15/02/2025
বড় ছাহেবের স্ত্রী-বিয়োগের শোক,
ফুলতলীর বড় ছাহেব আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী (মা.জি) এর সহধর্মিণী সদ্য ইন্তিকাল করেছেন। রাত্রিবেলা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আহলে বায়তের নারীগণ রাত্রিবেলা দাফনের অসিয়ত করতেন। এটিই তার প্রতিচ্ছবি। শীতের রাতে দূরদূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কী সৌভাগ্যবতী ছিলেন তিনি। এক মহীয়সীর নারী। ফেসবুকে অনেকে তাঁকে "উম্মুল আইতাম" হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি কি সত্যিই এতীমদের মা ছিলেন? এতীমেরা তাঁকে কতটুকু আপন ভাবতো?
শবে বরাত। রাত সাড়ে এগারোটা। ছাহেব বাড়ির উঠান পেরিয়ে মাযারের দিকে যাচ্ছি। মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে তিনজন এতীম। বয়স বড়জোর ১০-১২ বছর হবে। একজন বলছে, চলো; আম্মার কবর যিয়ারত করে আসি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম৷
---
মাঝরাতে বড় ছাহেব মাদরাসা ভবনের উত্তরে পারিবারিক কবরস্থান যিয়ারতে গেলেন। ছেলে-ভাতিজা ও কয়েকজন নাবালক এতীম নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন। সদ্য মৃতা স্ত্রীর কবরের সামনে দাঁড়ালেন। একজন ছেলেকে সূরা মুলক তিলাওয়াত করতে বললেন। মায়ের কবরের পাশে পুত্রের তিলাওয়াত। পুরো ফুলতলী বাজার নিস্তব্ধ হয়ে গেল। বাইরে হাজারো মানুষ দোয়ায় শরীক হলেন। এতীমদের উচ্চস্বরে "আল্লাহুম্মা আমীন" ধ্বনি পরিবেশকে ভারী করে তুললো৷ যেন তারা তাদের মাকে হারিয়েছে।
---
বড় ছাহেব খানকাহে এলেন। বরাবরের মতো বালাই হাওরের কান্না স্মরণ করলেন। ওয়ালিদ মুহতারাম ও মা জননীর জানাযার স্মৃতিচারণ করলেন। তারপরই বললেন, বিগত জানাযার কথাও খুব মনে পড়ছে। কত এতীম তাঁর স্নেহ-মমতা পেয়েছে।..
এতটুকু বলেই অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলেন। আর কিছু বলতে পারেন নি।
তাঁর মাতৃহারা সন্তানাদির জন্যে দোয়া করলেন। রাব্বে কারীম, তাদেরকে সবরে জামিলের তাওফিক দাও।
জীবনের দৌড় শেষ হলে পরিবার পরিজন কাফনে মুখ ঢেকে কবরে রেখে আসবে। এমন কথায় সদ্য দাফনের শোকাবহ রূপটাই চিত্রিত হয়েছে। তাহাজ্জুদের পূর্ব পর্যন্ত পুরো সময়টা জুড়ে মনে হলো, বড় ছাহেব প্রিয়জন বিয়োগের শোকে কাতর। যিকর ও দোয়ার মাঝে অন্তত সাতবার তাঁর সদ্য বিগতা সহধর্মিণীর শূন্যতার প্রতি ইঙ্গিত করলেন। পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর তিন পুত্র। মনে হয় তাঁরা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। নির্বিকার চিত্তে দুই হাত তুলে মায়ের জন্যে দোয়া করছেন।
বড় ছাহেব বিবি-বাচ্চা নিয়ে মক্কা-মদিনা যিয়ারতের স্মৃতিচারণের সময় আবারও অশ্রুসিক্ত হয়ে যান। মনে হলো তিনি ভাবছেন, আর কোনোদিন সপরিবারে মদীনা যাওয়া হবে না। কী এক পবিত্র স্মৃতি।
সবশেষে মোনাজাতে বললেন; আয় রব, ঘরে প্রবেশের পর যে শূন্যতা বোধ করি। তোমার রহমত দিয়ে এই শূন্যতা পূর্ণ করে দিও। আমীন।
পথিক হাসান
ফুলতলী, সিলেট।
১৪.০২.২০২৫