15/05/2023
আগে মোটা মোটা বই পড়তেন, অথচ এখন পড়তে পারেন না? দশ পেইজ পড়লেই বিরক্ত লাগে?
আগে স্লো, ক্ল্যাসিক মুভিগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতেন, সংলাপ দেখতেন, অভিনয় দেখতেন।এখন আর ক্ল্যাসিক স্লো মুভি ভালো লাগে না?
সেকেন্ডে সেকেন্ডে থ্রিল আর চমক না পাইলে সেই মুভি আপনার কাছে বোরিং লাগে?
এই দুটো সমস্যা যদি আপনি ইদানিং ফেইস করতে থাকেন, এর অর্থ, আপনি ডোপামিন অ্যাডিক্টেড হয়ে গেসেন। বিড়ি বা সিগারেটের মতো এইটাও একটা নেশা। যে নেশা আপনার দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার মনোযোগটা শেষ করে দিয়েছে।
এই অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম আর একমাত্র উপায় হলো, ফেসবুক থেকে শর্ট ভিডিও বা রিলসের অপশনটা সরাইয়া ফেলা। ইউটিউব বা টিকটকে ছোট ছোট বিনোদনমূলক ভিডিও না দেখা।
ভাজাপোড়া যেমন খাইতে মজা বাট শরীররে শেষ করে, এই ছোট ছোট ভিডিওগুলাও আপনার মাথারে শেষ করে একেবারে অধৈর্য বানাইয়া ফেলে। ফলে আপনার ব্রেইন আর ডোপামিন ছাড়া একদিনও থাকতে পারে না। আপনি ৩ ঘন্টা ফেসবুকের রিলস দেখে কাটাইতে পারেন, অথচ দুই ঘন্টার একটা মুভি বা ডকুমেন্টারি আপনার বিরক্ত লাগে।
যে কোন এডিকশন থেকে মুক্তি পাওয়াই সহজ না। এখান থেকে মুক্তি পাওয়াও সহজ হবে না, এটা মাথায় রাখতে হবে।
বিছানায় না থেকে টেবিলে বসার অভ্যাস করতে পারেন, ফেসবুক অ্যাপ আনইনস্টল করে ফেলা যায়। ফোনে পিডিএফ এ একটা বই রাখবেন, যতবার ফোনে হাত যাবে, ততবার ফেসবুকের বদলে বইটা ওপেন করবেন।
প্রয়োজনে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিবেন, রাতে এসে মাথার কাছে একটা বই রাখবেন। দুই পেজ পড়বেন, বাকি সময় আকাশ পাতাল চিন্তা করবেন, কল্পনায় হাতি মারবেন, তারপরেও ফেসবুকে ঢুকবেন না।
প্রয়োজনীয় সমস্ত যোগাযোগ (প্রেম, প্রফেশনাল বা অ্যাকাডেমিক) হোয়াটস্যাপ, মেইল বা টেলিগ্রামে ট্রান্সফার করে ফেলবেন, যাতে কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনার ফেসবুকে আসতে না হয়। সবচে বেটার হয় সরাসরি ফোন কল বা টেক্সটের সাহায্যে এই কাজগুলো করলে।
দিনে এক ঘন্টার বেশি ফেসবুক ব্রাউজ করবেন না।
লেখা পোস্ট করার পর যদি ফেসবুকে না এসে নাই থাকতে পারেন, তাহলে লেখালেখি অফ রাখবেন।
টানা দুই সপ্তাহ হলো, আমার ফেসবুকের এভারেজ টাইম এক ঘন্টার নিচে রাখতেসি।
এই সপ্তাহ গেলে তিন সপ্তাহ হবে।
মজার ব্যাপার বলি, প্রথম সপ্তাহে আমার এভারেজ রিডিং টাইম ছিলো ৫৭ মিনিট। মানে একটানা ৫৭ মিনিট পড়ার পর আমার একটা ব্রেক নিতে হতো, কোনভাবেই আর মনোযোগ রাখতে পারতাম না।
নেক্সট উইকে এসে আমার রিডিং টাইম বাইড়া হইলো ১ ঘন্টা ৩৩ মিনিট।
আর গত তিনদিন থেকে আমি এক বসাতে ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট করে বই পড়তেসি, কোন ধরণের মনোযোগের হেরফের ছাড়াই।
মনে হইতেসে আবারও সেই কলেজ লাইফে ফেরত গেসি। ২৫০ পেইজের দুইটা বই শেষ করে ৪৫০ পেইজের একটা কাল থেকেই ধরেছি। অথচ, গত বছর থেকেই আমি এতো পেইজের কোন বই পড়ে শেষ করতে পারতেসিলাম না। শুধু মনোযোগ না, বরং এনার্জি, আগ্রহ কিছুই থাকতো না, বোরিং লাগতো।
এখন আমার আবারও সেই আগের কারেজটা ফিরে আসতেসে, বেশ কিছু সিরিজ বা ডকুমেন্টারিও দেখতেসি, আগের মতো এতো বোরিং আর লাগতেসে না।
কাজেই, ব্যাপার হলো, মধু খেয়ে চা খাইতে নিলে কি আর ঐটা মিষ্টি লাগে? লাগে না। কারণ চা কম মিষ্টি এইজন্য না, বরং মধুটাই বেশি মিষ্টি।
ফেসবুকের রিলস ভিডিও এইগুলাও অনেক বেশি মিষ্টি, বই পড়া বা ভালো একটা মুভি দেখা কম মিষ্টি।ঐ কম মিষ্টির স্বাদটা এঞ্জয় করতে হলে আপনাকে মধুটা ফেলে দিতে হবে, তাহলেই শুধু চিনির মজাটা আপনি পাবেন।
প্রায়ই দেখি, অনেকেই দুঃখ করে বলে, আগে এক বসায় কালবেলা শেষ করতাম, আর এখন ১০ পেইজ পড়তে নিলে পড়তে পারি না কেন?
উত্তর লুকাইয়া আছে আপনার ফেসবুক, ইউটিউব আর টিকটকের অ্যাক্টিভিটিতে।
ব্রেইনকে বাঁচাইতে চাইলে এই জিনিস এখনই লিমিট করে ফেলেন। সিগারেট স্বাস্থ্য ধ্বংস করে আর এরা ধ্বংস করে আপনার মনোযোগ, আপনার থিঙ্কিং, আপনার ধৈর্য্য।
শুধু ধূমপান নয়, ফেসবুকও কিন্তু আমাদের মৃত্যুর কারণ হতে যাইতেসে। যে মানুষের মনোযোগ আর ধৈর্য্যের ক্ষমতা হারাইয়া যায়, সেই মানুষের সাথে মৃত মানুষের আদৌ কোন পার্থক্য থাকে?
~কুড়িয়ে পাওয়া।
collected