Md Rajib Hasan

Md Rajib Hasan This is Rajib Hasan, I'm a digital marketer. I'm an SEO expert, Social media marketing, YouTube marketing, and on the other hand I do email marketing.

আমি কোনো দিন বাবাকে মায়ের গায়ের উপর হাত তুলতে দেখিনি। আজ হাত তুললেন। সম্ভবত মায়ের গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে। কিন্তু ...
22/07/2023

আমি কোনো দিন বাবাকে মায়ের গায়ের উপর হাত তুলতে দেখিনি। আজ হাত তুললেন। সম্ভবত মায়ের গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে। কিন্তু মায়ের চোখে পানি নেই। মায়ের অগ্নিচোখ। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করছেন। অথচ বাবার ছলছলে চোখ। বাবা ভেজা গলায় বললেন,

"উঠতে বসতে যে জোছনার খোটা দেও, সে আজ মরে গেছে। এবার খুশি তো? এখন থেকে অন্তত আমাকে রেহাই দেও।"

জোছনা নামটা আমি আজ প্রথম শুনিনি। আগেও বহুবার মায়ের মুখে শুনেছি। মা বাবার সাথে একটু রেগে গেলেই জোছনার নাম উঠে। আমি দুয়েকবার জানতে চেয়েছিলাম মায়ের কাছে, কে এই জোছনা? মা মুখে ভেংচির আকৃতি এনে ভাষাকে বিকৃতি করে বলেছিল,

"তোর বাপের নাঙ লাগে। আমারে বিয়ে করার আগে জোছনার লগে তোর বাপের পিড়িত ছিল।"

বাবা মাথা নিচু করে সেদিন আমার সামনে থেকে চলে গিয়েছিল। বুঝাই যাচ্ছে, নিজের ছেলের সামনে তিনি বেশ অপমানিত হয়েছেন।
বাবার জন্য আমার বড্ড মায়া লাগে। মায়ের এই অকথ্য ভাষার প্রতিবাদ বাবা কোনোদিন করেননি। কিন্তু আজ প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদের ভাষা ছিল সজোরে একটি থাপ্পড়। বিগত এত বছরের রাগ ক্ষোভ বাবা একটি থাপ্পড়ে কমাতে পেরেছেন তো? আমি দুপুরের খাবার খেতে বসেছি, মা তরকারি দিচ্ছিলেন। বাবা এলেন হঠাৎ ঘরে। তখনি মায়ের হুংকার!

"আমারে ঘুমে রাইখা কাউরে কিছু না কইয়া জোছনার কাছে গেছিলা? কইয়া গেলে কী হইতো? না করতাম আমি? এত বছরেও না কইরা ফিরাইতে পারছি?"

বাবা এগিয়ে এলেন। কষে থাপ্পড় দিয়ে জোছনার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করলেন। এমতাবস্থায় আমার গলা দিয়ে আর ভাত নামবে না। বাবা ঘর থেকে চলে গেলেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, মৃত্যু সংবাদ শুনে রাগ একটু কমেছে। আমি খাবার রেখে নলকূপে হাত ধুয়ে ফেলেছি। মনটা কেমন খারাপ লাগছে। বাবা যে আজ আড়ৎ এ যাবেন না, বুঝাই যাচ্ছে। তার চেয়ে ভালো আমি আড়ৎ এ গিয়ে বসি। কাস্টমারকে চাউল দিতে দিতে মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখা যাবে।

রাত তখন বারোটা হবে। আমি বই পড়ছিলাম। হুমায়ূন স্যারের 'মিশির আলি সমগ্র।' বইয়ের 'তন্দ্রা বিলাস' আমার দুই চোখের তন্দ্রা কাটিয়ে দিলো। দরজায় ঠকঠক। দরজার ওপাশ থেকে বাবার গলার শব্দ।

"শাওন, ঘুমিয়ে পড়েছিস?"

আমি কোনো জবাব না দিয়ে দরজা খুলে দিলাম। বাবা ঘরে ঢুকে আমার বিছানায় বসতে বসতে বললেন,

"ঘুমাসনি এখনো! তোর সাথে গল্প করতে এলাম। বাপ-বেটার গল্প অন্য কারো শুনতে হয় না। তাই এখন এলাম। তোর সমস্যা হবে না তো?"

আমি মুচকি হেসে বললাম,

"না বাবা। আমার আরো ভালো লাগছে যে তুমি এসেছো। আজ এই ঘরেই ঘুমাও। মায়ের ব্যবহারে মন খারাপ করে থেকো না।"

বাবা পা তুলে আয়েশ করে বসলেন। ইশারায় আমাকে চেয়ার টেনে কাছে যেতে ইঙ্গিত করলেন। আমি কাঠের চেয়ার নিয়ে বাবার মুখোমুখি বসলাম। বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বললেন,

"তোর অনেক কিছু জেনে রাখা দরকার। আমি তোকে জানাতে চাই। আগেও জানাতে চেয়েছি, সাহস হয়নি। ভেবেছি তোর মা যেমন অকথ্য ভাষায় কথা বলে, হয়তো তোর জানা হয়ে যাবে। কিন্তু তুই জানিস না কিছুই। শুধু একটি নাম জানিস, জোছনা। তুই এই নামটি তোর মায়ের মুখে শুনেছিস। যতবার শুনেছিস আমি লজ্জা পেয়েছি। বলতে পারিনি কিছু। আজ বলব।"

আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে বাবার গল্প শুনছি। যে নাম নিয়ে মায়ের অকথ্য ভাষা, বাবার লজ্জা পাওয়া। অজানাকে জানতে অবশ্যই মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বাবা একনাগারে গল্প বলছেন। লুকায়িত এক গল্প।

"তোর মায়ের মুখে জোছনা নাম শুনে হয়তো ভেবেছিলি, আমার অন্য কারো সাথে কোনো সম্পর্ক আছে। সত্য হলো, জোছনার সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। জোছনা আমার বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী ছিল। তোর দাদা দাদি পছন্দ করে বিয়ে করিয়েছেন। তোর দাদার বাড়ির কাছেই। আমরা যে এত বছর ধরে তোর দাদা দাদিকে রেখে শহরে থাকি, তার একটি কারণ এই জোছনা। তোকে নিয়ে যে প্রতিবার তোর দাদার বাড়ি যেতাম, আমি তোর সাথে সাথেই থাকতাম। যেন আমাদের গ্রামের কারো কাছ থেকে এই বিষয়ে কিছু শুনতে না হয়। তোর খারাপ লাগতে পারে শুনলে। তোর দাদা-দাদি মারা যাওয়ার পর গ্রামে খুব একটা যাই না। তোর মা সব জানে। তবুও তোকে বলেনি, যে আমি আগেও একটি বিয়ে করেছিলাম। আমার আর জোছনার একটি সন্তানও আছে। নাম ফাল্গুনী। তোর সৎ বোন ফাল্গুনীর মতো তোর নামটাও বাংলার বারো মাসের একটা নাম। গ্রামে আমরা শ্রাবণ মাসকেই শাওন মাস বলি। তোর মা আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। সে যাই হোক। জোছনার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর সে পরবর্তীতে আবার বিয়ে করে এক স্কুল মাস্টারকে। তোর দাদার বাড়ি থেকে কয়েকটা গ্রাম পরে। আট বছর সংসার করলেও আর কোনো সন্তানাদি হয়নি। স্কুল মাস্টার মারা গেলেন চার সালের বন্যায়। আমি সব খোঁজই রাখতাম। রাখার কারণ ফাল্গুনী, আমার মেয়ে। আমি তাকে আমার কাছে রাখতে পারিনি। মাস্টার মারা যাওয়ার পর সেই সংসারে টানাটানি অবস্থা। আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। কয়েকটা সংসার চালানোর তৌফিক দিয়েছেন। আমি প্রতি মাসেই যাই সেই এলাকায়। কাউকে দিয়ে খবর পাঠালে ফাল্গুনী আসে। বাবা বলে এসে জড়িয়ে ধরে। কতশত বায়না তার। আমি আসার পথে পুরো মাসের খরচ দিয়ে আসি ফাল্গুনীর হাতে। তোর মা এসব জানে। আমি গোপন করি না তোর মায়ের কাছে। আমি ফাল্গুনীর জন্মদাতা। সে আমার কাছে মেয়ে হিসেবে পাওনা। আমি তা দেবই। আমি ফাল্গুনীর মায়ের সাথে দেখা করি না। দেখা করাটা বেমানান। লোকে মন্দ বলবে। তাই লোক মারফত ফাল্গুনীকে ডেকে আনি। আর এখন তো নরসিংদী সরকারি কলেজেই অনার্স শেষ করবে এই বছর। এখন তো কলেজে গেলেই মেয়ের সাথে দেখা করতে পারি।
কিন্তু ঐ যে, আমি তোর মায়ের কাছে কোনোকিছু লুকাই না। তোর মা মনে করে আমি হয়তো ফাল্গুনীর মায়ের সাথেও দেখা করি। এজন্যই রাগের মাথায় দুই চারটে কথা শোনায়। এতে আমার খারাপ লাগে না। শুনতে শুনতে অভ্যেস হয়ে গেছে। কিন্তু তুই.... "

"বাবা এক মিনিট....."

আমি বাবাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলাম,

"এত বড়ো জীবন ঘটিত বিষয়টা মায়ের কাছেও লুকিয়ে রাখো না। তাহলে আমি শুনলে কী সমস্যা বাবা?"

বাবা উত্তরে বললেন,

"আসলে আমি চেয়েছিলাম তুই বড়ো হলে সব বলব। তোর মানসিক বেড়ে উঠাতে মস্তিষ্কে কোনো প্রভাব পড়ুক, সেটা চাইতাম না। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম, যথেষ্ট বড়ো হয়েছিস। ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে আর পড়লি না। ফাল্গুনী শুনেও কষ্ট পেয়েছে। ওহ হ্যাঁ, ফাল্গুনী কয়েকবার বলেছিল তোকে সব জানাতে, আমি সাহস পাইনি। তবে বিশ্বাস কর, ফাল্গুনীর মায়ের সাথে আমি দেখা করতাম না কখনো। কিন্তু আজ মৃত্যু সংবাদ শুনে না গিয়ে থাকতে পারিনি। তার উপর তোর মায়ের এমন কথাটুকু সহ্য হয়নি। তাই..."

আমার কোনো ভাই-বোন নেই, এমন একটি আক্ষেপ ছিল সবসময়। আজ বাবার মুখে শুনলাম আমার একটি বোনও আছে। আমার বড়ো আপু। নাম ফাল্গুনী। কোনোদিন দেখিনি। বাবা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ দুটো ছলছল। জোছনা নামের মানুষটির জন্য বাবার চোখে পানি। থাকাটা স্বাভাবিক। আমি বাবাকে প্রশ্ন করলাম,

"তোমাদের ছাড়াছাড়ি কেন হয়েছিল বাবা?"

বাবা দেয়াল থেকে দৃষ্টি আমার দিকে দিলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

"যে মানুষটা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে, তার সম্পর্কে কিছু না বলাই উত্তম। এতটুকু জেনে নে, আমাদের মনের মিল ছিল না। তবে বুঝতে একটু দেরি হওয়াতে সাড়ে চার বছর সংসার টিকেছিল। পরে আর টিকেনি। ফাল্গুনীকেও নিয়ে গেছে, আমার কাছে কোনোভাবেই রাখতে পারিনি। জোর করলে হয়তো পারতাম। আইনে গেলে ফাল্গুনীকে রাখতে পারতাম। থানা পুলিশ করে কোর্টে গিয়ে এতসব করতে ইচ্ছে হয়নি।"

আমি কিছু বলতে যাব, তার আগেই বাবা কীভাবে যেন প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

"মেঘনা দিয়ে এক ট্রলার ভর্তি চাউল আসার কথা। মুন্সিগঞ্জ বাজারের পরিচিত পাইকারদের থেকে কিনেছি। সন্ধ্যায় আসার কথা। রাত নয়টা অবধি বসেছিলাম, আসেনি। দোকানের আওলাদের কাছে নাম্বার আছে। সকালে আড়ৎ এ গিয়ে একটু খোঁজ করিস তো। আসলে রশিদ দিবে, টাকা দিয়ে দিস।"

কথাটুকু বলে বাবা উঠলেন। উঠে সাথে সাথে চলে গেলেন না। একটু দাঁড়িয়ে থেকে আবার বললেন,

"রাত একটা বেজে যাচ্ছে। জেগে থাকিস না, ঘুমিয়ে পড়। সকালে আড়ৎ এ যাবি।"

বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি চেয়ার আগের জায়গায় নিয়ে এলাম। আজ আর 'তন্দ্রা বিলাস' পড়ে শেষ করা হবে না। বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

ঠিক এক সপ্তাহ পরে বাবা হঠাৎ মারা গেলেন। আমি আড়ৎ এ ছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে এসেছি বাড়িতে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। কেউ মারা গেলে পরিচিত সবাই শেষ দেখা দেখতে আসে। মা বিলাপ করে কান্না করছেন। মায়ের মুখেই শুনতে পেলাম, সকালে শুধু বলেছিলেন বুকটা ব্যথা করে। মা ভেবেছেন খাওয়ার পর হয়তো এমনিতেই ব্যথা করছে। তাছাড়া ব্যথা ততোটা বেশিও না। কিছু না বলে বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। আমার মাথার উপর বটগাছের ছায়া ছিলেন। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এত বড়ো পৃথিবীতে নিজেকে একা লাগছে। আমার দুই চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে। সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন এলাকার কয়েকজন। মানুষের সামনে কান্না করাটা অন্যসময় হলে লজ্জাকর পরিস্থিতী হতো। কিন্তু এখন লজ্জা লাগছে না। শুধু পানি পড়ছে। এক এক করে সব আত্মীয় স্বজন এলো। শেষ বিদায়ের আয়োজন চলছে। বরই পাতার গরম পানি বসানো হয়েছে। কবর খুঁড়তে লোক গেছে কবরস্থানে। পাশের বাড়ির একজন আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন কাফনের কাপড় কিনতে। এ যেন এক অনুষ্ঠান চলছে। শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান।

বাবা মারা যাওয়ার মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি আড়ৎ এ বসে আছি। বাবার অবর্তমানে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। হঠাৎ আমার অবচেতন মনে ক্ষানিকটা ধাক্কা লাগল। ফাল্গুনী!
আমার একটা মাত্র বোন। বাবার মেয়ে। তাকে তো খবর দেওয়া হয়নি। আমার কাছে তো ফোন নাম্বারও নেই। বাড়িও চিনি না কোন গ্রামে থাকে! বাবাকে শেষ দেখা হয়নি তার। এটা তো তার প্রতি মস্ত বড়ো অন্যায় হয়েছে। মায়ের কাছে কি আপুদের বাড়ির ঠিকানা আছে? না, মা'কে কিছু বলা যাবে না। দাদার বাড়ির কেউ কি জানে?
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল, বাবা বলেছিলেন ফাল্গুনী আপু নরসিংদী সরকারী কলেজ থেকে এবার অনার্স শেষ করবেন। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। একটা বড্ড ভুল হয়ে গেল। আপুকে বাবার মৃত্যু সংবাদ জানানোটা দরকার ছিল।

নরসিংদী সরকারি কলেজের দক্ষিন দিকে অনার্স ভবন। আমার পরিচিত কেউ নেই এখানে। অনার্স ভবনের সামনে অনেকেই আছে। আমি এগিয়ে গেলাম। সবাই বয়সে আমার বড়ো। একসাথে তিন চারজন কথা বলছে দাঁড়িয়ে। আমি গিয়ে সালাম দিলাম। জানতে চাইলাম, অনার্স শেষ বর্ষের ফাল্গুনী নামের কাউকে চিনে কি-না! সাথে সাথে একজন ডানদিকে তাকিয়ে একটু গলাটা উঁচিয়ে বলল,

"এই ফাল্গুনী, তোকে কেউ খুঁজতে আসছে।"

আমার চোখদুটো যেন অপেক্ষা সইছে না। কেউ একজন এগিয়ে আসছে। আমার তিন চার বছরের বড়ো হতে পারে। দেখতে খুবই সুন্দর। ইচ্ছে করছে এখনি চিৎকার করে বলি, আপু আমি তোমার একমাত্র ভাই শাওন। কিন্তু বলতে পারিনি। আমার গলার স্বর কি ভেজা? বুঝতে পারছি না।

"আমাকে খুঁজছ? কে তুমি?"

আপুর কথায় কী বলব ভেবে পাচ্ছি না। আসলে কে আমি? পরিচয়ের শুরুটা কীভাবে করব? মুখ ফুটে বললাম,

"আপু, আপনার সাথে কিছু কথা আছে। খুব জরুরী। একটু এদিকে আসবেন?"

অনার্স ভবনের সামনে দুর্বা ঘাসে শীতল পাটির মতো বিছানা পাতা। আমি আর আপু ঘাস মাড়িয়ে মাঠের মাঝখানটায় গেলাম। আপুর কৌতূহলী চোখ। হঠাৎ বললাম,

"আমি চিনিশপুর থেকে এসেছি। আমার নাম শাওন।"

কথাটুকু বলে আপুর দিকে তাকালাম। আপু নির্বাক। চোখের পলক পড়ছে না। চোখদুটো ভিজে উঠল আমার সামনে। আরেকটু এগিয়ে এসে আপু আমার কাঁধে হাত রাখল। তারপর মাথায়, তারপর গালে। এই স্পর্শ কত শীতল, কত মায়ায় ভরা। টলমল চোখ, ভেজা গলায় আপু বলল,

"তোমাকে দেখার ইচ্ছে ছোটোবেলা থেকে। আমার একটা ভাই আছে, আর তাকে আমি কখনো দেখিনি। এই কষ্টটা আমার অনেক বছরের। কত বড়ো হয়ে গেছো তুমি।"

আমার দৃষ্টি নিচের দিকে। ইচ্ছে করছে নিজের চোখের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার চোখ থেকে এখন যেন কোনো পানি না পড়ে। আমি শত বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছি আটকাতে। আটকাতে আর পারলাম কই! এরই মধ্যে আপু আবার বলল,

"বাবা মারা যাওয়ার দিন গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়িতে। আড়ৎ থেকে আওলাদ নামের কেউ একজন ফোন করেছিল। তোমাদের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিলাম। বিশ মিনিটের মতো ছিলাম। সবাই কান্না করছে। মানুষের ভীড়ে আমিও বাবার মুখখানি শেষবারের মতো দেখে নিয়েছি। দেখে কান্নাও করেছি। কিন্তু কেউ জানে না আমি কে!
তোমাকেও খুঁজেছি। জিজ্ঞেস করিনি কারো কাছে। কে কবর খুঁড়তে গেল, কে বাজারে গেল! এসব বলার সময় শুনলাম তোমার নাম। কেউ একজন বলছে শাওন কাফনের কাপড় কিনতে গেছে। আমি আর সেখানে থাকিনি, চলে এসেছি।"

মাথা তুলে তাকাতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু চোখের পানি লুকাতে পারব না। টপ করে নিচে পড়বে। আপু আমার থুতনি ধরে মাথাটা উপরের দিকে তুললেন। টপ করে চোখের পানি আপুর কব্জিতে পড়ল। আপু আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছেন। বড়ো বোনের বুঝি এত মমতা থাকে? এত আদর থাকে?
আপু আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে মাথার চুল নাড়িয়ে বললেন,

" তুমি ছোটো হলেও এখন তোমার দায়িত্ব অনেক। মায়ের দিকে খেয়াল রেখো।"

আমি আড়ৎ থেকে আসার সময় বিশ হাজার টাকা নিয়ে এসেছি পকেটে ভরে। টাকাটা বের করে আপুর হাতে দিয়ে বললাম,

"আমি এখন আর ছোটো নই আপু। অনেক বড়ো হয়েছি। মায়ের খেয়াল যেমন রাখতে পারব, তেমনি আপুর জন্যও এই ভাইটি আছে।"

আপু একটু চমকালেন বোধ হয়। তারপর টাকাটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,

"আমি তোমার চেয়েও বড়ো। এখন আমার টাকা লাগবে না। মামার বাড়িতে থাকি এখন।"

আমি টাকা ফেরত না নিয়ে বললাম,

"টাকা নিতেই হবে। আপুর সব দায়িত্ব এখন থেকে তার ভাইয়ের। বাবা শুধু আমার একার নয়, তোমারও বাবা। তোমারও অধিকার আছে। আমাকে শুধু আপু ডাকতে দিও, বঞ্চিত করো না।"

অনার্স ভবনের মাঠের দুর্বা ঘাস সাক্ষী হচ্ছে দুই ভাই বোনের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানির। ঘাস মাড়িয়ে সামনে এগুচ্ছি। আড়ৎ এ যেতে হবে। আড়ৎ থেকে বাড়িতে। মা কয়েকদিন ধরে মনমরা থাকে। মায়ের কাছাকাছি থাকাটা দরকার। গল্প করা দরকার। সব দায়িত্ব এখন আমাকেই পালন করতে হবে। রিকশায় উঠে কিছু দূর এসে পেছন ফিরে দেখি, আপু তখনো আমার চলে আসা দাঁড়িয়ে দেখছে। যেন ভাইকে বিদায় দিতে মন চাচ্ছে না।
আকাশে মেঘ জমেছে। গুড়মুড় শব্দ হচ্ছে। এক পশলা বৃষ্টি হলে মন্দ হয় না।

#সমাপ্ত...

#লেখনীর_শেষ_প্রান্তে,,,,,,,
,,,,,,ওমর ফারুক শ্রাবণ
#গল্প

Nouhaila Benzina is set to make history as the first woman to wear a hijab at the upcoming Women's FIFA World Cup; out o...
21/07/2023

Nouhaila Benzina is set to make history as the first woman to wear a hijab at the upcoming Women's FIFA World Cup; out of the 736 players, Benzina will stand alone as the sole wearer of a hijab, yet her impact off the pitch will resonate with millions around the globe.

Representing Morocco, Benzina will not only demonstrate inspirational leadership among her fellow athletes but also confront the challenges that hijabi players have faced in the past.

She fearlessly sends a beautiful message to the whole world by illustrating that devotion to faith, preserving personal identity, and nurturing one's love for football can coexist harmoniously.

11/07/2023

“হার্নান জর্জ ক্রেসপো” সংক্ষেপে হার্নান ক্রেসপো। ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে (৫ জুলাই) আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের হার্নান ক্রেসপো ৩০০ গোলের মালিক ছিলেন এবং তিনি আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে ৩৫ গোল করেন । তিনি আর্জেন্টিনা তথা ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তৎকালীন ক্লাব পর্যায়ে ক্রেসপো ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়, যখন ২০০০ সালে পারমা থেকে লাজিও তাকে €৫৬ মিলিয়ন (£৩৫.৫ মিলিয়ন) দিয়ে কিনেছিল। ২০০৪ সালে ফিফা কর্তৃক ফুটবল ইতিহাসের সেরা ১০০ জীবিত ফুটবলারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় হার্নান ক্রেসপোর নাম।

১৯৯৩-১৯৯৪ মৌসুমে রিভার প্লেটের হয়ে ক্লাব ফুটবলে অভিষেক করেন “হার্নান জর্জ ক্রেসপো”। ক্লাবের হয়ে তিনি ২৫ ম্যাচ খেলে ১৩টি গোল করেন এবং অ্যাপারচার লীগের শিরোপা জিতেন। ১৯৯৬ সালে রিভার প্লেটকে কোপা লিবার্তাদোরেসের শিরোপা জেতাতে হার্নান জর্জ ক্রেসপো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

ক্রেসপো ১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হয়ে রৌপ্য পদক জিতেছেন এবং অলিম্পিকে ছয়টি গোল দিয়ে শীর্ষ গোলদাতার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এর পরপরই তিনি রিভার প্লেট ছেড়ে ১৯৯৬ সালে ইতলিয়ান ক্লাব পারমায় যোগ দেন। তৎকালীন পারমা ক্লাবের প্রধান কোচ ছিলেন ডন কার্লো আনচেলত্তি...

এরপর ক্রেসপো লাজিও তে (২০০০-২০০২), ইন্টার মিলানে (২০০২-২০০৩), চেলসি তে (২০০৩-২০০৪), এসি মিলানে (২০০৪-২০০৫) এ খেলেন। ক্রেসপো ০৪-০৫ মৌসুমে ক্লাব মিলানের হয়ে ১০টি গোল করেন, এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলের বিপক্ষে ২টি গোল করেন। যদিও ৩-০ গোলের লিডে থেকেও মিলান (৩-৩) পেনাল্টি শ্যুট-আউটে লিভারপুলের কাছে হেরে যায়...

চেলসির তৎকালীন কোচ হোসে মরিনহো ক্রেসপো কে ২০০৪-০৫ মৌসুমে বিক্রি করে দিয়ে, ০৫-০৬ মৌসুমে আবার চেলসি তে ফিরিয়ে আনে এবং ক্রেসপোর দারুন ফর্মের কারণে ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে ক্লাব চেলসি লীগ শিরোপা ঘরে তোলে।

এরপর ০৬-০৭ মৌসুমে ক্রেসপো আবারো ইটালিয়ান সিরি-এ তে খেলার ইচ্ছা পোষণ করে এবং ইন্টার মিলান তাকে ২ সিজনের জন্যে লোনে নেয় এবং ক্লাব ইন্টার মিলানের আগ্রহের কারণেই ক্রেসপো এক বছরের জন্য ক্লাব ইন্টার মিলানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।

এরপর জেনোয়া তে (২০০৯-২০১০), এবং পারমা তে ২০১০ এ যোগ দিয়ে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে তিনি তার দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। ১০ বছর পর নিজের ক্লাব পারমা তে এসেই তিনি আবারো সিজনে পারমার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
১৯ বছরের দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে হার্নান জর্জ ক্রেসপো কখনো লাল কার্ড দেখেননি।

১৯৯৫ সালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে হার্নান ক্রেসপোর অভিষেক ঘটে এবং ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনা বুলগেরিয়ার বিপক্ষে জয় পায়। ক্রেসপো ১৯৯৫ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে “কিং ফাহাদ কাপ” খেলেছিলেন, এবং আর্জেন্টিনা রানার্স আপ হয়েছিলো।আর্জেন্টিনার জার্সিতে তিনি ৩৫ গোল করেছেন এবং মেসি, বাতিস্তুতা, আগুয়েরোর পরে তিনি আর্জেন্টিনার চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা।

তিনি তিনটি ফিফা বিশ্বকাপে খেলেছেন: ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬। ১৯৯৮ এ ক্রেসপো ভালো ফর্মে থাকার পরেও গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা তখন ছিলেন দলের প্রধান স্ট্রাইকার। তাই ক্রেসপোকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছিলো... ২০০২ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেন ক্রেসপো। দলের হয়ে তিনি ৯টি গোল করেন। আর্জেন্টিনা ঐ বিশ্বকাপে তারকাপূর্ণ দল এনেও গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েন। পরে বাতিস্তুতা অবসর নিলে ৯ নং জার্সিটি ক্রেসপো পান এবং জাতীয়দলের হয়ে তিনি তার সামর্থ্যের প্রমাণ দেন।

শুভ জন্মদিন হার্নান ক্রেসপো। আর্জেন্টাইন ফুটবল ভক্তরা আপনাকে মনে রাখবেন আজীবন। ❤️🙌

🗣️__লিওনেল মেসিঃ আমার খুব ইচ্ছে ছিলো ২০২৬ ওয়ার্ল্ডকাপে অংশ নেওয়ার। কিন্তু সব দিক থেকে চিন্তা করে দেখলাম যেটা জিততে পারবো...
20/06/2023

🗣️__লিওনেল মেসিঃ আমার খুব ইচ্ছে ছিলো ২০২৬ ওয়ার্ল্ডকাপে অংশ নেওয়ার। কিন্তু সব দিক থেকে চিন্তা করে দেখলাম যেটা জিততে পারবোনা সেটা ব্যর্থ চেষ্টা করে লাভ কি? কারন ২০২৬ ওয়ার্ল্ডকাপ তো জিতবে ব্রাজিল। ব্রাজিলের মিশন হেক্সার জন্য শুভকামনা।🥴

সূত্রঃ- আল-ব্রাজিলা, মিশন হেক্সা টিভি, আসিফ টিভি বাংলা, পরিমনি টিভি উর্দু, কাসেম টিভি আরবি, TNT sports Brazil. 🐸

Follow Md Rajib Hasan

Address

Sylhet
3300

Telephone

+8801721780995

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Md Rajib Hasan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Md Rajib Hasan:

Share