27/08/2025
অনেক দিন পর লিখছি
প্রসঙ্গঃ-👉অভিমানী আমি👈
আমার বয়স মাত্র ৪ বছর,আমি দুষ্টুমিতে সেরা। এইতো সেদিন টেবিলের উপর থেকে একটা গ্লাস পেলে দিয়ে ভেঙ্গেছিলাম। মা আমাকে দৌড়ানি দিলো,কিন্তু বাবার কাছে দৌড়ে চলে গেলাম। দেখো তোমার ছেলে আমার গ্লাসটা ভেঙে দিয়েছে। ঠিক আছে তোমাকে আমি ১ ডজন গ্লাস কিনে দেবো,আরো ১১ টা আমার ছেলে ভাংবে।
তুমি যে ছেলেটাকে মাথায় তুলছো তা তোমাকেই একদিন কাদাঁবে।
আমার একটা মাত্র ছেলে, এতটুকু ছেলে কি বুঝে আর তুমি কেমন কথা বলছো।
বলবো না,আমার বাপ ভাই কি কষ্টে কিনে দিছে তুমি কি বুঝবা?
তোমার বাপ ভাইতো আর এমনি এমনি দেয়নি,আমি ও অনেক টাকা তোমার কাবিনে দিয়েছি। এবং আমি তো বলিনি তোমার বাপ ভাইকে এসব দিতে।
এনব না দিলে তোমার চৌদ্দ গুষ্ঠি আমাকে কুটা দিতো হুহহ।
দেখো এ গুলো দানের জিনিশ আর ছোট বাচ্ছা একটা বেঙ্গেছে তা নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো,ছেলেটাতো তোমারও। এসব বাদ দাও।আর আমাকে বের হতে দাও।
সেদিন আমি খাট থেকে পড়ে গেলাম। হাতে খুব লেগেছে। ডাক্তার বলছে আমার হাতে প্লাস্টার করাতে হবে এবং ২১ দিন রাখতে হবে।
বাবা বললো,একটা মাত্র ছেলে খেয়াল রাখতে পারোনা। তুমি কি আমাকে কাজের মেয়ে ২/৩ টা রেখে দিয়েছো যে আমি তোমার ছেলেকে খেয়াল রাখবো। আমার কোন ভাইয়ের বউ কোন কাম কাজ করতে হয়না। সবারই কাজের বোয়া রাখা। সারা দিন তারা মোবাইল আর টিভি দেখেই কাঠায়। চোট লোক কোথাকার! তোমার ঘরে এসে আমার জীবনটাই নষ্ট। আগে জানলে কখনওই তোমার সংসারে আসতাম না।
দেখো তোমার কষ্টের কথা ভেবে তো বাবা মাকে ছেড়ে তোমাকে নিয়ে আছি। যা রোজগার করছি তাতো তোমাকে নিয়েই খরছ করছি। আমাদের সংসারেতো আমার কেউ এসে তোমাকে ডিষ্টার্ভ করছে না। বরং তোমার আত্তীয়রাই সব সময় আসা যাওয়া করছে।
আমার আত্তীয় নিয়া কথা। আমি আর তোমার সংসারই করবো না।
সব ছেলেরা থাকে মায়ের পক্ষে কিন্তু আমি কেন মায়ের পক্ষ নিতে পারছিনা। বয়স ৫ কিন্তু বাবা মায়ের ঝগড়া বুঝি। মা-ই বাবাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে,বাবা সয্য করতে করতে কথা ফেরত দেয়।
বাবা ব্যবসার কাজে চলে গেলে মা সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। আমার দিকে মায়ের তেমন খেয়াল থাকে না। আমার সাথে মা সব সময় ধমকের সুরে কথা বলে। বাবা সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে আসলে যতটুকু সময় পাই, আমি সঙ্গী হিসাবে বাবাকে পাই। এতে আমি সস্থিতে থাকি। কেন জানি আমার জন্য বাবার কোলই প্রশান্তি দেয়।
সেদিন মা বাবাকে বলছে, আমার যত আত্তীয়,যত বান্ধবী সবার স্বামীর অটেল সম্পদ। তোমার কি আছে। আজ পর্যন্ত পারছো আমাকে একটা স্বর্ণের কিছু কিনে দিতে। আমার চোট বোনের স্বামী তাকে কত কি কিনে দেয়। সে আমাকে সেদিন বিডিও কলে দেখালো ১২ হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনে দিয়েছে। তুমি আমাকে কি দিয়েছো? কেন কিছু দিন আগে তো তোমাকে আমি পনের হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনে দিলাম। বড় এক কাজ করেছো, এই শাড়ি পড়েতো আমার বোনের বিয়েতে গেলাম। কিন্তু একই শাড়ি পড়ে ভাইয়ের বিয়েতে যাওয়ার পর কিযে লজ্জা পাইছিলাম। আমার আসমান ভেঙ্গে মাথায় পড়ছিলো। আমার বান্ধবীতো আমাকে বলেই দিয়েছে,এই শাড়িতে তোর ছবি দেখলাম তোর বোনের বিয়েতে। কি ধামা চাপা দিয়েছিলাম বান্ধবীকে। আমাকে মিথ্যা বলতে হয়েছিল। শুধু মাত্র তোমার সম্মান রক্ষার জন্য। হায় হায়! তোর দুলাভাই আমাকে যে শাড়ি কিনে দিছে তা আমার পচন্ধ হয়নি আর এই শাড়িটা আমার প্রিয়। তাই পড়েছি এসব বাদ দে।পরে কথা বলছি।
আমি তোমার জন্য কি করিনী?
মায়ের আবদার রক্ষা করতে করতে বাবা ক্লান্ত। ইদানীং বাবাকে কেমন যেন মনে হয়। আমার সাথেও তেমন কথা বলেনা। আমি ৬ বছরে পৌঁছেছি। স্কুলে যাই। স্কুলের গাড়ি আসে বাবাই আমাকে নাস্তা করায় টিপিন দেয়। মা থাকে ঘুমে।
বাবার মন ভালো নেই,মায়ের ঘেন ঘেনানী আমাকেও বিরক্তি করে। সব সময় মা বাবাকে কুটা দিয়ে কথা বলে।
সেদিন ও বলেছিলো সবার হয় উন্নতি আর তোমার কেবল অবনতি। বিয়ের পর থেকে তোমার অভাব শেষ হতে দেখিনি।
আমাদের সংসারে কোন অভাব নাই। বরং উন্নত ১০ টা পরিবারের মত চলছে আমাদের সংসার। মা যা বলছে,বাবা তা কিনে দিচ্ছেন। সেদিনও একটা ফ্রিজ থাকার পরেও আরেকটা ফ্রিজ কিনে দিয়েছেন। তাও অযথা। কারন, পাশের বাড়ির কোন ভাবী কিনছে তাই আমাদের কিনা।
মা সব সময় অনলাইন থেকে ড্রেস,গয়না, পারফিউম,সবই কিনে। কিন্তু মায়ের মন ভরেনা।
বাবা দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, মা সব সময় বাবার সাথে ঝগড়া করে। ইদানীং বাবাও মাযের সাথে উচ্ছ সরে কথা বলে। এই প্রথম বাবার মুখে শোনালাম। আমার লৌনের পরিমান দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
মা কর্কশ কণ্ঠে বলছে, তোমার লৌন কবে কম ছিলো।বিয়ের পর থেকেই তো শোনে আসছি। সামনে আমার ভাইয়ের বিয়া,তাই আগে থেকে রাস্থা বন্ধ করতেছো।
বাবা বললো,তুমি শুধু কি তোমার বাপ ভাই নিয়ে চিন্তা করতে থাকবে। আমার বাপ ভাইয়ের জন্য কি আমার কোন দায়িত্ব নাই?
দাও না কেন?আমি কি না করছি।
আমি কি করে তাদেরকে দিবো,তোমাকেই তো দেওয়া আমার শেষ হচ্ছেনা।
কি দিছো আমাকে? আমার বান্ধবীরা যা করছে,তার কানাকড়ি ও করিনী।
তুমি বেশি বাড়া বাড়ি করছো কিন্তু।
হুম করছি,তো কি করবা?
বাবার সেদিন মাকে একটা থাপ্পড় দিলো।
মা চলে গেলো বাবার বাড়ি। তার পর মা আর আসেনি।
বাবা আনতে গেলে নানি বাবাকে অপমান করে। অবশেষে বাবা মায়ের ডিভোর্স।
আজ থেকে আমি একা।
কাজের বোয়া রান্না করে দেয়,আমাকে অনেক আদর করে বোয়াটা। কেন জানি আমি মাকে মনে করতে পারিনি। বোয়া যেভাবে আদর করে আমি এরকম আদর মায়ের কাছেও পাইনি। আমি বাবার কাছে কোন আবদার করিনী।করতেও হয়না। আমাকে খুশি রাখতে বাবা সব কিছু কিনে দেয়।
সেদিন বাবা আমার জন্য দামি একটা মোবাইল ঘড়ি কিনে আনছিলেন। আমি বলছিলাম, কেন এত টাকা খরছা কররেন।বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করলেন। হয়তো এমন কথা মা বাবাকে কখনও বলেনি।
মা বিয়ে করেছে কোন এক বড় লোকের ছেলেকে, সেদিন এক দুর সম্পর্কের খালা বল্ল,মা তেমন ভালো নেই।
আমি খালাকে বলছিলাম, মায়ের এমনই হওয়া উচিৎ।
বাবাকে সেদিন দাদু বলেছিলেন, ভাল একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নে। বাবার সোজা উত্তর ভালো মেয়েতো স্বর্ণালীও ছিলো। মানে আমার মা।
আমি টুতে পড়ি। মা আমাকে দেখতে আসছে। খুব আদর করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি অভিমান করে আছি। আজ মায়ের আদর আমার কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। মা আমাকে অনেক কিছু কিনে দিতে চেষ্টা করতেছে। কিন্তু আমি অভিমান করেই আছি।
মাতো কোন ইনকাম করেনা। কার টাকা দিয়ে আমাকে কিনে দিবে? সেদিন মা দিবসে খুব কান্না করেছিলাম। কারন সবার মা সবাইকে আদর করে একমাত্র আমার মা ছাড়া।
তাইতো আমি অভিমানি বড্ড অবিমানী। তুমি চলে যাও,তোমার সাথে কোন কথা নাই।
গল্পটা আমার লিখা একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট
ছবিঃ- সংগৃহীত