
বলেই চোখ বুজে কোলের মধ্যে পড়ে রইলো নিনীত।
হালকা হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলেন রাহেলা বেগম। ছেলেটার ব্যবহার এত অমায়িক! এখানে তেমন একটা আসেনা আর এখন। তবে যখনই আসে উনার মনটা একদম ভরে উঠে। সবসময় মনে হয় এমন একজন ছেলে যদি উনার মেয়ের জামাই হতো!
----------

বাজার থেকে শুকনো মুখে ফিরে এলেন জাহিদ। কোনো দোকান খুলেনি এত সকালে। উল্টো এই পথ হেঁটে গিয়ে এসে বুকে ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছে উনার। বাড়িতে ফিরেই বিছানায় শুয়ে পড়লেন। উনাকে ফিরতে দেখে গুল্মতাও ভেতরে এসেছিলেন কিন্তু হঠাৎ শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখে চিন্তিত হয়ে গেলো সে।
"কি হলো আপনার! এমন করছেন কেন? অসুস্থ বোধ করছেন? ব্যথা হচ্ছে বুকে?"
"আহা গুল্ম, এতো অস্থির হইয়ো না। সকালের ওষুধ খাওয়া হয় নাই তো, তাই একটু চাপ লাগছিলো বুকে।"
"শুয়ে থাকেন আপনি। সকালে আর দোকানে বসার দরকার নেই। খাবার হয়ে এসেছে, আপনি খেয়ে ঘুমান একটু।"
গুল্মতা বেরুতে নিয়ে আবার পাশ ফিরে জানতে চাইলেন ওষুধ এনেছেন কিনা জাহিদ।
"দোকান খোলা পাই নাই গুল্ম, বেলা গাঢ় হলে আবার গিয়ে নিয়ে আসবো।"
"মেয়েটার জ্ঞান তো এখনো ফিরলো না। একবার ডাক্তার ডাকতে পারলে ভালো হতো মনে হয়।"
"ওষুধের দোকান না খুললে তো বাজারে ডাক্তার সাহেব আসবেন না। দেখি বাজারে গিয়ে একবার আসতে বলবো রঞ্জন বাবুকে। আমার চিন্তা করো না, তুমি গিয়ে মেয়েটার পাশে বসো আর জ্ঞান ফিরলে আমায় ডাক দিয়ো।"
জাহিদের কথায় সম্মতি জানিয়ে গুল্মতা চলে গেলেন। জাহিদ চুপচাপ শুয়ে ভাবছেন মেয়েটা তাদের জন্যই পড়ার পাশাপাশি এত কষ্ট করে দূরে গিয়ে ছাত্রী পড়াচ্ছে। কাল তো এই জন্যই বৃষ্টিতে ভিজে ফিরে এমন জ্বর হলো। জাহিদ সিদ্ধান্ত নিলেন মহুয়ার জ্ঞান ফিরলে বলে দিবেন আর ওতো দূরে গিয়ে পড়ানোর দরকার নেই। কাছে যাদের পড়াচ্ছে আর দোকান থেকে যা টাকা আসছে তাই দিয়েই টেনেটুনে চলবে এখন থেকে। মেয়ের বয়স ই বা আর কত! এই বয়সেই নিজের সব শখ আল্লাদ বিসর্জন দিয়ে এমন কষ্ট করছে। খারাপ লাগে জাহিদের কিন্তু পরিস্থিতি টাই এমন যে উনি চাইলেও কিছুই করতে পারছেন না। কষ্টে চোখে পানি চলে এলো উনার। চোখদুটো হাত দিয়ে আড়াল করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লেন।
__________

মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। চোখ মেলে তাকাতেও প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। ভার হয়ে আছে মাথা। চোখ মেলতেই হাতে গরম কিছু অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি পাশের জানালা দিয়ে রোদ এসে হাতে পড়ছে। রাতে বৃষ্টির পর রোদ উঠেছে সকালেই। দুহাতে মাথা চেপে ধরে উঠে বসার চেষ্টা করলাম। উঠে হাত বাড়িয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিলাম। এরপর কোনোরকম বিছানায় হেলান দিয়ে বসলাম। হঠাৎ মনে হলো চুলগুলো ভেজা ভেজা লাগলো মাথায় ধরাতে। এখন তো সকাল হয়ে গিয়েছে। আমি কি রাতে ঘুমের ঘোরেই বাইরে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছিলাম! ঠিক মনে পড়ছে না। কি মনে করে যেন কপালে হাত দিতেই বুঝলাম জ্বর শরীরে। বেশ ভালোই জ্বর। চোখটা বন্ধ করে আবার খুলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি সাড়ে দশটা বাজে।
সর্বনাশ! আজ তো কলেজে যেতেই হবে। কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ভর্তির শেষ দিন আজ। আমি এতক্ষন যাবৎ পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম কিভাবে! তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠতে নিলেই মাথা ঘুরে উঠলো। তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলাম সাথে সাথেই।

ঘরে কিছু পড়ার শব্দ শুনে জলদি ছুটে এলেন গুল্মতা। এসে দেখলেন উনার মেয়ে ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে।
'আমার আম্মা' বলে একটা চিৎকার দিয়ে মেয়ের কাছে গিয়ে মাথাটা তুলে ধরলেন।
খাবার খেয়ে একটু আগেই জাহিদ শুয়েছিলেন। মেয়েকে ছাড়া খেতেই চাইছিলেন না। কিন্তু ওষুধ খেতে হবে, তার উপর সকালে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই গুল্মতা জোর করেই খাইয়ে, ওষুধ খাইয়ে দিয়ে শুয়ে থাকতে বলে গেলো। চোখটা কেবল লেগে এসেছিল এর মধ্যেই পাশের ঘর থেকে গুল্মতার চিৎকারে কেঁপে জেগে গেলেন উনি। উঠে কোনোরকম কষ্ট করে পাশের ঘরে গিয়ে দেখেন উনার মেয়ে নিচে পড়ে আছে আর গুল্মতা মেয়ের মাথা ধরে বসে আছেন।
"কি হয়েছে আমার মায়ের? এভাবে নিচে পড়ে আছে কেন?"
"আমি কিচ্ছু জানি না। উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলাম। ঘর থেকে কিছুর আওয়াজ পেয়ে এসে দেখি আমার আম্মা এভাবে পড়ে আছে। দেখেন ওর কপালের পাশে কে'টে গিয়েছে।"

কি হয়েছে কেউ বুঝলো না। আসলে অতিরিক্ত দূর্বলতার কারণে পড়ে গিয়ে আবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে মহুয়া। পড়ার সময় খাটের পাশের পড়ার টেবিলের কোণা লেগে কপালের বেশ কিছুটা জায়গা কে'টে গিয়েছে। সেখান থেকেই র'ক্ত পড়ছে।
দুজনে মিলে বিছানায় তুলে শুইয়ে দিলো ওকে। গুল্মতা কা'টা জায়গার র'ক্ত পরিষ্কার করতে লাগলো।

চলবে ~

12/01/2025